রং তুলীরঁ ডায়রী (তৃতীয় পর্ব)

মনির হোসেন মমি ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, বুধবার, ১২:০৩:৪৮অপরাহ্ন গল্প, বিবিধ ১৫ মন্তব্য

৴বলব,সময় এলেই বলবো।
৴সময় তোমার ৪৮ ঘন্টা!
৴কে বলল আপনাকে?
salman৴এই যে তোমার গায়ে হলুদের তোমার ছবিঁ আকঁছি।
৴ধ্যাত্তরি ছাই কনে তো আমার ফুফাতো  বোন।
৴মানে;
৴মানে টা আমি বলছি….।
কথার ফাকে কনের কথার শব্দ পেয়ে ঘাড় ঘুড়ালেন মঈনুল।চমকে উঠলেন মঈনুল,শিরিন!সে তো তার স্কুল কালিন খুব কাছের বান্ধুবীটি।শিরিন তার বোনকে জড়িয়ে ধরে ডায়রীটি ফেরত পাওয়ার একটি শর্ত দিলেন।
৴তুই শিরিন এ বাড়ীর আজকের এই আয়োজনের মুল মুখ।
৴সরি,কি বললেন?
৴তুই বরাবর এমনি।
৴কি সব আবোল তাবোল বলছেন।
৴আমি আবোল তাবল বলছি হ্যা…(তার কাছা কাছি গিয়ে)অতীতকে তোরা এতো সহজে ভুলিস কি করে রে?
শিরিন বুঝতে পারলেন ওর সাথে চালাকি করা যাবে,খুব ধূর্ত।
৴ভুলতে হয়,সময় সব বদলে দেয় কী রিস্তা কী রাস্তা।
৴তাইতো দেখছি!
৴ না এখনো দেখিসনি,এখন থেকে দেখবি।
এর মধ্যে খোজঁ নিতে শিরিনের ভাই আসার আওয়াজঁ পেয়ে ওরা একটু সতর্ক হলেন।
৴কি রে তোমাদের হলো।কি ব্যাপার এ  কার ছবিঁ একেঁছো?
ছবিঁ স্ট্যান্ডের দিকে তাকিয়েঁ।
৴না মানে সেলিম ভাইয়া,আমিই আমারটা আগে আকতেঁ বলেছি,এবার শিরিনের ছবিঁ আকঁবেন।
৴ঠিক আছে,রাত অনেক হলো তাড়া তাড়ি শেষ করো।
বলে ভাইয়া চলে গেলেন।
৴সরলাকে ধোকা দিয়ে গরলাকে জীবনে স্থান দেয়া এ বড় এক আজব চরিত্রের অধিকারীনি তোরা।হাবুকে দেখেছিস!জানিস ওকেমন আছে?।
৴দেখে-জেনে কি লাভ?তা ছাড়া আমিতো ওরে কখনো বলিনি ভালবাসি।
৴সে তো তরে অসম্ভব রকম ভালবাসত।
৴এক তরফা ভালবাসা হয় না তাছাড়া ‘ও আমার ক্লাশমেট।বাদ দে ওসব কথা।
নীচে পড়ে থাকা ছবিঁটির দিকে দৃষ্টি পড়ল মঈনুলের।ছবিটি হাতে নিয়ে উল্টিয়ে শিরিনের ছবি দেখলেন,নিজে নিজে হাসলেন ছবিটি না দেখার কারনে মেয়েটি তাকে কতটা বোকা বানালো।তার পর দৃষ্টি রাখলেন সেই মেয়েটির দিকে যার নামটিও সে জানেন না।
৴আচ্ছা আপনার নামটি কি বলবেন একটু,যা নাটক দেখাইলেন।
৴এক মুখে তুমি এক বার আপনি করে বলা ঠিক?
৴এখন তুমি অনেক অনেক অচেনা।৴৴
৴নাই বা ভাবলেন ভিন্ন কিছু,বন্ধুত্বে বর্যার হাতে হাত রাখা কি জায়না?
৴অবশ্যই,তা কেনো নয়।
দুজনে করমদন করলেন।মঈনুল এবার শিরিনকে বসতে বললেন নিদিষ্ট স্থানটিতে যেখানে বর্ষা বসেছিলেন।রাতেরঁ গভীরতা বাড়ছে শিরিনের ছবিটি একেঁ শেষ করতে হবে।শিরিনের বক্তব্য তাকে অবাক করল।
৴তোর আর ছবিঁ আকঁতে হবে না।
৴মানে,তোর না দুদিন বাদে বিয়ে!
৴বিয়ে,তবে এ বাড়ীতে নয়,অন্য কোথাও।তোর মনে আছে ১৯৯৩ সালে শিক্ষা মেলায় XL হোন্ডা দিয়ে এসেছিল একটি ছেলে।
৴হ্যা,নাম তার সৌরভ.. তা এখন কি ড্রামা শুরু করবি নাকি?
৴ইয়েস,ড্রামা! জীবন একটাই,এ এক জীবনে সঠিক ভাবে জেনে শুনে বুঝে জীবন সঙ্গী করতে না পারলের পরে হায়! হায়! করতে হবে।তুই আমাকে একটু সহযোগিতা করবি।
৴নো,আগে আমার ডায়রীটি দিতে বল তোর বোনকে মানে বর্ষাকে,তারপর দেখব।
বর্ষা কেমন যেনো ইতস্তঃ করতে লাগলেন।শিরিন মঈনুল দুজনে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে বর্ষার দিকে তাকায়।বর্ষা কি বলবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না।
৴না মানে ডায়রীটি আমার কাছেই ছিলো কিন্তু আজ সকালে তা যথা স্থানে খুজেঁ আর পাইনি।
৴ বলো কি!এতোটা বছর যতনেঁ রাখিলা যারে তার চলে যাবার এই সময় হলো যখন এর প্রকৃত মালিক এসে হাজির।ভালো করে খোজেঁ দেখো,ওটারতো আর হাত পা নেই যে, দূরে কোথাও চলে যাবে।
৴ঠিকই বলেছেন,সকালেই কাজের বুয়াকে জিজ্ঞাসে উত্তর পেলাম বুয়ার নাতি ওটা দিয়ে ভাঙ্গারি ফেরিওয়ালাকে দিয়ে কটকটি গাট্টা খেয়ে ফেলেছে।ডায়রীটা হয়তো এখন কোন ভাঙ্গারি ফেরিওয়ালাদের মাথায়,পাড়ায় পাড়ায় ঘুড়ছে।
মাথায় যেনো বাজ পড়ল মঈনুলের।লে হালুয়া এবার ডায়রীর খোজেঁ পিছু পিছু দৌড়াও।মঈনুলের দৌড় থামিয়ে দিলেন শিরিন।
৴এখন কোথাও যাবি না।ও আসবে রাত তিন টায় ততক্ষণ তুই আমার ছবিঁ আকারঁ উছিলায় আমাকে পাহারা দিবি।
৴মানে তুই পালাবী!কোথায়?
৴শত্রুদের নেটওয়ার্কের বাহিরে।
৴ ওসব আমায় দিয়ে হবে না,আমার ডায়রীটি খোজঁতে বের হতে হবে।
৴যদি বলি ডায়রীটা বর্ষার কাছেই আছে।
৴ কি জানি,আমি অত কিছু বুঝিনা,আমার ডায়রীটি আমার চাই তা যে ভাবেই হোক।যদি তোর কথা সত্যি হয় তবে ঐ খানে বস ছবিঁ আকঁব।
ছবিটিঁ পুরো আকাঁ হয়নি এর মধ্যে সময় মতো বান্দা হাজির।শিরিন কাপড়ের একটি গাট্টি আগেই রেডি করে রেখেছিল তা বুগলে নিয়ে ছেলেটির সাথে পালাতে প্রস্তুত।

এক সময় ছেলেটিকে সাথে নিয়ে এলাকা ছাড়ার সময় ছেলেটি বার বার শিরিনের দিকে তাকায়।যখন শিরিন বুঝতে পারলেন প্রেমিকা তার দিকে বার বার বিশেষ দৃষ্টিতে তাকাচছে তখন সে থমকে দাড়ায়।
৴কি ব্যাপার,তুমি এ ভাবে তাকাচ্ছো কেনো?
৴না, আমি ভাবছি,,,তুমি এই  গাট্টি লইয়া কই যাবে? এ ভাবেতো.. মেয়েরা ঘর হতে পালিয়ে যায় তার প্রেমিকাদের সাথে তাই না?
৴ঠিক তাই, যাবো এবার কাজী অফিসে।
৴আগে তো বলোনি?বললে দেখা করবে শুধু।
৴সব কিছু বলে করলে রোমান্টিকতা থাকে না।তা ছাড়া আমাদের বাড়ীতে দেখো নাই কেমন বিয়ের বিজলি বাতি জ্বলছে।বুঝার সময় নাই চলো এবার….।

বেচারা মঈনুল আর বর্ষা কি করে।চুপচাপ ওর চলে যাওয়া দেখে বাহিরে পা রাখেন বর্ষা শীতের তীব্রতায় ফেরত আসে বর্ষা তা অনুধাপন করতে পেরে মঈনুল এগিয়ে গিয়ে তার গায়ে জড়ানোঁ শাল চাদঁরটি তাকে দিলেন।বর্ষা তা গায়ে পেচিয়ে উৎফুল্ল মনে ঘর থেকে বের হলেন আর কিছুটা যাওয়ার পথে ফের এক বার তাকালেন মঈনুলের দিকে।মঈনুলও পলকহীন দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন।বলার মধ্যে শুধু অনেকটা মৃদু সূরে বললেন…আমার ডায়রীটা?

ভাঙগারি ব্যাবসায়ী খুব আনকমন একটি ডায়রী সকল ভাঙচুড় মালের সাথে দেখে অবাক হলেন।ডায়রীটি হাতে নিয়ে নাড়া চাড়া দিয়ে যখন ধূলো পরিস্কার করছিলেন তখন ডায়রীর ভিতর হতে একটি বিশেষ ভাবে ভাজঁ করা চিরকুট সাথে একটি ফ্যাকাশে লাল গোলাপ বেড়িয়ে মাটিতে পড়ল।লোকটি ভাবলেন এতো সুন্দর একটা ডায়রী তার চার দিক কি সুন্দর সোনালী বাইন্ডিং।বেশ চওড়া প্রথম দেখে মনে হবে কোন ছবির এ্যালভাম,এর ভিতর ছবিও দেখছি আছে তবে তা কোনটা পেন্সিলে কোনটা রঙে আকাঁ।অনেক লেখাও দেখছি।মনে হচ্ছে কারো না কারো বড় শখের ডায়রী ছিল এটি।এ সব ভেবে ডায়রীটি সে একটি চেয়ারের উপর রেখে বাকী ভাঙগারি মাল গোছানোতে মনযোগ যোগ দিলেন।

চলবে

 

 

পূর্বের পর্ব

৫৫৪জন ৫৫৪জন
0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ