অভি কই যাস?
অফিসে যাই মা।
যাওয়ার আগে আমাকে তোর ছোট খালার বাসায় নামিয়ে দিয়ে যা।
ওকে তুমি রেডি তো, আমি বাগানে অপেক্ষা করছি, তুমি আসো।
মাকে ধানমন্ডি নামিয়ে দিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো অভি, সিডি চালিয়ে দিলো, ওর রবীন্দ্র সংগীত বেশ পছন্দের তাই প্রায় শুনে। গাড়ী ছুটে চলেছে গুলশানের উদ্দেশ্যে, গুলশান দুইয়ে অভির শিপিংয়ের ব্যবসার অফিস যা আগে ওর বাবা চালাতো, বাবা মারা গেছে বেশ কয়েক বছর হয়, ঘরে মা আর ওর ছোট বোন।
বনানী চেয়ারম্যান বাড়ী রোডে উঠেই সে স্পীড বাড়ালো, আজ রোড বেশ ফাঁকা, মানুষ এখনো ঈদের ছুটি কাটাচ্ছে তাই রোড ফাঁকাই, হঠাৎ খেয়াল করলো সামনে এক সিএনজি উল্টে আছে আর আরেক জায়গায় মানুষ জঠলা করে আছে, সে গাড়ীর স্পীড কমিয়ে জঠলার একটু দূরেই গাড়ী পার্ক করলো, এ তার পুরনো অভ্যাস এই ধরণের কোনো সমস্যা দেখলে দাঁড়ায়, খোঁজ নিয়ে দেখে নিজের পরিচিত কেউ কোনো দূর্ঘটনায় পড়লো কিনা।
সে জঠলার মধ্যে গিয়ে একজনকে জিজ্ঞেস করলো “কি সমস্যা “? প্রতি উত্তরে জানলো সিএনজি হটাৎউল্টে গেছে, ড্রাইভার ঠিক আছে কিন্তু যাত্রী ছিলো এক মহিলা, খুবই আহত হয়েছে, লোকজন বের করে এনে রাস্তার পাশে শুইয়ে রেখেছে। অভি ভীড় ঠেলে ভিতরে ঢুকলো দেখার জন্য, দেখে এক মেয়ে রাস্তায় শুয়ানো, মাথা দিয়ে রক্ত পড়ছে, অভি উচ্চস্বরে জিজ্ঞেস করলো কেউ কি এম্বুলেন্স বা পুলিশে খবর দিয়েছেন? লোকজন সবাই একে অপরের দিকে দেখছে কিন্তু কোনো জবাব নেই দেখেই অভির মেজাজ গরম হয়ে উঠলো, চিল্লায়ে বলল ” সব অমানুষ দেখছি” বলেই সে এগিয়ে গিয়ে মেয়েটাকে আলতো করে কোলে তুলে নিলো আর বলল আমি উনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি, কেউ কি যাবেন? বলেই সে অপেক্ষা করলো না দ্রুত নিজ গাড়ীর দিকে এগলো, গাড়ীর পিছনের দরজা খুলে দিলো এক পিচ্ছি, সেখানে মেয়েটাকে শোয়ায়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করেই সে দ্রুত ড্রাইভিং সিটে চড়ে বসে গাড়ী স্টার্ট দিলো, স্পীড তুলেই টান দিলো আর দ্রুত চালিয়ে ইউনাইটেড হসপিটালে চলে এলো আর এস্ট্রেচার আনিয়ে মেয়েটাকে ভিতরে পাঠিয়ে দিলো।
ভিতরের ডাক্তার চেক করে মেয়েটিকে স্যালাইন দিলো আর বিভিন্ন ঔষধপত্র দিয়ে বাইরে আসলো, এসেই বলল ” আপনি কি হোন উনার”? অভি সব ঘটনা খুলে বলল তখন ডাক্তার বলল “তাহলে উনার মেডিকেল খরচাপাতি কে বহন করবে”? অভি তার বিজনেস কার্ড বের করে দিয়ে বলল ” কোনো প্রবলেম নেই, যা দরকার করেন, বিল আমিই দেবো, উনার কি জ্ঞান ফিরেছে”?
না এখনো ফিরে নাই, আমরা এমআরআই করবো কিছুক্ষণের মধ্যেই, যদি মাথায় সিরিয়াস আঘাত পেয়ে থাকেন তাহলে বড় সমস্যা হতে পারে, এনিওয়ে উনার পরিচিত কাউকে তো চিনেননা নিশ্চয়, উনার কয়েক ব্যাগ রক্ত লাগবে, আপাতত এক ব্যাগ হলেই চলবে। বাই দা ওয়ে আপনার ব্লাড গ্রুপ কি, উনার আবার গ্রুপ বি পজেটিভ।
অভি জানালো ওর গ্রুপও সেইম এবং ও ব্লাড দিতে চাই।
ডাক্তার ওকে প্যাথলজিতে পাঠালো রক্তদান করার জন্য, রক্ত নেওয়ার পর অভি ডাক্তারের চেম্বারে চলে গেলো, ডাক্তার সাহেব নেই দেখে ভিতরের সোফাতেই বসে পড়লো। আধা ঘন্টা পর ডাক্তার ফিরে আসলে জিজ্ঞেস করলো “কি অবস্থা উনার”? ডাক্তার জানালো এমআরআই করা হয়েছে, সব ঠিকঠাক আছে, আশা করা যায় দ্রুতই জ্ঞ্যান ফিরে আসবে।
অভি ডাক্তারের চেম্বারেই অপেক্ষা করছে মেয়েটির জ্ঞ্যান ফিরার আর এর মাঝেই অফিসে ফোন করে বলেছে আজ আর সে আসবেনা।
ঘন্টা দুয়েক পর ডাক্তার এসে জানালো মেয়েটার জ্ঞান ফিরেছে আর পুলিশ এসেছে ইনভেস্টিগেশন করার জন্য, আপনি আসুন সাথে।
অভি গেলো মেয়েটির কেবিনে, পুলিশ মেয়েটির সাথে কথা বলছে, মেয়েটির সাথে কথা বলে অভির কাছে সব শুনলো তারপর তারা চলে গেল।
ডাক্তার মেয়েটিকে বলল অভিকে দেখিয়ে “উনিই আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছেন”
মেয়েটি অভিকে ইশারায় কাছে ডাকলো আর বলল ” ধন্যবাদ আপনাকে” অভি একটু মিষ্টি হেসে বলল কোনো সমস্যা নেই।
কিছুক্ষন পরেই মেয়েটির ফ্যামিলি থেকে ওর মা বাবা ভাইরা এলে অভি তাদের থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে এলো আর সোজা বিলের ডিপার্টমেন্টে চলে গেল আর কার্ড দিয়ে আজকের বিলটা দিয়ে বলল বাকি বিলের জন্য ওকে ফোন দিতে।
________ চলবে।
২৮টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
বাহ , মানবিক গুন সম্পন্ন একটি পোষ্ট,
ভাল লাগে এমন মানবিক আচরন।
পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
ইঞ্জা
সোনেলা আমায় গল্প লিখতে উদ্বুদ্ধ করেছে আর সোনেলায় আসতে আপনি, ধন্যবাদ ভাইজান। 🙂
জিসান শা ইকরাম
স্বাগতম -{@
মামুন
গল্পের এই পর্বটি পড়লাম। পরের পর্বের প্রত্যাশায়।
শুভকামনা।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই, পাশে পেয়ে আরো অনুপ্রাণিত হলাম। 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
এমন মানুষ আজও পৃথিবীতে আছে বলেই মনুষ্যত্ববোধ টিকে আছে।
গল্প চলুক।
ইঞ্জা
সহমত আপনার সাথে আর আপ্লুত হলাম আপনাকে পাঠক হিসাবে পেয়ে। 🙂
ছাইরাছ হেলাল
ইস বিলময় জীবন শুরু,
দেখি কোথাকার বিল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়!
ইঞ্জা
😀 😀
মোঃ মজিবর রহমান
ওয়াও ! দারুন একটি পোষ্ট ইঞ্জা ভাই। এভাবেই গল্প লিখলে অনেক ভাল গুনাগুন আবির্ভাব হবে। পড়ে একজন মন্দ ব্যাক্তির ভাল হওয়ার ইচ্ছা জাগবে।
শুভকামনা রইল।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয়।
ব্লগার সজীব
ভাল লেগেছে ইঞ্জি ভাইয়া, পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। ভাইয়া বিভাগ শুধু গল্প হবে, এদেশ কেন এই গল্পে?
ইঞ্জা
এই সেরেছে, এইখানেও ভুল।
ধন্যবাদ জেনে নিলাম।
শুন্য শুন্যালয়
এমন মানুষের দেখা পাওয়া তো এখন বিরল ভাইয়া, ভেতরে এমন মানুষ থাকলেই এমন লেখা আসবে। চলুক বিলে বিলে, অপেক্ষায় ভালোবাসার পরের পর্বের 🙂
ইঞ্জা
এমন মানুষ একজন আমার প্রিয় বন্ধু আর তার জীবন থেকে কিছুটা নিয়েছি। 🙂
মৌনতা রিতু
মানবিক লেখা। যদিও কাল পড়েছিলাম। মন্তব্য করা হয়নি।
রাস্তায় এমন মারাত্নক এ্যাকসিডেন্ট করে পড়ে থাকলে কেউ দেখেই না।
আমার ও ‘বি’পজেটিভ।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ, বলে রাখি আমার AB+ 🙂
মৌনতা রিতু
আমার দুই ছেলে ও ছেলের বাবার AB positive. বাহ! ভালোই মিল তো। খোঁজ রাখা ভাল।
শামীম আনোয়ার আল- বেপারী
(y)
ইঞ্জা
ধন্যবাদ
আবু খায়ের আনিছ
এত শুরু করতে না করতেই শেষ। আমার আবার গল্প পড়ার বাতিক আছে একটু ভিন্ন রকম, পড়তে থাকব অনেক্ষণ ধরে। কি আর করা, আগামী পর্বের অপেক্ষা। যদিও লেখাটা আগেই দেখেছি দুইবার পড়লাম।
ইঞ্জা
খেয়াল করে দেখেছি ফেবুতে বড় লেখা কেউ পড়তে চাইনা বিধায় ছোট করে লিখি।
ধন্যবাদ ভাই আমি ধন্য হলাম আপনার মত বোদ্ধা পাঠক পেয়ে।
আবু খায়ের আনিছ
ফেইজবুকের কথা বাদ, ওখানে গাজাখুরি গল্পই বেশি হয়। তবু আপনাদের মত কিছু মানুষ আছে দেখে হয়ত পড়ে থাকা হয়।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
অফুরন্ত ধন্যবাদ ভাই।
মেহেরী তাজ
দুই পর্ব এক সাথে পড়লাম!
ভালো লেগেছে….
চলুক চলুক…
ইঞ্জা
অফুরন্ত ভালোবাসা জানবেন এই ভাইয়ের।
অরুনি মায়া অনু
অভি সঠিক কাজটিই করেছে। তারমানে অভিকে দিয়ে লেখক করিয়েছেন। তাই লেখককে ধন্যবাদ।
ইঞ্জা
তাই, তাহলে কানে কানে বলি একি দৃশ্য আমার জীবনেও ঘটেছে যা অভি কে দিয়ে চিত্রায়ন করলাম, প্লিজ কাউকে বলবেন না। 😀