
নার্গিস রশিদ
ইউরোপ, আমেরিকা, চিন এবং জাপানের দেশ গুলোতে বিবাহর ব্যাপারটাকে নিয়ে নতুন চিন্তাধারা সহ পরিবর্তনের হাওয়া বইতে আরম্ভ করেছে।
বিবাহিত জীবন টা আর কার্যকরী হচ্ছেনা। সম্পর্ক ধরে রাখার মধ্যে জটিলতা আরম্ভ হয়েছে। আর তারেই ফলশ্রুতি স্বরূপ বিবাহ নামক বাবস্থা থেকে পরবর্তী জেনারেশন আকর্ষণ হারিয়ে ফেলছে।
বিয়ে করতে যাওয়ার আগে মানুষ চিন্তা ভাবনা করতে থাকে বিবাহিত জীবন টা কি আনন্দ দায়ক? না তা নয়। এতে জড়িয়ে আছে সংসারের বোঝা টানার জন্য টাকার বাবস্থা থাকা, বিরাট দায়িত্ব টানার জন্য থাকতে হবে শক্তিশালী মন এবং শারীরিক ও মানষিক ক্ষমতা।
“ এবং তারা একে অপরকে পছন্দ করিয়া ফেলিলো, বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইয়া সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে আরম্ভ করিলো “ এই রূপকথার বাক্য আর বাস্তবে খাটেনা । লেখক পরবর্তী অধ্যায় লিখে যায়নি “তারপরে সুখ শান্তির অবসান হইলো” ।
এই ভাবেই হয়তো সমাজ বাবস্থার পরিবর্তন হয়। যা চারশত বছর আগে প্রচলিত ছিল সেই নিয়ম কানুন এখনকার সমাজে পুরানো এবং অচল।কিন্তু যখন প্রথম যা কিছুই আরম্ভ হয় না কেন “ জাত গেলো জাত গেলো “ বলে কানা ঘুষা চলতে থাকে।
যে সব কারন উত্থাপন হচ্ছে পরবর্তী জেনারেশন দ্বারা ঃ
.) একটা মেয়ে কে পাশ্চাত্য দেশে ছেলেটার মতোই সংসারের সব খরচ ভাগা ভাগি করে বহন করতে হয়। আবার তাকেই শিশু গর্ভ ধারণ, জন্ম দান, লালন পালন সহ পরিবারের ভিতরের দায়িত্ব কাঁধে নিতে হয়। দুই দিক সামলানো একজন মানুষের জন্য একটা কষ্টকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় । “ দুই জন কেই অর্থ দিতে হবে “ বিষয়টি পাশ্চাত্য দেশ গুলোতে প্রাকটিস হয় ।
মেয়েরা এই দুই বোঝা টানার হাত থেকে সরে দাঁড়াতে চাচ্ছে ।
.) নতুন আইন ঃ সন্তান হওয়ার পর যদি কোন কারণে বিয়ে ভেঙ্গে যায় তবে তাদের দুজনের করা বাড়ি ,সন্তান ১৮ বছর হওয়া অবধি মা সহ থাকতে দিতে হবে এবং সন্তানের ভরণপোষণ চালাতে হবে। এই আইনের কারণে ছেলেরা সংসার করতে ভয় পায়। বাড়ি ছাড়া হওয়ার ভয়ে। এই সব দেশে আইন আইন। আইন মানতেই হবে। বিবাহ বিচ্ছেদের হার খুব বেশী । বিচ্ছেদ এর ভয় থেকে বিয়ের প্রতি আকর্ষণ থাকেনা।
.) নতুন যুগে দায়িত্ব নেয়ার ভয়ে পুরুষরা যদি বিয়েতে আগ্রহ না দেখায় তবে কেমন করে বিয়ে হবে।
.) একটা মেয়ে একটা ছেলের মতোই নিজের ক্যারিয়ার গড়ার জন্য পরিশ্রম করে নিজেকে তৈরি করে। কিন্তু সেই ক্যারিয়ার গোড়তে বাধা সৃষ্টি হয় সন্তান লালন পালন করতে গিয়ে ।ছেলে টা ঠিকই প্রমোশন পেতে পেতে উপরে উঠতে থাকে । আর মেয়ে টা পারেনা।
.) তাদের মতে সন্তান নেয়া এবং পরিবার গঠন করা একটা “Laif Long responsibility” , এটা একটা খেলা নয়,
এটা একটা সিরিয়াস ব্যাপার।” একবার যখন কেউ সন্তান জন্ম দিয়ে পৃথিবীতে নিয়ে আসলো কিন্তু ভালো পরিবেশ দিতে পারল না তা হোলে কেন তাদের কে দুনিয়াতে নিয়ে এসে কষ্ট দেয়া?
অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান চিকিৎসার বাবস্থা , শিক্ষার বাবস্থা করার ক্ষমতা নাই অথচ তারাকে পৃথিবীতে নিয়ে এসে তাদের কে কষ্টে ফেলা আর কষ্ট চেয়ে চেয়ে দ্যাখা এটা কি কোন দায়িত্ব বান বাবা/মার কর্তব্য হতে পারে?
.) অভিভাবক রা মনে করে বিয়ে দিয়ে মেয়েটাকে একটা নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করে দেয়া হল। নিজেদের মৃত্যুর পর সেই তাকে নিরাপত্তা দিবে। কিন্তু পরবর্তী জেনারেশনের মতে, একটা দেশ যদি মেয়েদের নিরাপত্তা বেষ্টনী দিতে পারে তা হোলে পুরুষের কাছ থেকে আসা বিপদ গুলো তো আর আসবেনা।
.) বংশ রক্ষা করার জন্য সন্তান দরকার, এই নীতি নেক্সট জেনারেশনের কাছে আর গ্রহণ যোগ্য নয়। তাদের মতে পৃথিবীতে যতো মানুষ দরকার তার চেয়ে অনেক মানুষ হয়ে গেছে, এখন আমাদেরকে ক্ষান্ত দাও।
.) তাদের যুক্তি পরিবেশ রক্ষা করা এবং Naturalist Devid Attenborough এর উক্তি ফলো করা । আর সেই বিখ্যাত উক্তি হল “ আমার জন্মের সময় ২ বিলিয়ন মানুষ ছিল পৃথিবীতে, এখন ওভার ৭ বিলিয়ন। ওভার পপুলেসান পরিবেশ রক্ষার জন্য হুমকি স্বরূপ । যখন নারী জাতী শিক্ষিত হবে,নিজের বডিকে কন্ট্রোল করতে সক্ষম হবে, নিজের জীবনকে নিজের ইচ্ছা মতো গোছাতে শিখবে, তখন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষা পাবে “ ।
.) তাদের মতে, বিয়ে করা বা না করা যার যার বাক্তি গত সিধ্বান্ত ।এবং এই সিদ্ধান্ত কে সন্মান দেয়া শিখতে হবে।
.) নেক্সট জেনারেশনের কাছে বিয়ে একটা “ পুরানো পদ্ধতি” ( Back Dated )। তারা বলে তোমাদের ব্যাক গ্রাউনড আমাদের ব্যাক গ্রাউন্ড নয়। তোমাদের ইচ্ছা অনিচ্ছা আমাদের ইচ্ছা অনিচ্ছা নাও হতে পারে।
নারী বান্ধব দেশ গুলোতে মেয়েরা শতভাগ নিরাপদ জীবনেই থকতে পারে। অফিস আদালতে, ট্রেনে বাসে, রাস্তা ঘাটে মেয়েরা নিরাপদেই থাকে ।
.) নতুন জেনারেশনের দর্শন “ নারী মানেই যে সন্তান ধারণ করতে হবে এই ধারনা ঠিক নয়। বিয়েটাও তাই। পাশে একটা পুরুষ নিয়ে জীবনের সংজ্ঞা তৈরী করতেই হবে এর মানে নেই” ।
একটা মেয়ের জীবন ভালো ভাবেই নিরভিগনে চলতে থাকে বিয়ের আগ পর্যন্ত। দ্যাখা যায় যতো অপমান, আবমাননা আসে বিয়ের পর ।
নিজের কোন মতামত থাকেনা, সিধধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়না, যৌতুকের বলি হওয়া ,মাথা নেড়া করে দেয়া, গায়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা সব আরম্ভ হয় বিয়ের পর। বিয়ে করার পরিমাণ যদি এই হয়, কোন শিক্ষিত, নিজের পায়ে দাঁড়ান মেয়ে এই দিকে অগ্রসর হতে সাহস পাবে ? সমস্যা গুলো এই খানে।
বিয়ে হওয়া মানে একটা সঙ্গী পাওয়া অনেকে বলে থাকে। ভালো সঙ্গী হওয়ার গ্যারান্টি কে দিবে?
ইতিহাস থেকে দ্যাখা যায় শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মেয়েরা সমাজে সাফার করে আসছে। মধ্য যুগে গ্রিস, ইটালি, চিন , খোদ এই ওয়েস্টেটার্ন ইউরোপে মেয়েরা ছিল দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক।
তাদেরকে সন্তান জন্ম দানের ভূমিকায় শুধু থাকতে হতো। অনেক যুদ্ধ করে একটু একটু করে আজ মেয়েরা বর্তমান অবস্থায় আসতে পেরেছে।
কিন্তু এখনোও ভুক্ত ভুগি দক্ষিণ এশিয়া ,মিডলে ইষ্ট ,মধ্য এশিয়া সাউথ আমেরিকা এবং আফ্রিকার মেয়েরা।
নারীরা যতো নিজের পায়ে দাঁড়াবে, নিজেদের অধিকার সম্বন্ধে সচেতন হবে, দেশ গুলো নারী বান্ধব আইন কানুন শক্ত ভাবে প্রচলিত হবে তখন বিয়ে করবো কি করবোনা এই সিদ্ধান্ত তারা নিজেরায় নিতে পারবে।
দেখা গেছে যে সব দেশে নারী বান্ধব পরিবেশ আছে, কঠোর আইন আছে এবং আইনের প্রয়োগ আছে সে সব দেশে বিবাহ জনিত ব্যাপার যেমন, ডিভোর্স , সিঙ্গেল থাকা এইসব স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে গেছে।জীবন যে সংসারে নিরাপদ নয় সেখানে সমাজে দেখানোর জন্য বিবাহিত জীবন চালানো, সেখানকার সমাজ এনকারেজ করে না। তা ছাড়া জোর করে কিছু করা যায়না। “ Force marriage” অর্থাৎ বিয়ের ব্যাপারে জোরাজুরি করা আইন বিরুদ্ধ । নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জীবন চালানো থেকেই যতো মানষিক অসুখের সৃষ্টি। মেয়েদের আত্মহত্যা , depression এবং Anxiety এর পেছনে আছে সংসারের যাঁতা কলে দুর্বিষহ জীবনের কষ্ট ।
উন্নত দেশ গুলোতে নারী এবং পুরুষের মধ্যে Equal Right এবং Equal Oportunity মেনে চলা হয়। পরিবারে, স্কুলে চাকুরী পাওয়ার ক্ষেত্রে সব জায়গাতে। নিজের পায়ে দাঁড়ানো একটা সাধারণ ব্যাপার। পক্ষপাতিত্ব নাই কোথাও। এগুলোর চর্চা একটা মেয়েকে কনফিডেন্স দায় , সুন্দর ভাবে জীবন রচনা করতে সাহস দায়।
অপেক্ষাকৃত গরীব দেশ গুলোতে বিয়েটাকে মনে করা হয় অবশ্য কর্তব্য একটা প্রচলিত প্রথা। যা থেকে বেরুবার পথ নাই। বিয়েটা দিয়ে বাবা/মা মনে করে তাদের কর্তব্য শেষ। তারপর তার কি হল, কি ভাবে জীবন যাচ্ছে সে দিকে খুব কমই নজর দেয়া হয়। মারামারি পূর্ণ সংসার হলেও তা মেনে নিতে বলা হয়। অনেক ক্ষেত্রে বলা হয় সব অত্যাচার মেনে নেয়াই মেয়েদের কাজ। মানলে সে ভালো না মানলে সে সংসার করতে জানেনা।
তা ছাড়া একটা মানুষ জীবনে কি চায় না চায় তা বুঝে উঠার আগেই তাকে ঠেলে দেয়া হয় সংসারের গ্যাঁড়া কলে ।
পরবর্তী জেনারেশানের যুক্তি , এগুলো হল মধ্য যুগিয়ো বর্বরতা । এ থেকে মানুষ পরিত্রাণ পেতে চায়। সব কিছু একটা শেষ সীমা আছে। মেয়ে দের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদের কে নিঃশেষিত করা হয়।
বংশ ধরে রাখা, সম্পত্তির উত্তরাধিকারি করা, বুড়ো বয়সে দেখভাল, অবসর জীবনে সন্তানের অর্থে চলা এগুলো ওয়েলফেয়ার দেশ গুলোতে দরকার পড়েনা।
বাবা/মার সম্পত্তির আশায় তারা বসে থাকেনা।সম্পত্তি সন্তান দের জন্য রেখে যেতে হবে এই নীতির প্রচলনও তেমন নাই এখানে। সবার জন্য পেনশন আছে। মানসম্পন্ন নার্সিং হোম আছে ।
অতি গরীব শ্রেণীর সম্পত্তিই নাই তাই কি সে রেখে যাবে?
বিবাহ এবং পরিবার গঠন এর ইতিহাস থেকে জানা যায় বিভিন্ন সময়ের পারীপারষীক অবস্থার উপরে এর পরিবর্তন নির্ভর করে। আদিকালে বিবাহ প্রথা ছিলনা। তারপর এলো দলগত বিবাহ। সন্তানাদি দলগত ভাবে বড় করা হতো।
যখন কৃষি যুগ আরম্ভ হল ,মানুষ এক জায়গাতে স্থায়ী হল, দরকার পড়লো জমিজমা। এই জমি মৃত্যুর পর শুধু মাত্র নিজস্ব সন্তান কে দেয়ার জন্য কোন গুলো নিজস্ব সন্তান তা জানার দরকার পড়লো ।সন্তান চিহ্নিত করার জন্য চিহ্নিত মা থাকা প্রয়োজন পড়লো । এই প্রয়োজনেই বিবাহের মাধ্যমে নারী পুরুষ সংসার আরম্ভ করলো।
তা ছাড়া কৃষি কাজে সাহায্যের জন্য প্রচুর লোকবলের দরকার পড়তো এই জন্য নিজেদের সন্তান লাগতো এই লেবার ফর্স এ যোগদানের জন্য। বেশি সন্তান মানেই বেশি করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ।
এই ভাবেই বিভিন্ন যুগে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সগোত্র বিবাহ, আসবর্ন বিবাহ, সম্মতি সাপেক্ষে বিবাহ, বলপ্রয়োগ বিবাহ, এক বিবাহ এবং বহু বিবাহ, বহু পতিত্ব বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, একান্নবর্তি পরিবার, নিউক্লিয়ার পরিবার, সিঙ্গেল মাদার পরিবার, বিবাহ করা না করা কে নিজস্ব ইচ্ছার মধ্যে ফেলা এবং এখন বিবাহ নামক বাবস্থাকে পরিহার করা শুরু হতে যাচ্ছে।
অনেক বিবাহ আবার কিছু বছর থাকার পর বিচ্ছেদে রূপান্তরিত হয়ে দুজনের মধ্যে সন্তান দেখাশুনা এবং বন্ধুত্ব চালিয়ে যাওয়ার নিয়ম চালু হচ্ছে।
এটাও হয়তো একবিংশ শতাব্বদির নতুন কোন পথ দেখাবে সমাজকে ।
বিয়ের প্রবণতা হ্রাস পাওয়ার একটা মূল অর্থনৈতিক কারন হল মহিলাদের আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর হওয়া। এর কারন সভ্যতার আদিম স্তরে নারী ছিল অসহায়। তাকে পুরপুরি ভাবে পুরুষের উপরে নির্ভর করতে হতো। কিন্তু আধুনিক সভ্যতা তাকে নিজস্ব উপার্জনের বাবস্থা করে দিয়েছে। দিয়েছে শক্তিশালী নিরাপত্তার বেষ্টনী।
এই আর্থিক কারন ছাড়াও নারী এবং পুরুষ উভয়ই বিয়ে করতে কম আগ্রহী । সমাজ বিজ্ঞানী Edward Westmark এর মতে “ সাধারণ ভাবে শিল্প – সংস্কৃতির প্রসার, বাণিজ্যের প্রসার, শিক্ষাদীক্ষা এবং সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি ইত্যাদির ফলে নারী এবং পুরুষের জীবন সম্পর্কে ধারনায় বদলে গেছে। তাদের চাহিদা বেড়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিত্যনতুন আরাম দায়ক সুখস্বাচ্ছন্দ্য বেড়েছে। এই চাহিদা বৃদ্ধির ফলে তাদের বিবাহিত জীবনে পারস্পরিক আদান প্রদানও কমে গেছে। আগের মতো ঘরের মধ্যে গণ্ডি বদ্ধ জীবন যে জীবন নয় সেটা তারা বুঝে গেছে। স্বাধীন জীবনে যে সুখ সুবিধা তা যে বিবাহিত জীবনে পাওয়া যায় না সেটার উপলব্ধি ঘটেছে” ।
Tourism Industry এর সহজলভ্যতা , দ্রুত বিস্তার এর বাবস্থা যখন বৃদ্ধি হল এবং এর আনন্দ দায়ক ফলাফল যখন মানুষ বুঝতে শিখল, মানুষ কে আর আবদ্ধ রাখা সম্ভব হলনা।
তাদের যুক্তি বিয়ে করাটা যার যার ইচ্ছার ব্যাপার। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না থাকা মানে মরালীটি থেকে সরে গেছে বা তারা মরালী করাপ্ট ( Morally Corrupt) তা নয়। তারা কে ঢালাও ভাবে খারাপ মানুষের মধ্যে ফেলা মোটেও উচিৎ নয়।
এই হল তাদের যুক্তি।
এই ভাবেই হয়তো সমাজের পরিবর্তন হয়। ভবিষ্যতই বলে দিবে কি হবে। মানুষ যা করে সেটায় সমাজ। মানুষ সমাজ কে বদলায়, সমাজ মানুষ কে বদলায় না। সমাজ তার নিজের গতিতেই চলে।
১২টি মন্তব্য
রোকসানা খন্দকার রুকু
বিয়ের প্রতি আগ্রহ হারানোর সকল কারন আপনি বিষদ বর্ননা দিলেন। আমি যতোই যোগ্যতাসম্পন্ন হই না কেন শেষ বিকেলের জানালাটা আমাকেই লাগাতে হবে, দুজনে অফিস যাবো তবু আমাকেই রান্না করতে হবে, তাকে খাবার তুলে দিতে হবে! এসব আসলেই বাড়তি বোঝা একটা মেয়ের কাছে। তারও তো বিশ্রাম দরকার হয়?
এছাড়া চিরাচরিত নিয়ম যৌতুক, নির্যাতন, কটুকতি, দূর্বব্যবহার, এসিড, আগুন এসব তো আছেই।
মেয়েরা যখন দ্যাখে তার মর্যাদা, সঠিক সম্মান, দেয়া হয় না তখনই সে বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নেয়।
ছেলেদের চিরাচরিত ধ্যান ধারনা থেকে বেডিয়ে আসা জরুরী না হলে সমস্যা বাড়তেই থাকবে।
শুভ কামনা সবসময়।। ভালো থাকবেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
পুরো পোস্ট পড়তে পড়তে অনেক গুলো বিষয় নিয়ে ভাবলাম, অবশ্যই মুল বিষয়টি মাথায় রেখেই।
বিয়েতে অনিহা প্রকাশের পেছনে যেসকল কারণ দেখানো হলো কেন যেন সব মেনে নেওয়া গেলো না।
বাচ্চাদান/পালনে ঝামেলা(!?), ভবিষ্যত ক্যারিয়ার গঠনে বাধা, দায়িত্ব পালনের প্রতি ভয় (!), নির্যাতিত হওয়ার আশংকা ইত্যাদি ইত্যাদি। তো বুঝা গেলো বিয়ে নামক চুক্তি(?) টা বাতিল হলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে! মানুষ নির্বিঘ্নে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।
এখন প্রশ্ন হলো, বিয়ের প্রচলন কি আদিম যুগ থেকেই এসেছিলো? উত্তর হলো, অবশ্যই না।
মানুষ যখন থেকে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো এবং নিজ নিজ প্রয়োজনে সামাজিক পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করছিলো, তখনই তারা বিভিন্ন রীতিনীতি সম্বলিত একেকটা নিয়ম আবর্তন করেছিলো।
যেটা দিয়ে একটা সুশৃঙ্খল জাতিতে নিজেদের সমাজকে উন্নিত করা যেতে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিয়ের প্রচলিত শর্ত গুলোও সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্যেই আরোপিত হয়েছিলো/হচ্ছে।
পৃথিবীর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অনেক কিছুতে অনেক ধরনের নিয়ম, রীতিনীতির পরিবর্তন হয়েছে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে। কিন্তু বিয়ের প্রধান শর্ত/চুক্তি গুলো কিন্তু প্রায় একই আছে। কারণ কিছু নিয়ম প্রাকৃতিক ভাবেই তৈরী হয়, আর প্রকৃতিতে বদলাতে চাইলে এর কুফল ভোগ করতে হয়।
বিশ্বের রোল মডেল ধারক দেশগুলোর মধ্যে ইউরোপ, আমেরিকা, চীন, জাপান অন্যতম। তাই আমরা তাদের দিকে সারাক্ষণ তাকিয়ে থাকি, তারা যা করে চেষ্টা করি সেসব কিছু হুবহু মনেপ্রানে ধারণ করতে। এগুলো তারাও জানে, তাই যখন যা খুশি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরে।
❝তাদের যুক্তি পরিবেশ রক্ষা করা এবং Naturalist Devid Attenborough এর উক্তি ফলো করা । আর সেই বিখ্যাত উক্তি হল “ আমার জন্মের সময় ২ বিলিয়ন মানুষ ছিল পৃথিবীতে, এখন ওভার ৭ বিলিয়ন। ওভার পপুলেসান পরিবেশ রক্ষার জন্য হুমকি স্বরূপ । যখন নারী জাতী শিক্ষিত হবে,নিজের বডিকে কন্ট্রোল করতে সক্ষম হবে, নিজের জীবনকে নিজের ইচ্ছা মতো গোছাতে শিখবে, তখন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষা পাববে❞
হাহাহাহা, এমনিতেই অনেক বড় কমেন্ট দিয়ে ফেলেছি, আর বড় করা ঠিক হবে না। তবে একটা উদাহরণ দিতেই হচ্ছে, এইটুকুর জন্যে..
❝বংশ রক্ষা করার জন্য সন্তান দরকার, এই নীতি নেক্সট জেনারেশনের কাছে আর গ্রহণ যোগ্য নয়। তাদের মতে পৃথিবীতে যতো মানুষ দরকার তার চেয়ে অনেক মানুষ হয়ে গেছে, এখন আমাদেরকে ক্ষান্ত দাও❞
কোথায় যেন পড়েছিলাম, পৃথিবীতে একটা দেশ আছে, সেই দেশের সরকার নিয়ম করেছিলো প্রতিটি পরিবার শুধু একটা করেই সন্তান জন্ম দিতে পারবে। তারপর বহুবছর পরে সেই দেশের সরকার সহ অন্যান্য পৃথিবীবাসীরা দেখতে পেলো ঐ দেশের মোট জনসংখ্যার তিনভাগই বৃদ্ধ! এমনকি তাদের দেখাশোনা করার জন্য নিজের একমাত্র সন্তানকেও কাছে পাচ্ছেন না!
এটা কোন দেশের ঘটনা মনে পড়ছে না, তবে তালিকায় থাকা ইউরোপ, আমেরিকা, চীন, জাপানের মধ্যেই।
ভালো থাকবেন ম্যাম, শুভ কামনা অবিরাম 🌹🌹
নার্গিস রশিদ
সহ মত । কিন্তু এগুলো তো আমার নয়। এগুলো তাদের মত। আমি যা দেখছি সে অভিজ্ঞতা থেকেই লেখার চেষ্টা করেছি। তারা যা যুক্তি দেখাচ্ছে সে গুলোই তুলে ধরেছি। শতভাগ মানুষ যে এই ফর্মুলা ফলো করবে তাতো তারা বলছে না। যে ফ্যামিলি করতে চাই করবে।
সমস্যা হল এগুলোই চোখের সামনে দেখছি। আমরা চাই বা না চাই । ইউরোপ আমেরিকা যা করছে সে গুলোই যে অনুসরণ করতে হবে তাও বলা হচ্ছেনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
আমরা না চাইলেও আমাদের অনেক কিছু দেখতে হয়, মেনে নিতে হয়,, এটা ঠিক বলেছেন। কিন্তু যা কিছু আমাদের ভালো লাগার নয় সেখানে নিজের মতামত প্রকাশটা আমাদেরই করতে হবে।
অনুসরণ করা আর অনুকরণ করার ব্যাপারটা ভিন্ন। আগে বুঝতে হবে আমি কি চাই, কীভাবে আমার ভালো হবে, এতে যদি পারফেক্ট কাউকে অনুসরণ করে আমার মতো করে ভালো থাকতে পারি সেটাই আমার সফলতা। কিন্তু অনুকরণের ফল সব সময় ভালো হয় না। হয়তো দেখা যাবে ইউরোপ আমেরিকা চীন জাপানের সাধারণ লোকদের মাঝেও এসব গ্রহণ যোগ্যতা পাচ্ছেনা, কিন্তু অনুকরণশীল দেশগুলোতে হাউকাউ লেগে যাবে নিজেদের দেশেও একই নিয়ম আনতে।
আমি এখানে আলোচনা করেছি এইসব আইন/ নিয়ম নিয়ে,এর কুফল নিয়ে।
আপনার মতামতের প্রতি আমার দ্বিমত নেই ম্যাম।
আরজু মুক্তা
আপু জাপান
সাবিনা ইয়াসমিন
@আরজু মুক্তা- ধন্যবাদ, তখন মনে পড়ছিল না।
আরজু মুক্তা
যতই বলুক। বেলা শেষে মিষ্টি নিয়ে ফিরে বাচ্চার হাতে তা দিয়ে যে শান্তি পাওয়া যায়। তা অবিবাহিত থেকে কি পাওয়া যায়?
বরং ছেলে মেয়ে কাজ ভাগাভাগি করে, জীবন এগিয়ে নেয়াই শ্রেয়।
শুভ কামনা আপনার জন্য।
নার্গিস রশিদ
ঘরে ঘরে যে সমস্যা দেখতে পাচ্ছি তাই তুলে ধরেছি। আমাদের হাতে কোন কিছুই নাই। প্রায় প্রত্যেক ফ্যামিলি তে এই কমন সমস্যা। যারা ভুক্তভোগী তারাই বুঝবে। শুভ কামনা ।
নার্গিস রশিদ
নারী ও শিশু সুরক্ষা বাবস্থা গুলো হল যে কোন কারনে বাচ্চা সহ যখন কোন মা একলা হয়ে যাবে তখন তাকে অসহায়ত্ব এর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সরকার থেকে তাকে মাসে মাসে খরচ দেয়া ,বাচ্চার শিক্ষার খরচ বহন, স্বাস্থ্য সেবা বহন, স্কুলে ফ্রি ডিনার এবং থাকার ঘরের বাবস্থা করে দেয়া হয়। এগুলো পেতে কোন বেগও পেতে হয় না।
মোঃ মজিবর রহমান
কোথায় যে সুখ, শান্তি স্থিতি ভালোবাসা হইতো কোন আমলেই ছিলো না। শুধু সব সময় হাহাকার কোথ্আয় না কোথাও লেগে ছিলো /আছে থাকবে এটা আমার বিশ্বাস।
নারী স্বনির্ভর হয়ে কি সুখি হয়েছে?
নারী স্বনির্ভর হয়ে কি ঘরে যখন একাকিত্ব থাকে তখন সুখ নিহিত আছে?
নারী স্বনির্ভর হয়ে ঘরে বাহিরে কি স্বাবলম্বী হয়ে কি শান্তিতে থাকতে পারছে ?
সমাজ/দেশ সবই মানুষের সৃষ্টি কিন্তু কোন সময় /কোন যুগ/ কোন মুহুর্ত কি একে অপরের প্রয়জোন থেকে বাহির হতে পেরেছে?
বসবাসে মানুষের অভ্যাস বলি আর অবস্থা বলি সেখানে কথাকাটাকাটি, ঝগড়া, গন্ডগোল, মারামারি আছে আবার ত্রিপ্তিও আছে। আর এটাই মানব জীবনের অবিছেদ্য অংশ বলেই মনে করি। সবখানেই তৃপ্তি/অতৃপ্তি, শান্তি/অশান্তি, ঘৃনা/ভালোবাসা আদর/অনাদর, আপ্যায়ন/লাথিছাটা বিদ্যমান তবুও মানুষ ভালোমন্দ নিয়েই সহবস্থান।
প্রশ্ন পুরুষ নারী সৃষ্টি করেছে স্রষ্টা কি কারণ-এ ভাবুন, চিন্তা করুন আমি আপনি কোথায় থেকে এলাম সেটাও চিন্তার থেকে বাহির করুন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
পৃথিবীতে সবকিছুর মধ্যেই সমস্যা, জটিলতা আছে। বেশি আছে বৈবাহিক জীবনে সেটা অবশ্যই মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশী। মেয়েরা যাযাবর হয়ে যায় যখন বিয়ের পর সংসারটা এলোমেলো হয়ে যায়। মেয়েদের কোথাও স্বাধীনতা নেই তারপর ও বাবা-মায়ের কাছে অনেকটা নিরাপদ । এই বলয়ে আবিষ্ট থাকে প্রতিটি মেয়ে তাই বিয়ের পর স্বামীর স্বাধীনতা হরন, অত্যাচার, শ্বশুর বাড়ির লোকজন দ্বারা উঠতে বসতে কথা শুনা সহ্য করতে পারেনা। শিক্ষিত মেয়েদের সাবলম্বী হওয়াটা এখনকার ডিভোর্সের জন্য বহুলাংশে দায়ী।ডিভোর্স এখন সামাজিক ব্যাধি হয়ে গেছে। সহনশীলতা, ধৈর্য্য, একে-অন্যকে বোঝার কমতি এসব ও ডিভোর্সের জন্য দায়ী। অনেক সুন্দর পোস্ট। পরিবার ছাড়া কখনোই জীবনের সুখ বোঝা যায় না, পরিবার মানেই সুখ-দুঃখ, মান-অভিমানের খেলা, নতুন জীবনের অঙ্কুর, বন্ধন। ভালো থাকুন নিরাপদে থাকুন
নীরা সাদীয়া
লেখাটাও পড়লাম মন্তব্যগুলোও পড়লাম। টুকটাক বানান ভুল ছাড়া পুরো লেখাটা একটা জ্ঞানের সমুদ্র। খুব ভালো লাগলো। সেই সাথে কিছু মন্তব্যও ছিলো একদম সেরা।