
দিবা-নিশি কল্পনায় আল্পনায় সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা কথা আর অনুভুতি কখনো ভালোলাগার মানুষটার সামনে কথায় কথায় পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করা যায়?
আসলে কখনো মনের মানুষটাকে চিঠি লিখে বা এসএমএস পাঠিয়ে কেউ পুরোপুরি প্রকাশ করতে পারেনা যে তাকে সে কতটা ভালোবাসে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে উত্তর না হবে। কারণ- ভালোবাসার সব রকম অনুভুতি বহিঃপ্রকাশ এর ক্ষেত্রে লিখা বা বলার জন্য প্রয়োজনিয় শব্দভান্ডার কোন প্রচলিত ভাষার দখলে নেই।
হৃদয়ের অনিয়ন্ত্রিত একান্ত অনুভুতিগুলোর শব্দগত প্রকাশ এর সীমারেখা অতি অল্প। যেসব কথা বর্ণে বা উচ্চারণে প্রকাশ করা যায় না তা প্রকাশ করার অনণ্য কৌশল হচ্ছে “বোবা ভাষা”।
শারিরীক অঙ্গভঙ্গি, তোতলামো, চালচলন, অস্থিরতা বা অতিরিক্ত স্ব- স্বভাব বিরুদ্ধ নিরবতা হলো বোবা ভাষা, যে ভাষার সাধারণত কোনও অর্থ না থাকলেও- মনের মানুষেরা সত্যি সত্যিই সে ভাষায় প্রকাশিত কথা ভাবসম্প্রসারণ সহই বুঝে।
‘চোখ যে মনের কথা বলে’- এখানে চোখ ইশারায় যা বলে সেটাও একরকম বোবা ভাষা। কখনো ভিষণ ভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করে চোখ, চোখের চাহনি, পিটপিট পাঁপড়ি। চোখের জলও ভালোবাসা প্রকাশ করে। আবার চোখের জল ভালোবাসা আদায় ও করে।
এমন অনেকেই আছেন যাদের মুখের চেয়ে চোখ বেশি কথা বলে। বিশেষ করে নারীরা। তারা অতি আপনজনের সামনে অঙ্গভঙ্গি আর ইশারায় হাজারো কথা বলে। আমার হিসেবে সে নারী বিশেষ সৌভাগ্যবতী হয় যাদের আপনজন এই বোবা ভাষায় চোখের কথার মর্মার্থ বুঝে।
তেমন মেয়েদের মধ্যে রীতা একজন বিশেষ সৌভাগ্যবতী নারী। সেই প্রথম দেখার পর থেকে আজ পর্যন্ত রীতার সব রকম শারীরিক ভাষার সমস্ত উপঢৌকন মাসুদ অক্ষরে অক্ষরে বুঝতে পারে। কখনো রান্না করা তরকারিতে লবন বেশি হলেও মাসুদ খাওয়ার ফাঁকে রীতার নতজানু বিক্ষিপ্ত দৃষ্টি অবলোকন করে লবন বেশি হওয়ার কারণ বুঝতে পারে। মৃদূ শব্দে প্রশ্ন করে- বাড়ি যাবে? মাকে দেখতে ইচ্ছে করছে?
মূহুর্তেই উদ্ভাসিত হয়ে উঠে স্বল্পভাষী রীতার চোখ। যেন ভূতের সিনেমা পাল্টে কেউ টম এন্ড জেরীর চেনেল চালু করেছে। পরক্ষনেই রীতার গাল দুটো ফুলে উঠে। ঠোঁটজোড়া কাঁপতে থাকে আর চোক্ষ্মুজোড়া স্থীর হয়ে বসে মাসুদের চোখে।
মাসুদ এই ভাষার সারমর্ম ও বুঝে, উত্তর ও জানে। তবু প্রশ্ন করে, কি হয়েছে আবার ?
তোমার জন্য খারাপ লাগছে। এ কয়দিন তুমি কি খাবে? রান্না করবে কে?
হাসতে হাসতে মাসুদ জবাব দেয়- তুমি তো আর সারা জীবনের জন্য যাচ্ছো না। সন্ধ্যেবেলা ভিডিও কল দিয়ে তোমার মুখে শুনে শুনে আইড় মাছের ঝোল রান্না করা শিখে নিবো।
তোমাকে না গেলবার শিখালাম ? মুখে প্রশ্নের সাথে সাথে ভ্রু কুঁচকে চোখেও প্রশ্নভরা চাহনি।
মাসুদ জবাব দেয় না। মনে মনে ভাবে সেই ছেলেবেলা বোর্ডিং এ থাকতে সে টুকটাক রান্না করতে পারে। মায়ের সাথে রান্নাঘরে মাসুদের রেগুলার উপস্থিতির কারণে তার রান্নার হাত অনেকের চেয়ে ভালো। তবুও বৌ বাপের বাড়ি গেলে সন্ধ্যেবেলা বাসায় ফিরে ভিডিও কলে রেসিপি শুনে তরকারি রান্না করতে পছন্দ করে।
এসব কি মাসুদ ! তোমাকে একই কথা বারবার বলতে হয় কেন? তোমাকে দিয়ে রান্না হবে না।
সামান্য ঝাল ভরা ঝাড়ি খেতে মন্দ লাগে না মাসুদের। আর এই একটাই কর্মে রীতা বরাবর গুরুত্ব সহকারে টিচার টিচার ভাব নিয়ে করে। অনর্গল কথা বলে ভ্রু বাঁকিয়ে ধমক দেয়। আর এই সবই মাসুদ প্রাণভরে উপভোগ করে।
এইটুকু সম্ভবত যথেষ্ট মাসুদ রীতার বিবাহিত জীবনে রসায়নের গভীরতর বিক্রিয়া অনুমান করার জন্য।
রীতা মুখে না বললেও তার সমস্ত অঙ্গ প্রতঙ্গের মুভমেন্ট এ মাসুদের জন্য ভালোবাসা মিশে থাকে। আর এই একটা মাত্র কারণে হয়ত মাসুদ জীবনের সমস্ত ইতিহাস মুছে নিজের হৃদয়ে ভিন্ন রংয়ের নতুন আস্তরে নিজেকে মানিয়ে নিতে পেরেছে। গভীর ভালোবাসার কাছে হেরে যায় অনেকেই। মাসুদ হার মেনে নিয়েছে রীতার বোবা ভাষার ভালোবাসার কাছে।
চলবে______।
১৭টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
চমৎকার উপস্থাপন
অতুলনীয় লেখা শুভ কামনা রইলো
এস.জেড বাবু
অশেষ কৃতজ্ঞতা ভাইজান। সবসময়ের মতো অল্প কথায় সাবলীল মন্তব্য।
ভালো থাকবেন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
বাহ্ চমৎকার প্রেমের গল্প। সত্যিই কত রকমের ভালোবাসা, তার বহিঃপ্রকাশ। আপনি কি ঠিক করেছেন এভাবে আপনার লেখা থেকে আমাদের বঞ্চিত করবেন? মাসে একটা লেখা দিলে কেমনে হয় বলেন তো? ঠিক না একদম ঠিক না। নিয়মিত লিখুন। আগামী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন
এস.জেড বাবু
কৃতজ্ঞতা আপু।
গল্পটা চার থেকে পাঁচ খন্ডে সমাপ্ত হতে পারে।
আসলে সময় করে উঠতে পারি না, আর শুধু লিখলেই হবেনা, অন্যদের লিখা পড়তে হবে, তাদের অনুপ্রাণিত করতে হবে। ঠিক যতটা সময় পেলে মিনিমাম দশটা লিখা পড়ে যথার্থ মন্তব্য করা যায়- ততটা সময় আজকাল পাচ্ছি না।
একটা লিখা পোষ্ট করার আগে/পরে অন্যদের লিখায় কমপক্ষে দশটা মন্তব্য করা আমি উচিত বলে মনে করি।
বছরের এই সময়টা আমাদের ব্যাবসায়িক সিজন, মূলত অর্ধেক বছর আমাদের এক্টিভিটি ভালো থাকে। শীতকালীন সময়ে অলস সময় কাটে।
সোনেলা হউক বা যে কোনও প্লাটফরম- কারও লিখায় আমি মন্তব্য করি না তবে অন্য লিখকরা ই বা করবে কেন ? (এটা বাস্তবতা নয় তবে আমার মানষিক অস্থিরতা, সোনেলায় সবাই পাঠক হিসেবে মহানুভব)
লিখক অনেকেই হয়, সত্যিকার পাঠক হতে চায়না কেউ।
আর বরাবরের মতো নিজের লিখা অন্যসব গুণী পাঠকের মন্তব্যে যাচাই করতে না পারলে কেমন যেন অসহ্য লাগে।
আপনি পাঠক হিসেবে মহান, মাসে একটা পোষ্ট করেও আপনার মন্তব্য পেয়ে যাই। কামনা করি তেমন মহানুভব পাঠক হৃদয় সকল প্লাটফরমে / আমাদের সকল লিখকদের অন্তরে জাগ্রত হউক।
ভালো থাকবেন আপু।
নিরাপদ এবং সুস্থ থাকবেন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এখানে মহানুভবতা র কিছু নেই আমি আপনাদের মতো ব্যস্ত নই তাই অন্যের লেখা পড়ার বা মন্তব্য করার সময় দিতে পারি । আর নিজের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে পারি। আপনাদের কাছ থেকেই তো সব শিখলাম। আপনাদের অনুপ্রেরণায় পথ চলছি এটা আমার অনেক বড় পাওয়া। তবে এটা ঠিক আমি ইচ্ছা করেই সময় বের করি নিজের ভালো লাগার জন্য ই, সোনেলাতে সময় দেই । ভালো থাকুন সবসময়। ধন্যবাদ আপনাকে
প্রদীপ চক্রবর্তী
বেশ ভালো লাগলো দাদা।
রীতার সমস্ত অঙ্গ প্রতঙ্গের মুভমেন্ট এ মাসুদের জন্য ভালোবাসা মিশে থাকে।
দুজনের ভালোবাসার পূর্ণতা পেয়ে উঠুক।
এস.জেড বাবু
শুভেচ্ছা নিবেন দাদা।
অনেকদিন পর আপনাকে পেয়ে আনন্দিত।
অনেক মিস করি আপনাদের, সময় পেলে লুকিয়ে লুকিয়ে পড়ে ফেলি পছন্দের লিখকদের কিছু লিখা।
অনেক শুভকামনা আপনার প্রতি
ভালো থাকবেন।
নিতাই বাবু
যে স্বামী স্ত্রীর বোবাভাষা বোঝতে পারে, সেই সংসারের মনমালিন্য কম হয় এব সংসারও সুখের হয়। মাসুদ সত্যি বুদ্ধিমান ব্যক্তি। আর রীতাও গুণবতী নারী। সামনে দেখা যাক কী হয়! অপেক্ষায় থাকলাম। চলুক পর্ব!
এস.জেড বাবু
সংসার জীবন নিয়ে আপনার বিচার আমার কল্পনার চেয়ে দামী এটা মেনে নিবো।
মন্তব্যে অনুপ্রাণিত দাদা।
ভালো থাকবেন সবসময়।
হালিম নজরুল
ভাল লাগল প্রেমের গল্প।
এস.জেড বাবু
কৃতজ্ঞতা ভাইজান
সুস্থ ও সুন্দর থাকবেন সবসময়
তৌহিদ
মনের কথা বলার অনেক উপায় আমরা নিজেদের সুবিধার জন্যই নিজেরা আবিষ্কার করেছি। প্রেমের ইশারাও এর বাইরে নয়।
চলুক গল্প। ভালো থাকুন ভাই।
এস.জেড বাবু
ইশারা ভালোই বুঝেন বুঝা গেল।
গুণী মানুষ হিসেবে আপনার নতুন আর একটা গুণ জানতে পারলাম।
নিরাপদ থাকবেন
ভালো থাকবেন
আরজু মুক্তা
গল্প এগিয়ে চলুক
এস.জেড বাবু
আপনাদের দোয়া ও শুভকামনা
এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
ভালো থাকবেন আপু
জিসান শা ইকরাম
বোবা ভাষা সবাই রপ্ত করতে পারেনা, তবে যারা এটি বুঝতে পারে তাদের জীবন প্রেমময় আনন্দে পরিপুর্ন হয়ে ওঠে।
রীতা মাসুদ এমনই দুজন।
গল্পের সুচনা পর্ব ভালো হয়েছে খুব।
শুভ কামনা।
এস.জেড বাবু
আপনার মন্তব্য পেয়ে খুশি লাগছে। অনুপ্রেরন ও পেলাম। গল্প এগিয়ে যাবে আপনার শুভকামনায়।
ভেজা কদমের শুভেচ্ছা ভাইজান।