আড্ডা শেষে সূর্য্য, অভি, সমর সাথে আরো বেশ কয়েক জনকে সাথে নিয়ে চলে গেলেন মিরপুরে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে।সেখানে মুক্তিযোদ্ধারা কোন মতে খড় কুটা নিয়ে দাড়িয়ে আছেন মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নামক বিশাল অট্রেলিকার নাম সর্বস্ব ঝুলিয়ে।অথচ তা স্বাধীনের ৪৩টি বছর পর এক খন্ড জমিও রেজিষ্ট্রি হয়নি মুক্তিযোদ্ধাদের নামে।শুধু মাত্র ১৩ একর জায়গা বরাদ্দ দেওয়া ছাড়া যুদ্ধাহত ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য কোনো আবাসন পরিকল্পনা গৃহীত হয়নি আজও।অথচ এখানেই অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন প্রায় ২০০ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সদস্যদের মোট সংখ্যা প্রয় ১০হাজার জনবল।
সামনা সামনি যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে কেউ পা হারিয়েছেন, কেউ হাত। কেউ হারিয়েছেন স্বজন তাদের মধ্যে নামমাত্র ভাতা পান অনেকে। দুই তিন মাস হলো জুটছে রেশন কারো কারো। কিন্তু তা দিয়ে তিন বেলা খাবারই জুটছে না। জুটছে না চিকিৎসা, সন্তানের লেখাপড়ার খরচ। অসহায় মানুষগুলোর চোখে এখন কেবলই অন্ধকার।
বড়ই অবাক হন সূর্য্য, যে দেশটিকে ভালবেসে ক্ষণস্হায়ী জীবনকে যারা করল উৎসর্গ তারা কিংবা তাদের পরিবারের সদস্যরা আজও চৌয়াল্লিশটি বছর পরও কি নিদারুন কষ্টে দিন অতিবাহিত করছেন।এই তো হয়ে গেলো কয় দিন আগেও এক নরপশু জাতীয় পার্টির নেতা কায়সারের ফাসির রায় এর ঘোষনা হলো এই শান্তনাগুলো ছাড়া তাদের আর তেমন কিছু আমরা দিতে পারছি না।
-আমার ভাবতে অবাক লাগে আমরা কি সেই স্বাধীন দেশেই বস বাস করছি।যে দেশটির জন্য এতো আত্ত্বত্যাগ, এতো রক্তের বন্যা যাদের কারনে প্রবাহিত হলো তাদের বিচার করতে গিয়ে হরতাল নামক জনসাধারনের অধিকারটির ভাবমূর্তি নষ্ট করে এই জমিনেই রক্তের বন্যা প্রবাহিত করে যাচ্ছে অথচ আমরা নীরব….. মনে হয় এ যেন অপরাধের বিচার নয় একজন নিরাপরাধ ব্যাক্তিকে অযথা শাস্তি দিচ্ছি।গতকাল রায় হলো পরদিনই তারা হরতাল দিলো তাও ২০১৫ সালের নতুন বছরের প্রথম দিনে হরতাল।জামাত নেতা আজহারুলের যত যুদ্ধাপরাধ ছিল।সমরের কথার মাঝে অভির উকি যেন কাটা গায়ে নুনের ছিটা তবুও মেনে নেন।হয়তো সবার চিন্তা চেতনা এক নয়।
-ইংরেজী নব বর্ষের থার্টি ফাষ্ট নাইটে চীনের মত এমন ঘটনা আমাদের দেশে না ঘটলেও তার চেয়ে কমও হয় না…. তবে এবারই মনে হয় তেমন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
আজ ইংরেজী নব বর্ষ ২০১৫ এর প্রথম দিন সূর্য্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের অজানা তথ্যগুলো স্ব-চোখে দেখে চোখে পানি ধরে রাখতে পারেননি।পল্লীর ভেতর ঢুকে দেখা হয় একজন আহত মুক্তিযোদ্ধা নূর মোহাম্মদ শেখের সাথে। ‘৭১ এ যুদ্ধ করেছেন এক নম্বর সেক্টরে সে।শত্রুর গুলিতে তার কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন।সারি বদ্ধ ভাবে কোন মতে দাড়িয়ে থাকা ঘরের দিকে আঙুল তুলে বললেন,
-ঐ..ঐ যে দেখছেন মজা পুকুরের আবর্জনার ওপর ও চারপাশে সারি সারি টং ঘর, ঐগুলোই হলো বীর মুক্তি যোদ্ধাদের ঘরবাড়ি। কয়েকটি পাকা বাড়িও আছে তবে বেশির ভাগই বস্তির মতো ঘুপচিঘর।’
গুটি কয়েকজন সচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা নিজের বাড়িতে পাম্প বসিয়েছেন। সেখান থেকেই প্রতি কলস পানি এক টাকা দরে কিনে চালাতে হয় সংসারের সব কাজ। হাতে গোনা কিছু বাড়িতে স্যানিটারি ল্যাট্রিন থাকলেও বেশির ভাগই মল মূত্র ত্যাগ করছেন রাতের অন্ধকারে কমপ্লেক্সের ভেতর ডোবা নালার চারপাশে। আবার সেই পানিতেই চলছে গোসল, কাপড়চোপড় ধোয়া। নেই গ্যাসসংযোগ। টিন ও খড়ের চালার বেড়ার ঘরগুলো এখন জীর্ণ হয়ে এসেছে।
প্রায় কাছে যেতেই সূর্য্য দেখা হয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী মণ্ডলের স্ত্রী ফাতেমা খাতুনের সাথে।’৭১ এ স্বামী শহীদ হয়েছিলেন কিন্তু স্বামীর মরদেহটি সে খুজে আর পাননি।মাটির চুলোতে বড় এক মাটির হাড়িতে ভাত রান্না করছেন।গ্যাসের সংযোগ না থাকায় খড় কুটোয় প্রচুর ধুম্রতায় চোখে পানি এসে যায় তার।
-কেমন আছেন আন্টি?শুভ নব বর্ষ।
-আছি বাবা কোম মতে…তবে কোন বর্ষা তর্ষা আমি জানি না।
এইতো আমাদের শিকড় যেখানে মা মাটির টানে বিদেশ বিভূয়েরা দিশেহারা দেশের মাটিতে ঘর বাধতে।কমপ্লেক্সে একটুকরো জমি স্বামীর যুদ্ধে শহীদ হওয়ার দান। তাতেই কোনোমতে ঘর তুলেছেন তিনি। একমাত্র মেয়ে মারা গেছেন। ছেলেটি আলাদা থাকেন অন্যত্র। তিন মাস হলো ভাতা পাচ্ছেন তিনি। এক মাস হলো জুটছে রেশনও। কিন্তু তা দিয়ে আর সংসার চলছে না।
-আপনার থাকার স্হানটি কি আপনার নামে?
-না,এখানে যারাই আছেন তারা অস্হায়ী কপ্লেক্সের নামে কিছু দিন আগে মন্ত্রী এসে বলে গেছেন প্রকপ্ল পাস হলে লিখে দিবেন।সাথে আসা মুক্তিযোদ্ধা লোকটি বললেন।
-কখন কে এসে তুলে দেয়, সেই ভয়ে থাকি বাবা। জায়গাটা যদি নিজের হতো, তাহলে শান্তি পেতাম।শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী স্বাধীনের এতগুলো বছর পরও এমন অনিশ্চয়তাপূর্ণ উক্তি করে যুদ্ধাহতরা জীবনের অতৃপ্ততার ঢোক গিলবে ভাবতে পারেননি সূর্য,অভি সমর এবং আরো যারা সাথে ছিলেন।সেখানে লোকমুখে আরো একটি মুক্তিযুদ্ধে এক শহীদের করুণ পরিনতি শুনে ‘থ খেয়ে নিশ্চুপ হয়ে মাথা নত করে বের হয়ে আসেন সূর্য্যরা।
বঙ্গবন্ধুর কোলে হাস্যোজ্জ্বল সেই কিশোর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম বীরপ্রতীক পরলোক গত। বঙ্গবন্ধু তাঁকে আদর করে লালু নামে ডাকতেন। ১৯৯০ সালে ২৫ মে দীর্ঘদিন রোগ ভোগের পর ৫০/৫৫ বছর বয়সী এই বীর মুক্তি যোদ্ধার করুণ মৃত্যু হয়েছে। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। অবশিষ্ট এক মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন তাঁর স্ত্রী মালা বেগম। ভাতা পান না,পান না রেশনও ….বাড়িটিও কোনো এক স-হৃদয়বান ব্যক্তি নিজ খরচে নির্মাণ করে দিয়েছিলেন সত্য কিন্তু সরকারি কোনো সাহায্য পরিবারটির কপালে জুটে নাই।প্রতিনিয় চোখের জলে বলে বেড়ান সে কারো করুণার পাত্র নন, না খেয়ে মরে যাবেন, বাচার জন্য তবুও কাউকেই বলবেন না এক মুঠো অন্ন দাও।
-‘অভিমান করে ও কখনো যাননি ভাতার জন্য। এমনকি সনদও তোলেননি সরকারও কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অথচ সেদিনও বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে বঙ্গবন্ধুর কোলে ওঁর ছবি ছাপা হলো। কিন্তু কেউ কি জানে, কোলের সেই লালুর পরিবার এখন কেমন আছে?’ কিছুক্ষণ চুপ থেকে মালা বললেন,
-‘এখন আমরা কিভাবে চলব?’
ঐ ছোট লোকের পোলাডা কিন্তু বীরপ্রতিক ছিল www.somewhereinblog.com এর লিংটি হার্টের সমস্যা থাকলে সাবধানে পড়বেন।সে দিন সূর্যরাও স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।মুক্তিযোদ্ধা লোকটি সূর্য্যদের আরো কিছু নাম বললেন যারা লালুর মতোই করুণ ভাবে এই কপ্লেক্সেই মরতে হয়েছিলেন তারা হলেন,আবু তালেব,শফি,চৌধরী,হাসেম,শফিক,শহীদ,সিরাজ এবং মজিবর নাম জানা এই আটজন মুক্তিযোদ্ধা।
সেখান থেকে ফিরে সূর্য্যরা নতুন বর্ষকে বরণ করতে সোজা চলে গেলেন চারুকলায় সেখানে আরো বেশ কয়েক জন অপেক্ষা করছেন।মিলিত হয়ে বর্ষ বরণে মুক্তিযোদ্ধা নামক একটি নব বর্ষের শুভেচ্ছা মিছিল বের করবেন।
“আজকের এই দিনে
পুরো বারোটি মাসের অপেক্ষায়
আরেকটি নতুন সূর্য্যের আর্বিভাবে
বর্ষ বরণে মাতাল বিশ্ব বাসী,
বাঙ্গালীর অঙ্গীকার ছাড়তে হবে
এই বাংলা
আছে যত রাজাকার
আর পরমপরা বংশধর
এই হোক অঙ্গীকার পালনে
মানুষরূপী পশুর বলির বছর”।
চলবে………
সোনেলার সবাইকে নব বর্ষের শুভেচ্ছা……………….. -{@ -{@ -{@
জেনে নিন ইংরেজী নব বর্ষের ইতিকথা
২০টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
অবশ্যই রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ চাই। আপনাকেও শুভেচ্ছা নববর্ষের।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ধন্যবাদ ভাইয়া
কবে যে সেই দিনটি আসবে
যখন দেখবো হায়নারা
এ দেশে পদে পদে মার খাচ্ছেন
দেশ থেকে বিতারিত হচ্ছেন। -{@
ব্লগার সজীব
আপনার পোষ্ট গুলো ঐতিহাসিক। শুভ নববর্ষ।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ধন্যবাদ সজীব ভাইয়া।নব বর্ষের শুভেচ্ছা -{@
লীলাবতী
সুপার পোষ্ট ভাইয়া।নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
শুভেচ্ছা আপনাকে -{@
জিসান শা ইকরাম
অনেক কিছু জানার থাকে আপনার লেখায়।
রাজাকার মুক্ত বাংলা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারাবদ্ধ হই ২০১৫ তে।
শুভেচ্ছা
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞ সোনেলার কাছে। -{@
শুন্য শুন্যালয়
অবশ্যই অনেক ভালো পোস্ট। মুক্তিযোদ্ধাদের এমন চিত্র সত্যিই খুব কস্ট দেয়, যাদের জন্য কাজ করা সবার প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিলো, তাদেরই এমন অবস্থা আমাদের দেশের মাথাদের মাথা নামিয়ে দিয়েছে সাধারন মানুষের কাছে।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
সত্যিই আপু যখন শুনি দেশপ্রেম পদে পদে মার খাচ্ছে আমাদেরই তথাকথিত দেশপ্রেমিকদের কাছে তখন মনকে বুঝাতে বড় কষ্ট হয়।এই কি স্বাধীনতার কৃতজ্ঞার স্বীকার?ধন্যবাদ আপনাকে -{@
শিশির কনা
(y) নববর্ষের শুভেচ্ছা ভাইয়া -{@
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
শুভেচ্ছা আপনাকে ২০১৫ -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
ভালো লেখা। চাই রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ। শুভ নববর্ষ -{@
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
শুভ নব বর্ষ -{@
খেয়ালী মেয়ে
যাদের জন্য এই দেশ পেয়েছি, যাদের জন্য বলতে পারছি আমার দেশ অথচ তারাই ভালো নেই–সত্যিই এটা কষ্টকর, লজ্জাজনক আমাদের জন্য..
শুভ নববর্ষ -{@
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
লজ্জা লাগে যখন এসব দেখি -{@ ধন্যবাদ খেয়ালী -{@
মেহেরী তাজ
খুব যুক্তিপুর্ন পোষ্ট। শুভেচ্ছা মনির ভাইয়া -{@
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
-{@ ধন্যবাদ।
স্বপ্ন
নববর্ষের শুভেচ্ছা -{@ ভালো থাকুক বাংলাদেশ ২০১৫ তে। (y)