
আমরা ফিরে এলাম হোটেলে, ফ্রেস হয়ে প্রথমে ডিনার করতে গেলাম, ডিনার শেষে রুমে ফিরে এসে দুজনেই শুয়ে পড়ে আমাদের পুলাও পায়ার ভ্রমণ নিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করতে লাগলাম, এক সময় দুজনই ঘুমিয়ে পড়লাম, আসলে প্রচন্ড টায়ার্ড থাকার কারণেই ঘুম এসে গেলো।
পরদিন সকাল আটটায় ঘুম ভেঙ্গে গেলে উঠে গিয়ে দুজনই ফ্রেস হয়ে নিচে চলে এলাম ব্রেকফাস্ট করতে, ব্রেকফাস্ট সেরে দুজনই রুমে ফিরে এসে ভাবছি কি করা যায়, বসে থাকলে তো হবেনা, পরে দুজনই সর্টস পড়া অবস্থায় পিছনের বিচ পয়েন্টে গিয়ে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে বিচে রাখা কর্টে শুয়ে বসে কাটালাম, লাঞ্চের সময় হয়ে এলে দুজনই ফিরে গেলাম রেস্টুরেন্টে, খেতে শুরু করলে ওয়েটার এসে পানি দিলে ওকেই জিজ্ঞেস করলাম এইখানে কাছাকাছি ঘুরে দেখার কি আছে?
ও জানালো, আপনারা লাঙ্কাবি স্কাই ব্রীজ দেখে আসুন, ক্যাবল কারে করে পর্বতে উঠে সেখানে এক পর্বত থেকে আরেক পর্বত পর্যন্ত নতুন স্কাই ব্রীজ করেছে, ওটা থেকে চারিদিকের ভিউ খুব সুন্দর।
আমরাও সিদ্ধান্ত নিলাম যাবো দেখতে, খাবার শেষ করে রুমে এসে ড্রেসআপ করে বেরিয়ে পড়লাম।
টেক্সি ক্যাব আমাদের নিয়ে গেলো স্কাই ভিউ পর্বতের নিচের ক্যাবল কার স্টেশনে, আমরা নেমে গিয়ে টিকেট কাটলাম, এরপর অপেক্ষা নেক্সট ক্যাবল কার আসার।
ক্যাবল কার আসতে বেশি সময় লাগলোনা, আমরা দুজন উঠে পড়লাম।
আপনাদের বলে রাখি আমার acrophobia (উচ্চতা ভীতি) আছে, ক্যাবল কারে তো উঠে পড়লাম কিন্তু ক্যাবল কার নিচ থেকে উপরে উঠছে, যতই উপরে উঠছে আমার জান বের হওয়ার যোগার, নিচে তাকিয়ে দেখছি ঘন জঙ্গলের মতো তাও উপর থেকে নিচে মানে অনেক নিচে আর আমরা শূন্যে ঝুলে ঝুলে উপরে উঠছে, আমার কলিজা তো লাফ দিয়ে উঠলো, আমি জোরে জোরে কলেমা সহ যত সুরায়ে কালাম মুখস্ত আছ্র সবই পড়ছি।
বন্ধু বলছে এইভাবে ভয় পাওয়ার কি আছে?
আমি বললাম, এমনই এক ক্যাবল কার ছিড়ে গিয়ে সুইজারল্যান্ডে মানুষ সব মারা গেছে, বলেই আবার পড়া শুরু করলাম।
আমরা একবার সমান্তরাল ভাবে যাচ্ছি তো আবার উপরের দিকে উঠছি, আর উঠছি তো উঠছি সময় আর কাটছেনা, আর এদিকে সুরা পড়তে পড়তে মুখে ফেনা তুলে ফেলছি আমি, এক সময় দেখলাম সামনে দেখা যায় ল্যান্ডিং স্টেশন, তখন আমার ধড়ে আমার প্রাণ আসে।
আমি আগেও ক্যাবল কারে চড়েছি সিঙ্গাপুরে স্যান্তোসা যাওয়ার সময় কিন্তু সেইসব ক্যাবল কার ছিলো খুব লাক্সারিয়াস কিন্তু এই ক্যাবল কার তার তুলনায় নস্যি, ছোটো এবং লোহার খাঁচার মতো।
ক্যাবল কার এগিয়ে গেলো ল্যান্ডিং স্টেশনের কাছে, ল্যান্ডিং স্টেশনে পোঁছালে আমরা নেমে পড়লাম।
পর্বতের আশে পাশে ঘুরে দেখতে শুরু করলাম, এ পাহাড় নয় পর্বত, নিচের ল্যান্ডিং স্টেশন এইখান থেকে মনে হচ্ছে খেলনা, দূরের ভিউটা অসাধারণ লাগছে কিন্তু স্টেশনটা ছোটো, আমরা এগুলাম স্কাই ভিউ ব্রীজের দিকে, এই ব্রীজ দুই পর্বতকে এক করেছে, যদিও দ্বিতীয় পর্বতটি প্রথমটির চাইতেও বড়, ব্রীজের উপর দিয়ে হেঁটে আমরা দ্বিতীয় পর্বতের দিকে এগুলাম, দুই পাশে রেলিং দেওয়া ব্রীজটির সৌন্দর্য্য আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করছে, আমরা হেঁটেই দ্বিতীয় পর্বতে যখন এলাম তখন ব্রীজের শেষ প্রান্তের পর্বতের চারিদিকে ব্রীজের ল্যান্ডিং করা হয়েছে যা গোলাকৃতির ব্রীজেরই শেষাংশ, বলে রাখি এই স্কাই ভিউ ব্রীজটিতেই শারুখ খান তার ডন ছবির শেষ ফাইটিং দৃশ্যের স্যুট করেছিলেন এবং তার বিপরিতে মার খাওয়া ভিলেন ছিলেন ভূবন ইরানি।
আমরা চারিদিকে ঘুরে ঘুরে দেখছি, ছবি তুলছি, এরমধ্যে সূর্য্য অস্ত যাওয়ার সময় হয়ে আসছে এবং এইখানে থাকারও সময় শেষ হয়ে এলো, আমরা আবার ফিরে চললাম প্রথম পর্বতে ক্যাবল কারে উঠার জন্য।
ক্যাবল কার স্টেশনে এসে কার এলে উঠে পড়লাম, এখন সময় হলো নিচে যাওয়ার পালা, ক্যাবল কার তার গতিতে নামছে আর আমি আমার গতিতে সুরা পড়ছি, ওদিকে আমার অবস্থা দেখে বন্ধু আমার দম ফাঁটা হাসি হাসছে।
এক সময় আমরা নিচে নেমে এলে আমার প্রাণ আবার ফিরে এলো, দুজনই টেক্সির অপেক্ষায় রইলাম, টেক্সি ক্যাব এলে আমরা রওনা হয়ে গেলাম হোটেলের উদ্দেশ্যে।
এরপর হোটেলে ফিরে এসে আমরা ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম পরদিনে কুয়ালালামপুর যাওয়ার, সে গল্প আরেকদিন হবে।
আজ লাঙ্কাবি পর্বের এখানেই ইতি।
বিদায় লাঙ্কাবি।
সমাপ্ত।
ছবিঃ গুগল।
২৪টি মন্তব্য
শবনম মোস্তারী
বাহ! দারুণ সব ছবি। লেখা পড়ে মুগ্ধ হলাম ভাই। সময় করে আগের পর্বগুলো পড়বো।
শুভকামনা রইলো।
ইঞ্জা
অবশ্যই পড়ুন আপু, নিশ্চয় ভালো লাগবে।
শামীম চৌধুরী
বলেছিলাম সবগুলি পর্ব পড়ে মন্তব্য করবো।
আজ পর্বটি শেষ করলেন।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আপনার ভ্রমন কাহিনী আমাদের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য।
ভ্রমন মানেই আনন্দ। আর এই আনন্দ নৈস্বর্গিক। ভ্রমন মানেই ছবি। আর এই ছবিই হচ্ছে পিছনের গল্প। খুব ভাল লাগলো আপনার ভ্রমন কাহিনী পড়ে।
শুভ কামনা রইলো।
ইঞ্জা
খুবই খুশি হলাম ভাই, দুঃখজনক ভাবে সত্য যে আমি বেশিরভাগ ভ্রমণ করেছি ব্যবসার কারণে, ফলশ্রুতিতে সেইসব ভ্রমণ আমার অপূর্ণ রয়ে গেছে।
ভালোবাসা জানবেন ভাই।
সুপায়ন বড়ুয়া
অসাধারন ছবির সাথে বর্ণনায় মুগ্ধ হলাম।
ক্যবল কার থেকে নীচের দিকে তাখালেই ভয় লাগে।
আপন জন বেশী থাকলে গল্প করেই কাটা যায়।
স্কাই ব্রীজটা দারুন।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
ইঞ্জা
স্কাই ব্রীজ থেকে নিচে দেখলে ভয় লাগেনা দাদা, কারণ তা কারের মতোই লাক্সারিয়াস হয় কিন্তু লাঙ্কাবির এই ক্যাবল কার ছিলো লোহার খাঁচা বিশেষ, বুঝেন অবস্থা। 😆
আরজু মুক্তা
চমৎকার বর্ণনায় সাবলীল বলায় ভ্রমণ কাহিনী বড়ই ভালো লাগলো
ইঞ্জা
আনন্দিত হলাম আপু, ধন্যবাদ।
আলমগীর সরকার লিটন
ছবি দেখলেই বুকের সুউ করে উঠল দাদা ——————-
ইঞ্জা
হা হা হা, বুঝেন আমার কি অবস্থা হয়েছিলো। 😆
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ভাইয়া এতো তাড়াতাড়ি শেষ করে দিলেন? এক্রোফোবিয়া আমার ও হয় তবুও ছবি গুলো দেখলে মনে হয় ছুটে যাই। ভ্রমণ কাহিনী গুলো দেখলে আমার সত্যিই ঘুরতে যাবার জন্য মন ছটফট করে। খুব ভালো লিখেছেন ভাইয়া। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন শুভ কামনা নিরন্তর। শুভ সকাল
ইঞ্জা
এক্রোফোবিয়া আমার চরম আপু, বুঝেন অবস্থা সেই লোহার খাঁচায় আমার কি অবস্থা হয়েছিলো।
ভ্রমণ আমারও বেশ পছন্দের, জীবনে অনেক দেশ, সিটি ঘুরেছি কিন্তু বেশিরভাগ ছিলো ব্যবসার কাজে।
শুভকামনা জানবেন।
ছাইরাছ হেলাল
লাঙ্কাবি স্কাই ব্রীজ ছবি আর বর্ণনায় খুব সুন্দর করেই ফুটে উঠেছে।
যাদের উচ্চ্তা ভীতি আছে তাদের জন্য খুব ই ভীতিকর , তাও ভাই আমাদের ভয় কে জয় করেছেন (ঠেকে).
এবারে আমাদের কোথায় নিয়ে যাবেন তাই ভাবতে বসুন।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাইজান, কখনো সময় হলে ঘুরে আসুন লাঙ্কাবি, ভালো লাগবে।
আগামীতে কি নিয়ে লিখবো তা নিশ্চয় ভাববো ভাইজান, দোয়া রাখবেন।
তৌহিদ
দাদা আপনার লেখা ভ্রমণ গল্প পড়া মানেই অন্যরকম অনুভূতি। চমৎকার একটি ভ্রমণ গল্প উপভোগ করলাম আপনার লেখায়। এই ধারাবাহিকে লাঙ্কাবি ভ্রমণ নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা দিয়ে লেখা সেই সাথে বস্তুনিষ্ঠ ছবি পাঠক হিসেবে আমাকে মুগ্ধ করেছে। প্রত্যেকটি পর্বই বহুল তথ্যসমৃদ্ধ ছিলো বলে আমি নিজেও সেখানে উপস্থিত আছি এমনটাই মনে হয়েছে।
কুয়ালালামপুর পর্ব নিয়ে খুব শীঘ্রই আসবেন এটাই প্রত্যাশা। শুভকামনা রইলো দাদা।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই, ভ্রমণের আনন্দ কখনো লেখাতে পুরাপুরি প্রকাশ করা যায়না, যদি সম্ভব হয় আমার বোনকে নিয়ে একবার ঘুরে আসার অনুরোধ রইলো।
কুয়ালালামপুর ভ্রমণ নিয়ে আগামীতে নিশ্চয় লিখবো ভাই, সাথে থাকুন। 😘😍
তৌহিদ
চেষ্টায় আছি দাদা। যাব একসময়।
ইঞ্জা
ইনশা আল্লাহ বলুন ভাই।
হালিম নজরুল
আহ! কি অসাধারণ জায়গা! অভূতপূর্ব দৃশ্য। বর্ণনাও সত্যিই চমৎকার।
ইঞ্জা
আন্তরিক ধন্যবাদ ভাই, আসলে লাঙ্কাবি আমার বেশ লেগেছে, কখনো সম্ভব হলে ঘুরে আসুন ভাই।
রেজওয়ানা কবির
আগের পর্বগুলো পড়তে পারিনি ভাইয়া।তবে পড়ে নিব।ভালো লিখেছেন। আপনার লেখা দেখেই মনে হয় আপনি একজন ভ্রমণপ্রিয় মানুষ। শুভকামনা অবিরাম।
ইঞ্জা
আমি জীবনে অনেক দেশ এবং সিটি ঘুরে বেরিয়েছি, আল্লাহ চাইলে আগামীতেও ঘুরবো, দাথে থাকুন আপু।
রেজওয়ানা কবির
ইনশাআল্লাহ ভাইয়া।
ইঞ্জা
শুভকামনা