প্রিয় অনিমেষ,
তোমাকে ভালোবাসি খুব নিশ্চিত জেনো। একটা গল্প বলে শেষ করব আজকের চিঠি।
ধরো, আস্ত শরীরের ভেতর অসংখ্য লাশের ঘর। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট টাইপ করে দিচ্ছি। শিশুবেলায় ভ্রান্ত ধারণার নেতৃত্বে খুন হয়েছে খেলার মাঠ, কৈশোরে কৈফিয়ত দিতে দিতে মুখে ফেনা তুলে মরে গেছে মেয়েবেলা। যৌবনে মহামায়ার কবলে দিক হারিয়ে সুর ভুলেছে শখের তানপুরা। রোজ কামলা গিরি শেষে ফিরেছি লো ব্লাড প্রেশার হাতে নিয়ে। তখন মরতামনা কিন্তু আধমরা দীপশিখার মত জ্বলতাম ধিকিধিকি। পিদিম হওয়ার আনন্দে ভুলে যেতাম আমি আলো জ্বালিয়ে কত শত ইচ্ছে ফড়িংয়ের মৃত্যু নিশ্চিত করেছি । এত এত কষ্ট আমাকে কষ্ট দেয়নি, ছেঁড়া জামা, হাওয়াই চপ্পল, প্লাস্টিক ব্যাগ, রিসাইকল করে মিতব্যয়ী হওয়ার কৌশলে বেশ পাকা ছিলাম বলে টের পাইনি গাছের গোড়ায় কেটে আগায় জল ঢেলে ফুসফুসটাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছি নিজে। তারপর ছাল-বাকলের মশলা দিয়ে সুস্বাদু রান্নার প্রয়াস আর আগুনের আঁচে মরে গেছে সবগুলো কোলাজেন। এখন বৃদ্ধ ত্বক মৃত্যুর দারপ্রান্তে। বলতে ভুলে গেছি, গাছটার ফলফলাদি ভুল পরাগায়ন আর সূর্যের আলোর অভাবে অপরিপক্ক হওয়ায় বিকৃত স্বাদ। অনাহারে অর্ধাহারে কাটছে দিন। কি আর বলি, বলা যায় জীবন্মৃত মানুষকে আদর সাদর পিছুডাক কিছুই ফেরাতে পারেনা মূল স্রোতে। অনিমেষ তুমি যেদিন এলে সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছি আর খুনখারাপি নয়। এ মুখ আমার শতাব্দীর চেনা বড্ড মায়াভরা।তখন কি জানতাম! নশ্বর জগতে অবিনশ্বর কিছু নেই। এমনকি তুমি ও। ভীত নড়ে স্থান পরিবর্তনের প্রভাব পড়ল ঠিক হৃদপিণ্ডে। ব্লক হওয়া রক্তনালী চলছে টিমটিম। তোমার জন্য একটা হৃদপিণ্ড কেন হাজারটা পিরামিড ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে পারি। শুধু একবার বল তুমি সুখী নতুন রাজ্যে। এটা ভূমিকম্প প্রবণ নয়, শতভাগ নিরাপদ ভূমি। এখানকার তলদেশে গোপন ফাটল নেই। আমি এবার গলিত পচিত লাশগুলো সহ সহমরণে যাব। কথা দিচ্ছি দুঃখ আমায় ছুঁতে পারবেনা কোনোদিন। এ পৃথিবীর পানশালাতে দুঃখ নেই শুধু মর্গে।
ইতি
তোমার দেয়ালের মোনালিসা
একটি মন্তব্য
হালিমা আক্তার
এতো মুগ্ধ হলাম যে মন্তব্য করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা। সত্যি অসাধারণ অসাধারণ অসাধারণ। এভাবেই অর্ধ মৃত অবস্থায় কেটে যায় সারা জীবন। শুভেচ্ছা রইলো।