এক গাঁয়ে এক রাখাল ছিল। খুব নরম ও মিষ্টি স্বভাবের। সারাদিন তাক- ধিন করে নেচে বেড়াত আর সন্ধেবেলাতে বাবার ভয়ে পড়তে বসত। বাবার ইচ্ছা ছেলেকে মাষ্টারি করাবেন। বড্ড শখ ছেলের স্কুলে গিয়ে বুক ফুলিয়ে বলে বেড়াবেন উনি মাষ্টারের ছেলে। তাই ছোটবেলা থেকেই শাসনে রেখেছিলেন। গরুর ঘাস থেকে মায়ের ধানের বস্তা পর্যন্ত কোনো কাজই করতে দেওয়া হত না।
#
স্কুলে গিয়ে মনমরা হয়ে বসে থাকত আর ভাবত ওই দূরের নুইয়ে পড়া গাছটির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে । কত কথা, কত স্বপ্ন তার চোখে ভিড় করে আসত। তার মনে হত সে যেন এক ছুটে রোদ্দুর ধরে আনত পারত ,কোকিলের বাসায় হানা দিত, আপনমনে মাঠের এপার ওপার ছুটে দৌড়াতে পারত ,ধানের ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে যেতে কোন কাঠবিড়ালির সংগে বন্ধুত্ব করতে পারত ,রাস্তার ধারের ট্যাপকলের জল নিয়ে খেলা করতে পারত। তাহলে তঁার একঘেঁয়ে বোঝার পড়াশোনা থেকে অনেকটা হালকা হতে পারত।
#
এইভাবে দিন কাটতে লাগল ছেলেটার। পরে পরে পড়াশোনাতে ভালো রেজাল্ট ও করতে লাগল। একদিন বাবার ইচ্ছা পূর্ন করল। বাড়ির সবাই খুশি। বাবা আনন্দে আটখানা। ছেলে নিজের পায়ে দঁাড়িয়ে গেছে কোন চিন্তা নেই এবারে শান্তিতে তারা মরতে পারবে।
#
ছেলের সংগে গাঁয়ের উজানবাড়ির মেয়ে চম্পার সংগে সম্বন্ধ হল। ধুমধাম করে বিয়ে হল। বিয়ের এক বছর পর নাতি হল। পরিবার নিয়ে সবাই একসংগে বাস করছিল এমনসময় একটা ঘটনা ঘটে গেল যা পুরো পরিবারটাকে তছনছ করে দিল।
#
ছেলেটির গলায় ক্যান্সার দেখা দিল। পুরো পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এল। বৌ সারাক্ষণ কঁাদতে থাকল। মায়ের চোখের জল শুকিয়ে বারবার মূর্ছা যেতে থাকলেন। স্কুলে যেতেও তঁার ভালো লাগত না। কেউ আর খারাপ ব্যবহার করে না সবাই সহানূভূতি দেখাচ্ছে । যা দেখে মনে হয় মৃত্যু বুঝি দোরগড়ায় আর বেশীদিন বাকি নেই। পুরুষমানুষের চোখে জল সবচেয়ে বড় কাপুরুষতা বলে মনে হয়।
#
শরীরটা রুগ্ন হয়ে আসছিল। বৌ মায়ের করুণ বিরক্তিটাও ফুটে উঠতে দেখা যাচ্ছিল। আসলে সংসার এমন জায়গা যেখানে নিস্বার্থভাবে কেউ কারোর প্রতি ত্যাগ করে না। যেমন অসুস্থ পুত্র মায়ের কাছে জঞ্জাল হয়ে ওঠে যতক্ষণ না টানতে পারার ক্ষমতা নিঃশেষ হচ্ছে। বৌ র কাছে বড় বোঝা যতক্ষণ না তিলে তিলে কষ্ট পেতে পেতে নিঃশেষ হচ্ছে।
#
অবশেষে মারা গেল আর পেনশনের কটা টাকা বৌ বাচ্চা নিজেদের কোনক্রমে দিনাতিপাত করতে লাগল। পুকুরপাড়ের মুক্ত হাওয়া আর ধান গাছের শিষগুলি মাথা নাড়িয়ে দুঃখ প্রকাশ করল যা কেউ দেখতেই পেল না।
#
১৫টি মন্তব্য
ভোরের শিশির
দিদি, ভিন্ন একটি পোস্ট দিলেন যা আপনার দেওয়ার মধ্যে আসে না সহজেই।
এবং সব সময়ের মতো আপনার পোস্টে ঈমন কিছু কথা থাকে যা মনের ভেতরে বসে যায়… সত্যিই তাই, এক সময় সবাই বোঝা হয়ে যায় শুধু প্রকৃতিই মনে রাখে…
অনেক দিন পর এলেন, শুভেচ্ছা দিদি -{@
ভোরের শিশির
পুনশ্চঃ শিরোনামে বানান বিভ্রাটটি দেখবেন :p
অরুণিমা
Sorry, ota blog sonchaloker daitto.amar banan tik i chilo.
ভোরের শিশির
যদিও বুঝলাম না ব্লগ সঞ্চালক বানানের দায়িত্ব কি করে তবুও শুভেচ্ছা দিদি।
জিসান শা ইকরাম
^:^ ??
তানজির খান
অরুণিমা দিদি, গল্প পড়ে বিষাদে মন আচ্ছন্ন হল। মনে হচ্ছে যেন এক সত্য ঘটনা।আমাদের চারপাশে এমন ঘটনা ঘটছে। দারুণ বিশ্লেষণ ছিল সবার কাছে জঞ্জাল হয়ে ওঠার পরিক্রমা নিয়ে।
শুভ কামনা
স্বপ্ন
গল্প প্রকাশ করলেন এই প্রথম।বহন করার ক্ষমতা অসহ্য হয়ে উঠলে একসময় আপন লোকের কাছেই মানুষ বোঝা হয়ে থাকে।এটিই বাস্তবতা।
মোঃ মজিবর রহমান
এরই নাম সংসার দিদি! যতক্ষণ দিতে পারবেন ততক্ষন সংসারে সবাই আপন। নাহলে আপনার ধস।
সুন্দর বাস্তব লেখা
শুভেচ্ছা দিদি।
অরুনি মায়া
দীর্ঘদিনের অসুস্থ মানুষদের যেমন কষ্ট তেমনি যারা তার সেবা করে তাদের আরও বেশি কষ্ট | একটি নির্মম সত্য |
নীলাঞ্জনা নীলা
মানুষ যতোদিন সুস্থ-সবল থাকে, ততোদিনই তার পাশে মানুষ থাকে। জীবন তো দেখিয়েছে এমন। শুধু কি সুস্থতা? আসলে পাওয়া-না-পাওয়াও আছে। কথায় আছে তো “তেলো মাথায় ঢালো তেল, ভাঙ্গা মাথায় ভাঙ্গো বেল।” তো যতদিন মানুষ তাদের মনমতো পাওয়া পেতে থাকে, ততোদিনই তেল দেয়।
দিদি আপনার লেখা আমার ভালো লাগে। ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের উপস্থাপন আর শুধু উপস্থাপনই নয়, তুলে ধরাটাও আক্ষরিক অর্থে অসাধারণ। আর এবার গল্প, তার আকার-আকৃতি-পরিধিও মানে কাঠামোটাই অন্যরকম। -{@
অরুণিমা
নীলাদি খুব ভালো লাগল। তোমার লেখাও ভালো।
জিসান শা ইকরাম
আপনাকে কবিতাতেই মানায়
গল্পের তুলনায় আপনার কবিতা বেশ ভালো হয়।
শুভ কামনা।
রিমি রুম্মান
জীবন, চারিপাশের মানুষ সব এমনই আসলে।
শেষটা সুন্দরভাবে শেষ হল। -{@
মারজানা ফেরদৌস রুবা
বাস্তবতা বড়ো বেশি কঠিন। সংসার মানেই লেনাদেনা।
চিরন্তন সত্য একটা বিষয় তুলে আনলেন।
আবু খায়ের আনিছ
মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে একটা জীবিত মানুষ মৃত হয়ে যায় আর সেই সাথে বদলে যায় সব কিছু। জীবিত অবস্থায় সান্নিধ্য কোন সমস্যা নয়, বরং আনন্দ উল্লাস এর। আর মারা যাওয়ার সাথে সাথেই সে অশুচি, তাকে ছোয়া যাবে না অশুদ্ধ হয়ে যাবে। মরে গেছে তাড়াহুড়ো করে পুড়িয়ে ফেল, গোর দাও বা অন্য কিছু। সারা বাড়ি গোবর জল দিয়ে পবিত্র করে নাও। সব আমাদের মানুষেরই কম্য।