
হিমু বেশ কয়েকদিন হলো গ্রামের বাড়ি গিয়েছে। আর ধুলিমাখা শহরটার পুরোটাই আমার কাছে অতৃপ্ত লাগছে। চায়ের টোংঘর থেকে শুরু করে বিলাসী রেস্টুরেন্টের খাবার আরও বেশি অসহ্যকর লাগছে। সময়গুলো যেন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাতরাচ্ছে। আর দিনের বাকি অংশটুকু সামরিক চিকিৎসা নিতে ব্যস্ত।
গতরাতে হিমু কল দিয়েছিল। বললো – পরশু ঢাকায় চলে আসবে। অবশ্য তখন মনটা স্বাচ্ছন্দ্যে ভরে গেলো নিমেষেই। পিষে জড়োসড়ো গুটিসুটি হয়ে এই যান্ত্রিক মানুষের চিপায় হিমুর মতো বন্ধু না থাকলে ঢাকা শহর বসবাসের জন্য অযোগ্য।
হিমু আসছে। বাসে উঠেই কল দিয়েছিল। বললো রওনা দিয়েছি। ইনশাআল্লাহ ঘন্টা তিনেকের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছে যাবো। হতাশার চাদরগুলো গরমে ঘামের অতিষ্ঠে নিজে নিজেই দূরপাল্লার বাসের হর্ণে পেঁচিয়ে গেলো। আর আমার ফুরফুরে মেজাজে সিগারেটের নেশা ধরলো।
বাস থেকে নেমেই ব্যাগ থেকে নাড়ুর কৌটোটা বের আমার হাতে ধরিয়ে দিলো। বললো – আম্মু তোর জন্য পাঠিয়েছে। বললাম পাঠিয়েছে ভালো কথা। তাই বলে রাস্তার মোড়েই দিতে হবে। হুম, দিতে হবে। প্রকৃত ভালোবাসাগুলো এভাবেই সময়ে অসময়ে দেহের আনাচে-কানাচেতে উঁকিঝুঁকি মারে।
হিমুর ব্যাগ থেকে অন্য ধরনের একটা শব্দ ভেসে আসছিলো। শব্দটা ছদ্ম নামের আড়ালে বসবাস করে অবশ হয়ে গেছে। নইলে মনের মধ্যে বিড়বিড় করে খেলছে অথচ ঠোঁটে উচ্চারিত হচ্ছে না এমনকি হয় না-কি। জটপাকানো জঞ্জালে পরিত্যক্ত মনের প্রশ্নটা করেই ফেললাম।
তোর ব্যাগে কিসের শব্দ হচ্ছে রে?
হিমু – কোন শব্দ?
এইযে মাঝেমধ্যে রিনিঝিনি, আবার ঝুনুরঝুনুর শব্দ হচ্ছে।
হিমু – এখন বলা যাবে না।
কেন? এখন বললে সমস্যা কি?
হিমু উত্তর দেবে এমন সময় রিংটোন বেজে উঠলো। ফোন রিসিভ করেই বলে উঠলো – জানু, আমি বাস থেকে নেমে রিকশায় বাসায় যাচ্ছি। বাসায় গিয়ে তোমাকে ফোন দেই সোনা।
সত্যি! এই ন্যাকামো কথাগুলো আমাকে ভিতর থেকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। তিনবেলা খালি পেটে থাকার চেয়েও অসহ্য লাগে। শরীরটা কুড়মুড় করে ওঠে অসহ্য ভণিতায়। অবশ্য বর্তমানে কিছুটা ভণিতায় আমিও ফেঁসে গেছি।
‘তুমি একদিন ডালা ভরে কাচের চুড়ি নিয়ে আসবে। যেখানে সাজানো থাকবে লাল, নীল, হলুদ সবুজ চুড়ি। আর কিছু সাদা কালো চুড়ি। আমি হাত বাড়াবো। তুমি একটা একটা করে চুড়ি আমাকে পড়িয়ে দিবে। চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ শুনতে শুনতে বিকাল পেড়িয়ে যাবে। আমার হাসির সাথে পাল্লা দিয়ে চুড়িও বাজবে। ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেলে আমার চুড়ির শব্দে তুমি আমাকে খুজে বের করবে।’ হিমুর কাছে কথাগুলো ঠোঁটস্থ কণ্ঠস্থ। একদমে একনিশ্বাসে অবলীলায় রেডিও জকির মতো বলে ফেললো।
তারমানে ব্যাগের মধ্যে তখন চুড়ির ঝাঁকুনির/রিনিঝিনির শব্দ হচ্ছিল।
হিমু – একদম ঠিক ধরেছিস।
এতো বাহারি রঙের চুড়ি পেলি কোথায়?
হিমু – পাশের গ্রামে মেলা বসেছিলো। সেখান থেকেই…।
হিমু – দরজাটা লাগিয়ে দে। আমি চললাম।
এই অসময়ে কোথায় যাচ্ছিস রে?
হিমু – চুড়ি গুলো পড়াতে হবে না…।
১৪টি মন্তব্য
সুরাইয়া পারভিন
ভালো লেগেছে।
একটা একটা করে না পরিয়ে অন্তত ৪/৫ একসাথে পরাতে বলবেন।এতে সময়ও কম লাগবে আর চুরি পর্যায়েও সহজ হবে,,,,😛
নৃ মাসুদ রানা
হুমম, পরের গল্পে সেরকমই কিছু লিখবো।
এস.জেড বাবু
একটা করে চুড়ি পড়ালে ভাল হবে,
একসাথে বেশি চুড়ি পড়ালে যদি হটাৎ ওজনের কারণে হাতে সমস্যা হয়-
পরে লোকে বলবে মেয়ের এক হাত লম্বা।
সুন্দর এগিয়ে যাচ্ছে
নৃ মাসুদ রানা
ও তাই, আপনারা যেরকম চান সেরকমই হবে।
এস.জেড বাবু
আপনি ভালো লিখেন, এবং সেটাই ঠিক।
আমরা তো মজা করি ভাই।
আপনি আপনার মতই লিখবেন ইনশাআল্লাহ
নিতাই বাবু
হাত ধইরো না চুড়ি ভেংগে বিঁধলে আমার হাতে
বলবে লোকে কলংকের দাগ কে দিল এ রাতে ।
দোহাই তোমার হাত ছেড়ে দাও লাগে বড় ডর
সোনার অংগে দাগ পড়িলে কেমনে যাবো ঘর ।
হাত ধইরো না চুড়ি ভেংগে যাবে হে নাগর ।।
ছায়াছবি নয়ন মনি
নৃ মাসুদ রানা
ভাঙার মাঝেও আনন্দ বিরাজ করে
রেজিনা আহমেদ
সুন্দর লিখেছেন
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ প্রিয়..
মনির হোসেন মমি
হুম প্রেমিক হিমু এবার চুড়ির দিয়ে প্রেমের গল্প রচনা করবেন।খুব ভাল হয়েছে। তারপর?
নৃ মাসুদ রানা
আবার চিঠির গল্প
মনির হোসেন মমি
হুম অপেক্ষায় আছি।
ছাইরাছ হেলাল
রিনিঝিনি আমরাও টের পাচ্ছি।
নৃ মাসুদ রানা
ও তাই, তাহলে তো বেশ ভালো। সবার মনে ছোঁয়া লাগলেই সার্থকতা।