
ক্লাস চলছিলো। উত্তম স্যারের ক্লাস। স্যার মানুষ হিসেবেও যেমন উত্তম শিক্ষক হিসেবেও ঠিকই তেমন। সত্যি ওনার মতো যান্ত্রিক মানুষ আমি আর দেখিনি। তিনি যেমন গল্প করতে পটু তেমনি আবার জোকস বলে বলে হাসাতেও পটু। অতশত গুণ থাকা সত্বেও তিনি কিন্তু তার পেশার একটুকুও অবমূল্যায়ন করে না।
ফোন বেজে উঠলো। একসাথে ভাইব্রেশন আর রিংটোন। উপস্থিত সবাই রিংটোন শুনে আমার দিকে আরচোখে তাকিয়ে ফ্যালফ্যাল করে হেসে উঠলো। স্যার সবেমাত্র টুনির নাম দিয়ে একটি উদাহরণ দিয়েছে।
হিমুর নাম্বার। ফোন রিসিভ করেই বলে উঠলাম – কল দেওয়ার আর সময় পেলি না।
হিমু – কেন? কি হলো আবার?
সবাই আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে হেসে উঠলো।
হিমু – কিসের জন্য রে?
তোর দেওয়া “ও টুনির মা তোমার টুনি… ” রিংটোনের আওয়াজে।
হিমু – (হি হি করে হেসে উঠলো)।
আচ্ছা, কল দিয়েছিস কি জন্য সেটা আগে বলবি তো?
হিমু – তুই কোথাও দেরি না করে সোজাসুজি ফার্মগেটে চলে আয়।
কেন, হঠাৎ ফার্মগেট কেন?
হিমু – আগে আয়না। তারপর বলছি।
ও আচ্ছা। দাড়া আমি বিশ মিনিটের মধ্যেই চলে আসছি।
হিমুকে আগে কখনো এতো উদ্যোমী আত্মবিশ্বাসী কিংবা উৎসাহী দেখিনি। ও সবসময়ই শপিং বিমুখী ছিলো। কিন্তু আজ হঠাৎ কিছু আভাস এসে মন পাড়ায় ভিড় করছে। কৌতূহলী জানতেও খুবই আগ্রহ হচ্ছে। ঠিক যেন তর সইছে নাহ।
দূর থেকেই হাত নাড়িয়ে ডাকছে এইতো আমি এইতো আমি। হিমুর কাছে যেতেই বললো – তোর কি আর কোন কাজ আছে?
না, কোন কাজ নেই।
হিমু – তাহলে ভালোই হয়েছে?
কেন? কি করবি তুই?
হিমু – একজোড়া নুপুর কিনতে হবে।
হঠাৎ নুপুর কেন?
হিমু – আর বলিস না। আমরা আজ যখন জিয়া উদ্যানে ঘুরতে গিয়েছিলাম তখন “ও” আমার ডান হাত ধরে জিয়া উদ্যানের সামনের পুকুরে হাটাহাটি করছিলো। তখন যে কতো ভাল লাগছিলো তোকে বলে বোঝাতে পারবনা। আর ও “পা” দুটো এতো সুন্দর যে নুপুর পড়লে আরও বেশি সুন্দর দেখা যাবে।
তারমানে তুই আমাকে দিয়ে নুপুর কিনাইবি।
হিমু – ইস্! একদম মনের কথা বলেছিস। তুই মাঝেমধ্যে এতো সুন্দর সুন্দর কথা বলোস যে মনে হয় তোর প্রেমে পড়লে আরও বেশি বেশি রোমাঞ্চিত হতাম।
হুমম, আর পাম দিতে হবে না। চল এবার দোকানের দিকে চল।
অবশেষে অনেক খোজাখুজির পর কাঙ্খিত জিনিসটা কিনে ফেললাম। হিমু নিজেও খুব পছন্দ করেছে। মনে হচ্ছিল আকাশের সাত আসমান হিমুর হাতে। আর তারাগুলো প্রদীপ হয়ে চোখেমুখে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। সত্যি হিমুর মুখটা খুশিতে জ্বলজ্বল করছিল।
নীল রঙের পাথরের উপর হালকা একটি সাদা পাথর বসানো। ঠিক যেন ডায়মন্ড। দূর থেকে ঝলমল করছে। রৌদ্রেরঝাঁজে আরও বেশি আলোকিত লাগছিলো। আর আলোর একটি ছোট্ট রশ্মি এসে চোখটাকে হট্টগোলে খেলছিলো।
হিমু শুধু একটি কথাই বললো – আলতা মাখা ও পায়ে নুপুর পড়াতে গিয়ে একটু উষ্ণ আবরণের স্পর্শের ছোঁয়াচে রোগে শীতল হব।
১৭টি মন্তব্য
কামাল উদ্দিন
হিমুরা তো জুতাই পড়েনা, কিংবা ওদের তো আবেগও থাকার কথা নয়। আথচ আমাদের আধুনিক হিমু একজনের সাথে প্রেম করে নূপুর উপহার দিচ্ছে 😀
নৃ মাসুদ রানা
এটাই স্বাভাবিক নয় কি, আমার ধারনা হুমায়ূন আহমেদ স্যার বেঁচে থাকলে হয়তো তিনিও হিমুর গায়ে আধুনিকতার ছোঁয়া দিতেন।
কামাল উদ্দিন
হুমম, হয়তোবা
সুরাইয়া পারভিন
চমৎকার লিখেছেন।
প্রেম করলে মানুষের কত শখ জাগে। কে তোমার জন্য নুপুর কেনা ভালোই
নৃ মাসুদ রানা
আসলেই সত্যি কথা, প্রেমে পড়লে প্রেমিকেরা পাগল হয়ে যায়।
সঞ্জয় মালাকার
তারমানে তুই আমাকে দিয়ে নুপুর কিনাইবি।
হিমু – ইস্! একদম মনের কথা বলেছিস। তুই মাঝেমধ্যে এতো সুন্দর সুন্দর কথা বলোস যে মনে হয় তোর প্রেমে পড়লে আরও বেশি বেশি রোমাঞ্চিত হতাম।
প্রেমে পড়লে মানুষের কত শখ জাগে,
চমৎকার লিখেছেন দাদা।
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ প্রিয়,
প্রেমে পড়লে মানুষের কত শখ জাগে।
তৌহিদ
ব্যতিক্রমী চরিত্রে হুিমুকে নিয়ে এসেছেন দেখে ভালো লাগলো। একজন লেখকের ব্যক্তিগত স্বাতন্ত্রতা থাকা জরুরি আবশ্যক।
এ ক্ষেত্রে আপনি সফল।
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ প্রিয়, আপনাদের মন্তব্যে সত্যি অনেক সাহস পাই। আশাকরি ভবিষ্যতেও আপনাদের কাছে পাবো।
ছাইরাছ হেলাল
নুপূর পায়ের সৌন্দর্য হিমু এখন দেখছে তা কিন্তু মন্দ না।
চলুক।
নৃ মাসুদ রানা
হিমু চরিত্র চলুক নিজস্ব গতিতে…
এস.জেড বাবু
ইস্! একদম মনের কথা বলেছিস। তুই মাঝেমধ্যে এতো সুন্দর সুন্দর কথা বলোস যে মনে হয় তোর প্রেমে পড়লে আরও বেশি বেশি রোমাঞ্চিত হতাম।
হিমু যে !
হিমুর মতোই কথাবার্তা-
দারুন হয়েছে এই পর্ব-
নৃ মাসুদ রানা
পরের পর্বও খুব শীঘ্রই আসছে..
মনির হোসেন মমি
হিমু স্টাইলে গল্প । খুব ভাল লাগছে।
নৃ মাসুদ রানা
আশাকরি পরবর্তী গল্পটিও ভালো লাগবে।
জিসান শা ইকরাম
হিমুকে নিয়ে একটার পর একটা চমৎকার গল্প দিয়ে যাচ্ছেন,
ভালোই লাগছে পড়তে।
শুভ কামনা।
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ, পাঠকের জন্যই লেখা।