
ধানমন্ডী লেক পার হয়েই লেনের প্রথম গলির প্রথম দোতলা বাড়িটাই রহমান সাহেবের। বাড়ীর সামনে বিড়াট একটা সাইনবোর্ড টাঙ্গানো,যাতে বড় করে লেখা “রোড নাম্বার দুঃখ,বাড়ী নম্বর কষ্ট”
কি অদ্ভুত নাম!!!যেমন বাড়ীর অদ্ভুত নাম ঠিক তেমনি বাড়ীর একেকজনের চরিত্র আরও অদ্ভুত। বাড়ীতে বাস করার ক্ষেত্রে প্রথম যে মানুষটার নাম বলতেই হয় তিনি হলো, রহমান সাহেব। দেখতে ফর্সা,লম্বা, নাকটা উচু বলে নিজেকে বেশী উচু মনে করেন তাছাড়া রিটায়র্ড আরমি পারসন বলে সারাদিন অকারনে চিৎকার চেচামেচিতে বাড়ীটা মাথায় তুলে রাখে রহমান সাহেব। তার বাড়ীতে রুটিনমাফিক কিছু নাহলেই বাঁধিয়ে দেয় তুলকালাম কান্ড।
এবার আসি আরেক ক্যারেক্টারে,যিনি রহমান সাহেবের স্ত্রী মিলা, যার দিনরাত একটাই কাজ শসা, গাজর, কলা সব্জি বা ইউটিউব দেখে সারাদিন মুখে আটা ময়দা মেখে চোখে শসা দিয়ে শিক্ষিত কাজের মেয়ের কাছ থেকে স্টার জলসার কাহিনী শোনা। তার গায়ের রং ধবধবে সাদা অথচ সারাদিন এত ছাইপাশ মাখে যে ভাবখানা এমন যে,কাজ করতে করতে করতে সে কালো হয়ে গেছে, অথচ নিজে রান্না ঘরে পর্যন্ত যায় না শখ করে।
এবার আসি আবিরের কাছে, যেকিনা সারাদিন চোখে ভারী ফ্রেমের চশমা পরে ফেসবুকিং আর নতুন নতুন মেয়ে পটানোতে ব্যস্ত। ইনি হলো এ বাড়ীর একমাত্র ছেলে। অবশ্য মাঝে মাঝে ফেসবুকে এমনসব মেয়েদের সাথে চ্যাটিং করে সামনাসামনি গিয়ে খায় একটা চরম ধরা, তবুও হেরে যায় না, চলতে থাকে তার আবার নতুন জার্নি। এরা পারেও বটে!!!
এবার আসি এ বাড়ীর ছোট মেয়ে নীতু,যে কিনা নিজেকে সেরা ভাবে সবসময় পড়াশুনা বাদ দিয়ে টিকটক ভিডিও করে, পাশাপাশি কানে ইয়া বড় হেডফোন দিয়ে তিড়িং বিড়িং করে নাচে আর স্বপ্ন দেখে সিনেমার নায়িকা হওয়ার।।।।
এ বাড়ীতে আরও একজন আছে যে একদম এ বাড়ীর সব সদস্যদের তুলনায় একেবারে আলাদা। শান্ত,ধীর,স্থির আর শ্যামলা মিষ্টি মেয়ে। যাকে একবার দেখলে তার মায়াময় চোখ থেকে আর চোখ সরানো যায় না। বলা যায় সেই এ বাড়ীর সবকিছু সামলায়। এই মিষ্টি মেয়েটির নাম তিথি।
তবে সবমানুষের ভিতরই কিছু না কিছু থেকে যায় যা সে সারাজীবন বয়ে বেড়ায়। তিথির ক্ষেত্রে ও তার ব্যতিক্রম নয়। বর্তমানে তিথি এক কর্পোরেট অফিসে জব করে। সকালে বাসার তদারকি করে সারাদিন অফিস সামলিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে ক্লান্তিময় শরীরটা যখন বিছানায় এলিয়ে দেয় তখন কিন্তু গভীর ঘুম আসার কথা। কিন্তু তিথির ক্ষেত্রে তা নয় ঘুমের ঔষধ খেয়েও তার ঘুম আসে না। রাত যত গভীর হয় তিথির চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরে। কিন্তু কেন???তা একমাত্র তিথিই জানে।
আজ সকালে রহমান সাহেবের চেঁচামেচিতে বাড়ির সবার ঘুম ভেঙে গেল। রহমান সাহেবের কাছে রিমোর্ট কন্ট্রোল যন্ত্র আছে যাতে টিপ দিলেই মিউজিকে গোটা বাড়ী শব্দে কাঁপতে থাকে, সেখানেতো সবার ঘুম ভাঙ্গা স্বাভাবিক।
সবাই দোতলা থেকে ভয়ে দৌড়ে নীচে নেমে এলো। সবার আগমনের পর রহমান সাহেব শুরু করল তার আলোচনা, কিন্তু ঐ যে কথায় আছে স্বভাব কি আর বদলানো যায়???নীতুর হাতে মোবাইল, আবিরের কানে হেডফোন আর মিলার মুখে আটা ময়দা, অবশ্য চোখ দুটো আজ আলু, শসা দিয়ে ঢাকা নয়। আলোচনায় একমাত্র মনোযোগী তিথি।
যাইহোক আসল বিষয় হচ্ছে আমেরিকা থেকে দুইদিনপর রহমান সাহেবের ছোট ভাইয়ের ছেলে অয়ন আসবে। দীর্ঘ ৬ বছর পর সে এবাএ দেশে ফিরবে। অবশ্য অয়নের বেড়েওঠা এই বাড়িতেই। স্কলারশীপ পেয়ে চলে গিয়ে সেখানেই ফ্যামিলিসহ সেটেল। রহমান সাহেব ছাড়া এ বাড়ীর আর কারো সাথে অয়নের যোগাযোগ ছিল না। মিলি খুব আনন্দ নিয়ে বলল বাহ!!!খুব ভালো খবর! কতদিন দেখিনা ছেলেটাকে? আবির আর নীতুর কোন অনুভুতি নেই। তিথি অয়নের নাম শুনে কোথায় যেন হারিয়ে গেল!!!
রহমান সাহেবের হুংকারে তিথি আবার ফিরে এলো এই জগতে। রহমান সাহেবের কথা, অয়নের যা যা পছন্দ সব যেন এ বাড়ীতে রেডী থাকে,আরও হরেক রকম আয়োজন। যেদিন অয়ন আসবে সেদিন ব্যান্ড পার্টির আয়োজনের কথাও বলা হয়। তিথি তার অফিসের দেরী হচ্ছে বলে উঠে চলে যায়।
পাঠকবৃন্দ, আপনারা যে শান্ত, চুপচাপ স্বভাবের তিথিকে এখন যেমন দেখছেন এই তিথি এমন ছিল না, একেবারেই উচ্ছ্বসিত আর চঞ্চলা ছিল যেকিনা গোটা বাড়ীটা সারাদিন আনন্দে মাতিয়ে রাখত, যে বাড়ীর নাম ছিল না কষ্ট।। ।
তিথি বাথরুমে ফ্রেশের জন্য গেল। এরপর মাথার উপর ঝর্না ছেড়ে অঝোরে চিৎকার করে কাঁদতে থাকল। এভাবে অনেকদিন তিথি কাঁদতে পারেনি। আজ কি তবে অয়নের নাম শুনেই এভাবে কাঁদতে পারল???কে জানে???
আজ তিথির অফিসেও কোন মনোযোগ নেই, কাজের ক্ষেত্রে এত সিনসিয়ার তিথি আজ সব কাজে গুবলেট করছে দেখে বস ও অবাক হলো।
কিভাবে যে আজ সময় কেটে গেল তিথি টেরও পেল না। বাড়ী ফিরে তিথি বাইরে খেয়ে এসেছে বলে দড়জা লাগিয়ে দিল, ব্যস্ততার মাঝেই চলছিলতো তিথির জীবন, কিন্তু আবার,,,,,
তিথির হাতে সেই পুরনো ডায়েরী,,,,কিছুক্ষনের জন্য হলেও তিথি ফিরে গেল পিছনের জীবনে।।।
অয়ন যেদিন প্রথম গ্রাম থেকে এসেছিল তিথিদের বাড়ীতে,,,,,
প্রথম এসেই থতবত হয়েই কলিংবেলে চাঁপ দেয়। তিথি তখন কিশোরী, এলোমেলো চুলে এরকম হতদম্ব অয়নকে দেখে কিছুটা থমকে যায়। অয়নের প্রথম বাক্য ছিল এটা কি “রোড নং দুঃখ, বাড়ী নং কষ্ট”।
তিথিঃ জি
অয়নঃ যাক বাবা! অবশেষে পেলাম, কেউ এই ঠিকানা চিনতে পারছিল না। আমি অয়ন রহমান চাচার ভাইয়ের ছেলে, পড়াশুনার জন্য গ্রাম থেকে এসেছি। আপনি???
তিথিঃ মনে মনে একটু অবাক! গ্রামের ছেলে এত স্মার্ট। তিথি বললো,বাবা একটু ব্যাতিক্রম এই বাড়ীর পুরোনো নাম ছিল রোড নং ২,বাসা নং ৬। কিন্তু বাবা এ বাড়ীর নতুন নাম দিল ” রোড নং দুঃখ, বাসা নং কষ্ট”। বাবার ধারণা মানুষের জীবন দুঃখ কষ্টে ভরা,তাই যতদিন বেঁচে আছে এই দুঃখ কষ্টের মাঝেই সুখ খুঁজতে চায় এই চিন্তা থেকেই এ বাড়ীর এই নতুন নাম। অনেকেই চেনে না এজন্যই আপনার বাড়ী খুঁজে পেতে দেরী হয়েছে।
অয়নঃ মুচকি হেসে বাসায় ঢুকলো।
এরপর অনেকটা উপন্যাসের মতই তিথিকে অয়ন লজিন মাষ্টারের মত পড়াতে লাগল, তারপর তাদের মাঝে তৈরী হল প্রেমের সম্পর্ক। এভাবে প্রতিদিন অয়ন তিথিকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে ভার্সিটি যেত তারপর ফেরার পথে আবার তাকে নিয়ে একটু পার্কে ঘুরে বেড়াতো।
সেদিন ছিল শুক্রবার, তিথির পুরো ফ্যামিলি তার কাজিনের বিয়েতে গ্রামে যায়, তিথির ও যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কিভেবে সে অসুস্থতার অজুহাত দিয়ে আর গেল না। তাই সেদিন তিথি থেকে গেল। হয়ত সেদিনের থেকে যাওয়াই ছিল তিথির জীবনের বড় ভুল। বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিল, কিশোরী তিথি সেদিন ভালোবাসা আর আবেগে নিজেকে সমর্পন করে দিয়েছিল অয়নের কাছে। ঠিক,ভুল কিছুই বিবেচনা করার সময় পায়নি সেদিন। কিশোর বয়সের আবেগে তারা দুজনে দুজনকে কন্ট্রোল করতে পারেনি। তিথিও সেদিন বাঁধা দিতে পারেনি অয়নকে। কবি সাহিত্যকরা এজন্যই বলে কিশোর বয়সে আবেগ প্রখর থাকে এ কারনেই অনেকে ভুল করে যার নমুনা আবারও পাওয়া গেল তিথি ওর অয়নের ক্ষেত্রে । দুচোখ ভিজে আসছিল তিথির সেইসবদিন মনে পর😭😭😭।
আজ রবিবার,অয়ন দাঁড়িয়ে আছে “রোড নং দুঃখ,বাড়ী নংঃ কষ্টের “সামনে। পাশে ব্যান্ডপার্টির আয়োজন। রহমান সাহেবের আনন্দের সীমা নেই। ফুল আর মিষ্টি দিয়ে অয়নকে বরন করে নিলো। বাসার ভিতরটা সেই একইরকম আছে অয়নের কাছে। অয়ন সবার পছন্দ অনুযায়ী গিফট সবাইকে দিয়ে তিথির ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। তিথির দড়জায় নক। তিথি এগিয়ে আসতেই অয়নের চোখে চোখ পরল, সেই পুরনো চোখ,যে চোখে তাকালে বিশাল সমুদ্রে ভেসে যেতে ইচ্ছে করে। তিথি কিছুক্ষন অয়নের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। অয়নের প্রথম কথা, কেমন আছো তুমি???
তিথিঃ ভালো
অয়নঃ তুমিতো আগের মতই আছো।
তিথিঃ হুম, আচ্ছা আমি অফিসে যাবো থাকেন আসি।
অয়ন আরও কিছু বলতে যাচ্ছে ঠিক সেই সময়ে তিথি বেড়িয়ে গেল।
আজ তিথির অফিস নেই তবুও তিথি বাসা থেকে বেড়িয়ে পার্কে গিয়ে একা বসে থাকে, এভাবে বিকেল গড়িয়ে যাওয়ার পর বাড়ী ফিরে তিথি। বাড়ী গিয়ে সবার একসাথে গল্প দেখে তিথি উপরে যাওয়ার সময় রহমান সাহেব তিথিকে ডেকে অয়নকে সময় দেয়ার জন্য বললে তিথি ক্লান্ত বলে চলে যায়। তিথির চলে যাওয়ায় রহমান সাহেব একা একা বিরবির করে তার মেয়েটা এমনভাবে নিজেকে কেন গুটিয়ে নিলো???
পরদিন অয়ন তিথিকে বাড়ীর বাইরের রাস্তায় আঁটকায়। তিথি জোড় করেও পারেনি ফেরাতে তাই অয়নের সাথে ইচ্ছা না থাকা স্বত্বেও রেস্টুরেন্টে যায়। আজও তিথি চুপ। অয়ন বার বার বলে আমি কতবার তোমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি অথচ তুমি???কেন আমার এসবের উত্তর দাও???তিথি চুপ থেকে বলে তারপর তোমার বউ কেমন আছে???
অয়নঃ হুম ভালো, ওদেশে দুজনেই কাজ নিয়ে এত ব্যস্ত থাকি যে কেমন আছে সেটা বলারও সময় নেই। এই বলে অয়ন তিথিকে তার বেবির ছবি দেখায় আর বলে,এই হল আমার মেয়ে পৃথিবী যার ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত সব মুহূর্ত আমি ধরে রাখার চেষ্টা করি।
তিথি হুম,আমি আসি হ্যা এই বলে দৌড়ে বের হয়ে যায়।
অয়ন পিছনে অনেকবার ডাকলেও তিথি আর শোনে না। আসলে তিথি কেন নিজ থেকে অয়নকে সরিয়ে দিয়েছে আজও তার অজানা।
অপরদিকে তিথি তড়িঘড়ি করে ট্যাক্সিক্যাবে উঠেই আবার কান্নায় ভেঙে পরে।।।
পরদিন অয়ন আবার তার বেবির সাথে ভিডিও কলে কথা বলে তিথি পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অয়ন তিথিকে তার মেয়ের সাথে কথা বলতে বললেই লাইনটা কেটে যায় নেটওয়ার্ক না থাকার কারনে। এরপর অয়ন আবার তার মেয়ের গল্প করতে থাকে, এবার তিথি চিৎকার করে বলে এত বেবির গল্প করো কেন??? হাতের কাছের গ্লাস জোড়ে ভেঙে চলে যায় উপরে। অয়ন আবারও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে???
তিথি তার রুমের দড়জা আটকিয়ে মেঝেতে বসে পরে,,,,,
তিথির মনে পরে আবার সেইসব কথা,,,
তিথি অয়নকে বার বার বলে চলো বিয়ে করি!!!
কিন্তু অয়ন তার ক্যারিয়ারের কারনে বিয়ে করতে চায় না। তিথি তাকে জোড় করতে থাকলে অয়ন এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়। এদিকে হঠাৎ তিথি বমি করতে শুরু করে, অপরদিকে সে টেস্ট করিয়ে প্রেগনেন্সী রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়ায় অয়নকে বলতে অয়নের রুমে যায়। অয়ন তিথিকে জড়িয়ে ধরে তার স্কলারশিপের কথা তিথিকে জানায়। ৪ দিন পরই তার ফ্লাইট। তিথি অয়নকে আবার বিয়ের কথা বলে, এভাবে এক পর্যায়ে অয়ন ছাফ জানিয়ে দেয় সে এতবড় সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না। সে এখন বিয়ে করবে না। তিথির বলতে যাওয়া কথা এক নিমিষেই বন্ধ হয়ে যায়।
যেদিন অয়ন চলে যায়, সেদিন তিথি একা হসপিটালে গিয়ে এবোরশন করিয়ে একা একা বাড়ী ফেরে,যার একমাত্র সাক্ষী ছিল তিথির শরীর আর তিথি নিজেই। আজও তিথি ভিতর ভিতর একা এই কষ্টকে বহন করছে।
এরপর মাঝে এতগুলো বছর কেটে গেছে। তিথির জীবনের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা তিথি একা নিজের ভিতর পুষে রেখেছে। আজ এতদিনপর অয়ন এসে আবার তার সব পুরনো অতীত নিয়ে টানাহেচরা করছে। ভালোইতো ছিল তিথি তার মতো।।।।।
আজ এর কিছুক্ষনপর অয়নের ফ্ল্যাইট সবার কাছে বিদায় নিলেও আজও সামনে আসল না তিথি। নীতু অয়নকে তিথির দেয়া একটা চিঠি ধরিয়ে দিল।
এয়ারপোর্টে পৌছায়ে প্লেনে উঠে তিথির দেয়া চিঠি পড়ে অয়নের দুচোখ দিয়ে জল গরাতে লাগল, এমন একটা ভুল যা অয়ন আর চাইলেও শুধরাতে পারবে না। এতগুলো বছর কেন তিথি তার সাথে যোগাযোগ করেনি? কেন বেবীর কথা শুনলে সে রেগে যায়???সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেল আজ এতদিনপর, অথচ আজ তার কিচ্ছু করার নাই। সেদিনও কি অয়নের কিছুই করার ছিল না???তিথির প্রেগন্যান্সির কথা শুনলে অয়ন বিদেশ যাওয়া ক্যানসেল করতো? তিথিতো তাকে বার বার কিছু বলতে চেয়েছিল, কিন্তু অয়ন বিয়ের কথা ভেবে বার বার তিথিকে থামিয়ে দিয়েছিল। সেদিন সেই কথা শুনলে কি তাদের জীবন এমন হতো???সব প্রশ্ন আজ অয়নকে কুরে কুরে খাচ্ছে, নিজেকে খুব বেশি স্বার্থপর মনে হচ্ছে। সে তিথির ভিতরের খবর না জেনে অনেকদিন যোগাযোগ না করায় সিটিজেনশিপ পাওয়ার জন্য ঔ দেশের মেয়েকে বিয়ে করে ফেলে। আজ অয়ন সুদুর আকাশপথে যখন, তখন তার আকাশপথে ভ্রমণ ছাড়া চাইলেও সে আর তিথির জন্য কিছু করতে পারবে না। সে যে বাস্তবতার কাছে আর নিয়তির কাছে বাঁধা।
তিথি রোজকারের মত আজও বিছানায় গেল ঘুমাতে, কিন্তু আজও ঘুম আসছে না। তবে আজ মনে হচ্ছে বুকের ভিতরটা অনেক হাল্কা লাগছে। কি যেন ভারী কিছু তার বুকের ভিতর থেকে নেমে গেছে। তিথি ভাবছে,,,, আচ্ছা বাবা বলে দুঃখ কষ্টে গড়া সবার জীবন, এই দুঃখ, কষ্টের ভিতর দিয়ে নাকি সব সুখ খুজে নিতে হয় —কথাটা কতখানি সত্য। সব কষ্ট কি ভুলে যাওয়া যায়????ভাবতে ভাবতেই তিথি ঘুমের রাজ্যে চলে গেল।
রোড নংঃ দুঃখ, বাড়ী নংঃ কষ্টের সব মানুষ ঘুমিয়ে গেছে। বাইরে আলো জ্বলছে, সাথে দমকা হাওয়া তিথির রুমে ঢুকছে। আজ বাইরে প্রচন্ড জোস্না সেই জোস্নার আলো বেলকুনি দিয়ে তিথির রুমে ঢোকায় ঘুমন্ত তিথিকে নিস্পাপ এক মায়াময় কিশোরীর মত লাগছে, যে মানুষটা হয়ত অনেকবছর পর আজ এভাবে বিভোরে ঘুমাচ্ছে। ঘুম ভাঙ্গলে কি তিথি সব ভুলে নতুন জীবন শুরু করবে, নাকি অতীত আঁকড়েই পরে থাকবে??.
কে জানে?????
ছবিঃ নেট থেকে
১০টি মন্তব্য
হালিমা আক্তার
তিথিরা হেরে যায় অয়নদের ক্যারিয়ারের কাছে। অয়নরা ওপরে ওঠার সিঁড়ি খুঁজে বেড়ায়। আর তিথিরা ভালোবাসার কফিন আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকে। হয়তো কখনো কফিন থেকে বের হয়ে নতুন আলোয় নিজেকে প্রকাশ করবে। শুভ কামনা অবিরাম।
রেজওয়ানা কবির
ঠিকই বলেছেন আপু, কিছু তিথি ভালোবাসার কফিনে জড়িয়ে পরে কিন্তু আবার সে উঠে দাঁড়ায় একসময়। ভালো থাকবেন আপু, শুভকামনা।
ছাইরাছ হেলাল
আসলে অতীতে বসে থেকে কী হয়, সময় তো আমাদের সামনে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
রেজওয়ানা কবির
হুম ভাইয়া অতীত আঁকড়ে বসে না থাকাই ভালো। কিন্তু কিছু অতীত ভুলে যাওয়া যায় না, তবে তা থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া ভালো। শুভকামনা ভাইয়া।
আরজু মুক্তা
গল্প ফাটাফাটি। ১০০ তে ১০০।
সময় কারও জন্য থেমে থাকে না। তবুও কেউ কেউ পারেনা। অতীতেই তার বসবাস হয়।
এমন গল্প আরও চাই। প্রিয়তে দিলাম।
শুভ কামনা
রেজওয়ানা কবির
সত্যি আপু আপনার এত ভালো লেগেছে জেনে মনে হলো আজকেই আরেকটা লিখে ফেলি। আপনি প্রিয়তে নিয়েছেন জেনে মনে হলো,আমার এ লেখা সত্যি স্বার্থক। সময় আসলেই কারো জন্য থেমে থাকে না। অনেক অনেক ভালোবাসা আর শুভকামনা আপু♥️।
আরজু মুক্তা
ভালোবাসা সবসময়।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
“অয়ন তিথিকে জড়িয়ে ধরে তার স্কলারশিপের কথা তিথিকে জানায়। ৪ দিন পরই তার ফ্লাইট। তিথি অয়নকে আবার বিয়ের কথা বলে, এভাবে এক পর্যায়ে অয়ন ছাফ জানিয়ে দেয় সে এতবড় সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না। সে এখন বিয়ে করবে না। তিথির বলতে যাওয়া কথা এক নিমিষেই বন্ধ হয়ে যায়।” —– খুব চমৎকার একটা গল্প পড়লাম। আমরা চাইলে অনেককিছুই সমাধান করে নিতে পারি। কিন্তু আবেগ অনুভূতি আর ভালাবাসার ওপরে যখন প্রতিষ্টা পাওয়ার চিন্তা আসে তখনি অনেক স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।সম্ভবত এটাই জীবনের ধর্ম।
রেজওয়ানা কবির
ঠিক বলেছেন ভাইয়া স্বপ্ন প্রতিস্ঠা পেতে গেলেই সব চুরমার হয়ে যায়। আমরা বেশিরভাগ মানুষই এরকম হয়ত। আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুব ভালো লাগল। ধন্যবাদ ভাইয়া, শুভকামনা।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপা , আপনার প্রতি শুভ কামনা ।