অল্প বয়সী ছেলেটি ডিভি লটারি পেয়ে আমেরিকা আসে। দূর সম্পর্কের আত্মীয়, বিধায় আমার বাসায় উঠে। খুব ভোরে উঠে কাজে যায়, ক’দিন আগেও মায়ের গভীর আদরের গণ্ডীর ভেতরে থাকা ছেলেটি। কাজ থেকে ফিরে ঘুমিয়ে পরে আমার ড্রইং রুমের সোফায়। রাত গভীরে তার গোঙানির শব্দ ভেসে আসে ! হঠাৎ হাড়ভাঙ্গা খাটুনিতে প্রচণ্ড জ্বর আর ব্যথার গোঙানি ! সকালে আমি মেডিসিন দেই। সে খায়। আবার কাজে নেমে পরে। এভাবে প্রায় এক বছর আমার অতিথি ছিল সে।
আয়ের পুরোটাই দেশে পাঠাতে লাগলো। উপরন্ত ধার দেনা করেও পাঠাচ্ছিলো, যদিও তার পরিবার মোটামুটি সচ্ছল।
একবছর বাদে আমি দেশে যাই। পরিবারটি সীমাহীন কৃতজ্ঞটায় নিমন্ত্রন করে। আমি যাই। একপর্যায়ে জানলাম তাদের বাসার টিভি, ফার্নিচার সব নতুন অর্ডার করা হয়েছে। চারদিকে চোখ বুলালাম। বললাম, “এগুলোই তো অনেক সুন্দর। বলাচ্ছেন কেন ?” ওর মা বললেন, “ছেলে টাকা পাঠাচ্ছে নিয়মিত, তাই এই রদবদল”। ছোট ভাইগুলোর অন্যায় আবদার… মায়ের আবদার… সব মিলে সে এক হুলুস্থুল অবস্থা পরিবারটিতে।
এলোমেলো ভাবনা আর হৃদয় বিদীর্ণ করা দীর্ঘশ্বাস বুকে নিয়ে বাড়ি ফিরি। ছেলেটির প্রতিদিনকার কাজ শেষে বাড়ী ফেরার সময়কার করুন, মায়াময়, বিষাদমাখা মুখ খানা ভেসে উঠে। গোঙানির সেই শব্দ কর্ণকুহরে সুঁইয়ের মত বিধে, ঘুমাতে দেয় না আমায়। কুরে কুরে খায় একরাশ কষ্ট !
অবচেতন মনে ভাবি, আমার কেন এমন লাগছে ! মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি হয়ে যাচ্ছে না ?! নিজেকে নিজেই প্রবোধ দেই___ অনেক বছর আগে দেশ ছেড়ে আসবার সময় ছেলেটিকে কতো ছোট দেখেছি ! এখন আমার ছেলেটি যতটুকু, ঠিক ততটুকু !
এই যে অল্প বয়সী ছেলেটি পড়াশুনা শেষ করলো না… অসময়ে সব আনন্দ বিসর্জন দিয়ে জীবন সংগ্রামে লেগে গেলো… পরিবার থেকে ছিটকে গেলো দূরে, হাজার মাইল দূরে__ কোন কিছুর বিনিময়েই কি আর সেসব ফিরে পাবে ?
যে কারনে এতো কথা __ গত ২৬ দিনে ১০৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে প্রবাসী’রা। এই রেমিট্যান্সের অপর পিঠে কতো গোপন হৃদয় ক্ষরণ… নির্ঘুম রাত… দীর্ঘশ্বাস… ঘাম ঝরা দুর্বিষহ কষ্ট জড়িয়ে, তা কেউ জানলো না। জানা হলো না কারো__ পরিবারের এক মুঠো সুখের পেছনের গল্প, গল্পই থেকে যায়। যে গল্পের শুরু আছে, কিন্তু শেষ নেই…
২৭টি মন্তব্য
কৃন্তনিকা
বাস্তবতা হয়ত এমনই…
আপনার লেখা ভাবাচ্ছে আমায়…
(y)
রিমি রুম্মান
এটা নির্মম বাস্তবতা…
রুদ্র রুহান
হয়তো ওই চাঁদ আর এই পৃথিবীর ইতিহাস
আছে। কিন্তু যে ধারাবাহিক অন্ধকার
মাতৃগর্ভ হইতে সংগ্রহ করিয়া দেহের
অভ্যন্তরে লুকাইয়া ভিখু ও পাঁচী
পৃথিবীতে আসিয়াছিল এবং যে
অন্ধকার তাহারা সন্তানের মাংসল
আবেষ্টনীর মধ্যে গোপন রাখিয়া
যাইবে তাহা প্রাগৈতিহাসিক,
পৃথিবীর আলো আজ পর্যন্ত তাহার
নাগাল পায় নাই , কোনোদিন পাইবেও
না।
রিমি রুম্মান
ভাল বলেছেন… 🙂
সাইদ মিলটন
🙂
রিমি রুম্মান
শুভ কামনা রইলো…
জিসান শা ইকরাম
প্রবাসে ছেলে ভাই পাঠিয়ে আমরা তাঁদের যন্ত্র বানিয়ে ফেলি
টাকার যন্ত্র–
আমিও এমন ছেলে দেখেছি কেনাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিংগাপুরে।
ভালো লিখেছেন ।
রিমি রুম্মান
এটি একটি মাত্র ঘটনা। এমন অনেক ঘটনা চোখের সামনে দেখি প্রতিনিয়ত।
খসড়া
আসলেই যে গল্পের শুরুই আছে শেষ নেই। আমিও যেন অনুভব করছি ওদের বোবা কান্না।
রিমি রুম্মান
প্রবাসে যারা আছে, তারা কিছুটা স্বেচ্ছায় মনের টানে, কিছুটা ঠেকে সব কষ্ট একাকী নিভৃতে সয়ে যায় … সবার প্রতি তাদের অনেক ভালোবাসা… অনেক …
মিথুন
একজনের স্বপ্ন ভাঙ্গে, স্বপ্ন ভাঙ্গার কষ্ট কেউ বোঝে না, কষ্টের পাহড়ে তাঁরা নির্মান করে তাদের স্বপ্নের ঘর।
রিমি রুম্মান
এটাই বাস্তবতা… নির্মম বাস্তবতা
ব্লগার সজীব
এই রেমিট্যান্সের অপর পিঠে কতো গোপন হৃদয় ক্ষরণ… নির্ঘুম রাত… দীর্ঘশ্বাস… ঘাম ঝরা দুর্বিষহ কষ্ট জড়িয়ে, তা কেউ জানলো না। জানা হলো না কারো__ পরিবারের এক মুঠো সুখের পেছনের গল্প, গল্পই থেকে যায়। 🙁
রিমি রুম্মান
পরিবারের এক মুঠো সুখের পেছনের গল্প, গল্পই থেকে যায় …
নুসরাত মৌরিন
প্রবাসীদের দুঃখ জাগানিয়া গল্প গুলো আড়ালেই থেকে যায়।
🙁
রিমি রুম্মান
ঠিক বলেছেন… ভাল থাকবেন। শুভ কামনা…
মোঃ মজিবর রহমান
আপু আমরা বুঝি, কারণ আমরা খেটে খাওয়া মানুষ ।
বঝেনা ঐ শালার মন্ত্রী , সচিব, ব্যাংকের গভনর ব্যাটারা।
রিমি রুম্মান
পরিবারও কি বোঝে ?
লীলাবতী
আমরা তাঁদের প্রানকে খেয়ে ফেলছি। শ্রদ্ধা এই সব প্রবাসী ভাইদের প্রতি।
রিমি রুম্মান
ভাল থাকুন নিরন্তর…
স্বপ্ন
কষ্ট লাগলো পড়ে।
রিমি রুম্মান
নিজ চোখে দেখা আমার কষ্ট আরও বেশী…
শুন্য শুন্যালয়
চোখের সামনে এসব দেখি রোজ, কস্ট পাই খুব। দূর থেকে পরিবারের কেউ এটা আসলে পুরোপুরি বুঝতে পারবেনা। এ গল্পের শেষ নেই সত্যি আপু।
রিমি রুম্মান
এ গল্পের শুরু আছে… কিন্তু শেষ নেই… ভাল থাকবেন।
জিসান শা ইকরাম
এই লেখাটি প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়েছে।
অভিনন্দন রিমি রুম্মান ।
http://www.prothom-alo.com/durporobash/article/405184/%E0%A6%97%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B6%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%81-%E0%A6%86%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B7-%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%87
প্রহেলিকা
অভিনন্দন এই প্রিয় ব্লগারকে, উনি বেশ ভালও লেখেন আর এটা তাঁরই সম্মান,
উনি সোনেলার সম্পদ বটে,
এমন একজন আন্তরিক লেখক পেয়ে আমরাও আনন্দিত।
শুভেচছা থাকলো।
অরণ্য
শুভেচ্ছা আর শুভকামনা আমাদের এই সোনেলা বন্ধুকে। -{@