ব্লগে এসেছি অল্প কিছুদিন। সবাই হয়তো ভাবেন, এই ব্যাক্তি কে? কেন সে সবসময় খুচাখুচি করতে থাকে? তাই আজকে খুচাখুচি নয়, একটি মানবিক আবেদন নিয়ে এসেছি।
গেছিলাম কার্জন হল। বান্ধুবীকে জন্মদিন উইশ করতে। সেখানে গিয়ে দেখলাম ডিএস্লার দিয়ে ছবি তোলার পিছনের অজানা কাহিনী।
দুই তরুনী এসেছে কাজিন জাতীয় একজনকে নিয়ে, যার হাতে একটা লম্বাআআআ লেন্স ওয়ালা ক্যামেরা। তারা এই কাঠাফাটা গরমে জবরজং লাল রঙের জামা পড়েছে আর সাথে নিজের ওজনের সমান ভারী মেকাপ। টিস্যু আর আয়না নিয়ে সারাক্ষণ সেগুলা নানান রকম মুখভঙ্গী করে এদিক ওদিক ঘসাঘষি করতেছে।
পুরো এলাকার এইমাথা থেকে সেই মাথা তারা চষে বেড়াচ্ছে। তবে ঢাকা শহরে পা ফেলার জায়গা পাওয়া মুশকিল সেখানে “নাইস ব্যাকগ্রাউন্ড” এতক্ষন ধরে কিভাবে খালি থাকবে? ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের কাঠের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বেচারী উদাস দৃষ্টিতে তেরছা চোখে দেয়ালে বসা একটা টিকিটীকির দিকে তাকালো। ক্যামেরা ম্যান কইল “পারফেক্ট, হোল্ড ইট” শুনেই টিকিটীকি হারামিটা দিল দৌড়। সুন্দ্রীর তেরছা দৃষ্টি পুরাই ট্যারা হইয়া গেল।
এবার তারা আসল বাইরে “ন্যাচরাল লাইটে” মাথানস্ট আনন্যাচরাল চেহারার ছবি তুলতে।
দুই ঠ্যাং চেগিয়ে যেই না মাত্র পোজ দিল আর ক্লিক করার মুহূর্তে গাওয়ার ঝালমুড়ী ওয়ালা কথা নাই বার্তা নাই এক্কেবারে ক্যামেরার সামনে। ভীষন ন্যাচরাল একটা ছবি উঠল বটে। তবে সেখানে কোনও গ্ল্যামার নাই।
বেচারী সুন্দ্রীদের কষ্ট দেখে এত মায়া হচ্ছিল যে ডেকে একটা আইসিক্রীম খাওয়াই। কিন্তু তাদের লিপস্টিক এর দিকে তাকিয়ে সেই চিন্তা বাদ দিলাম।
এবার সেই ক্যামেরাম্যান আর সুন্দ্রীরা লোকেশন খুঁজতে খুঁজতে গেল কোন এক চিপায়। আর আমরা নিজেদের আড্ডায় মশগুল হয়ে ভুলে গেলাম তাদের কথা। মিনিটখানেক পর হইচই।
কি ব্যাপার? চিপায় দুই “আইটেম” নিয়ে লটরপটর করা অবস্থায় এক বহিরাগত কে ধরা হয়েছে। চড় থাপ্পড় দিতে দিতে চিপা থেকে বের করা হল বেচারা ফটোগ্রাফার কে। আর মেয়ে দুইটা তার পিছে পিছে হেঁটে বের হয়ে গেল। লজ্জায় অপমানে ঘামে ছেলেটার মুখ আলকাতরার মত কালো দেখাচ্ছিল। আর মেয়েগুলোর মেকাপের চোটে এক্সপ্রেশন ঢেকে গেছিল। সবাই তাদের ভুল বুঝেছে, কিন্তু সেটা বলার মত হ্যাডম তিনজনের কারোরই ছিল না। সুন্দ্রীরা সাধারণত কোনও কিছুর প্রতিবাদ করে না। আর যে বেচারা ক্যামেরা নিয়ে নিয়ে সুন্দ্রীদের পিছে ঘুরে, তার কথা আর কি বলব?
এরপর থেকে ঠিক করেছি ফেসবুকে পোস্টানো সব সুন্দ্রীদের ফটোতে লাইক দিব আর “নাইস ফোট, প্লিজ এদ মে” লিখে কমেন্ট করবো। এত ত্যাগ আর কষ্টের ফসল এই ছবিগুলো দেখে এড়ীয়ে যাওয়া নেহাতই মানবিক ব্যাপার। আশা করি এই মানবিক বিষয়টী সবাই একটু ভেবে দেখবেন।
১৫টি মন্তব্য
মা মাটি দেশ
:Approve:
জিসান শা ইকরাম
দারুন ভাবে উপস্থাপনা করলেন ।
পাঠককে আটকে রাখতে জানেন লেখার মাঝে ।
এত মানবিক লেখা দেখে আমিও ঠিক করলাম এরপর থেকে “নাইস ফোট, প্লিজ এদ মে” লিখে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাবো :p । আহারে কত কষ্ট করে ছবি তুলেন তাঁরা 🙁
সিনথিয়া খোন্দকার
ধন্যবাদ জিসান ভাই, কৃতিত্বের অর্ধেক অংশ আপনার। 🙂
জিসান শা ইকরাম
কেনো ভাই , আমি আবার কি করলাম ?
শুন্য শুন্যালয়
নাহ, আপনার যন্ত্রণায় তো দেখি, ফটোগ্রাফি করাও মুশকিল, আর কি নজর রে বাবা !!! আপনার কাছ থেকে ১০০/২০০ হাত দূরে থাকাই মঙ্গলজনক… :Wink:
সিনথিয়া খোন্দকার
আপনার তোলা ছবি দেখেছি। সসত্যি ই অসাধারন ছিল। চড়া মেকাপ করা সুন্দ্রীদের ফটো তুলতে দেখিনি আপনাকে। 😀
শুন্য শুন্যালয়
চান্স পাইলে তুলুম তো… তা টিকটিকি টা দেখতে কেমন ছিলো?
ব্লগার সজীব
আপু হাসতে হাসতে মরে গেলাম । আপনার ফেইসবুক আইডির লিংকটা দিন প্লিজ ( যদি প্রফাইলে ফোটো থাকে ) । এরপর আপনাকে বলি ‘“নাইস ফোট, প্লিজ এদ মে” (y) (y) ফুলের ছবিও দিতে পারি :D)
সিনথিয়া খোন্দকার
মাথা কি খারাপ? আমি অন্যেরে খোচাইয়া নিজে ফটো দিব? সবাই আমারে বাঁশ দিবে। :p
খসড়া
:D)
স্বপ্ন
এমন লেখা পড়ে হাসতে হাসতে আমার মৃত্যু হলে তার জন্য দায়ী থাকবেন আপনি। আগাম বলে দিলাম :D)
এদ মি প্লিজ :p
লীলাবতী
আপনি বেশ মজার একজন মানুষ। কিভাবে লিখতে হয় জানেন আপনি 🙂
ফেইসবুকের টিপ্স আপনার কাছেই নিতে হবে।
সিনথিয়া খোন্দকার
অবশ্যই। হুকুম করুন জাহাপনী :p
আগুন রঙের শিমুল
😀
এদ মেহ পিলিজ এদ মেহ :D)
সিনথিয়া খোন্দকার
:p