দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর নাম অরবিন্দ কেজরিওয়াল। গত ১ এপ্রিল ভিডিও কনফারেন্সে চিকিৎসাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, সেনারা যেভাবে দেশরক্ষা করেন, চিকিৎসাকর্মীরাও তাই। তাদের যুদ্ধটা সেনাদের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। এরপরেই তিনি কর্মরত অবস্থায় কোনো চিকিৎসাকর্মীর করোনা সংক্রমণে মৃত্যু হলে তার পরিবারকে এক কোটি রুপি দেয়ার ঘোষণা দেন।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য অনলাইনে প্রচুর মানুষ দেখেছেন। যারা এখনো দেখেননি, একটু পুরনো হলেও দেখে নিতে পারেন। … আমার মনে হয়, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের এই বক্তব্য থেকে আমাদের শেখার আছে। আমরা এখনো বুঝতে পারছি না—চিকিৎসাকর্মীদের জীবন কতোটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের যেকোনো মূল্যে তাদের বাঁচাতে হবে। তারা বাঁচলেই আমাদের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব।

এখন চিকিৎসাকর্মীদের জন্য পিপিই, মাস্ক—এসব নিয়ে অনেকে এগিয়ে আসছেন। অথচ প্রথমদিকে ঢাল-তলোয়ার ছাড়া তাদের চিকিৎসা ক্ষেত্রে যেতে বলা হয়েছে। এসব অমানবিক কথাবার্তা বলার সময় কারো গলা কাঁপেনি। একটুও মনে হয়নি—ঢাল-তলোয়ার না থাকলে চিকিৎসাকর্মী বলা যায় না। নিধিরাম সর্দার হতে পারে বড়জোর।

এই দুর্যোগে দিল্লির মত কোটি রুপি দিতে না পারলেও আমাদের চিকিৎসাকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। মানবিকভাবেই দাঁড়াতে হবে। আমরা তাদের উৎসাহ না দিয়ে ক্ষুব্ধ করে তুলছি। এটা নিজের পায়ে কুড়াল নয়—ইলেক্ট্রিক করাত চালানোর মত কাজ। এই বাজে প্র্যাকটিসটা আমরা থামাই। আর চিকিৎসাকর্মী মানে শুধু ডাক্তার নয়। এর সঙ্গে নার্স, এম্বুলেন্সের ড্রাইভার এমনকি পরিচ্ছন্নতাকর্মীও আছেন।

বাইরের দেশে প্রচুর মানুষ চিকিৎসাকর্মীদের জন্য খাবার পাঠাচ্ছেন। ডাক্তাররা ডিউটি শেষ করে বের হতেই দেখছেন, প্রতিদিনই কেউ না কেউ গাড়ি নিয়ে হাজির। তাদের একটাই কথা। চলো, তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিই। … আমাদের এই বোধ জাগাতে হবে। এখনই সেই সময়। এখনই। নিজেরা বাঁচতে চাইলে চিকিৎসাকর্মীদের জাগিয়ে রাখতে হবে। তারা যাতে কিছুতেই হাল ছেড়ে না দেন।

বাংলাদেশ পুলিশের কথাও একটু বলা যাক। খেয়াল করলে দেখবেন, করোনাভাইরাস আসার পর থেকে পুলিশ সদস্যরা বদলে গেছেন। তারা বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। আমাদের সচেতন করছেন। রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। তাদের ঘুম-কাজ, কাজ-ঘুম সব এলোমেলো হয়ে গেছে। এতে তাদের পরিবারের সদস্যরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।

অবিশ্বাস্য লাগতে পারে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পুলিশ তার সেরাটা করছে। আমার মনে হয়, এরকম কাজ বাংলাদেশ পুলিশ এর আগে একবারই করেছিল। সেই ১৯৭১ সালে। তারিখটা ছিল ২৫ মার্চ। স্থান, রাজারবাগ পুলিশ লেইন। বাকি ইতিহাসটা আপনারা জানেন। … আমাদের তাদের এই ভূমিকার কথা মনে রাখতে হবে। তাদের পরিবারের স্যাক্রিফাইসও।

আমি পেশায় একজন গণমাধ্যমকর্মী। প্রচুর ঝুঁকির মধ্যে কাজ করছি (এই তালিকায় ব্যাংকাররাও রয়েছেন)। গণমাধ্যমকর্মীরা সব সময় মানুষের অধিকারের কথা বলে, কিন্তু তাদের নিজের অধিকার থাকে না। ফেসবুকে আলোকচিত্রীদের নিয়ে ভাল সমালোচনা চলছে। আমি এর প্রতিবাদ করব না। আমি শুধু বলতে চাই, সাবান পানি দিয়ে ফুসফুস ধোয়ার কথা জয়নাল হাজারী বলতেই পারেন, কিন্তু আপনি তা শেয়ার করতে পারেন না। শেয়ার দেয়া মানেই গুরুত্ব দেয়া।

এছাড়াও করোনাভাইরাস গরমে ছড়ায় না টাইপ যত ভূয়া নিউজ, ভিডিও, ফেসবুক পোস্ট, কমেন্ট আছে—আপনারা তা শেয়ার করতে পারেন না। পারেন না মানে পারেন না। এসব পোস্ট পরিবেশ ঘোলা করে। আমাদের ফোকাস নষ্ট করে। দুর্দিনে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়া মানে নিজেদেরই ক্ষতি। আপনি নিজেই এর শিকার হতে পারেন।

ইতিমধ্যেই করোনা রোগীদের কয়েকজন বিদেশ ফেরতদের সঙ্গ লাভসহ উপসর্গ লুকিয়েছেন। এই প্র্যাকটিস সামনে আরও ভোগাবেও। আমাদের এটা নিয়ে কাজ করতে হবে। আমি আপাতত সেইসব লাজুক মানুষদের জন্য সূরা বাকারার ৪৩ নম্বর আয়াতের বাংলা তর্জমা দিচ্ছি। সৃষ্টিকর্তা বলেছেন—’তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিও না এবং জানা সত্ত্বে সত্যকে তোমরা গোপন করো না’। …

আমরা বাঙালিরা অতিধার্মিক। শব্দটা বোধ হয় অতি নয়, বক হবে। আল্লাহ বান্দাদের পরীক্ষা নেন। আমরা আল্লাহর পরীক্ষা নেয়া শুরু করেছি। আচ্ছা, আমাদের কি হযরত মুসার (আ.) আল্লাহকে দেখতে চাওয়ার ঘটনাটা মনে নেই?

১১ এপ্রিল, ২০২০

৬৮২জন ৬১৮জন
0 Shares

৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ