দুটি নিউ ব্রান্ডের টেক্সির মধ্যে থেকে ছোটন সহ কিছু স্পেশাল পোষাকদারী লোক বেরিয়ে ভাইয়ের বাসায় ঢুকেন।কার্পেটে সাজানো ভাইয়ে বিশাল বৈঠক খানায় অবস্হান নেন তারা।ছোটনের ভাইয়ের পরিবারের সাথে বেশ অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল বেশ আগে থেকেই তাই সে অন্দর মহলে ভাবীর সাথে আড্ডা মারছে।ভাই সবে মাত্র সাওয়ার সেরে তোয়ালে ভেজাঁ চুল শুখানোর চেষ্টায় ছোটনকে দেখে ভাইয়া তাকে ভাল মন্দ জিজ্ঞাসা করেন।
-কি রে কেমন আছস?
-ভালো তবে….
-তবে কি?
ছোটন ভাইয়ের হাতে পত্রিকাটি দেন।
-ফুলীঁ আমার পরিচিত,ওরে থানার দারোগা একটি মিথ্যে সাজানো খুনের মামলায় গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।আমার জানা মতে মেয়েটি খুন করেনি, ওরে কেউ ফাসিয়েছে,এর আগের দিন ফুলীর কর্মসহলে গেঞ্জাম হয় ফুলীর লেটে আসা নিয়ে এর পরই মার্ডার।
-হুম,ঠিক আছে তুই থানায় যা সেখান থেকে আমাকে ফোন দিবি আমি ওসির সাথে কথা বলব।
-ঠিক আছে ভাইয়া,ওরা বৈঠক খানায় আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
-তুই যা আমি আসছি…..।
বৈঠক খানায় ঢোকার সাথে সাথে সবাই দাড়িয়ে সম্মান জানান।কি আশ্চর্য্য আমাদের দেশের মানুষ যাকে দেখে সবাই দাড়িয়ে গেল সে নিজেও জানেননা এর মানিটা কি শুধু এটুকু জানেন তারা তাকে সম্মান করেছে অথচ এই সম্মানটুকু করতে তাদের ট্রেনিং হয়েছিল স্কুল কলেজ থেকে কোন স্যার যখন শ্রেনী ক্লাশে ঢুকতেন আর এখন সম্মান করে দাড়িয়ে যান একজন শিক্ষিত উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তা হয়ে আরেক জন অশিক্ষিত গন্ডমূর্খ সন্ত্রাসীর জন্য।
-কি খবর বলেন।
-এখন কি করব, ওরা আমাদের হেফাযতে আছে….আপনার কাছে পাঠিয়ে দিব?
-না,সে দিন…ওদের গুমের পর দিনই খবরটি বিভিন্ন পত্রিকায় আসে।সাবধানে ওদের রাখতে হবে।ওরা এখন কোথায়?মোট ক’য় জন?
-ওরা তিন জন এখনও আমাদের টর্চার সেলে আছে,তবে এর মধ্যে একজন লোকাল সাংবাদিকও আছেন।
ভাই চারদিকে তাকায় সিকুরিটি ইনচার্জকে ঢেকে বলে দেন নজরদারী বাড়াতে।সে স্পেশাল মোবাইল সেটটা হাতে নিয়ে নম্ভর টিপে কানে লাগান।
-বড় ভাই,সালামুআলাইকুম।মোবাইলে প্রায় ঘন্টা খানেক কথা হয় বড় ভাইয়ের সাথে।
-সাথে এক জন সাংবাদিক।…………ওকে,,, ঠিক আছে যে ভাবে বললেন সে ভাবেই হবে তবে কুত্তার বাচ্চাগুলোকে(পুলিশ) একটু সামাল দিবেন।
অতি গোপনীয়তায় বড় ভাইয়ের টেলিফোনে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় ভাই,,,,গুম হওয়াদের আর কোন বেচে থাকার সুযোগ দেয়া হবে না।কি ভাবে কোথায় কখন লাশগুলো ফেলাবে তাও ভাই জানিয়ে দেয় এই বৈঠকে।বৈঠক শেষে ভাই সহ ওরা বাহিরে এসে রোডে কিছুক্ষণ কেনো যেন অপেক্ষা করেন এর পর ওরা টেক্সিতে উঠে চলে যান।ভাইও বাড়ীর ভিতরে চলে যান।
ছোটন আরো কয়েক জন নিয়ে ভাইয়ের কথা মতন থানায় ঢুকে।এ এস আই ছোটনকে দেখে চেয়ার থেকে দাড়িয়ে যায়।ছোটন এ এস আইয়ের পোষাকে লাগানো লগোটাকে হাত দিয়ে কটুক্তি করে।
-এই মেডেলের সম্মানটুকু রাখিস…….বলেই এস আই এর টেবিলের সামনে চেয়ারটিতে বসে।
-কি খেদমত করতে পারি মিঃ….কথা টান দিয়ে নেন ছোটন।
-ছোটন….ওরফে ছোটন রাজা।……আমার এক ক্লাইন্ড নাম ফুলীঁ আপনার থানাতে বন্দী তাকে ছেড়ে দিতে হবে।
-বললেই হলো…. কোন জামিনের ব্যাবস্হা হয়েছে?
-না,ভাইয়া বলেছেন আপনার সাথে দেখা করতে।
-তবে ভাই সরি।
-মাসে মাসোয়ারা নেন কত?
-কি সব আবোল-তাবোল বলছেন,দাড়িয়ে পড়েন এস আই।
-আবোল তাবোল বলছি মাসোয়ার সময়তো ভাইয়াকে কোন কাগজ পত্র দেন না…. তো এখন ভাইয়ার কাজ করতে জামিনের কাগজ লাগব কেনো?
-সরি,আমি পারবনা আপনি বড় স্যারের সাথে আলাপ করেন।
-হুম…বড় স্যার,, মানে ওসি…..ভিতরে আছেন নাকি।
-হ্যা ভিতরে আছেন।
-দুর সাআলা আমিই বোকা বড় থাকতে ছোটরে কেনো!ঠিক আছে…. ঐ চল।
ওসি সাহেব টেলিফোনে কার সাথে যেন কথা বলছেন ফোনটা হোল্ড করে ছোটনকে দেখে ইশারায় বসতে বলেন।ফোনটা আবার কানে লাগিয়ে ওসি সাহেব কথা বলতে থাকেন।
-শুনেন মিঃ একটা আসামীকে ছেড়ে দিতে কিছু ডকুমেন্টস মানে জামিনের কাগজতো অন্তত লাগে… সেই কাগজ ছাড়া……।!!!
অপর প্রান্তের কর্কর কথার কারনে ওসির কথা হঠাৎ থেমে যায় …অপর প্রান্তের কথা সে শুধু কথা শুনতেই থাকেন।কথা শেষে রিসিভারটা এমন জোরে ক্লোজ করলেন যে ছোটন সহ সবাই চমকে উঠেন।সে যা বললেন তাতে এ ঘূনে ধরা সমাজের স্ব-চরিত্র দেখা দেয়।
-রাব্বিস কোথাকার,পুলিশ যেন তাদের চাকর।……..এই কে আচিস ফুলীকে ছেড়ে দে।
ফুলীঁ জেল থেকে বেরিয়ে আসে ছোটন বসা থেকে দাড়িয়ে ফুলীর কাছে এগিয়ে গিয়ে ছোটন তার এক সহকর্মীকে হুকুম করে ফুলীকে বাসায় পৌছে দিতে।ফুলীঁ নীরবে সহকর্মীর সাথে চলে যায়।ছোটন ওসি সাহেবের সামনের চেয়ারটিতে আবার মুখোমুখী বসে ভাইয়ের পাঠানো একটি প্যাকেট ওসি সাহেবের টেবিলের উপর রেখে ওসি সাহেবকে তা নেবার জন্য ইশারায় বলে ওসি সাহেব তা দেখে চোখঁ বড় বড় করে কিছু উত্তম মধ্যম কথা বললেন।
-আমাকে পারলে দয়া করে আসামীর একটি জামিনপত্র পাঠিয়ে দিবেন…….এ সব আপনার ভাইকে ফেরত দিয়ে বলবেন….আমি এখানে চাকুরী করতে আসিনি এসেছি জনগণের সার্ভেন্ট হয়ে সেবা করতে।
-আপনিতো দেখছি ভিন্ন কিসিমের, অবশ্য আপনি এখানে নতুন এসেছেন এখনও বুঝে উঠতে পারেননি।তবে এই প্যাকেটটা রাখুন তবে এই কেইসটা যেন এখানেই সমাপ্তি ঘটে…….মেয়ে মানুষ যায় ঝামেলা সহ্য করতে পারবে না।
-সরি….প্যাকেটটা নিয়ে যান উপরের মহলের নির্দেশেই ওকে ছেড়েছি আবার উপরের মহলের কর্তারা যা বলবেন তাই হবে।
-ঠিক,আছে নিবেন না যখন আর জোর করলাম না।ঐ চল…….।
চলবে….
২১টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
ভালই বাস্তব তুলে এনেছেন , আগের লেখা সব পড়িনি ।
এখন মনেও নেই কিছু , পড়ে নেব সবই ।
মা মাটি দেশ
আত্ত্বায় শান্তি এলো ধন্যবাদ প্রিয়। -{@ (y)
জিসান শা ইকরাম
সমাজের বাস্তবতা ভালো ভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন লেখায় —
লেখা চলুক ।
মা মাটি দেশ
ধন্যবাদ ভাইয়া -{@ (y)
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
ভালো লিখেছেন ।
মা মাটি দেশ
:Pleasure:
মশাই
কেঁচোর মতো কাদার অন্ধকারে এমন জীবনের কী অর্থ? কী বা এর পরিণতি?
মা মাটি দেশ
পরিণতি যাই হোক জীবন চলে তার আপন গতিতে।ধন্যবাদ।
বনলতা সেন
এটি তো পড়লাম কিছু বুঝলাম ও কিন্তু অন্য সব পড়ার সময় হবে না ।
মা মাটি দেশ
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ -{@ (y)
আজিম
ভাল বাস্তবতা এঁকেছেন। সাহিত্যের কাজ শুধু বাস্তবতা আঁকাই নয়। সমাধানের পথ বাৎলানোও সাহিত্যের বাইরের কোন বিষয় নয় এবং বঞ্চনাপূর্ন সমাজে সেটাই সাহিত্যের প্রধান কাজ বলে মনে হয়।
তবুও অনেক ধন্যবাদ চমৎকার পোষ্ট দেয়ার জন্য।
মা মাটি দেশ
ধন্যবাদ ভাইয়া প্রতিটা পর্বেই এসব গুণে সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছি কতটুকু হচ্ছে তা আপনাদের মূল্যায়ণে পাবো -{@ (y)
খসড়া
ফুলিরা আছে থাকবে। বদলাবেনা তার জীবন।
মা মাটি দেশ
ধন্যবাদ
সঞ্জয় কুমার
লেখায় বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলেছেন
মা মাটি দেশ
জীবন্তকে ফুটিয়ে তুলা চেষ্টা মাত্র।ধন্যবাদ সঞ্চয় দা।
ব্লগার সজীব
দিন দিন লেখার উন্নতি হচ্ছে আপনার ।
মা মাটি দেশ
আপনাদের কাছ থেকেই শিখা।ধন্যবাদ সজীব ভাইয়া।
শুন্য শুন্যালয়
এমন অনবরত লিখে যান কিভাবে বাস্তবতাকে একদম হাতে ধরে? পড়েছি এবং চলবেই
মা মাটি দেশ
দেরীতে হলেও মন্তব্য পেলাম…চলবে।আপু আমি যে আপনাদের কাছ থেকেই শিখেছি একটু একটু করে এই প্রান প্রিয় সোনেলায়। -{@ (y)