
খুবই ভোরে হিমুর ফোন বেজে উঠলো। আচমকাই ঘুম ভেঙে গেলো আমার। তখনও বিছানায় বিভোর হয়ে ঘুমাচ্ছে হিমু। হিমুকে ডাকবো ডাকবো করছি ইতিমধ্যেই রিংটোন বন্ধ হয়ে গেলো। আমি আবার ঘুমানোর দাওয়াতে যাবো যাবো করছি ঠিক তখনই আবার হিমুর ফোন বেজে উঠলো। এবার হিমুকে না ডেকে সরাসরি আমি নিজেই ফোন রিসিভ করলাম।
আমি পুরোপুরি শুকনো পাতার মতো হয়ে গেলাম। একটু আগুনের ছোঁয়া অনুভূত হলেই দাউদাউ করে জ্বলে উঠে নিমেষেই ছাঁইছুঁই হয়ে যাবে ভিতরের কলিজা অবধি। পুড়ার মতো কোনকিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। শুধু ধোঁয়া হয়ে চারপাশটা ঘেরাও করে রাখবে।
কান্নাকাটির শব্দ। এতো ভোরে কান্নার শব্দ কানে এসে ভিড় করলে আত্মাটা আর দেহে থাকে না। দেহে থাকলে নিশ্বাসের চাপে পিষে পিষ্ট হয়ে বৃদ্ধ হয়ে যায়। তখন দম নেওয়ার মতো শক্তিও শরীরে থাকে না। শুধু চোখের ঐকতানে অশ্রুর কানামাছি এসে বোঁবোঁ করে উড়ে বেড়ায়। আর অসহ্য জ্বালাতন বুকের ভেতরের কলকব্জাগুলো শিকলে আবদ্ধ করে রাখে।
ব্যাগে প্রয়োজনীয় কিছু ভরে হিমুকে ডাকতে শুরু করেছি। কিন্তু কিছুতেই আওয়াজ গুলো বাইরে আসছে না। মনে হচ্ছিল বরশীর ছিপে ডাকাডাকি শব্দটি গেঁথে গেছে। কিছুতেই কোনক্রমে ডিঙিয়ে আসতে পারছিলাম না। অবশেষে শরীরে হাত দিয়েই ডাকতে হলো। কিন্তু ততক্ষণে চোখ বেয়ে বেয়ে স্রোতের ঠোঁটে ভেসে আসতে শুরু করলো নোনাজল।
হিমু শুধু বললো – কি হয়েছে? খুলে বল।
– কিছু হয়নি।
হিমু বললো – ফোনটা দে। আমি যাচ্ছি।
– ফোনে চার্জ নেই। আর এখন ফোন দিয়ে কি করবি?
(কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটি)।
কোনদিন এতো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়নি। সম্মুখীন হলেও মুখবন্ধের নাটকে নাটকীয় বোবা যান্ত্রিক মানুষের আড়ালে থাকার কষ্টে হৃদয়ের অন্ডকোষে হতাহতের খবর পায়নি কখনো। কিন্তু আজ দেহটা ছিঁড়ে ছিঁড়ে দাঁড়কাকের উচ্ছিষ্ট খাবারে পরিণত হয়েছে।
দূর থেকে দেখা যাচ্ছে আমগাছ তলায় মানুষের ভীড়। পরিচিত মানুষের মুখের ভাঁজে ভাঁজে শোকের মাতম তখনও অবধি গোপন। কান্নার শব্দ তখনও আঁকড়ে ধরেনি হিমুর দেহপিঞ্জর। কিন্তু বাড়ির উঠান থেকে কয়েকজন টুপি ওয়ালা মানুষকে বের হতে দেখেই হিমুর কন্ঠস্বর বন্ধ হয়ে গেলো। বুঝিতে আর কিছু বাকি নেই।
বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই কান্নার শব্দগুলো চারিদিক থেকে ঝাপটে ধরে। মনে হচ্ছিল কান্নাকাটির মেলা বসেছে। যে যতবেশি কাঁদতে পারবে সেই পুরুষ্কার পাবে। কিন্তু সবগুলো দেহের মনগুলো ঘোলাটে। সম্পর্কটা বুঝি এভাবেই চিরতরে চিরবিদায়ে ছিন্ন হয়ে যায়।
হিমুর মা অবচেতন অজ্ঞান। বারান্দায় বসে বসে হিমুর বাবা কাঁদছে। উঠানের মাঝে লাশের খাটিয়া। আত্নীয় স্বজন এসে হিমুকে ধরে ঘরের মধ্যে নিয় যাচ্ছে। হিমুর ছোট ভাই দৌড়ে এসে হিমুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো – দাদিকে ডাকছি কিন্তু ঘুম থেকে উঠছে না। তুুমি একটু ডেকে দাওনা।
১৯টি মন্তব্য
হৃদয়ের কথা
হিমুর দাদি মারা গিয়েছেন!
ভালোই লাগছে হিমুকে এভাবে উপস্থাপন করায়।
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ প্রিয়, ভালো লাগলেই সার্থকতা।
বন্যা লিপি
অজস্র শব্দের খেলা আর বর্ননা। ভালো লাগছে এই শব্দের মায়াজাল টেনে টেনে শেষাবধি এসে রহস্যের জট খোলা।
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ প্রিয়, স্বার্থকতা….
এস.জেড বাবু
চমৎকার ভঙ্গিতে লিখেন আপনি-
শেষ পর্যন্ত পড়লেই বুঝা যায় বিষয় কি
দারুন টেকনিক।
শুভেচ্ছা নিরন্তর
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ… আপনাদের সংস্পর্শে এসেই এমন…
নিতাই বাবু
গল্পে হিমুর দাদির ইন্তেকালের খবরটা দারুণ মিলিয়েছেন, শ্রদ্ধেয় লেখক। শুভেচ্ছা জানবেন। শুভকামনা প্রতিক্ষণ।
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ প্রিয় কবিবর, এভাবেই পাশে থাকুন
সঞ্জয় মালাকার
অজস্র শব্দের খেলা আর বর্ননা।শেষ পর্যন্ত পড়লেই বুঝা যায় বিষয় কি।
পড়ে বেশ ভালো লাগলো।
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ কবিবর..
সাবিনা ইয়াসমিন
হিমুকে নিয়ে ধারাবাহিক লেখাগুলো ভালো লাগছে। আপনি যেকোনো লেখা খুব সুন্দর করে এগিয়ে নেন, যেটা ভালো লাগে। এর আগেও আবরারকে নিয়ে ধারাবাহিক চমৎকার লেখা দিয়েছেন। ছন্দ বজায় রেখে, গল্পের ধারা অব্যাহত করে নিয়মিত লেখা বেশ প্ররিশ্রমের ব্যাপার। আপনি এটা আনন্দের সাথেই পারছেন বুঝতে পারছি। আপনার লেখনি শক্তি আরো বৃদ্ধি পাক, শুভ কামনা 🌹🌹
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ, এভাবে মতামতের জন্য। আমি আপনাদের কাছে আমার ভুল শুদ্ধ ইত্যাদি নানা ধরনের মন্তব্য আশাকরি। যাতে নিজেকে সেভাবে তৈরি করতে পারি।
সাবিনা ইয়াসমিন
ভুল ধরতে হলে আপনার থেকে বেশি এগোতে হবে। তাহলেই হয়তো পারবো। নিজের ভুল ঠিক করতে করতে হিমসিম খাইরে ভাই,, সেখানে অন্যের ভুল শুদ্ধ ধরার সাহস ক্যামনে করি? তবে অভয় দিচ্ছেন দেখে শান্তি পেলাম। এখন থেকে ভুল দেখামাত্র ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবো 🙂
ছাইরাছ হেলাল
খুব সুন্দর করে হিমুকে এগিয়ে নিচ্ছেন দেখে ভাল লাগল।
বানানের দিকে একটু নজর রাখতে হবে কিন্তু এবার থেকে।
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ প্রিয়, ভালো লাগলো মতামতের জন্য। আসলে আমি নিজেও খুব চেষ্টা করি যাতে ভুল না হয়। তারপরও ভুল হয়ে যায়। তাছাড়া গল্পগুলো সবই আমার মোবাইলে লেখা এজন্য অনেক সময় একটি শব্দ লিখতে গিয়ে অন্য আরেকটি শব্দ লিখে ফেলি।
আরজু মুক্তা
হিমুকে দারুণ ভাবে উপস্থাপন চলছে।
ভালো লাগলো।
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ
সুরাইয়া পারভিন
এ পর্বে শব্দের বিন্যাস ছিলো নজর কাড়া
চমৎকার লিখেছেন হিমু পর্বগুলো
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ প্রিয়..