
মেয়েটি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার চোখে অনেক স্বপ্ন। তার সেই স্বপ্ন তে বাধ সাধলেন তার বাবা-মা। তারা মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছেন। মেয়েটি লেখাপড়া করতে চায়। অভাবের সংসার তাই মেয়ের লেখাপড়ার ভার বহন করতে পারবেন না। খবর নিয়ে জানা গেল মেয়েটির লেখাপড়ার খরচ মেয়েটির বাবা বহন করেন না। তার পড়ালেখার খরচ চালায় তার এক মামা। মনে হল মেয়েটি বাবার কাছে বোঝা হয়ে গেছে। মেয়েকে বিয়ে দিয়ে তিনি সেই বোঝা নামাতে চাচ্ছেন। নভেম্বরে এসএসসি পরীক্ষা। তিনি পরীক্ষা পর্যন্ত সময় দিতে নারাজ। মেয়েটির বাবা-মাকে স্কুলে আসার জন্য অনুরোধ করা হলো। দুইদিন অপেক্ষা করা হলো। তারা আসলেন না। মেয়েটির ভাষ্যমতে তার মা পীর বাবার সাথে কথা বলেছেন পরামর্শের জন্য। পীর বাবা বলেছেন, মেয়েদের লেখাপড়া করানো দরকার কী। যত তাড়াতাড়ি পারো বিয়ে দিয়ে দাও।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সহ আমরা মেয়েটির বাড়িতে যেতে চাইলাম। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য নিব। কিন্তু মেয়েটি খুব ভয় পাচ্ছিল। সে জানালো আমরা তার বাড়িতে গেলে। তার উপর আরো মানসিক অত্যাচার করবে। এমনকি এটাও হতে পারে যে, আজকের মধ্যেই হয়তো তড়িঘড়ি করে বিয়ে দিয়ে দেবে। মেয়েটি আরও জানালো- প্রয়োজনে বাসা ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র বা গ্রামে চলে যাবে। যাতে মেয়েটি পরীক্ষা দিতে না পারে।
স্কুল কর্তৃপক্ষও প্রশাসনিক ঝামেলা এড়িয়ে আগাতে চাইলো। আমাদের এক শিক্ষক মেয়েটির কাছ থেকে তার নানী ও মামার নাম্বার নিয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করলেন। কেউ মেয়েটির সরাসরি দায়িত্ব নিতে চাইলেন না। আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকল। এক সময় আমরা সফলতা লাভ করলাম।
এতক্ষণ যে মেয়েটির কথা বললাম তার নাম রত্না। এ যাত্রায় রত্না হয়তো বেঁচে গেল। কিন্তু ওর চোখে যে স্বপ্ন আঁকা, সে স্বপ্ন কখনো পূরণ হবে কি। না কি রত্নার পথচলা অসমাপ্তই থেকে যাবে।
রত্নের মতো আমাদের অনেক শিক্ষার্থীই বাবা-মার অসচেতনতার বলি হয়ে আটপৌরে সংসার জীবনে প্রবেশ করে। অধিকাংশই আমাদের অগোচরে হয়। বিশেষ করে মেয়েকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে বিয়ে দিয়ে আসে। সেখানে আমাদের আর কিছু করার থাকে না।
এভাবে বাল্যবিবাহের করাল গ্রাসে রত্নাদের মত অনেক মেয়ের স্বপ্ন অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়ে যায়। বাল্যবিবাহ রোধে আইন আছে। কিন্তু আইন সামাজিক সমস্যা সমাধানে কতটুকু কার্যকর। আমাদের সমাজে বাবা মার উপরে কেউ কোন কথা বলতে পারে না। আমার মেয়ে আমি বিয়ে দিব তাতে কার কি। সমাজে মানুষের মধ্যে সচেতনতা না আসলে বাল্যবিবাহ রোধ করা কষ্টকর। আমরা চাই না, রত্নাদের স্বপ্নগুলো অশ্রু কণায় ভিজে যাক।
ছবি সংগ্রহ- নেট থেকে।
১৭টি মন্তব্য
সৌবর্ণ বাঁধন
গ্রাম বাংলার খুব পরিচিত দৃশ্য। অনেক চেষ্টা করেও আসলে ঠেকানো কঠিন। কয়েকদিন চুপ থাকার পর আবার পুনুরাবৃত্তি ঘটে সাধারণত। সময়ের যথার্থ প্রতিচ্ছবি।
হালিমা আক্তার
একদম সত্যি বলেছেন। অনেক চেষ্টা করেও আমরা ব্যর্থ হই। শুভ কামনা অবিরাম।
আলমগীর সরকার লিটন
আমাদের জীবনটা নিয়ে এখনও যদি এভাবে চলে তাহলে এত পরিবর্তন কি ধরকার
সবাই সচেতনা ভাবে ভাবুক –অনেক শুভেচ্ছা রইল আপু
হালিমা আক্তার
আপনাকে ও অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
মোঃ মজিবর রহমান
আমাদের জীবনটা যেমন আটপোরে আবার দেশের সরকারের অবস্থাও ঠিক তেমনি আইন আছে, অর্থ দিচ্ছে কিন্তু ঠিকমত কাজ হচ্ছে না।
বাবা -মার কি দোষ দিব বলেন সমাজের রক্তচক্ষুও খুব খারাপ আপু। গরিবের দোষ বেশি। সমাজের মোড়ল এদের বিপক্ষে। মান সন্মান এদের থাকতে নেই।
বড় বাড়ির মেয়ে বাহির হয়ে গেলে বেড়াতে যাই আর গরিবের মেয়ে গেলে বেশ্যা হয়ে যাই। সমাজ, দেশটা খুব কঠিন ভাই!
হালিমা আক্তার
আপনার সাথে একমত। তবে অনেক বাবা-মা মনে করেন মেয়েকে বিয়ে দিলেই ঝামেলা শেষ। ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।
মোঃ মজিবর রহমান
হুম! আছে তারাও ভয় পাই পিছে কিছু ঘটে যাই। ভালো থাকুন।
সাবিনা ইয়াসমিন
এসব ঘটনা শুধু গ্রামবাংলায় নয় শহরেও প্রতিনিয়ত ঘটছে। ব্যতিক্রম ক্ষেত্রগুলোকে অনেক মেয়েরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে, কিন্তু বেশিরভাগ মেয়েরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়ায়। আসল সমস্যা সমাজের চেয়ে পরিবারে বেশি। অনেক অবস্থাপন্ন পরিবার গুলোতেও মেয়েদের পড়ালেখা নিয়ে অনিহা কাজ করে। এসব পরিবার মেয়েদের লেখাপড়ার পেছনে টাকা খরচ করতে চায় না, অথচ বিপুল পরিমান টাকা খরচ করে মেয়েদের বিয়ে দেয়।
পারিবারিক সচেতনতাবোধ জাগ্রত করা খুব জরুরী।
সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সুন্দর লিখেছেন।
শুভ কামনা 🌹🌹
হালিমা আক্তার
সম্পুর্ন একমত, পারিবারিক ভাবে সচেতন করতে হবে। প্রয়োজন স্থানীয় ভাবে কাউন্সিলিং দেয়া যেতে পারে। শুভ কামনা রইলো।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
বাল্য বিবাহ আমাদের সমাজের অভিশাপ। এর থেকে মুক্তি পেতেই হবে। কিশোর মাতৃত্ব নিয়ে আমার ব্লগে আজ ( ১১/০৯/২১ ) একটা লেখা লিখেছি। ভালো আর সুস্থ থাকবেন আপা।
হালিমা আক্তার
ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপা আপনার প্রতিও শুভ কামনা রইলো।
ছাইরাছ হেলাল
দারিদ্র্যকে আমরা উপেক্ষায় রাখতে পারি না। আবার সবার দায়িত্ব অ আমরা নিতে পারছি না,
এর মধ্যে থেকেও যেটুকু যেভাবে সাহায্য করা যায় সেটাই আসল।
হালিমা আক্তার
শুধু দরিদ্র পরিবারেই এই সমস্যা দেখা দেয় না। অনেক সচ্ছল পরিবারেও মেয়েদের বোঝা মনে করে। মনে করে বিয়ে দিলেই ঝামেলা শেষ। শুভ কামনা রইলো।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এখানে আসলে কারোর কিছু করার থাকে না যদি বাবা-মা অনড় থাকে বিয়েতে। এটাই সত্যি যে কেউ কারো দায়িত্ব নিতে চায় না আর যদি বাবা-মা বেঁচে থাকে তাহলেতো কথাই নেই। অফুরন্ত শুভকামনা রইলো
হালিমা আক্তার
একদম সত্যি বলেছেন। সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।
হালিমা আক্তার
শুধু দরিদ্র পরিবারেই এই সমস্যা দেখা দেয় না। অনেক সচ্ছল পরিবারেও মেয়েদের বোঝা মনে করে। মনে করে বিয়ে দিলেই ঝামেলা শেষ। শুভ কামনা রইলো।