আমাদের দেশে সবচেয়ে পরিচিত ও সবুজ রঙের পাখিদের মধ্যে সবুজ টিয়া সকলের পছন্দনীয় একটি Ps ittaculidaeপরিবারের অন্তর্গত সুদর্শন পাখি। বাংলাদেশের সকল অঞ্চলের শহরে ও গ্রামে এদের অবাধ বিচরন চোখে পড়ার মতন। শিশুদের কাছে সবুজ টিয়া অত্যন্ত লোভনীয় একটি পাখি। যারা খাঁচায় পাখি পালন করে তাদের কাছে এই টিয়ার বিকল্প নেই। যদিও আমরা যারা পাখি বিশারদ ও গবেষক হয়ে কাজ করি তারা সবসময় যে কোন পাখিকে খাঁচায় আবদ্ধ রেখে লালন পালনে নিরুৎসাহিত করে আসছি। তার মূল কারন এরা বনের পাখি। বন হচ্ছে এদের আবাসস্থল। প্রকৃতি থেকে যে খাবার তারা নিজেরা সারভাইভ করে খেতে পারে তা খাঁচায় কারো পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। যার ফলে পাখিগুলি ধীরে ধীরে দূর্বল হয়ে পড়ে ও এক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তাছাড়াও খাঁচায় এদের প্রজনন বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে পাখিগুলি তাদের বংশ বিস্তারে দূর্বল হয়ে পড়ে। এভাবে যদি সবাই পাখিদের খাঁচায় বন্দী করে রাখে তবে এক সময় এরা আমাদের প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাবে। যা প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় বাঁধাগ্রস্ত হবে।
সবুজ টিয়া কলাপাতা-সবুজ রঙের দীর্ঘ সুদর্শন পাখি। এদেরে দৈর্ঘ্য ৪২সেঃমিঃ, ওজন ১৩০-১৫০ গ্রাম (আকার ভেদে), ডানা ১৮ সেঃমিঃ, ঠোঁট ২.৫ সেঃমিঃ, পা ১.৭ সেঃমিঃ ও লেজ ২৭ সেঃমিঃ লম্বা হয়। দেহের কিছু অংশ ছাড়া পুরা শরীর সবুজ। দীর্ঘ ও সরু সবুজ লেজে নীলের আমেজ দেখা পাওয়া যায়। লাল ঠোঁট নীচের দিকে বড়শীর মতন বাঁকানো। চোখ হলদে সাদা ও পা সবুজাভ স্লেট রঙের। ছেলে ও মেয়ে পাখির চেহারায় ভিন্নতা আছে। ছেলে পাখির গলায় কালো-লাল রঙের মালা থাকে। মেয়ে পাখির গলা মালাহীন। গলার মালা দিয়ে ছেলে ও মেয়ে পাখিকে চেনা যায়। সারা বিশ্বে এদের চারটি উপপ্রজাতি রয়েছে। আমাদের দেশে একটি উপপ্রজাতি Psittacula krameri পাওয়া যায় বা দেখা যায়।
সবুজ টিয়া খোল বনভূমি, পাতাঝরা বন, অপ্রধান বন, আবাদি জমি, বাগান, লোকালয়ে বিচরন করে। এরা সচারচর ছোট ছোট দলে থাকে। ফুলজ ও ফলদ গাছে, ঘেরা ফলের বাগানে এবং শস্যক্ষেতে খাবার খায়। এদের খাবার তালিকায় রয়েছে পত্রগুচ্ছ ফুল, ফল, লতা-পাতা, বীজ বা শস্যদানা ও ফুলের মিষ্টি রস। গ্রামে ও শহরে বড় গাছে এরা অন্য পাখিদের সঙ্গে রাত কাটায়। চলাফেরা করার সময় আংশিক লেজ উঠায়। এরা উচ্চ ও তীব্র স্বরে ডাকে। তবে খাঁচায় বন্দী করে অনেকে এদের কথা বলাতে পারে। আঞ্চল ভেদে এদের তোতা পাখি নামেও ডাকে। তাই এদের আঞ্চলিক নাম তোতা পাখি।
জানুয়ারী থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত এদেরে প্রজননকাল। প্রজনন মৌসুমে এরা গাছে কোটরে বা বসন্ত বৌরির বাসায়, পরিত্যাক্ত খোঁড়লে, শহরের উঁচু দালানের ফোঁকরে নিজেরা বাসায় বানায়। গাছের ছোট ছোট ডাল-পালা ও ছন দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম দেয়। মেয়ে পাখি ৪-৬টা ডিম পাড়ে। ছেলে ও মেয়ে উভয়ে ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফুঁটায়। ২১ দিনে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হয়। তখন মা ও বাবা দুজনে মিলে ছানাদের খাবারের যোগান দিয়ে থাকে। অসাধু পাখি বিক্রেতাদের চোখ সবসময় এদের দিকে থাকে। বাচ্চা ফুঁটার সঙ্গে সঙ্গে তারা বাসা থেকে বাচ্চা নামিয়ে নেয়। পরবর্তীতে খাঁচায় রেখে একটু বড় হলে বিক্রির জন্য ফেরী করে বেড়ায়। যা বণ্যপ্রানী সংরক্ষন আইনে আইনতঃ দন্ডনীয় অপরাধ। এই অসাধু ব্যবসায়ীদের কবল থেকে আমরা সচেতন না হয়ে এদের যদি রক্ষা না করি তবে ধীরে ধীরে এরা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
সবুজ টিয়া বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি। দেশের সব জেলায় ও লোকালয়ে পাওয়া যায়। ইহা ছাড়াও আফ্রিকা, আফগানিস্তান,ভারত দক্ষিণ-পূর্ব চীন ও মায়ানমারে এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে। বাংলাদেশে বণ্যপ্রাণী আইনে এই পাখি সংরক্ষিত।
বাংলা নামঃ সবুজ টিয়া
ইংরেজী নামঃ Rose-ringed parakeet
বৈজ্ঞানিক নামঃ Psittacula krameri
ছবিগুলি ঢাকার কার্জন হলের বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে তোলা।
বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোরে এটাই সত্যি॥
অসাধারণ টিয়া সম্পর্কে জানলাম।
আমাদের একটা মিষ্টি কামড়াঙ্গার গাছ ছিল। তখন পাকলে খাওয়ার জন্য চলে আসত। দুষ্টু ছেলের দল একবার তাদের তাড়া করলে আর কোনদিন আসেনি॥
আমাদের প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় সচেতনতা জরুরি।
অতি বৃষ্টি, অতি খরা, শীত সব প্রকৃতি নষ্ট করছি বলেই হচ্ছে।
শুভ কামনা রইলো ভাইয়া। অভিযান চলুক।
এরা প্রকৃতির সৌন্দর্য, সম্পদ তাই এদেরকে খাঁচায় বন্দী করার ঘোর বিরোধিতা করি।এদের স্বাভাবিক প্রজনন, বিস্তারের জন্য এদেরকে উন্মুক্ত রাখতে হবে। এদের খাঁচায় বন্দী করা মানে প্রকৃতিকে অবরুদ্ধ করা। খুব সুন্দর ভাইয়া। রং টাই আকৃষ্ট করে বেশি। লাল, টিয়ের কম্বিনেশন এ দারুন লাগে দেখতে। একরাশ শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
একসময় খাঁচায় পাখি পালনের খুব ঝোক ছিল।
পেলেছিলামও কয়েক বছর।
একটি লেখা পড়ে পাখিদের প্রতি দুর্বল হয়ে যাই, এরপরে সব পাখি মুক্ত করে দেই। খাঁচাগুলো সব ভেংগে ফেলি।
সবুজ টিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভ কামনা।
১৯টি মন্তব্য
আরজু মুক্তা
সুন্দর বর্ণনায় নতুন করে জানলাম টিয়া পাখির কথা। বনের পাখি বনেই সুন্দর। খাঁচায় বন্দি করার কী দরকার? নিজেরা সচেতন হই। অন্যদেরও সচেতন করি।
শামীম চৌধুরী
এটাই হোক আমাদের শ্লোগান।
ধন্যবাদ আপু।
ছাইরাছ হেলাল
বন্যেরা বনেই সুন্দর এ কথাটি আপনার কাছ থেকেও শুনে ভাল লাগল।
আমরা টিয়ে বলতে এই সবুজ পাখিটিকেই বুঝি/জানি। প্রাণকাড়া ছবি দেখে ভাল লাগল।
শামীম চৌধুরী
অনেক শুভ কামনা রইলো।
আলমগীর সরকার লিটন
এরকম টিয়া ডাবগাছে দেখতাম বাড়ির উঠানে শামীম দা
শামীম চৌধুরী
এরা ডাব গাছের খোঁড়লেই বেশী বাসা বানায়।
রোকসানা খন্দকার রুকু
বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোরে এটাই সত্যি॥
অসাধারণ টিয়া সম্পর্কে জানলাম।
আমাদের একটা মিষ্টি কামড়াঙ্গার গাছ ছিল। তখন পাকলে খাওয়ার জন্য চলে আসত। দুষ্টু ছেলের দল একবার তাদের তাড়া করলে আর কোনদিন আসেনি॥
আমাদের প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় সচেতনতা জরুরি।
অতি বৃষ্টি, অতি খরা, শীত সব প্রকৃতি নষ্ট করছি বলেই হচ্ছে।
শুভ কামনা রইলো ভাইয়া। অভিযান চলুক।
শামীম চৌধুরী
জ্বী আপু, কামরাঙ্গা এদের খুবই পছন্দের ফল।
প্রদীপ চক্রবর্তী
এই পাখির কথা গতদিনের পোস্টে বলেছিলাম।
এমন তোতাপাখি শেখালে কথা বলতে জানে।
খুবি সুন্দর পাখি।
অনেক অজানা জানি।
খুবি ভালো লাগলো,দাদা।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ দাদাভাই।
সুপায়ন বড়ুয়া
তোতা পাখিকে কথা শিখালে বলতে পারে।
হুমায়ুন আহমদের নাটকে তা সার্থক করে তুলেছে।
তা মনে পড়ে গেল।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
শামীম চৌধুরী
জ্বী কবি দা
হুমায়ূন আহম্মেদ তোতাকে বলাতে শিখিয়েছিলেন
“তুই রাজাকার”
তৌহিদ
ছবিগুলির দিকে অনেক্ষন তাকিয়েই আছি। মোহময় সব ছবি। সাথে তথ্যসমৃদ্ধ লেখা পোস্টটিকে অনন্যমাত্রা দিয়েছে।
খাঁচায় বন্দী পাখি আগে ভালো লাগলেও এখন আর মন টানেনা। মুক্ত বিহঙ্গই আমার কাছে অনেক সুন্দর।
ভালো থাকুন ভাই।
শামীম চৌধুরী
অনেক কৃতজ্ঞ ভাইজান।
শুভ কামনা রইলো।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এরা প্রকৃতির সৌন্দর্য, সম্পদ তাই এদেরকে খাঁচায় বন্দী করার ঘোর বিরোধিতা করি।এদের স্বাভাবিক প্রজনন, বিস্তারের জন্য এদেরকে উন্মুক্ত রাখতে হবে। এদের খাঁচায় বন্দী করা মানে প্রকৃতিকে অবরুদ্ধ করা। খুব সুন্দর ভাইয়া। রং টাই আকৃষ্ট করে বেশি। লাল, টিয়ের কম্বিনেশন এ দারুন লাগে দেখতে। একরাশ শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
শামীম চৌধুরী
অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানবেন দিদিভাই
ভালো থাকুন নিরন্তর।
জিসান শা ইকরাম
একসময় খাঁচায় পাখি পালনের খুব ঝোক ছিল।
পেলেছিলামও কয়েক বছর।
একটি লেখা পড়ে পাখিদের প্রতি দুর্বল হয়ে যাই, এরপরে সব পাখি মুক্ত করে দেই। খাঁচাগুলো সব ভেংগে ফেলি।
সবুজ টিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভ কামনা।
রেজওয়ানা কবির
পাখিদের ভালো না বেসে পারা যায় না,আজ টিয়া পাখি সম্পর্কে বেশি জানলাম। ভালো থাকবেন ভাইয়ক, শুভকামনা ।
রেজওয়ানা কবির
দুঃখিত ভাইয়া