বীরাঙ্গনা

মনির হোসেন মমি ১ অক্টোবর ২০১৪, বুধবার, ১০:৪৩:৪৬অপরাহ্ন গল্প, মুক্তিযুদ্ধ ৩১ মন্তব্য

পৃথিবীতে যতগুলো নতুন রাষ্টের উৎপত্তি ঘটেছে তার পিছনে কোন না কোন ইতিহাস রয়েছে , কোথাও আবার যুগ যুগের যুদ্ধে মধ্য দিয়ে  সৃষ্টি হয়েছে দেশ, তার মধ্যে পাকিস্হানের একটি অংশ পূর্ব পাকিস্হান বাংলা ভাষা ভাষীর সংখ্যা গরিষ্টতায় বলে তাকে আমরা পূর্ব বাংলাও বলি।’৭১ বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে এর নাম হয় আমাদের প্রিয় জম্ম ভুমি বাংলাদেশ।

আমরা এমন একটি জাতি, যেই জাতির মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ৪৪ বছর ধরে চলছে বিতর্ক। জ্বলন্ত সত্য ঢেকে দিয়ে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য চলছে নিরন্তর প্রচারণা।এ সবই পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আলোচনা সমালোচনা কাউকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে কিংবা রাজাকার হিসাবে প্রতিষ্টিত করার। কিন্তু নারী মুক্তিযোদ্ধা কিংবা মুক্তিযুদ্ধে নারীদের যে ভূমিকা ছিল নারীদের অমূল্য সম্পদের যে হানি হয়েছিল তার তেমন কোন উল্ল্যেখ্যযোগ্য লেখা আমার চোখে পড়েনি। তবে কি যুদ্ধে নারীদের কোন অবদানই ছিল না ?….ছিলো তবে পুরুষ শাষিত সমাজে তা উল্ল্যেখ করা যেন লেখকদের পাপ….. সেই সব বীরঙ্গনা নারীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে একটি কাল্পনিক কিছুটা সত্য কাহিনী আপনাদের জ্ঞাতার্থে পেষ করছি হয়তো কারো জীবনের সাথে মিলে যেতে পারে সে জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি…………………….।

ফুলী বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে তার দেহটি হাতে শুকনো গাছের লাঠিটিই তার পথ চলার অবলম্ভন।মানুষ নামের তথাকতিথ সভ্য শহর ঢাকাতেই তার বর্তমান জীবন চলা।ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্য ময় কবির কবিতার মতই তার জীবন প্রবাহ।অসুস্হতার ছলে এক দিন লাঠি হাতে ঘর হতে বের হতে না পারলে তাকে না খেয়েই থাকতে হয় সারাটা দিন।জীবন চলার অবলম্ভনের উৎস বলতে কেউ নেই তার।

সে দিন শহরের ডাষ্টবিন হতে সভ্য মানুষের অপচয়কৃত খাদ্য সংগ্রহ করে নিজ ক্ষুধার্থ উদর ভূড়ি করছিল ফুলী।সে দিকে চোখঁ পড়ে শহরের বিবেকবান উদিয়মান নতুন লেখক সামছুর রহমানের।হাতের ক্যামেরায় ফ্রেম বন্দী করেন দৃশ্যটি।ক্যামেরার ফোকাসে ভয় পেয়ে ফুলীর সংগ্রীত খাদ্য ভক্ষণে বিঘ্ন ঘটে সে ফিরে আসেন সেখান থেকে,চলছেন রাজপথের মাঝ খান দিয়ে।হঠাৎ গাড়ী চাপা থেকে রক্ষা করেন লেখক সামছুর রহমান।বৃদ্ধকে রাজপথের এক সাইটে দাড় করিয়ে কিছু প্রশ্ন করেন।

-কোথায় থাকেন?

কোন উত্তর নেই।

-ডাষ্টবিনের ময়লা কেনো খাচ্ছেন,আপনার কি কেউ নেই?

এবারও কোন উত্তর নেই শুধু ফেল ফেল করে লেখকের দিকে চেয়ে থাকা ছাড়া, তারপর আবারও পথ চলা।লেখক তার পিছু হাটছেন।প্রায় ঘন্টাখানেক হাটার পর বৃদ্ধ মহিলাটি বস্তির একটি সরু রাস্তা দিয়ে হেটে নিজে বানানো ছোট একটি ঝড়া জীর্ণ ঘরে ঢুকেন।লেখক তার সাথে ঘরের ভিতর ঢুকতে গিয়ে মাথায় আঘাত পান।লেখককে পিছু পিছু এসে ঘরে প্রবেশে মনক্ষুন্ন হন।

-কি রে বাবা তুমি আমার পিছু নিছো কেন?কারো ঘরে ঢুকার আগে ঘর মালিকে অনুমতি লাগে হেইডা কি তোমাগো পুস্তকে নাই।

লেখক ভ্যাভাচ্যাকা খেয়ে প্রতুত্তোর ভূলে যান তবে সে বুঝতে পারেন এই মহিলাটি সাধারণ কোন মহিলা নন নিশ্চিত শিক্ষিত।

-সরি…নানু আসলে আমি ভুলে গিয়েছিলাম অনুমতি নিতে।

-থাক,তা কেন আইছো তাই বলো?

বৃদ্ধা পুরনো ঘূণে ধরা আধা ভাঙ্গা একটি ছোট বসার পিড়ি হাত দিয়ে পরিষ্কার করে বসতে দিলেন লেখককে।লেখক বসলেন বৃদ্ধা তার থলে থেকে কিছু চাউল বের করে চাউল ঝাড়ার কোলায় চাউল ঝাড়ছেন এর ফাকে লেখক কিছু প্রশ্ন করার চেষ্টা করেন।

-নানুদের দেশ কোথায় মানে গ্রামের বাড়ী কোথায়?

-যেখানে ঘর বাড়ী নাই হেখানে গ্রামের ঠিকানা জাইন্না কি লাভ কন দেহি…আপনারা হুধা আজাইড়া প্যাচাল পারতে কেন আহেন।কোন প্যাচালের দরকার নাই….বলে বৃদ্ধা পুরোন  চার দিকে কিছু অংশ ঘূণে ধরা ডায়রীটি এগিয়ে দিলেন লেখককে।লেখক হাতে নিয়ে ঝাড়া দিলে কিছু ঘূণে পুকা সহ ময়লা মাটি বেড়িয়ে পড়ে হয়তো আরো কিছু কাল গেলে বৃদ্ধার মূল্যবান সম্পদটি ধ্বংস হয়ে যেত।লেখক ডায়রীর পাতা খোলছেন এক এক করে।নিজের যুদ্ধকালীন ঘটনার সাথে সহকর্মী যাদেরকে সে জানত তাদেরকেও তুলে ধরেছেন….’৭১ এ “নারী” নামে।

পাক বাংলা মিলিত কৈশরের শেষ প্রান্তের জীবন ভালই কাটছিল ফুলীর।মা বাবা এবং এক জন ছোট ভাইকে নিয়ে হাসি ঠাট্টায় জীবন চলছিল।গ্রামে তাকে তার চঞ্চলতা এবং মানুষের সামাজিক কল্যানে সর্বাগ্রায়ে ঝাপিয়ে পড়া ছিল তার চরিত্র।এর জন্য মা বাবার কাছে অনেক বকা ঝকাও খেতে হয়েছিল।গ্রাম বাসীর কাছে সে ছিল সব মুসকিল আসানের কর্তী।লেখা পড়াও বেশ ভাল।তার আরেকটি গুণ ছিল যে কোন সময় গলা ছেড়ে গান গাইতে পারত গ্রামের এক অখ্যাত কন্ঠগুরুর কাছে তালিম নিত সেই সূত্রে কন্ঠগুরুর বড় ছেলের সাথে ঘটনাক্রমে ভাব লেগে যায় যার পরিনতিতে ‘৭১ এর মাঝা মাঝিতে তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

যুদ্ধের দামামা দেশের চার দিকে যখন ছড়িয়ে পড়ে তার স্বামী মুক্তি যুদ্ধে অংশ গ্রহন করতে ইন্ডিয়ায় বিশেষ ট্রেনিংয়ে যান।বেশ কঠিন ট্রেনিং আর্মি বিড়িআর এ ট্রেনিংয়ের চেয়ে কম কঠিন নয় আর এ দিকে ফুলী তার বাড়ীর পাশ দিয়ে যুদ্ধে মুক্তি বাহিনীর প্রেরনায় দল বদ্ধ ভাবে মুক্তির গান গেয়ে যাচ্ছেন সে তাদের সামনে গিয়ে দাড়ায়।

-আমাকে সঙ্গে নিবেন আমিও গাইতে পারি।

(y) মোরা একটি ফুলকে বাচাব বলে……..।।

-বাহ্ চমৎকার কন্ঠ তো তুমি যাবে আমাদের সাথে তবে শুধু গানই নয় আরো বেশ কিছু কাজ করতে হবে মুক্তি বাহিনীর জন্য।

-দেশের জন্য আমি আমার স্বাধীনতার তরে বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত আমার প্রান।

এই প্রথম যেন শুনলেন গানের দল নেতা কোন বঙ্গ রমণীর এমন সাহসী ইচ্ছে প্রকাশ করা সঙ্গ করে নিলেন তাকে হাতে তুলে দিলেন দুতারা।দু তারার প্রথম সুরের টোকায় রঙ্গীন হয় আকাশ,সুরের তালে বাশুরী মাতাল রাখাল বন্দুকে নলে যুদ্ধর সুর তুলেন।

গানের দলটি কখনও ট্রাকে কিংবা ভ্যানে চড়ে গ্রামকে গ্রাম গান গেয়ে বেড়ায় পথি মধ্যে ভ্যান আটকায় পাক বাহিনী।সবাই যেন সুরে মাতাল বাজনার ঝনঝনানীতে দিশেহারা।পাকিদের বন্দুকে নলটি ফুলীর কপালে।

-হেই..এ পাকিস্হান,মুসলমানের দেশ গান বাজনা হারাম তুম নেহি জানতে?তুম হিন্দু অর মুসলমান?

-মুসলমান,

-বহুত সুন্দর তুম,কিয়া নাম হে তোমারা?

ফুলীর দেহের চার দিকে এক পাকি সৈনিক ঘুড়ে ঘুড়ে কথাগুলো বললো।ফুলির অন্তরে ক্ষোভ জমতে থাকে কিছুই করার নেই রাজ্য এখন ওদের দখলে।

-কি য়া বাত হে তুম নাম নেহি বলেঙ্গা,ঠিক হে…..

 

চলবে…

৯৫৭জন ৯৫৭জন
0 Shares

৩১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ