
দখিনা বারান্দায় দাঁড়িয়ে এলোমেলো কতো কিছু ভাবনার অতল গহ্বরে তলিয়ে গেছে সুনয়না। হঠাৎ শায়নের সাথে দেখা তারপর এই সব উপহার পাঠানো। কী হচ্ছে এসব? জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় এসে এমন হাস্যকর পরিস্থিতি সত্যিই অস্বস্তিকর। সুনয়না কখনো ভাবছে হয়তো শায়নই করছে এসব আবার কখনো ভাবছে সে কেনো করবে এমন ছেলেমানুষী? আর তাছাড়া দীর্ঘ দুই যুগ পেরিয়ে গেছে আমাদের কলেজ জীবন। এতো দিনে তার নিশ্চয় ঘর হয়েছে, ঘরের মানুষ হয়েছে, ছেলে মেয়ে হয়েছে। সেই সব কিছুর পর নিশ্চয়ই এমন কর্মকাণ্ড সে করবে না! তবে কে কে করবে এইসব? উফ্!
টুং টাং শব্দের আওয়াজে ছেদ পড়ল সুনয়নার ভাবনায়। চুমকে উঠল সে!
ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো আননোন নম্বরে একটা টেক্সট এসেছে।
প্রিয় মায়াবতী,
এ জন্মে তুমি আমার হবে না, সে আমি ভীষণ করে বুঝে গেছি। তোমার এই পরিপূর্ণ জীবনে এতোটুকু জায়গা নেই আমার জন্য বরাদ্দ তা জেনেও তোমাকে পাবার আশা রাখি কী করে? এ জন্ম তো কেটেই যাচ্ছে তোমাকে না পাওয়ার বিহর ব্যথায় হতাশায় যন্ত্রণায়! কিন্তু পরের জন্মে, পরের জন্মে কী পাবো তোমায়? পরের জন্মে তুমি আমার হবে তো মায়াবতী!
লেখাটা পড়তে পড়তে কখন সুনয়নার চোখ ভিজে গেছে তা সে টেরই পায়নি। হঠাৎ আতকে উঠলো সুনয়না, তার ভেজা চোখ পেরিয়ে অশ্রু বিন্দু একটু একটু করে গড়িয়ে পড়ছে কপোল বেয়ে তা দেখে। মেসেজের কথা গুলো কেমন যেনো সুঁচের মতো বিঁধছে তার হৃদয়। এফোঁড় ওফোঁড়ে রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত করছে তার অন্তর। সুনয়না মনে মনে ভাবছে হায় ঈশ্বর! এ কেমন যন্ত্রণায় জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করছো আমায়? এ কার নষ্ট হয়ে যাওয়া জীবনের দ্বায় চাপিয়ে দিচ্ছো আমার উপর? এ কোন সত্য আজ আমার দুয়ারে দাঁড়িয়ে? আহ! আমি আর এসব কিছুতেই ভাবতে পারছি না।
সুনয়না চোখ মুছে ফোনটা হাতে নিয়ে টেক্সট এর রিপ্লাই দিল।
-কে আপনি? আমি তো আপনাকে চিনিও না তবে কেনো ছলনায় মড়ানো এক পৃথিবী যন্ত্রণা পাঠিয়েছেন আমার নামে। এই সব যন্ত্রণা দানের মানে কী? কী চাইছেন আপনি, কেনো করছেন এমন ছেলেমানুষী?
টেক্সট সেন্ট করে পরের রিপ্লাইয়ের জন্য অপেক্ষা করছে সুনয়না। আবার টুং টাং আওয়াজ
সুনয়না তাড়াতাড়ি মেসেজ পড়তে শুরু করলো।
-মায়াবতী আমি দুঃখিত তোমাকে এভাবে কষ্ট দেবার জন্য। আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি আর কখনো তোমাকে টেক্সট পাঠাবো না। না পাঠাবো কোনো যন্ত্রণা। আমাকে ক্ষমা করো মায়াবতী, ক্ষমা করো আমায়।
সুনয়নার বুকের মধ্যে কেমন ছ্যাঁত করে উঠলো! কেমন মায়াময় ছিল পরের কথা গুলো। সুনয়না ভাবলো সে ফোন দেবে। তারপর যা হয় দেখা যাবে। সুনয়না কল দিল। রিং বেজে বেজে কেটে গেলো। সুনয়না আবার ফোন দিল। অপর প্রাপ্ত থেকে ভেসে এলো নারী কন্ঠস্বর। দুঃখিত আপনি যে নম্বরে ফোন দিয়েছেন তা এখন বন্ধ আছে…
সুনয়নার বুকের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যেতে শুরু করলো। অজানা অচেনা কারো জন্য এতোটা কষ্ট কেনো হচ্ছে? এ কোন ঝড়ের পূর্বাভাস? মানুষের মন এমন কেনো? এই অধো-শেষ বসন্তে পদার্পণ করেও মন কেমন কিশোরীর মতোই অস্থির, হতাশায় ডুবে যাচ্ছে! তবে কী মানুষের মন সারাজীবন একই থাকে! কখনো বুড়ো হয় না?
১৮টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
এতো কষ্ট হয় কেন মানুষের মনে?
সুরাইয়া পারভীন
কষ্ট আছে বলেই মানুষ সুখের অস্তিত্ব অনুভব করতে পারে।
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সবসময়
মোঃ মজিবর রহমান
ঠিক বলেছেন আপু।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সুনয়না আর শায়নের আজকের মানসিক অবস্থা টা দারুন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। চমৎকার ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে গল্প। তবে কি শায়ন আর কোন যোগাযোগ করবে না তার মায়াবতীর সাথে! আগামী চমকের অপেক্ষায় রইলাম। শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য
সুরাইয়া পারভীন
এতো দিনের জমানো অভিমান
এবার বোধহয় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরবে শায়ন কে
দেখা যাক পরের পর্বে কী হয়
আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি দিদিভাই
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
খাদিজাতুল কুবরা
আমার মতে মনের বয়স বাড়েনা। আর সামাজিক প্রেক্ষাপটে বাঙালি নারীর জীবনে এমন আচমকা ঝড় সত্যি মনের জানালা কপাট সব ভেঙে চুরে লণ্ডভণ্ড করে দেয়।
খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে অসময়ে ঝড়ের তান্ডব।
খুব ভালো লাগলো।
পরের পর্বের অপেক্ষায়।
সুরাইয়া পারভীন
এই অসময়ে ঝড়ের তাণ্ডবে কতোটা ক্ষতিগ্রস্ত হয় সুনয়না সেটাই দেখার এখন।
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন আপু
ভালো থাকবেন সবসময়
রোকসানা খন্দকার রুকু
আমার তো ভালো লাগলো অসময়ের ঝড়। অসময় বলে কি কোন কথা আছে!
সুন্দর ভাবে এগোচ্ছে। শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভীন
অবেলার ঝড়ে লণ্ডভণ্ড কারো জীবন
আর আপনার ভালো লাগছে হা হা হা হা হা
আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপু
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
ছাইরাছ হেলাল
আগাম বুকিং দিয়ে রাখাই ভালো।
মনকলা খাওয়ার আনন্দ ই আলাদা।
চালু থাকুক।
সুরাইয়া পারভীন
হা হা হা হা হা মনকলা!!
কৃতজ্ঞতা অশেষ ভাইয়া
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
আলমগীর সরকার লিটন
চিঠিটা বেশ আবেগময় প্রকাশ ————-
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
আরজু মুক্তা
হৃদয়ের গহীনে ব্যথা বাড়লো, মনে হয়।
সুরাইয়া পারভীন
বাড়ারই তো কথা আপু
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
সুপায়ন বড়ুয়া
সুনয়না আর শায়নের মান অভিমান জমে উঠলো বলে। দেখা যাক নতুন চমকের অপেক্ষায়
শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন দাদা
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
তৌহিদ
দূরে গেলে প্রেম বাড়ে লেখাটি পড়ে আরেকবার প্রমাণ পেলাম। এমন আবেগময় চিঠি লেখা একমাত্র প্রকৃত প্রেমিকরাই পারে।
চলুক গল্প।