(দ্বিতীয় পর্ব)
ভয়টা খুব করে জেকে বসেছে,এমন নির্জন জায়গায় অবস্থান করতে মন কিছুতেই সায় দিচ্ছিলোনা।তাছাড়া মিন্নির প্রানবন্ত মুখটাও দপ করে অন্ধকার আবছায়ায় ঢেকে গেলো।নিশ্চুপ হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
ঠোঁটে গালে কয়েকবার চুম্বন দিলাম-ভালোই লাগছে ওকে আদর করতে।কিন্তু ওর নিথরতা তবুও কাটছিলোনা।এরপর আর কিই বা করার।একটা রিক্সা রিজার্ভ করে হোটেলের গন্তব্যে যাত্রা শুরু করলাম।ঝিরিঝিরি বৃষ্টির রেশ আরও বেড়ে গেছে।মিনিট ২০ এর মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছলাম।খুব সহজেই বুকিংয়ের কাজটা সম্পন্ন হয়ে গেছে।কিন্তু,একটি বিষয় খুব দৃষ্টিকটু লেগেছে।ম্যানেজারের পাশে বসে থাকা দু’জন লোক মিন্নির বুকের দিকে এক পলকে চেয়ে ছিলো।ও খুব ইতস্তত বোধ করছিলো।এবং রুমে এসে কাঁদতে শুরু করে দিলো।
..
তোমাকে আগেই বলেছিলাম_ সিল্কের শাড়ি আমার পছন্দ নয়।জোর করে ওটাই পড়ালে।এখন হলতো!কি বিছ্রিভাবে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে!শুধু কি ওরাই!এই যাত্রায় জনা পঞ্চাশেক মানুষ এভাবে তাকিয়ে ছিলো। আগে থেকেই অনুধাবন করেছিলাম-আর তুমি শুনলেনা।ওটাতেই নাকি বেশী সুন্দর লাগে।আচ্ছা শুভ্র-প্রতিটা পুরুষের তো মা বোন সন্তান নতুবা প্রেয়সী রয়েছে।ওই মানুষগুলো কি তাদের ফুলে থাকা স্তনের দিকেও এভাবে তাকিয়ে থাকে।ওরা কেমন মানুষ!আদৌ কি মানুষ!
মিন্নি উচ্চস্বরে কাঁদতে থাকে।ওর কান্নার স্বর হৃদয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে পোঁড়া বাঁশির সুর হয়ে। শোনো শুভ্র- ম্যানেজারের ডানপাশের ছেলেটা ওনার কানে জঘন্য কিছু বলেছে!স্পষ্ট শুনতে পেয়েছিলাম।তুমি তখন কাগজে সাইন করছিলে।
শান্ত হও মিন্নি।এতো অস্থির হইয়োনা প্লিজ।কি বলেছিলো ও লোকটা তোমাকে?আমি শুনতে চাই।
রুমাল দিয়ে ওর অশ্রু মুছে দিচ্ছিলাম।অনেক বেশী কষ্ট পেয়েছে প্রেয়সী আমার।
ও কাঁপা গলায় আবারও কথা বলতে শুরু করলো।বলেছিলো-সেই মাল একখান।ক্লোস সার্কিট ক্যামেরা ঠিক আছে কিনা।আমি প্রতিবাদ করতে চেয়েও সাহস পেলামনা।তুমি আবার খারাপ রকম বিতর্কে জড়িয়ে যাও, এই ভয়ে।কেউ নেই আমাদের সঙ্গে।তুমি আর আমি।বাদ দাও ওসব।কাল থেকে বোরকা পরিধান করে বেরুবো।আসো ঘুমিয়ে পড়ি।তুমি অনেক ক্লান্ত।
মিন্নির কথায়-নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিলামনা।একবার ওর বিষন্ন মুখের দিকে তাকালাম।আহারে!কতটা কষ্ট পুষে যাচ্ছে জান পাখি আমার।ভিতরটা ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে হয়তো।রক্ষণশীল পরিবারে বেড়ে ওঠা মেয়ে।তাই লজ্জাশীলতাও অনেক বেশী।আর আমি কিনা কাপুরুষের মতো দাঁড়িয়ে আছি। ওকে রুমে রেখে বাহিরের গেট লক করে সোজা ম্যানেজারের রুমে চলে আসলাম।সোফায় অর্ধ নগ্ন দুজন মেয়ে বসে আছে।দুই মেয়ের পাশে বসে ওই ছেলে দুইটা মদ গিলছে।প্রবেশ করতেই হচককিয়ে ওঠে।ম্যানেজার উঠে দাঁড়ায়।আরে মিয়া এই সময়ে আপনি!বাহিরের সাইনবোর্ড দেখেননি!অফিস আওয়ার শেষ হয়ে গেছে অন্তত ২০ মিনিট আগে।অনুমতি না নিয়ে হুট করে ঢুকে গেলেন!
সোজা ম্যানেজারের কলার চেঁপে ধরলাম।বাকি দু’জন এদিকে এগিয়ে আসছে দেখে পিস্তল বের করে সব কয়টাকে জিম্মি করে ফেললাম।
বাইঞ্চোদের বাচ্চা!আমারে চিনোস তুই!প্রতিটা রুমেই সিসি ক্যামেরা লাগাইছোস তাই না!এ বিষয়ে মানুষের ধারনাই নাই হয়তোবা। আমি শালা অন্য মানুষ,চিইনা ল। তারপর এইসব ব্যক্তিগত ভিডিও দিয়ে জিম্মি করবি।লাখ লাখ টাকা কামাবি ফাঁকা মাঠে। যার কাছে যতো ইনকাম করা যায়।তা শুনি!কোন চিপায় কিভাবে সেট করে রাখছিস কয়টা ক্যামেরা।তোগো লাইগা ভ্রমনে আইসাও শান্তি নাই।হয়তো সবকিছু রেকর্ড হইতাছে।কিন্তু-লাভ নাই।এই যে সামনে দাঁড়ায় আছে-একজন বিপ্লবী।এইসব হং চং ইস্যুতে ভয় পায়না।তবে যারা সাধারণ মানে অতি সাধারণ-এই যেমন আমার বউ বা তার মতো মেয়েরা-তাদেরতো মান সন্মানের ভয় আছে।এখন কি গুলি চালায় দিবো শুয়োর!
এরপর আর কিচ্ছু মনে নেই।ম্যানেজারের পেছন দিক থেকে কে যেনো সরাসরি মাথায় আঘাঁত করে বসলো ।মেঝেতে চিৎ হয়ে পড়ার পর তিনটা নামই কেবল শুনতে পেয়েছিলাম ম্যানেজার আজিজ আহমেদের মুখ থেকে।গান্ডু,রাজন,ফয়সাল-অরে তোগো জঙ্গলী গুহায় নিয়া যা,উপরের খাসা মালটারে আমি সাইজ করতাছি।যখন চেতনা ফিরলো-তখন আমি অনেক দূরে।ফেঁটে যাওয়া মাথায় রক্ত জমে খাইয়ের মতো হয়ে গেছে।পকেটে হাত দিয়ে দেখি ফোন মানিব্যাগ কোনোটাই নেই।পলিথিনের প্যাকেটে মোড়ানো একটি ভিডিও রেকর্ডাার -সাথে একটি চিরকুট।
এখন ভোরের প্রথম প্রহর।আবছা আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সবকিছু।চারপাশে নির্জন হাওর।তার কিছু দূরে পড়ে আছি।একটা শুকনো মোটা গাছের গুড়িতে শুইয়ে দিয়ে পালিয়ে গেছে।এখানে জননিবাস নেই।যেদিকে চোখ যায় শুধুই জল।মাঝে মাঝে বন আর আংশিক শুস্ক ভূমি।
ঘড়িতে তাকাতেই বুঝতে পারলাম ৮/৯ ঘন্টা অতিবাহিত হয়ে গেছে।আহারে!কি হলো এসব!মিন্নির কি হয়েছে বিধাতাই জানেন।
অশ্রু ভেজা চোখ নিয়ে চিরকুটটা পড়তে শুরু করলাম।
আমি ইসহাক তাবারি বলছি।হোটেলের ম্যানেজার চ্যালা প্যালা সব আমাদেরি লোক।এই তেরো বছরের রাজনৈতিক জীবনে তোগো মতন ব্লগারের জন্যেে অনেক ভুগছিরে।বিপ্লব চোদাও খানকির পোলা।দ্যাশ চালাই আমরা-আর তোমরা বিদ্রোহ করো।তোর বউরে ওপারে পাঠাই নাই,রেপ কইরা ছাইরা দিছি। অনেক মিনতি আত্তি কইরা এক টাপেই ছাড়া পাইছে।এখন মনে হয় ভদ্র মানুষ সাইজা তোরে খুঁজতাছে। এক কপি ভিডিও পাঠায় দিলাম।রাইতের মধ্যে সব কিছু সিস্টেম হয়ে গেছে।পুলিশ আইন সালিস কইরা লাভ নাই।সবকিছুই আমাদের পকেটে।বহুদিনের ক্ষতটা এবার শুঁকাইছে।অনেক অনেক ঝামেলা করছিস তোরা।পত্র পত্রিকায় চোখ বুলানো যায়না ওইসব বিদ্রোহী কলামের জন্যে।অনেক বার ওয়ার্নিং দিছি তোরে।এবার নিজের পরিবারের সদস্যদের কথা ভাব।মা,দুই দুইটা জোয়ান বইন,সিল্কি ভাবী।বউ গেইলে আরেক খান পাবি।কিন্তু রক্তরে ক্যামনে ভুলবি।আর লিখিস না,ম্যালা হইছে।তোরেও ওপারে পাঠাইতে পারতাম।একটা চান্স দিলাম আর কি।আমার পক্ষে কাজ কর।চার/পাঁচটা সুন্দরী বউ পাবি এক লগে।ওই বউরে ডিভোর্স দিয়া দিস।মাসে একখান কলাম লিখলেই চলবো।আমার বন্দনা চাই।
চিঠি পড়েই দু’চোখ ঘোলাটে হয়ে আসে।মাথাটা বনবন করে ঘুরছে।উঠে দাঁড়ানোর শক্তিটুকুও নেই।কিছুতেই নিজেকে সামলে রাখতে পারছিলাম না।আমার জন্য নিরীহ মেয়েটাকে পাশবিক ভাবে রেপ করা হলো।খোলা আকাশের দিকে চেয়ে মিনিট দশেকের মতো চিৎকার করে কাঁদলাম।নির্জন প্রকৃতিও কাঁদছে আমার সাথে।প্রচুর দমকা বাতাস আর বৃষ্টি।নিজেকে হালকা করে নিলাম।এরপর মিন্নিকে রক্ষার জন্য হোটেলের দিকে ছুটলাম।কিন্তু!এ কি!কি আশ্চর্য!এ কোন জায়গায় আমি।যতোদূর চোখ যায় শুধুই বন আর জল।একটা মানুষের চিহ্নও নেই কোথাও/
(মাসুদ চয়ন)
১৬টি মন্তব্য
শিরিন হক
শেষ টা এমন আশা করিনি ভাই একজন বিপ্লবী ব্লগার এভাবে পরাজিত হবে ভাবতেই মনটা খারাপ হলো।
লেখার মধ্যে রসায়ন, আর ফিলোসফির কম্বিনেশ এমন গল্প আরো দেখতে চাই।
মাসুদ চয়ন
অনেক ধন্যবাদ আপু।আরও দু একটি পর্বে শেষ করতে চাচ্ছি
মনির হোসেন মমি
লেখা কি চলবে নাকি সমাপ্তি।অতপর মন্তব্যে আসছি।
মাসুদ চয়ন
আরও দু একটি পর্বে শেষ করতে চাচ্ছি দাদা।অনেক ধন্যবাদ পাঠ করার জন্য
মনির হোসেন মমি
আপনার এ লেখ
মনির হোসেন মমি
সরি মন্তব্য করতে গিয়ে আধা মন্তব্য পোষ্ট হয়ে গেল।আপনার এ গল্পটা পড়ার সাথে চোখে ভেসে উঠল ব্লগার অভিজিত সহ যারা হত্যা হয়েছেন।চলুক।
সাবিনা ইয়াসমিন
হাওর বন্দি-২ এভাবে শিরোনাম দিন।
মাসুদ চয়ন
ধন্যবাদ
মনির হোসেন মমি
লেখার আগে অথবা নীচে গত পর্বের লিংকটা দিয়ে দিলে যারা পড়েননি তারাও পড়তে পারবেন।
মাসুদ চয়ন
ওকে দাদা,দিয়ে দিবো পরবর্তীতে
মনির হোসেন মমি
ধন্যবাদ।
জিসান শা ইকরাম
গল্পের উপস্থাপনা সুন্দর হয়েছে,
এমন হয় অনেক সমস্য।
একটি বিষয় অতি নাটকীয় লেগেছে, বিপ্লবী ব্লগারের এমন আর্মস নিয়ে চলাফেরার কথা তো শুনি নি কখনো। হয়ত আছে এমন, আমার জানা নেই। বহুল প্রচারিত ব্লগাররা নাস্তিক এই কথার সাথে আর্মসও রাখে তারা সাথে, এটি আবার প্রচলিত না হয়ে যায়।
লিখুন নিয়মিত,
শুভ কামনা।
মাসুদ চয়ন
ধন্যবাদ দাদা।মার্ক্সবাদী ব্লগারদের মধ্যে এমন প্রবনতা দেখা যায় বেশী।চে গুয়েভারাকে অনুসরণকারী বিপ্লবীরাও অস্ত্র সজ্জিত,আবার ব্লগার হিসেবেও সক্রিয়।সৈরসমাজতন্ত্র /পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে তাদের সমস্ত বিক্ষোভ
জিসান শা ইকরাম
হ্যা বুঝেছি।
পরের পর্ব লিখে পোষ্ট দিন দ্রুত।
আরজু মুক্তা
ব্লগাররা তাহলে পুঁজিবাদের উপর ক্ষিপ্ত!
চলুক,দেখি কতদূর যায়।
মাসুদ চয়ন
ধন্যবাদ