
প্রিয় শূণ্যতা,
জানো আমার দখিনা বাতায়নে বসেছে ছোট্ট দুটো মিষ্টি ভিনদেশী পাখি। একটা ছেলে পাখি আর একটা মেয়ে পাখি। কি অদ্ভুত সুন্দর দেখতে পাখি দুটো! প্রথম দর্শনেই যে কেউ তাদের প্রেমে পড়বে।
আমি ভেবেছি পাখি দুটোকে খুব যত্নে পুষবো।
যাই ভাবা সেই কাজ। আমি পাখি দুটোর সাথে মিতালী করেছি। ওরা আমার বেশ পোষ মেনেছে। আমি ওদের খেতে দিই, ওদের আদর যত্ন করি। ওদের সাথে কথা বলি।
এই জানো! ওরা বোধহয় পালিয়ে এসেছে। প্রথম প্রথম মেয়ে পাখিটির খুব মন খারাপ করে থাকতো। কিন্তু ছেলে পাখিটি তার ভালোবাসা দিয়ে মেয়ে পাখিটির সমস্ত মন খারাপ উধাও করে দিয়েছে। ওদের দেখলেই মনে হয় ওদের মধ্যে খুব ভাব ভালোবাসা। ওরা একে অপরকে খুব ভালোবাসে। আমি ওদের প্রেম দেখে বিমোহিত। ওরা দুটিতে মিলে একটা ঘর তুলেছে। ভালোবাসার ঘর। এ ঘরে বেশ সুখে আছে পাখি দুটি।
কিন্তু হঠাৎ কেমন সব বদলে গেলো। আমার মনে হচ্ছে ওদের মধ্যে কিছু চলছে। হয়তো ভালো যাচ্ছে না ওদের সংসার। ইদানিং অনেকটা সময় মেয়ে পাখিটি একাই থাকে ঘরে। ছেলে পাখিটাকে এখন আর চোখেই পড়ে না। ছেলে পাখিটি হয়তো ভীষণ ব্যস্ত। হয়তো ভবিষ্যতের ভাবনায় এতো ব্যস্ত যে মেয়ে পাখিকে আর সময় দিতে পারে না। পাখি দুটো আর আগের মতো জড়িয়ে থাকে না। একে অন্যের বিপরীতে থাকে। কেউ কারো বুকে মাথা রাখে না। ওরা আর হাসে না। এতে আমারও প্রচণ্ড মন খারাপ। কি যে হলো ওদের মধ্যে? বুঝতে পারছি না।
আমার খুব ইচ্ছে করছে ওদের ডেকে জিজ্ঞেস করি। কি হয়েছে তোমাদের? কি সুন্দর সংসার তোমাদের, তোমরা একে অপরকে তো অনেক ভালোবাসো। কিন্তু কাছে ডেকে আর জিজ্ঞেস করতে পারিনি। আমার তো দুটো পাখির জন্যই কষ্ট হয়, ভীষণ কষ্ট হয়। ছেলে পাখিটি বাস্তবতার চাপে পড়ে একটু একটু করে ব্যস্ততায় বিলীন হয়ে গেছে।আর মেয়ে পাখিটি এক আকাশ অভিমান বুকে নিয়ে ভাবছে হয়তো ছেলে পাখিটি বাদলে গেছে। হয়তো আর আগের মতো ভালোবাসে না তাকে।
এই ভেবে মেয়ে পাখিটি একটু একটু করে গুমরে মরছে।
জানো একদিন কি হলো! মেয়ে পাখিটি ঠিক করলো যে সে আর এখানে থাকবে না। চলে যাবে সে যেখান থেকে এসেছে। তার এই সিদ্ধান্ত সে ছেলে পাখিটিকে জানালো। মেয়ে পাখিটি বললো
আমি আর এ সংসারে থাকতে পারছি না। হয়তো কেউই পারে না এমন নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করতে।
একটু একটু করে প্রতিদিন মরার চেয়ে এই বন্দিদশা থেকে বেরিয়ে মুক্ত আকাশে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিতে চাই। আমি চললাম থাকো তুমি তোমার মতো।
বলেই মেয়ে পাখিটি বেরিয়ে পড়লো।
কিন্তু অদ্ভুত কি জানো! ছেলে পাখিটি একটি বারের জন্যও আটকালো না মেয়ে পাখিটিকে। আচ্ছা বলে যাওয়ার সম্মতি দিলো। এটা দেখে আমার প্রচণ্ড রাগ হয়েছিলো। মনে মনে খুব বকা দিয়েছিলাম। পরে অবশ্য আমার ভুল ভেঙ্গে গেছে। যখন শুনলাম ছেলে পাখিটি ক্যান্সারে আক্রান্ত। সে আর বেশি দিন বাঁচবে না। তাই সে চেয়েছে মেয়ে পাখিটি এখান থেকে গিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করুক।
সেই থেকে আমার নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে। না জেনেই কতো বাজে মন্তব্য করেছি। ছেলে পাখিটি আর বাইরে বের হতো না । সারাদিন বাতায়নে বসে থাকতো। আমি পাখিটির সাথে কথা বলতাম। একদিন দেখলাম পাখিটি আর বসে নেই। মনের মধ্যে খচ করে উঠলো। দ্রুত এগিয়ে গিয়ে দেখি ছেলে পাখিটি আর নেই। একা মরে পড়ে আছে,,,,,,
তার দুই দিন পর মেয়ে পাখিটি ফিরে এলো। হয়তো তার অভিমান ভেঙ্গে গেছে। হয়তো সে থাকতে পারছে না তার প্রিয়তমকে ছেড়ে। ভালোবাসে তো। ভালোবাসার উপর অভিমান হলেও ভালোবাসার থেকে বেশিদিন দূরে থাকা যায় না। ভালোবাসার উপর রাগ পুষে রাখা যায় না। তাই তো মেয়ে পাখিটি ছুটে এসেছে তার ভালোবাসার কাছে। কিন্তু সে যে বড্ড দেরী করে ফেলেছে। হায় ঈশ্বর এ কেমন নিয়তি!
মেয়ে পাখিটি ঘরে ফিরে দেখলো সব কেমন অগোছালো পড়ে রয়েছে। কি অবস্থা করে রেখেছে ঘরে? মেয়ে পাখিটি ছেলে পাখিটিকে না দেখতে পেয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলো সে গেছে কোথায়?
তুমিই বলো না সত্যি কথাটা কি করে পাখিটিকে বলি। হৃদয় ভেঙ্গে খান খান হলেও যে সত্য কথা মেয়ে পাখিকে বলতেই হবে। আমি সবটা খুলে বললাম। মেয়ে পাখিটি নিস্তব্ধ পাথরে পরিণত হলো। এক ফোঁটাও অশ্রু গড়িয়ে পড়লো না কপোল বয়ে। আমি তাকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করলাম । জানি না এতে কোনো লাভ হলো কি না। আমি মেয়ে পাখিটিকে চলে যেতে বললাম। নতুন করে জীবন সাজাতে বললাম। কিন্তু সে এটা করলো না। শুধু বললো এখানেই থাকবে। এখানে থেকেই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবে। তার প্রিয়মতের শেষ স্মৃতি আঁকড়ে।
জানো তুমি! মেয়ে পাখিটিও আমার মতো তোমাকে আঁকড়ে ধরেছে। এখন তুমিই একমাত্র সঙ্গী মেয়েপাখিটির। এখন মেয়েপাখিটিও তুমি প্রেমী।
ইতি,
তুমি প্রেমী আমি
২৬টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
ভুল বুঝাবুঝিই একটি সংসারকে শেষ করে দেয়,
যখন এই ভুল ধরা পরে তখন আর কিছুই করার থাকেনা।
ভাল লিখেছেন।
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ভালো থাকবেন
জিসান শা ইকরাম
যাই বাবা সেই কাজ – এটি যেই ভাবা সেই কাজ হবে না ?
সুরাইয়া পারভীন
হুম ওটাই হবে
টাইপ মিস্টেক ভাইয়া। কৃতজ্ঞতা অশেষ
জিসান শা ইকরাম
অনেকে ভুল ধরিয়ে দিলে মাইন্ড করে আবার।
সহজ ভাবে নেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
সুরাইয়া পারভীন
না ভাইয়া আমি এটা খারাপ ভাবে নিই না।
ভুল ধরলেই বরং সচেতনতা বাড়বে আমার।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ভুল বোঝাবুঝির কারণেই অনেক সংসার ভেঙ্গে যায়, ভালোবাসা নষ্ট নীড়ে পরিনত হয়। সুন্দর লিখেছেন। শুভ কামনা রইলো আপু 🌹🌹
সুরাইয়া পারভীন
ঠিক বলেছেন দিদি
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ছাইরাছ হেলাল
লেখায় পাখিদের দেখার ছলে অনেক কথা বলা হয়ে গেছে,
এমন বিচিত্রতা আমাদের দেখা-চোখেও আমরা দেখি।
সুন্দর অনুভব।
সুরাইয়া পারভীন
একদম সঠিক ভাইয়া।
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সবসময়
সুপায়ন বড়ুয়া
অসাধারন আপা ,
বিয়োগান্তক পাখি প্রেম দাগ কেটে যায়
শুভেচ্ছা।
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন দাদা।
ভালো থাকবেন সবসময়
আরজু মুক্তা
অনুভূতিগুলো পাখির মাধ্যমে ভালোই ধরা পরলো
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন আপু
ভালো থাকবেন সবসময়
কামাল উদ্দিন
মন খারাপ করা গল্প, তবু আমি সব সময়ই বলি জীবন যেহেতু থেমে থাকেনা তাকে ুপভোগ্য করে তোলার চেষ্টা করাটাই ভালো……….শুভ কামনা জানবেন আপু।
সুরাইয়া পারভীন
প্রতিটি মুহূর্ত কে উপভোগ করতে পারলে ভালোই হতো। কিন্তু সেটা হয়ে উঠে না সবসময়
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
কামাল উদ্দিন
তবে চেষ্টা থাকাটা ভালো
ইসিয়াক
খুব ভালো লাগলো আপু ।
শুভকামনা রইলো।
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
তৌহিদ
সংসারে ভুল বোঝাবুঝির হতেই পারে তাই বলে চলে যেতে হবে কেন? এই চলে যাওয়ার জন্যই তো অনেক সংসার ভেঙ্গে যায়। তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নেয় যা মোটেও উচিত নয়। বাস্তবতার নিরিখে চিঠি ভালো লেগেছে আপু।
ভালো থাকবেন।
সুরাইয়া পারভীন
একদম সঠিক বলেছেন ভাইয়া।
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন।
ভালো থাকবেন সবসময়
সঞ্জয় মালাকার
ভুল বোঝাবুঝির কারণেই অনেক সংসার ভেঙ্গে যায়,নষ্ট করে দেয়।
চমৎকার লিখেছেন দিদি পড়ে খুব ভালো লাগলো, ধন্যবাদ দিদি, শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভীন
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন দাদা। ভালো থাকবেন সবসময়
সঞ্জয় মালাকার
ধন্যবাদ দিদি, শুভ কামনা, আপনিও ভালো থাকুন সব সময়।
সাবিনা ইয়াসমিন
ভালোবাসায় অভিমান জন্মালেও ভালোবাসার কাছ থেকে কেউ বেশিদিন দূরে থাকতে পারে না।
এটাই সত্যি।
সুন্দর চিঠি,
শুভ কামনা 🌹🌹
সুরাইয়া পারভীন
একদম সঠিক বলেছেন আপু
এক আকাশ অভিমান নিয়ে দূরে গেলেও
ভালোবাসা থেকে দূরে থাকা যায় না