এক রাখালের কথা

অরুণিমা মন্ডল দাস ১০ ডিসেম্বর ২০১৫, বৃহস্পতিবার, ০৮:২৪:১৪পূর্বাহ্ন গল্প ১৫ মন্তব্য

এক গাঁয়ে এক রাখাল ছিল। খুব নরম ও মিষ্টি স্বভাবের।  সারাদিন তাক- ধিন করে নেচে বেড়াত আর সন্ধেবেলাতে বাবার ভয়ে পড়তে বসত। বাবার ইচ্ছা ছেলেকে মাষ্টারি করাবেন। বড্ড শখ ছেলের স্কুলে গিয়ে বুক ফুলিয়ে বলে বেড়াবেন উনি মাষ্টারের ছেলে। তাই ছোটবেলা থেকেই শাসনে রেখেছিলেন। গরুর ঘাস থেকে মায়ের ধানের বস্তা পর্যন্ত  কোনো কাজই করতে দেওয়া হত না।

#

স্কুলে গিয়ে মনমরা হয়ে বসে থাকত আর ভাবত ওই দূরের নুইয়ে পড়া গাছটির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে । কত কথা, কত স্বপ্ন তার চোখে ভিড় করে আসত। তার মনে হত সে যেন এক ছুটে রোদ্দুর ধরে আনত পারত ,কোকিলের বাসায় হানা দিত, আপনমনে মাঠের এপার ওপার ছুটে দৌড়াতে পারত ,ধানের ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে যেতে কোন কাঠবিড়ালির সংগে বন্ধুত্ব করতে পারত ,রাস্তার ধারের ট্যাপকলের জল নিয়ে খেলা করতে পারত। তাহলে তঁার একঘেঁয়ে বোঝার পড়াশোনা থেকে অনেকটা হালকা হতে পারত।

#

এইভাবে দিন কাটতে লাগল ছেলেটার। পরে পরে পড়াশোনাতে ভালো রেজাল্ট ও করতে লাগল। একদিন বাবার ইচ্ছা পূর্ন করল। বাড়ির সবাই খুশি।  বাবা আনন্দে আটখানা। ছেলে নিজের পায়ে দঁাড়িয়ে গেছে কোন চিন্তা নেই এবারে শান্তিতে তারা মরতে পারবে।

#

ছেলের সংগে গাঁয়ের উজানবাড়ির মেয়ে চম্পার সংগে সম্বন্ধ হল। ধুমধাম করে বিয়ে হল। বিয়ের এক বছর পর নাতি হল। পরিবার নিয়ে সবাই একসংগে বাস করছিল এমনসময় একটা ঘটনা ঘটে গেল যা পুরো পরিবারটাকে তছনছ করে দিল।

#

ছেলেটির গলায় ক্যান্সার দেখা দিল। পুরো পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এল। বৌ সারাক্ষণ কঁাদতে থাকল। মায়ের চোখের জল শুকিয়ে বারবার মূর্ছা যেতে থাকলেন। স্কুলে যেতেও তঁার ভালো লাগত না।  কেউ আর খারাপ ব্যবহার করে না সবাই সহানূভূতি দেখাচ্ছে । যা দেখে মনে হয় মৃত্যু বুঝি দোরগড়ায় আর বেশীদিন বাকি নেই। পুরুষমানুষের চোখে জল সবচেয়ে বড় কাপুরুষতা বলে মনে হয়।

#

শরীরটা রুগ্ন হয়ে আসছিল। বৌ মায়ের করুণ বিরক্তিটাও ফুটে উঠতে দেখা যাচ্ছিল। আসলে সংসার এমন জায়গা যেখানে নিস্বার্থভাবে কেউ কারোর প্রতি ত্যাগ করে না। যেমন অসুস্থ পুত্র মায়ের কাছে জঞ্জাল হয়ে ওঠে যতক্ষণ না টানতে পারার ক্ষমতা নিঃশেষ হচ্ছে। বৌ র কাছে বড় বোঝা যতক্ষণ না তিলে তিলে কষ্ট পেতে পেতে নিঃশেষ হচ্ছে।

#

অবশেষে মারা গেল আর পেনশনের কটা টাকা বৌ বাচ্চা নিজেদের কোনক্রমে দিনাতিপাত করতে লাগল। পুকুরপাড়ের মুক্ত হাওয়া আর ধান গাছের শিষগুলি মাথা নাড়িয়ে দুঃখ প্রকাশ করল যা কেউ দেখতেই পেল না।

#

 

৫২৭জন ৫২৭জন
0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ