
👉 বানুর মা এক কাপ চা দিয়ে গেছে, জামিল সাহেবের হাতে। গরম চা, কাপে চুমুক দিতেই দীর্ঘশ্বাস নেমে এলো বুকের গভীর থেকে। বানুর মা ( কাজের মহিলা) কে হাজার বার বলেও উপায় হলো না, চায়ে চিনি বেশি দিবেই। আজও চিনি বেশি হয়েছে চায়ে । শরীরে সুগারের পরিমান ঠিকই আছে, তবুও চিনি বেশি খেতে অভ্যস্ত নয় জামিল সাহেব। সাহেরা বেগম সব সময় খেয়াল রাখতেন, এই ব্যপারে। তিনি গত হয়েছেন পাঁচ বছর হয় । ইতিমধ্যে জামিল সাহেব চাকুরী থেকে অবসরে গেছেন। শুরু হলো নিঃসঙ্গতার এক পৃথিবী পথ চলা ।
অবসর জীবনে সঙ্গীনিকে পাশে পাননি তিনি, নিয়তি কেঁড়ে নিয়েছে চিরতরে ।
চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে আবার চুমু দিলেন। তখনি আট বছরের নাতনী রেশমী এসে দাদু দাদু বলেই কোলে এসে বসেছে। তারপর দাদুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
~ দাদু, তুমি নাকি কাল চলে যাবে?
রেশমির কথা শুনে বুকের উপর এক পাহাড় নেমে এলো। হ্যা, সত্যিই তো, মাসের আজ শেষ দিন। আগামী কাল এক তারিখ থেকেই মেঝ ছেলের বাসায় থাকার কথা। তিন ছেলে, এক মেয়ে। সবাই বিবাহিত ও প্রতিষ্ঠিত। এক মাস, এক মাস করে ক্রমান্বয়ে তিন ছেলের বাসায়ই থাকেন জামিল সাহেব।।মেয়ে স্বামী সন্তান নিয়ে চট্টগ্রামে থাকেন, এক মাস দুমাস পর খোঁজ খবর নেন বাবার। কোন বছর দেখা হয় , কোন বছর দেখা হয় না মেয়ের সাথে। স্বামীর চাকরী ও ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া নিয়েই ব্যস্ত। ঘুরে ঘুরে তিন ছেলের বাসায় ই বছর পাড় হয় জামিল সাহেবের। সোনার সংসার ছিলো, জামিল সাহেব ও সাহেরা বেগমের। তিন ছেলে এক মেয়ে নিয়ে সুখেই দিন যাচ্ছিল তাদের। মেঘে মেঘে কখন যে বেলা ফুরিয়ে গেছে টের পাননি কেউ । এই তো সে দিনের কথা, সাহারা বেগম বড় ছেলের জন্য শার্ট পেন্ট আনার জন্য বলেছেন, অফিস থেকে ফেরার পথে মার্কেটে গিয়ে চার ছেলে মেয়ের জন্যই নতুন কাপড় কিনে এনেছেন জামিল সাহেব, সব সন্তানের মুখেই হাঁসি খুঁজে বেরিয়েছেন দুজন। ছেলে মেয়ে সবার প্রতি সমান দরদ দিয়ে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন জামিল সাহেব। জীবনের সব স্বপ্ন গুলো বিছিয়ে দিয়েছেন সন্তানদের ভবিষৎ গড়ায়, সফলও হয়েছেন। কিন্তু নিজের ভবিষৎ থেকে গেলো টানপোড়নের বেড়াজালে। এই বয়সে এসে সন্তানদের বাসায় ঘুরে ঘুরে জীবনের ভার বহন করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। ভাগ্য ভাল, এই চিত্র সাহেরা বেগম দেখতে পায়নি, তার আগেই চলে গিয়েছে। এই দায় হয়তো সহ্য করতে পারতেন না তিনি, তাই বিধাতা তাকে সরিয়ে নিয়েছে ।
মনের অজান্তেই চোখ থেকে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। রেশমী দাদুর দিকে তাকিয়ে বললো
~ দাদু তুমি কাঁদছো কেন ?
জামিল সাহেব নাতনী কে আদর করে বলল
~ বুড়োদের কাঁদতে হয় না দাদু ভাই। চোখের জ্যোতি কমে আসলে এমনিতেই চোখ দিয়ে জল আসে ।
৮টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
জামিল সাহেবের ছেলেমেয়েরা কাগুজে শিক্ষায় শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত হতে পারলেও সুশিক্ষিত হতে পারেনি। চোখের জ্যোতির মতো স্মৃতির জ্যোতি গুলো কমে গেলে চোখ দিয়ে আর জল গড়াতো না।
এই প্রথম আপনার লেখা গল্প পড়লাম কামরুল ভাই।
গল্পের বিষয়বস্তু মনকে আদ্র করে দিলো।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা 🌹🌹
কামরুল ইসলাম
আমি তো গল্পই লিখতাম ভাল আপু,
সময়ের অভাবে গল্প আর লিখতে পারি না,
শিক্ষার মুদ্রা দোষ আমাদের অনেকের ই আছে, এই সমাজে ,
ধন্যবাদ, অনেক শুভ কামনা
সুপর্ণা ফাল্গুনী
উচ্চ শিক্ষিতের এই হচ্ছে সমস্যা। যে যার পজিশনে চলে যায় তখন বাবা মা, ভাইবোন ও তাদের কাছে শুধুই কাগুজে সম্পর্ক, আত্নার সম্পর্কে বাঁধা থাকে না। বৃদ্ধ বয়সের একাকীত্ব খুব কষ্টের। চমৎকার বিষয়বস্তুর গল্প । অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে
কামরুল ইসলাম
শিক্ষিত প্রতিটি পরিবারে এই সমস্যা আছে ,
ধন্যবাদ আপু,
অনেক শুভ কামনা
রোকসানা খন্দকার রুকু
অনেক ভালো লাগলো। গল্প লিখেছেন দারুন। শুভ কামনা রইলো ভাইয়া।
কামরুল ইসলাম
ধন্যবাদ আপু, অনেক শুভ কামনা
আরজু মুক্তা
আজকের সমাজ উঠে এসেছে গল্পে
কামরুল ইসলাম
ধন্যবাদ