
আমার অনেক লেখায় বলে আসছি, যে কোন মহামারী বা দূর্যোগে মানুষের কাছে দুটি ঝুঁকি থাকে। তারমধ্যে যে কোন একটি ঝুঁকি বেঁছে নিতে হয়।
(১) জীবন।
(২) জীবিকা।
বিশ্বের সকল দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও জীবিকার ঝুঁকি বেঁছে নিতে বাধ্য হয়েছে। সব দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখার মূল হাতিয়ার হচ্ছে, শিল্প ও কল-কারখানায় উৎপন্ন করনঃ, রফতানী করনঃ, কর্ম ব্যাবস্থা সচল রাখা, রেমিট্যান্সের মাধ্যমে জিডিপি বৃদ্ধি সহ নানান মূখী কর্মকান্ড। যে দেশের পণ্য যত বেশী রফতানী হবে সেই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তত চাঙ্গা হবে। বিগত কয়েক মাস কোভিড-১৯ ভাইরাসের কারনে গোটা বিশ্ব স্থবির হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপন, কল-কারখানা, আমদানী-রফতানী, আভ্যন্তরীন রাজস্ব আদায় সহ নানান কর্ম কান্ড।
বিশ্বের সব দেশ তাদের চলমান গতি বন্ধ করে লকডাউন দিতে বাধ্য হয়েছে। বাংলাদেশও টানা ৬৮ দিন লকডাউন নামক সাধারন ছুটি পালন করেছে। যার উদ্দেশ্য ছিলো মানুষ ঘরে থাকবে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাহিরে কেউ যাবে না। আমি যতটুকু দেখেছি বিশ্বের কোন দেশই লকডাউনে স্বাভাবিক অবস্থায় থাকেনি। আর এটা সম্ভবও না। কারন মানুষ এমন পরিস্থিতির স্বীকার অতীতে কখনই হয়নি বা অভ্যস্ত নয়। এখানে রাষ্ট্রের কিছুই করনীয় নেই। অনেকে হয়তো বলবেন আমাদের দেশে কারফিউ বা সান্ধ্যআইন জারী হলো না কেন? তার উত্তর আপনার কাছেই। যে সব দেশ কারফিউ দিয়েছে সেসব দেশ কি আক্রান্ত থেকে রক্ষা পেয়েছে? তার প্রমান আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত।
বৈশ্বিক এই দূর্যোগে সকল রাষ্ট্রের অর্থনীতি তলানীতে। এখানে উন্নত বা অনুন্নত সব দেশই তাদের লেবেল অনুযায়ী অর্থনীতেতে বড় রকমের ধাক্কা খেয়েছে। বাংলাদেশও তার বাহিরে নয়। যার কারনে সব দেশ বাধ্য হয়ে অর্থনীতিকে পুনারায় সচল বা চাঙ্গা রাখতে বিশেষজ্ঞদের মতামতে লকডাউন শিথিল করেছে। আমাদের রাষ্ট্রও সবার সাথে তাল মিলিযে হাঁটছে। লকডাউন শিথিলের পর স্বাভাবিক জীবন ও কর্মব্যাস্তায় সব রাষ্ট্রই স্বাস্থ্য বিধি দিয়েছে। আমাদের দেশেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার উপদেশ দেয়া হয়েছে।
আমাদের দেশে দুটি পথ খোলাঃ
======================
(১) সচেতনতা।
(২) Herd Immunity.
লকডাউন তুলে দিয়ে সরকার ঘোষিত প্রজ্ঞাপন বা বিধিনিষেধ জারীর পর আমাদের দেশের মানুষ যেভাবে চলাচল করছে তাতে মনে হচ্ছে আমরা Herd Immunity এর দিকে হাঁটছি।
এবার আসুন জেনে নেই- Herd Immunity কি?
Herd Immunity হচ্ছে দেশের মোট জনসংখ্যার ৭০% লোক আক্রান্ত হতে হবে। সবাই এই ভাইরাসটি শরীরে বহন করবে।আমাদের দেশে মোট জনসংখ্যা যদি ১৭ কোটি হয় তবে প্রায় ১২ কোটি লোক আক্রান্ত হতে হবে।আবার এই ৭০% লোক আক্রান্ত হলে তার ১-৩% লোক মারা যাবে। সেই হিসেবে প্রায় ২২-২৪ লক্ষ লোকের মৃত্যুবরন করতে হবে। যা দীর্ঘমেয়াদী সময় ধরে চলবে। এইভাবে আমাদের Herd Immunity তৈরী হয়। সোজা কথা মরে বেঁচে যা থাকে।
এখন কথা হচ্ছে আমরা জনগন যদি সত্যি সত্যি জীবিকার ঝুঁকি নিয়ে Herd Immunity স্বেচ্ছায় বেঁছে নেই তবে রাষ্ট্রের কিছুই করার নেই। কারন রাষ্ট্র বলেনি এই পথে হাঁটতে। আমার এতটুকু লেখা পড়ার পর জ্ঞানীরা বলবেন যে,সরকারই বাধ্য করেছে এই পথে হাঁটতে। এই হলো না কেন? এটা করলো কেন? ইত্যাদি ইত্যাদি। মনে রাখবেন কোন সরকারই চায় না তার জনগন কোন মহামারীতে মৃত্যু বরন করুক। আর যদি আমরা Herd Immunity বেঁছে নেই তবে আমাদের দেশে স্বাস্থ্য সেবা দেবার জন্য কোন চিকিৎসকও খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রতিদিন শুধুমাত্র নিউিইয়র্কে ২০০০-২২০০ লোকের মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে হিমশিম খেতে হয়েছে। প্রাশ্চত্য দেশগুলির দিকে তাকালে স্পষ্ট বুঝা যায়। সে তুলনায় আমাদের স্বাস্থ্য সেবার মান ও আয়োজন নেই বললেই চলে।
প্রতিটি নাগরিক যদি সচেতন না হয় তবে আমরা নিজেরাই দায়ী থাকবো এই কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশকে মহামারীর দিকে ঠেলে দিতে। গত দুইদিন ধরে গণপরিবহনে জনসাধারনের যে সচেতনতার অভাব দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে আমরাই Herd Immunity বেঁছে নেবার পক্ষে।
হয় সরকারকে কঠোর হতে হবে। লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ রাখতে হবে। গণপরিবহনে যাত্রীদের সতর্কতার সহিত যাতায়ত করতে হবে দূরত্ব বজায় রেখে বাধ্যতামূলক মাস্ক পড়তে হবে। নতুবা যে ভাবে চলছি তাতেই আক্রান্ত হয়ে ডাক্তার ও হাসপাতালে ঘুরে যে বাঁচার সে বেঁচে যাবে। বাকিরা মারা যাবে। যিনি সচেতন হবেন তিনিই এই প্রাণঘাতী ভাইরাস থেকে রক্ষা পাবেন।
আমাদের দেশে যখন থেকে সাধারন ছুটি ঘোষনা দেয়া হয় তখন কোভিড-১৯ ব্যাপক হারে সংক্রমিত হয় নাই। ১ মাস ধৈর্য্য
ধরে সচেতন থাকতে পারলে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে আমরা কোভিড-১৯ এর সংক্রামন থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকতাম। সেটা করতে পারিনি বলে আজ আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
সবাই ভাল থাকুন। সুস্থ্য থাকুন।
আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন।
আমীন।।
২৩টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োচিত আলচনা।
সহজ করে যদি বলি আমারা নিজের পায়ে নিজে কুড়াল বসাতে পছন্দ করি।
ভাল-মন্দ বা কোন বুদ্ধি-পরামর্শ আমরা নিতে ইচ্ছুক নই। সাধারণ উদাহরণ দিচ্ছি, যে কোন দোকানে গেলে ক্রেতা গায়ে গা লাগিয়ে
অহেতুক দাঁড়াচ্ছে, অনেকের মুখেই মাস্ক নেই। সব বাদ দিচ্ছি, কী ভাবে এই অবস্থার উত্তরণ হবে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।
শামীম চৌধুরী
সঠিকটিই বলেছেন ভাইজান। আমরা নিজেরা সচেতন না হলে জীবনের মায়া না থাকলে জীবনাবসানেরর ঝুকি বাড়বেই। আমাদের মতন অল্প সংখ্যক মাত্র সতেরা কোটি লোক ও ছোট ভূখন্ড হিসেবে দুই মাস ছুটির দরকার হতো না। যদি আমরা সচেতন হতাম। এখানে সরকারের কোন দোষ নেই। সহসা আমরা করোনা থেকে মুক্ত হবো না।
ভাল থাকবেন ভাইজান
ইঞ্জা
কারফিউ বিষয়ক আপনার মন্তব্যের সাথে আমি একমত হতে পারছিনা ভাই, কারণ বর্ত্মান পরিস্থিতিতে কারফিউ বেস্ট অপশন হতে পারে আক্রান্তের হার কমানো এবং আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য, নাহলে হার্ড ইমিউনিটির দিকে গেলে আপনি নিজেই বললেন ২০/২৪ লক্ষ মানুষ মারা যাবে, এর অর্থ হলো ম্যাসাকার হয়ে যাওয়া, আমরা নিশ্চয় তা চাইবোনা?
শামীম চৌধুরী
কারফিউ দিয়ে মানুষ আটকানো যায় না। আর এই কারফিউও আমাদের দেশের লোকজন ভঙ্গ করবে। জেনেভা আইনে এমন সব কারফিউ ভঙ্গকারীকের আপনি গুলি করতে পারবেন না। বনঞ্চ কারফিউ আরো প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। যেমন সেনাবাহিনী হয়েছে। আমাদের দেশে মানুষের শেষ ভরসার জায়গা হলো সেনাবাহিনী। আমরা আবালরা মনে করি সেনাবাহিনী থাকলে সব সুষ্ঠ ভাবে চলবে। কিন্তু সাধারন ছুটিতে সেনাবাহিনীকে কেউ আমলে নেয়নি। তার একটিমাত্র কারন সেনাবাহিনী অন্য সময়গুলির মতন জনগনকে প্রতিহত করার মতন মেজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নেই। সুতারাং আমরা যদি সচেতন না হই তবে দেশের জনগন হার্ড ইম্যুনিটির দিকেই যাবে।
ধন্যবাদ ভাইজান।
ইঞ্জা
দেখা যাক ভাই কি হয়, শুধু দোয়া করি যেন আল্লাহ আমাদের রক্ষা করেন।
জিসান শা ইকরাম
জীবিকার জন্য মানুষকে বাইরে বের হতেই হলো। আমাদের দেশের জন্য দীর্ঘদিন মানুষকে ঘরে রেখে চলা কঠিন। কার্ফু দিলেও মানুষ ঘরে থাকবে এমন নিশ্চয়তা নেই। কেউ বের হলে কার্ফুর কারনে গুলি করা সম্ভব না আসলে।
দরকার সচেতনতা। কিন্তু এটিরই অভাব আমাদের। বাইরে বের হলে আমি যতই সামাজিক দুরত্ব মেনে চলি, অন্য লোকজন কাছে ঘেষে দাঁড়ায়। এর মধ্যেই বেঁচে থাকতে হবে। মেনে নিতে হবে এই অবস্থাকে।
অত্যন্ত ভালো একটি পোস্ট দিলেন ভাই।
শুভ কামনা।
শামীম চৌধুরী
আপনার সাথে একমত পোষন করছি ভাইজান।
প্রদীপ চক্রবর্তী
জীবন,জীবিকার তাগিদে সবাইকে বের হতে হচ্ছে।
কিন্তু গত দুদিন ধরে যানবাহনে যাত্রী চলাচলের যে অবস্থা এ থেকে কি আশা করা যায় তা কেউ মনে হয় বলতে পারবেনা।
হয়তো ভয়াবহ এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে চলছে।
সরকারকে আরও কঠোর হওয়া দরকার ছিলো পূর্বে থেকে। এখন প্রায় সারাদেশে অসচেতনতায় যাত্রী চলাচল করছে।
মানুষ প্রথমে সামাজিক সচেতনতা কিছু মানলেও এখন তা মানছে না।
অনেকেই বলছে যা হবার হবে।
আগে খেয়েদেয়ে মরি।
.
সাধুবাদ,দাদা।
সমসাময়িক সচেতন বিষয় নিয়ে লেখার জন্য।
শামীম চৌধুরী
দাদাভাই। শুধু বাংলাদেশই নয় জীবিকার তাগিদের বিশ্বের সব দেশকেই বের হতে হয়েছে।
ধন্যবাদ দাদা ভাই।
সুপায়ন বড়ুয়া
জীবন আর জীবিকা অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। মানুষ
সচেতন থাকতে পারলে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে আমরা কোভিড-১৯ এর সংক্রামন থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকতাম।
কিন্তু মানুষ কেন জানি বিপদকে আলিঙন করছে সেচ্ছায়।
কারফিউ দিয়ে মানুষ আটকানো যায় না। অমানবিক ভাবে গুলি চালাতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
শামীম চৌধুরী
দাদা আপনার সাথে একমত।
আপনিও ভাল থাকুন।
আরজু মুক্তা
গরীব রাষ্ট্র!
নিজেরাই সচেতন হই। এছাড়া উপায় নাই
শামীম চৌধুরী
সচেতনতাই বেঁচে থাকার পথ।
পার্থ সারথি পোদ্দার
বাস্তবধর্মী বক্তব্য আপনার লিখনির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।উচ্চবিত্তের কথা নাই বা বললাম।সত্যি কথা বলতে আসলে আমাদের দেশের নিম্নবিত্ত,মধ্যবিত্ত মানুষ ঘর ছেড়ে বাহিরে আসছে বাধ্য হয়েই জীবিকার তাগিদে।অর্থনৈতিক মন্দাভাবের প্রভাব যখন ঘরের চুলার হাড়ি পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে,সে যে কি নিদারুণ কষ্ট তা ভুক্তভোগী ভাল বলতে পারবে।
শামীম চৌধুরী
হুম। তারপরও সচেতনতা থাকতে হবে। বাঁচতে হবে।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সময়োচিত পোষ্ট দিলেন ভাইয়া। Herd immunity ছাড়া কোন উপায় নেই। বেঁচে থাকার তাগিদে বের হতেই হবে। সৃষ্টিকর্তা জানেন কার কিভাবে কোথায় মৃত্যু। তাই যতক্ষণ বেঁচে আছি লড়াই করতে হবে মৌলিক চাহিদার জন্যই। ভালো থাকুন সবসময় শুভ কামনা রইলো
শামীম চৌধুরী
জীবনটা এখন লটারীর ভাগ্য হয়ে যাবে।
কামাল উদ্দিন
দুটি বিষয়ের একটি বেছে নিতে বললে এই সময়ে আমি ২য়টি বেছে নিতে চাই। কিন্তু আমাদের দেশে যদি করোনা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে বিশ্ব আমাদের ভয়কট করে আমাদের জীবনটা বিষিয়ে তুলবে। সতয়িই বেশ জটিল।
শামীম চৌধুরী
আমরা হার্ড ইম্যুনিটিতে হাটলে বিশ্বের কোন দেশ আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখবে না।
যতদিন ভেকসিন বের না হবে।
তৌহিদ
দারুন একটি পোষ্ট দিয়েছেন ভাই। লকডাউন থাকবে, আবার জীবিকার তাগিদে বাইরে যেতেই হবে। সমস্যা হলো আমরা ঘাড়ত্যাড়া স্বভাবের অনেকেই। নিয়মকে অবজ্ঞা করা অভ্যেস। অথচ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এমনটা হতোনা। অন্তত আক্রান্ত কম হতো।
ভালো থাকুন ভাই।
শামীম চৌধুরী
জ্বী ভাইজান। তবে আমরা সেটা মানতে চাই না।
মাহবুবুল আলম
“লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ রাখতে হবে। গণপরিবহনে যাত্রীদের সতর্কতার সহিত যাতায়ত করতে হবে দূরত্ব বজায় রেখে বাধ্যতামূলক মাস্ক পড়তে হবে।”
এসব কথা রাষ্ট্র, চিকিৎস, সমাজের সব শ্রেণির বুদ্ধিজীবী প্রতিনিয়ত বলে যাচ্ছে কিন্তু কে শোনে
কার কথা!
ভাল লিখেছে। শুভেচ্ছা জানবেন !
শামীম চৌধুরী
না শুনলে দেশ মহামারীতে ভুগবে।