অনেকদিন পূর্বে শুনেছিলাম ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে মাটির নিচ থেকে বেশ কিছু মসজিদ উঠেছে। সেটা কতোটা বিশ্বাস করেছিলাম জানিনা। তবে ওখানে যাওয়ার আগ্রহটা প্রবল হয়ে উঠেছিল তখন থেকেই। মাথার ভেতরে কিছু একটা ঢুকলে ওটার সমাধান হওয়ার আগ পর্যন্ত মনে স্বস্তি পাইনা। তাই মনের শান্তির জন্য ছুটে গিয়েছিলাম বারোবাজারে।

মিথঃ কথিত আছে বারোবাজার নামকরণ পীর খান জাহান আলীর প্রদত্ত। তিনি বারোজন আউলিয়া নিয়ে এখানে প্রথমে এসেছিলেন এবং বারোজন আউলিয়া থেকে বারোবাজার নামকরণ হয়েছিল।

স্থানীয়রা বহু বছর ধরে বারোবাজারের আশেপাশে অনেকগুলো উঁচু উঁচু ঢিবি দেখে আসছিল। এক সময় স্থানীয়দের মনে কৌতুহল জাগে, এই ঢিবির মধ্যে কী আছে? কৌতুহল থেকেই স্থানীয় মানুষজন একটা একটা করে মাটির ডিবি খুঁড়ে বেশ কিছু মসজিদ আবিষ্কার করে। তারই অংশ হিসেবে ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মাটির ঢিবি খনন করে এই চমৎকার মসজিদটি আবিষ্কার করেন।
আগের দিনে ভবন নির্মাণ করতে রড সিমেন্ট ব্যবহার করা হতো না। তাই এ ধরনের স্থাপনার দেওয়ালগুলো থাকত অনেক পুরু। এই মসজিদের দেয়ালও কমপক্ষে ৫ ফুট পুরু এবং বর্গাকৃতির। এই মসজিদে তিনটি দরজা রয়েছে, যার মধ্যে মাঝখানের দরজাটি সবচেয়ে বড়।
মূল ভবনের সঙ্গে চারকোনে আটকোন বিশিষ্ট স্তম্ভ এবং বারান্দার সঙ্গে আরও দুটি স্তম্ভ আছে। মসজিদটির মেহরাব ও দেওয়াল বিভিন্ন নকশা সজ্জিত। মসজিদের অভ্যন্তরে চারি দেওয়ালের সঙ্গে সংযুক্ত আটটি ইটের তৈরী কেবলা দেওয়ালে ও মেহরাবে পোড়া মাটির নকশা, শিকল নকশা,বৃক্ষপত্রাদীর নকশা পুষ্পশোভিত পোড়া মাটির নকশা খঁচিত আছে। মসজিদের পূর্বপাশে একটি বিশাল দীঘি আছে।


(২) বারোবাজার প্রধান সড়কের উপর মসজিদের প্রধান গেইট। গেইটের ভেতরে অল্প একটু হাটলেই মূল মসজিদ।


(৩/৪) মেইন গেইট থেকে দুই মিনিট হাটলেই পৌছে যাবেন সাতশত বছরের এই চমৎকার মসজিদে। সাতশত বছর পূর্বে এই মসজিদে যারা নামাজ পড়তো তারা দেখতে কেমন ছিল এমনটা ভাবতেই মনের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠে।


(৫) মূল মসজিদের উপর একটা বড় গম্বুজ আর বারান্দায় রয়েছে অপেক্ষাকৃত ছোট তিনটা গম্বুজ। সব মিলিয়ে গোড়ার মসজিদ চার গম্বুজ বিশিষ্ট।


(৬) মসজিদে প্রবেশের তিনটি দরজার মাঝখানেরটা দিয়াই শুধু প্রবেশ করা যায়। দুই পাশের অন্য দরজাগুলো লোহার গ্রীল লাগিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।


(৭) মসজিদের পশ্চিম দেয়ালে মূল মেহরাবের পাশাপাশি ডানে বামে আরো দুটি মেহরাব রয়েছে।


(৮) প্রধান মেহরাবটিও তুলনামূলক ভাবে অনেক ছোট বিধায় ঈমাম সাহেবকে বাহিরে দাঁড়িয়েই নামাজ পড়াতে হয়।


(৯) এটা ভেতরের দিকের পূর্ব পাশের দেয়াল।


(১০) প্রধান গম্বুজের ভেতরের দিক থেকে তোলা ছবি।


(১১) এক লাইনের বারান্দার ভেতরের ছবি।


(১২) বারান্দার একটি ছোট গম্বুজের ভেতরের দিক।


(১৩) দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় দাঁড়িয়ে তোলা ছবি।


(১৪) এটা তুলেছি দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে দাঁড়িয়ে।


(১৫) এটা মসজিদের পশ্চিম পাশের দেয়াল, মাঝখানের উঁচু অংশটায় ভেতরের দিকে প্রধান মেহরাব।


(১৬) উত্তর-পশ্চিম কর্ণার থেকে তোলা ছবি।


(১৭) কিংবদন্তী আছে, গোড়াই নামে একজন সুফি এই মসজিদে বসবাস করতেন। মসজিদের সামনে আবিষ্কৃত এই কবরটিকে সুফি গোড়াইয়ের কবর বলেই ধারণা করা হয়।


(১৮) মূল মসজিদ ও কবরের মাঝখানের অংশটা অনুচ্চ দেয়াল দেওয়া অংশটায়ও নামাজ আদায়ের জন্য বিছানার ব্যবস্থ্যা করা আছে।


(১৯/২০) এখানে মান্নত ও পানি পড়ার সু-ব্যবস্থা আছে 😉

৮৮০জন ৭৭৭জন
0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ