সারাদিন কর্মব্যস্ত। সেই সাড়ে পাঁচটার পর নিজের বলে কিছু সময় পাওয়ার শুরু। আসলেই কি নিজের সময় বলে কিছু রয়েছে ওর জীবনে। অফিস আওয়ারের পরে বাসায় সময় দেয়া। বাসা বলতে বাসাই। এখনো যখন বাড়ি হয়ে উঠেনি, বাসাই বলতে হচ্ছে। ছোট্ট একটি শান্তির নীড়… কিন্তু ওর বাসাটা ছোট ঠিকই, তবে শান্তি রয়েছে কিনা… সেটি পরীক্ষার বিষয়। পাখির বাসা দেখে দেখে সেরকম একটা বাসার কল্পনা করেছে। কিন্তু পাখি কখন বাসা বাঁধে? যখন তাঁর সঙ্গীর প্রয়োজন হয় তখন? দু’জনে মিলে খড়-কুটো, পাতা আরো কত কি সংগ্রহ করে… তারপর হয় একটি নীড়।
অফিস থেকে ফেরার পথে একটা রেল লাইন পড়ে। এই রেললাইন ধরে হেঁটে হেঁটে ওর বাসায় পৌঁছে যাওয়া যায়। যেখান থেকে রেললাইনের শুরু, সেখানে রোজ রিক্সা ছেড়ে দেয়। তবে ভাড়া দেয় সেই বাসা পর্যন্ত, কারন রিক্সা ঠিক করে সে বাসায় যাবার জন্যই। কিন্তু এই যায়গায় এলে ওর যে কি হয়! তাই বলে প্রতিদিন? কি আছে ওখানে? এমন কিছু কি যা ওকে তাড়িয়ে বেড়ায়? দুটো ইস্পাতের সমান্তরাল বয়ে যাওয়া আর নুড়ি-পাথরের ইতস্তত বিচরণ… দু’পাশে বস্তির জনজীবন… নোংরা পুঁতিগন্ধময় ড্রেনের কালো জলের সন্তরণ – এসবের ভিতরে কী এমন থাকতে পারে?
মেয়েটি আজও রিক্সা থেকে নেমে এলো। মনে মনে ভাবল, ‘মানব মন বড়ই বিচিত্র! অনেক কিছুই সেখানে থাকতে পারে, যা আমরা বাইরে থেকে বুঝি না।’ এই যায়গায় কি রয়েছে তা একমাত্র সে নিজেই জানে।
একদিন সব কিছু ফাঁকি দিয়ে এক জোড়া নক্ষত্রের পতন হয়েছিল এখানে!
বাতাসে ছিল ভেজা কদমের মৃদু মাতাল গন্ধ… নিঃশ্বাস ছোঁয়া দূরত্ব… উষ্ণতা কি সুস্বাদু হয় অথবা সুপেয়? রেল লাইনের নুড়িগুলোর প্রাণহীন শরীর জানে সে প্রশ্নের উত্তর… দু’পাশের লতানো ঝোপ এক জোড়া মানুষের আদিম ভালোবাসায় বিস্মিত হতে হতে পরের জনমে মানুষ হবার প্রার্থনায় আকূল হয়েছে! শুধু একবারই…
তারপর নক্ষত্রেরা ফিরে গেছে আগের জীবনে!
হেঁটে হেঁটে সামনে আগায়… আর দেখে। সব কিছু আগের মতোই আছে… সেই নুড়ি বিছানো পথ… জংলী ঝোপে ফুটে থাকা ফুল… রাতের আকাশ… সেই আকাশে ওড়া সুদর্শণ পোকা… হব হব সন্ধ্যার অন্ধকারে ছিন্নমূল মানুষগুলোর ঝুপড়ি ঘরে কেরোসিন কুপির রহস্যময় আলো… মেয়েটি স্মৃতির ধুলা ঝেড়ে সেখানে বসে কিছুক্ষণ। নিজের অতীতটা খুব কাছ থেকে দেখে। সেখানে তাঁর মুখোমুখি বসে হীরের কুচি দেয়া চোখে হাসছে এক রুপবান যুবক!
সেদিন ছিল মেয়েটির জন্মদিন। ছেলেটি এলো জন্মদিনের উপহার নিয়ে। মেয়েটি হাত বাড়িয়ে ছেলেটির হাত ধরল… উপহারগুলো পড়ে থাকলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহারটা পেল মেয়েটি… তাঁর জানা হল সে একজন নারী!
এভাবেই নদীরা নারী হয়ে ওঠে, নারীরা নদী… এভাবেই সকল নদী ও নারী আজন্ম মেঘবতী… কেবলই নতজানু জল থেকে জলে… … … ।।
১৬টি মন্তব্য
কৃষ্ণমানব
এভাবেই সময় ফিরে যায় তার গোলকধাঁধাঁয় ।
জবাব গুলো মিলে না ।
নিজস্ব গতিতে ছুটে চলে নক্ষত্ররা ।
দক্ষিনা বাতাস বয়ে যায় , দ্বির্ধাহীন মূর্ছনায় ।
তবুও দিশেহারা অজানা প্রাপ্তিরা
মামুন
সুন্দর অনুভূতি রেখে গেলেন হে কবি!
অনেক ধন্যবাদ। শুভসকাল।
লীলাবতী
সব কিছু না বলেও গল্প বলা যায়,লেখা যায়।আপনার গল্পে আমি মুগ্ধ হলাম ভাইয়া।নুতন দেখছি মনে হচ্ছে।নিয়মিত লিখুন ভাইয়া(তবে ২৪ ঘন্টায় একটির বেশী লেখা দিবেননা, সোনেলার মড্ররা কিন্তু একটা মুছে দিলে আমাকে দোষ দিতে পারবেননা :))। নিয়মিত পড়তে চাই এমন গল্প।
ছাইরাছ হেলাল
১৫ তারিখে লিখেছে, আবার ১৬ তারিখে লিখেছে। এতে সমস্যা হওয়ার কথা না।
মামুন
হ্যা, ধন্যবাদ। আমি ২৪ ঘন্টা (আমার প্রথম পোষ্ট দেবার পর থেকে) পরে আমার ২য় পোষ্ট দিয়েছি।
আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগতম।
শুভসকাল।
মামুন
অনুভূতি রেখে যাবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ @লীলাবতী
আমার ব্লগে স্বাগতম।
শুভসকাল। 🙂
খেয়ালী মেয়ে
সকল নদী ও নারী আজন্ম মেঘবতী (y)
কী সুন্দর করে লিখেছেন 🙂
মামুন
সুন্দর অনুভূতি রেখে গেলেন। অনেক ভালো লাগল।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
শুভসকাল।
ছাইরাছ হেলাল
নদী ও নারীর দারুণ উপমায় লেখাটি অনেক প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।
মামুন
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। সাথে থেকে অনুভূতি রেখে যাবার জন্যও রইলো অনেক শুভেচ্ছা। -{@
ব্লগার সজীব
ভালো লেগেছে ভাইয়া। আপনি জানেন কখন গল্প শেষ করতে হয় (y)
মামুন
ভালো লাগার অনুভূতি রেখে গেলেন, অনেক ধন্যবাদ। -{@
শুন্য শুন্যালয়
মুগ্ধ হয়ে গেলাম লেখাটা পড়ে। আপনি সত্যিই অনেক ভালো লেখেন। পুরোটাই তো সুন্দর, তবে যে টুকু বেশি ভালো লেগেছে তা বলার লোভ সামলাতে পারলাম না…
… একদিন সব কিছু ফাঁকি দিয়ে এক জোড়া নক্ষত্রের পতন হয়েছিল এখানে!
… দু’পাশের লতানো ঝোপ এক জোড়া মানুষের আদিম ভালোবাসায় বিস্মিত হতে হতে পরের জনমে মানুষ হবার প্রার্থনায় আকূল হয়েছে! শুধু একবারই…
নাহ, আপনার লেখা কখনো মিস করা যাবেনা।
মামুন
মুগ্ধতা রেখে গেলেন, অনেক শুভেচ্ছা রইলো আপনার জন্যও।
আপনার এই ভালোলাগা আমাকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
অনেক ধন্যবাদ। -{@
শিশির কনা
এত মিষ্টি একটি গল্পে অনেক ভালোলাগা। অল্প কথায় ফুটিয়ে তুলতে দক্ষ আপনি -{@
মামুন
ভালো লাগা রেখে যাবার জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
শুভসন্ধ্যা। -{@