ভালোবাসার বিরিয়ানি

সাবিনা ইয়াসমিন ৩১ মে ২০২১, সোমবার, ০২:৩৪:৫৯পূর্বাহ্ন অন্যান্য ২৯ মন্তব্য

বিরিয়ানির সাথে বাঙালীর ভাব-ভালোবাসার কথা অজানা কোন ঘটনা নয়। খুব কম মানুষই আছেন যারা বিরিয়ানির প্রতি উদাসীন।

কাচ্চি বিরিয়ানি, চিকেন বিরিয়ানির পাশাপাশি দম বিরিয়ানি, পর্দা বিরিয়ানি সহ বহুমুখী স্বাদের এই বিরিয়ানি গুলোর আবিস্কার কর্তা কে, এর উৎপত্তি কোথায় এগুলো জানা না থাকলেও বিরিয়ানির স্বাদ নিতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। বিরিয়ানি একটি গণতান্ত্রিক খাবার, তাই আমিও আপাতত এর ইতিহাস খুড়তে যাচ্ছি না। আসুন আমরা এখন বিরিয়ানির গল্প করি।
সাথে থাকবে বিরিয়ানির ছবি 🙂

 


এটা পর্দা বিরিয়ানি।


বালতি বিরিয়ানি,উহু, যা ভাবছেন তা নয়। এই বিরিয়ানি বালতির মধ্যে রান্না করা হয় না, শুধু বালতি দিয়ে পরিবেশন করা হয়।

বিরিয়ানির প্রতি তীব্র আকর্ষণ টের পেয়েছিলাম বেশ ছোট থাকতেই।  বাংলাদেশের বিরিয়ানির আদি ভুমি পুরনো ঢাকাকে ধরা হয়। আমার জন্ম, লালবাগে। শৈশবের বড় একটা অংশ কেটেছে সেখানে। জানি না স্বাদ সুত্রে নাকি জন্ম সুত্রে বিরিয়ানির প্রতি আগ্রহী হয়েছি কি না, তবে বিরিয়ানি আমার প্রথম প্রেম এটা শিউর।

আহা বিরিয়ানি! – মনে পড়ে, পুরনো ঢাকায় কাঁঠাল পাতা দিয়ে তৈরী এক ধরনের বাটির মতো দেখতে ছোট ছোট প্যাকেটে মোড়ানো থাকতো আমার ভালোবাসার বিরিয়ানি! যার সুঘ্রাণ আর স্বাদ আমাকে টেনে নিয়ে যেতো স্বপ্নের দুনিয়ায়, আমি চাইতাম বেহেশতে গিয়েও সেইরকম বিরিয়ানি খেতে। যদিও মরার কোন ইচ্ছেই আমার মাঝে ছিলো না!


পুরান ঢাকায় এখনো এভাবে কাঁঠাল পাতায় মুড়িয়ে বিরিয়ানি বিক্রি হতে দেখা যায়,


আরও আছে বাঁশ বিরিয়ানি, মানে বাঁশের খোলে ঢুকিয়ে রান্না করা হয়।

আমি এখন নিজেই বিরিয়ানি রান্না করে খাই, এবং মহা ধুমধামে খাই। চেষ্টা করি একটা উৎসব টাইপের ভাব নিতে। অথচ অনেকেই এটা উপভোগ করতে পারেন না, যারা জানেন না তাদের জন্য সামান্য কিছু টিপস দিলাম  (রেসিপি না কিন্তু, ওটা শুধু ইনবক্সে দিবো 😜)

যেভাবে বিরিয়ানি খাবেন-

– প্রথমে ইচ্ছাটা বাড়িয়ে তুলুন

– আবহাওয়ার প্রতি তেমন মনোযোগ দেওয়ার দরকার নেই। বিরিয়ানি হলো নব্য প্রেমিক/প্রেমিকার মতো, সব সময়েই দারুণ!

– জিনিসপত্র যোগাড় করে রান্না শুরু করে দিন।

– নিজে রান্না করার ঝামেলায় যেতে না চাইলে বাসার অন্য কাউকে বলুন রেঁধে দিতে।

– জিনিসপত্র যোগাড় না থাকলে মন খারাপের দরকার নেই। রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়ুন, পছন্দের যেকোনো খাবারের দোকানে গিয়ে বসলেই পেয়ে যাবেন আপনার পছন্দের বিরিয়ানি। ( আগেই বলেছি এটা গণতান্ত্রিক খাবার, পাড়ার অলি-গলি সহ ফাইভ স্টারেও পাওয়া যায়)।

– বাইরে যেতে পারবেন না? নো টেনশন। হাতের মোবাইল ফোন টাকে কাজে লাগানোর এই সঠিক সময়। ক্লিক করুন ফুড পান্ডায়, অথবা পছন্দের কোন রেস্তোরাঁর নাম্বারে। অনলাইনে ঘুরতে ঘুরতেই বিরিয়ানি হাজির!

– কথায় আছে পুরুষের ভালোবাসা নাকি মন থেকে শুরু হয়ে পেটে গিয়ে থামে! স্বামীরা কিপ্টুস হোক অথবা উদার তাদের পেট শান্তি তো দুনিয়া শান্তি। আপুদের বলছি, আপনারা তাদেরকে মাঝে মধ্যে বিরিয়ানি খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। এই ফর্মুলায় মনোবাঞ্ছা দ্রুত পুরণ  হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

– অনেক স্ত্রীরা অল্পতেই হাজব্যান্ড এর উপর রেগে যায়। তারা তাদের স্বামীদের নিয়ে হতাশ। সেইসব স্বামীরা দ্রুত বিরিয়ানি রান্না শিখে নিতে পারেন। আপনার হাতে রান্না করা  এক প্লেট  ভালোবাসার বিরিয়ানি আপনার প্রিয়তমার রাগ ভাঙিয়ে দিবেই।

পরিশেষ- বিরিয়ানি শেষে দই, আইস্ক্রিম,লাচ্ছি, ফালুদা অথবা বোরহানি / কোক খেতে ভুলবেন না কিন্তু।


ও হ্যা,নিরামিষ বিরিয়ানিও হয়, যেমন এঁচোড়ের বিরিয়ানি 🙂

অঃকঃ- মনে রাখবেন লাইফ ইজ বিউটিফুল, আর ব’ তে বিরিয়ানিও 😜☺️

 

*ফিচার ছবি- আমার।

অন্যান্য ছবি- নেট থেকে সংগৃহীত।

১৭৩৮জন ১৪১৯জন
0 Shares

২৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ