
চট্রগ্রামের ভাটিয়ারীর নাম শুনলে আমার কাছে সব সময় মনে হতো বিশাল বিশাল বিদেশী জাহাজ কাটার বিষাক্ত ধোয়া, লোহা লক্কড়ের ঝনঝনানি আর শ্রমিকদের বিরামহীন কর্ম কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ। অথচ এই ভাটিয়ারীর পাহাড়ের উপর যে রয়েছে অসাধারণ এক নৈস্বর্গিক লেক তা আমার জানা ছিলোনা। চট্টগ্রামের দর্শনীয় যায়গার নামের তালিকায় ভাটিয়ারী গলফ ক্লাব সংলগ্ন ভাটিয়ারী লেকের নাম শুনেই ওখানে গিয়েছিলাম দেখতে। সত্যিই এতোটা সৌন্দর্য্য ওখানে লুকিয়ে থাকবে এটা ছিলো আমার কল্পনার অতীত। সেনা বাহিনীর এলাকা হওয়ায় এলাকাটা অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন, ভালোমানের রাস্তাঘাট আর নিরাপত্তার কোন অভাব নাই। আর এমন একটা এলাকায় যদি এক টুকরো স্বর্গ এনে বসিয়ে দেওয়া হয় তা হলে কেমন হয়? আমি নিশ্চিৎ ওখানে তাই হয়েছে।
ভাটিয়ারী বাসষ্টেন্ড থেকে দুই কিলোমিটার উত্তরে সমতল থেকে অনেক ওপরে এ লেকের অবস্থান। অনেক পাহাড়ের পাদদেশে জমে থাকা পানি থেকেই এখানে লেকের উৎপত্তি হয়েছে। ততটা চওড়া না হলেও লেক দুটি অনেকটা সাপের লেজের মতো এঁকেবেঁকে চলে গেছে অনেক দূর। সেনা বাহিনী চালিত স্পীড বোটগুলো ৩০০ টাকায় রিজার্ভ নিয়ে ওদের নির্ধারিত এলাকায় ঘুরে আসা যায় বিশ মিনিটে। প্যাডাল চালিত বোট নিলে ঘন্টায় দিতে হবে ১০০ টাকা, সেক্ষেত্রে নিজ ইচ্ছে মতো যতো ঘন্টা ইচ্ছে যেখানে ইচ্ছে বোট নিয়ে ঘুরা যায়। চাইলে নির্ধারিত ফি দিয়ে বড়শি দিয়া মাছ ও ধরা যায়।
(২) ভাটিয়ারী বাসষ্টেন্ড থেকে দুই কিলোমিটার গেলেই ভাটিয়ারী লেক শুরু, কিন্তু ট্রলার ঘাটটা আরো প্রায় এক কিলোমিটার অর্থাৎ তিন কিলোমিটার দূরে। এখানে ইঞ্জিন চালিত এবং পায়ে চালিত দুই ধরনেরই বোট আছে।
(৩) সূর্যের আলোক রশ্মির সাথে পানির এমন খেলা চলে নিরন্তর।
(৪) পাশ দিয়ে ট্রলার নিয়ে যাওয়ার সময়ও পানকৌড়ি পাখিগুলো খুব একটা গা করেনা, ওরা ভাবে এটা ওদের এলাকা, আমাদের প্রবেশটা অনধিকার চর্চা মাত্র।
(৫/৬) ৬০০ টাকা ফি দিয়ে এমনভাবে বড়শি নিয়ে মাছ ধরতে পারবেন যে কেউ একদিনের জন্য।
(৭) এই পাখিগুলো পানকৌড়িদের মতো সাহসী নয়, আমাদের দেখে পালিয়ে গিয়েছিলো কচুরী বনে।
(৮) পাশে ফুটে থাকা কলমী ফুলগুলো মনটাকে নিঃসন্দেহে পবিত্র করে দেবে।
(৯) ধ্যানী বকেরাও কলমীর ফাকে ফাকে খুঁজে বেড়ায় নিজের খাবার।
(১০/১১) লেকের স্বচ্ছ জল, করে টলমল, এমন যায়গা ছেড়ে ঘরে ফিরি কি করে বল?
(১২) সবুজ রঙের সুই চোরা পাখিটা ক্ষনে ক্ষনেই আমাদের মাথার উপর চক্কর দিয়ে গিয়ে বসছিলো এই সবুজ লতায়। সুইচোরা সরু ও লম্বা গড়নের পতঙ্গভুক পাখি। এদের লেজ হয় দেহের দৈর্ঘ্যের প্রায় অর্ধেক। মুখে থাকে লম্বা বাঁকা ঠোঁট। ডানা থাকে দীর্ঘ।
(১৩) প্যাডাল বোট নিয়ে গেলে সুবিধা বেশী, ট্রলারের চেয়ে বেশী যায়গায় ঘুরা যায়, নিজের ইচ্ছে মতো।
(১৪) লেকের পাড়ের বুলবুলি পাখিগুলোরও যেন ছুটাছুটির অন্ত নাই, ইতিউতি উড়ে বেড়ায় আবার ফিরে এসে কাশফুলে বসে।
(১৫) ওখানে এমন কিছু প্রাণী দেখাটাও অস্বাভাবিক কিছুনা।
(১৬) ট্রলারে ঘুরে নামার আগে পানিতে থেকে ট্রলার ঘাটের ছবি।
(১৭/১৮) ট্রলার ঘাটেই রয়েছে বেশ কিছু বোতল ব্রাস ফুলের গাছ, ওখান থেকেই তুলেছি এই ছবি দুটি।
(১৯/২০) উপরে দাঁড়িয়ে তোলা লেকের দুটি ছবি।
(২০/২২) লেকের উপরের অংশে রয়েছে নানা রকম ফুল, আমার মনে হয় কম করে নানা প্রকারের অন্তত ১০ রকম ফুল ওখানে ফুটে আছে, যা সত্যিই খুব মনোমুগ্ধকর।
২৮টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
এই জায়গাটিতে যাইনি, অনেক সুন্দর প্রকৃতির জল-জংগল।
১৯ নম্বরটি সব থেকে সুন্দর আমার কাছে।
কামাল উদ্দিন
এবার হয়তো যাবে।
ধন্যবাদ ভাই ভালো থাকুন সব সময়।
ইঞ্জা
ভাইজান, আমার দেখা সব চাইতে সুন্দর জায়গা এইটি, পারলে একবার ঘুরে আসুন।
ছাইরাছ হেলাল
ভাই, আপনার কথা মাথায় রাখলাম।
ইঞ্জা
😊
নিতাই বাবু
যদিও অনেকদিন চট্রগ্রাম থেকেছি! তবু্ও এই সুন্দর জায়গাটিতে কখনো যাওয়া হয়নি। এবার আপনার পোস্টের ছবি দেখেই মোটামুটি যাওয়ার মতো হয়ে গেল, দাদা। বইমেলায় কি দেখা হবে?
কামাল উদ্দিন
বই মেলায় দেখা হবে কিনা এখনো ঠিক বলতে পারছি না দাদা, তবে ইচ্ছে আছে যাওয়ার, ধন্যবাদ।
ইঞ্জা
আজ নিয়ে এলেন পূর্ণভূমি চট্টগ্রামের এক অপার সৌন্দর্যের বিবরণ নিয়ে, আমি এর রূপসূধা পান করেছি সেই দুই হাজার সাল থেকে, এখন তো অনেক আর্টিফিশিয়াল সৌন্দর্য্য ও যোগ হয়েছে, তখন ছিলো নিখাদ প্রকৃতি, আমি গাড়ী নিয়ে পুরা সৌন্দর্য্য উপভোগ করতাম ঘুরে ঘুরে, সেইখানের স্পীডবোট নিতে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিতাম পাহাড়ি লেকের এপ্রান্তে ওপ্রান্তে, সত্যি এ যেন আল্লাহর এক অপার সৃষ্টি।
কামাল উদ্দিন
ওহ্ তাহলে তো আপনার কাছে আমি নস্যি……শুভ কামনা জানবেন ভাই।
ইঞ্জা
নস্যি নয় ভাই, প্রকৃতির রূপসূধা এক একজনের কাছে এক এক ধরণের, আপনিও কম প্রকৃতি প্রেমি নন তা আপনার লেখা ও ছবির পরতে পরতে বুঝায় যাচ্ছে।
ধন্যবাদ ভাই এমন সুন্দর প্রকৃতির সাথে সবাইকে পরিচিত করে দেওয়ার জন্য।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
খুব সুন্দর ভাইয়া। ধন্যবাদ আপনাকে।
কামাল উদ্দিন
আপনাকেও আন্তরিক শুভেচ্ছা আপু
নাজিয়া তাসনিম
পাখি, প্রজাপতি, ফুল- মনে হয় যেন রূপকথার মতোই সাজানো।
কামাল উদ্দিন
হুমম, আমার কাছেও এসব দেখে একে স্বর্গোদ্যানই মনে হয়েছ…….শুভেচ্ছা জানবেন আপু।
সুরাইয়া পারভীন
সব গুলো ছবিই দারুণ।
আহ্ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছবিতে দেখেই চোখ জুড়িয়ে যায়। বাস্তবে না জানি কত সুন্দর!!
কামাল উদ্দিন
দেখার চোখ থাকলে বাংলার প্রতিটি ইঞ্চিই অসাধারণ! আপু……ভালো থাকবেন।
ফয়জুল মহী
নান্দনিক ।
কামাল উদ্দিন
শুভেচ্ছা
হালিম নজরুল
অসাধারণ
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ নজরুল ভাই, ভালো থাকুন সব সময়।
ইসিয়াক
চোখ জুড়ানো পোষ্ট।
শুভকামনা রইলো কামাল ভাই।
কামাল উদ্দিন
আপনার জন্যও রইল অনেক অনেক শুভ কামনা ইসিয়াক ভাই।
সুপায়ন বড়ুয়া
কতবার হল দেখা
এ প্রিয় জায়গাটিকে।
কিন্তু আলোক চিত্রশিল্পীর
দৃষ্টিতে সৌন্দর্য উপভোগ হয় নি।
ভালো লাগলো। শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ দাদা, আমি মাত্র একবারই ওখানে যাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছি।
সাবিনা ইয়াসমিন
আজকে শুধু ছবির গান হবে।
আমি মাঝে মাঝে লেখার সাথে মিলিয়ে ছবি খুঁজে পাইনা, আবার কিছু কিছু ছবি দেখলেই আংগুল গুলো লিখতে বায়না ধরে। বিশেষ করে এমন ছবিগুলো আমায় মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে দীর্ঘক্ষণ 🙂
সব গুলো ছবি এত সুন্দর!! ৩/৮/১০/২২ ছবিগুলো আমি নিয়েছি। এগুলো আমার লেখায় এ্যাড করবো।
চিন্তা করে আবার মুখ গোমড়া করার দরকার নেই, ফটো ক্রেডিট দিয়ে দিবো পোস্টে ছবির ফেরিওয়ালা ভাই 😀😀
কামাল উদ্দিন
এটাতো আমার জন্য সৌভাগ্য আপু যে আমার কিছু ছবি আপনার পছন্দ হয়েছে……..শুভ সকাল।
ইঞ্জা
আপু একবার ভাটিয়ারীতে ঘুরে আসুন সবাইকে নিয়ে, চট্টগ্রাম শহরেই এইটি, মানে কয়েক কিলোমিটার মাত্র, গ্যারান্টি দিতে পারি, যাস্ট মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে থাকবেন।
কামাল উদ্দিন
সাথে আমিও গ্যারান্টি দিলাম আপু, তবে আমি যেখানে যাই সেখানেই ভালোলাগে।