৬/৭ বছরের মেয়েটি বাড়িটিতে কাজ করে। কাজ বলতে ছোট খাটো ফরমায়েশ। বাকিটা সময় আমার ৪ বছরের ছেলের সঙ্গে খেলাধুলা করে… ইয়েস, নো, গুড টাইপের কথাবার্তা বলে কাটে। কিন্তু সমস্যা হলো__ আমি যখন আমার ছেলে ২ টাকে গা ঘষে ঘষে গোসল করিয়ে দেই, লোশণ দিয়ে দেই, খাইয়ে দেই তখন সে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে। ভীষণ বিরক্ত হই। ধম্কে সরে যেতে বলি। রাতে ছেলেদের জড়িয়ে ঘুমাই। মেয়েটি অন্য রুমে। রাত গভীরে ঘুম ভেঙ্গে গেলে রুমে আসা চাঁদের আলোয় দেখি সে আমারই রুমের ফ্লোরে ঘুমিয়ে ! হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে অন্ধকারে ফ্লোরে কাউকে ঘুমাতে দেখে ভয় পেয়ে যাই, বিধায় সকালে উঠে তাকে তিরস্কার করি।
অবকাশ যাপনের সময় ফুরিয়ে আসে। আমি ফিরে আসি আমার নিজস্ব ঠিকানায়। কিন্তু লক্ষ করি __ যখন আমি আমার সন্তানদের গোসল করাই,খাওয়াই, ঘুম পাড়াই তখনই বিস্ময়করভাবে মেয়েটির শুন্যতা অনুভব করি। সেই জ্বলজ্বল করা চোখ জোড়া, ফ্যালফ্যাল চাহনিতে চেয়ে থাকা, হাসিটা___ সব, সব !
কি জানি, কেন এমন চেয়ে থাকা ! সে কি কল্পনায় ডুবে যেতো, কিংবা স্বপ্নে বিভোর হতো___ তার মা তাকে এমন যত্ন করে খাইয়ে দিচ্ছে… গা ঘষে ঘষে গোসল করিয়ে দিচ্ছে, কিংবা গভীর মমতায় বুকে আগলে ঘুমাচ্ছে…
তার না হয় মায়ের আদর যতন পাওয়ার সুযোগ নেই, নিষ্ঠুর “অভাব” তাকে সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে। তাই বলে কি দূর থেকে চেয়ে দেখাটাও অপরাধ ! আমি অপরাধ বোধে ভুগতে থাকি একাকী রাতের আঁধারে সবাই ঘুমিয়ে গেলে। আমার সন্তানকে মেয়েটির অবস্থানে ভাবি। ঘাম্তে থাকি। ঢক্ঢক্ করে পানি গিলি। রাতের নিস্তব্দতা ভেঙ্গে ঢকঢক্ করে পানি খাওয়ার শব্দ এটম বোমার শব্দের মতোই বিঁধে নিজের ভেতরে।
যে কোন বিবরণ নিখুঁতভাবে তুলে ধরার জন্যে যথেষ্ট পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা থাকতে হয়। আমার সেই ক্ষমতা নেই। থাকলে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা যেতো এই বন্ধন-বিচ্ছেদের বাস্তব গল্পটি।
১৬টি মন্তব্য
নুসরাত মৌরিন
এই টানাপোড়েন আসলে আমাদের সবাই কে ভাবায়।কিন্তু গতানুগতিক আর সনাতন ভাবনার নিগড় থেকে বেরুতে পারি না আমরা…।
এমন আমারো হয়। বাসার কাজের মহিলার ছোট বাচ্চা মেয়েটা কে আমি পারি না কোলে তুলে নিয়ে আদর করতে, ওর দৃষ্টির সামনে যখন আমার ভাইয়ের মেয়েকে আদর করি।কুঁকড়ে যাই,কিন্তু কোন এক অদৃশ্য বাধা টপকে ওই মেয়েটা কে ঠিক ওই ভাবে কাছে টানতেই পারি না। হাজার বছরের সংস্কার রক্তে এখনো রয়ে গেছে টের পাই।
রিমি রুম্মান
খুব সত্যি কথা…
স্বপ্ন নীলা
বাস্তবতা বড়ই নির্মম — ভাল লাগলো
রিমি রুম্মান
ভাল থাকুন ভালোলাগায়…
খসড়া
আপনি এত সজতনে খবর নিয়ে আসছেন, এসব দেখে দেখে আজ ক্লান্ত। এদের কথা তুলে ভাল পোস্ট হয় , কিন্তু এদের জীবনের কি কোন পরিবর্তন হয়। এদের জীবনের পরিবর্তনের চেষ্টা করি আসুন না। একজনের জীবন বদলাতে পারি কিনা দেখি।
রিমি রুম্মান
আমি সে চেষ্টা করে যাই বরাবরই নিরবে নিভৃতে … প্রচারের বাইরে । ভাল থাকবেন।
ব্লগার সজীব
আপনার এমন উপলব্দিকে শ্রদ্ধা জানাই আপু। চিন্তার দরজা উন্মুক্ত করে দিলেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
রিমি রুম্মান
এমন লেখার অর্থ … একই ভাবে আমরা সবাই ভাবিনা কেন ? এইতো …
প্রজন্ম ৭১
আপনার মত সব মা যদি এমন ভাবতো !
রিমি রুম্মান
এমন মা অনেক আছে… সব মা না হলেও
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
এই বন্ধন-বিচ্ছেদের বাস্তব গল্পটি….এটা তার নিয়তি।
কেউ জম্মায় সোনার চামচ মুখে নিয়ে কেউ বা তৃঞ্চার্থ মুখে।
সেই মানুষ যে নিজেকে অনুতপ্তে জাহির করতে পারে….আপনি উত্তম বলেই অকপটে এমন সত্য উপস্হাপন করেছেন কিন্তু পরিবেশ বাধ্য করে এমন বিচ্ছেদের।
রিমি রুম্মান
ঠিক বলেছেন, ভাইয়া।
সাইদ মিলটন
আপনার মতো যদি সবাই ভাবতো তাহলে দুনিয়াটা অল্পএকটু হলেও অন্যরকম হতো
রিমি রুম্মান
অনেকেই ভাবে। পৃথিবীর সব মানুষই খারাপ নয়।
স্বপ্ন
আপনার মাঝে মাতৃ শ্নেহ অত্যন্ত প্রবল, এখানে তা সম্প্রসারিত হয়েছে আপু।
রিমি রুম্মান
ধন্যবাদ আপনাকে।