
শীতের সঙ্গে এখন পর্যন্ত পাঁচবার দেখা হয়েছে। প্রথমবার দেখা হল যেবার ভাস্কর চক্রবর্তীর বিখ্যাত কবিতাটা পড়লাম : ‘শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা? আমি তিন মাস ঘুমিয়ে থাকবো’। এটা এত বেশি ভেতরে ঢুকে গেছে যে, লাইনটা পড়লেই শরীরের ভেতরে শীতকাল নেমে আসে। বাধ্য হয়ে বলতে হয়,―শীতকাল যখনই আসুক, আমি আসলে তিন মাস গোসল না করে থাকবো।
আমি প্লাসের গরম আর মাইনাসের শীত দুটোই দেখেছি। কিন্তু ভাস্করের নামানো শীত অন্যরকম। ঠান্ডা হাত নিয়ে হ্যান্ডশেক করার মতো। ফলে শীতকাল এলে আগে ভাস্করকে নামাতে হয়। তারপর সারা বছর লুকিয়ে রাখা সোয়েটার, জ্যাকেট ও শাল।
দ্বিতীয়বার যখন শীত দেখলাম―তখন শাল পরেছি। কী একটা কারণে সেবার চট্টগ্রামের বাইরে গিয়েছি। ফিরছি যখন, তখনও ভোরবেলা। আমি জিইসি মোড়ে, বাস থেকে নামছি। রাস্তায় পা দিতেই শীত এসে হাঁটুর ওপরে ওঠে গেল। বুঝলাম, আঠারো প্লাস শীত। আমি মোড়ের অন্যপাশে সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহর ক্রিয়াপদের মত তাকালাম। সেই ভোরে―ভাপা পিঠার দোকান বসে গেছে। দোকান ঘিরে ভিড়। প্রচুর উষ্ণতা বিক্রি হচ্ছে।
ছবিতে ভাস্কর চক্রবর্তী, অর্ণব, জীবনানন্দ দাশ ও উপল বড়ুয়া।
আমাকে তৃতীয়বার শীত দেখালেন উপল বড়ুয়া। তার কবিতাটা এরকম : ‘কেউ শীতের দিকে যায় নাই, শীত এসে তাদের নিয়ে গেছে, উইন্টার ফরেস্টের বাংলোতে …’। এই শীত যেন সুইট সিক্সটিন; বেইলি রোডের প্রেমের মতো। ডোন্ট কেয়ার। কিন্তু কবিতার শেষে এসে যখন পড়তে হয় : ‘শীত তোমার মতোই এক বয়স্ক ঋতু, তারও চাই কান ঢাকা মাফলার’। তখন মনে হয়, শীতও আমাদের মতোই ভুক্তভোগী। তাকে মাফলার না দিয়ে একটা হেডফোন দিই। প্লেলিস্টে দিয়ে দিই কিছু হেভি মেটাল গান।
চতুর্থবার শীত পাওয়া গেল অর্ণবের গানে। তিনি গিটারে টু টাং করে গাইলেন : ‘শীতের সন্ধ্যায়, আমার তোমার কি কোথাও হারিয়ে যাওয়ার কথা? তারার নিচে বাতাস বয়ে যায়; আমার তোমার কি কোথাও লুকিয়ে থাকার কথা? …’। এটা অনেক রোমান্টিক। যেন বিয়ে মানে শুধু রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস বদলানো নয়। বাকি জীবন কার সোয়েটার বা জ্যাকেটের পকেটে হাত গরম করবেন সেই সিদ্ধান্তও।
পঞ্চমবারের কথা বলি। বাসার ফ্লোর তখন অসম্ভব ঠাণ্ডা। খালি পায়ে হাঁটাহাঁটি মানেই মৃত্যুর অনুভূতি। একদিন মরতে মরতে মনে হলো, কোথাও ভুল হয়ে গেছে। শীতের সঙ্গে প্রথম দেখা তো ভাস্কর করাননি। করিয়েছেন ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক জীবনানন্দ দাশ। তার কবিতাটার নাম শীতরাত। তিনি লিখেছেন―‘এইসব শীতের রাতে আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে …’
৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯
১৯টি মন্তব্য
সুপায়ন বড়ুয়া
শীত নিয়ে আড্ডা
করতে মন্দ না
শীত আসলে আর
কেউ কম্বল দেয় না।
শুভ কামনা।
নাজমুস সাকিব রহমান
ধন্যবাদ।
সাবিনা ইয়াসমিন
শীত তাহলে হাটুর উপরে উঠে!
আপনার বিচিত্র রকমের শীত দর্শন পড়ে ভালো লাগলো।
দীর্ঘদিন পর ব্লগে ফিরলেন। স্বাগতম আপনাকে। সাথে
শুভ কামনা 🌹🌹
নাজমুস সাকিব রহমান
দুষ্ট শীত যে কই কই উঠে, কীভাবে বলি!
হ্যাঁ, অনেকদিন পর ব্লগে ফিরলাম। পাসওয়ার্ড ভুলে গিয়েছিলাম। অনেক কষ্টে উদ্ধার করা গেলো।
শুভেচ্ছা নেবেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
নিয়মিত লিখুন,
ভালো থাকুন 🌹🌹
ইসিয়াক
বেশ ভালো লাগলো।
নাজমুস সাকিব রহমান
ধন্যবাদ।
তৌহিদ
অনেকদিন পরে এলেন দেখে ভালো লাগছে। আড্ডায় পরে আসছি।
নাজমুস সাকিব রহমান
হ্যাঁ, অনেকদিন পরেই। শেষ পোস্ট ২০১৭ তে। এতদিন আমাকে কেউ মনে রাখার কথা না।
শুভেচ্ছা নেবেন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অন্যরকম একটা শীত আড্ডা পেলাম। অনুভুতি গুলো সুন্দর। শুভেচ্ছা ও শুভকামনা
নাজমুস সাকিব রহমান
‘অনুভূতিগুলোকে ভাষায় ফেলতে চাই।’
আপনাকেও শুভেচ্ছা। লেখাটা পড়ার জন্য।
জিসান শা ইকরাম
সাহিত্য আর গানের মাঝে শীত দেখা!
ভালোই লাগলো।
অনেক দিন পরে লিখলেন,
লিখুন নিয়মিত ও অন্যদের লেখাও পড়ুন।
আপনি পুরাতন ব্লগার, নীতিমালা তো জানেনই আপনি।
তারপরেও একটি জানাচ্ছি চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে দুটো পোষ্ট দেয়া যাবে না।
শুভ ব্লগিং।
নাজমুস সাকিব রহমান
ধন্যবাদ। মনে করিয়ে দেবার জন্য।
অনেকদিন ছিলাম না। নিয়মকানুন খেয়ে ফেলেছিলাম।
সুরাইয়া পারভীন
আরে বাস! শীত নিয়ে এতো সুন্দর রোমান্টিক পোস্ট
দুর্দান্ত উপস্থাপন।
নাজমুস সাকিব রহমান
থ্যাংক ইউ।
এস.জেড বাবু
সুন্দর লিখেছেন,
অনেকদিন পর সোনেলায় আড্ডা পোষ্ট দেখলাম।
বেশ রসালো প্রকাশ।
শুভ্চ্ছা ভাইজান।
নাজমুস সাকিব রহমান
আপনাকেও শুভেচ্ছা।
আরজু মুক্তা
দারুণ এক উপভোগ্য শীত। এখন লেপের উপর দুটা কম্বল দিয়ে গান শুনতেই ভালো লাগে। কাজ তুমি গ্রীষ্মকালে আসিও।
নাজমুস সাকিব রহমান
আগুন পোহাতে পারেন।