
আমার বাবা বাস্তববাদী তার আবেগ কম। তার যতটুকুই আবেগ আছে তা সহজে কেউ দেখতে পায় না। তার আবেগ লুকানো আবেগ। মুক্তো যেমন ঝিনুকের বুকে লুকিয়ে থাকে ঠিক তেমন। যদিও ছোটবেলার গুন্ডা স্বভাবের এই আমি বাবার লুকানো আবেগটাকেই কাজে লাগিয়ে প্রচুর শপিং করতাম। বাবার পকেট থেকে প্রচুর টাকা নিতাম। যা মনে চায় তাই-ই লাফ দিয়ে কিনে ফেলতাম। আমার বাবা-মায়ের কাছ থেকে শুনেছি ছোটবেলায় আমিও নাকি বাবার মত আমার আবেগ লুকিয়ে রাখতাম।
আমার বয়স তখন ৪/৫ বছর ছিল। ভাবুক প্রকৃতির ছিলাম আমি। আমার আশেপাশের সবকিছু নিয়েই ভাবতাম আমি আর প্রচুর গবেষণা করতাম। আমার কল্পনার রাজ্যে আমার গোপন একটা ল্যাবরেটরি ছিল। আমার ভাবনার বিষয় বস্তু ছিল মানুষ আর গাছপালা। এবং প্রায় সময় সৃষ্টিকর্তা নিজেও। আমি চুপচাপ ভাবতে থাকতাম আমার বাবা-মায়েরা কোত্থেকে আসলো! তার বাবা- মায়ের কাছ থেকে। তাহলে তাদের বাবা-মা কোত্থেকে আসলো! তাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে। এমনি করে অনেক বাবা-মা পৃথিবী আসতে আসতে কোন বাবা-মা পৃথিবীতে সবার আগে আসলো?
বাবাকে জিজ্ঞেস করায় জানতে পারলাম সেই প্রথম বাবাটার নাম আদম। আমি ভাবতে লাগলাম আদম বাবাও কি আমার বাবার মত কালো, নাকি ফর্সা?
এইভাবে অনেক কিছু নিয়ে ভাবনা-চিন্তার পর আমি আমার বাবাকে নানারকম প্রশ্ন করতাম। কিছু প্রশ্নের উত্তরে বাবা শুধু বলতো, “ ধুর! বোকা মেয়ে।”
যেমন আমি একদিন বাবাকে প্রশ্ন করলাম, “ আব্বু। আল্লাহর কি আব্বু- আম্মু আছে? তিনি কি আপনার মতনই অনেক ভালো?”
ছোটবেলার আমি স্বল্পভাষী ছিলাম। একশত বার ডাক দেয়ার পর একবার উত্তর দিতাম। আবেগী ছিলাম না।যদিও আমি এখন আবেগের এক বিশাল কারখানা। আমার কারখানায় এখন রোজ প্রচুর আবেগ উৎপাদন হয়। এখন উনিশ থেকে বিশ হলেই আমি হাও-মাও করে কেঁদে বাড়ি- ঘর এক করি।
তো ছোটবেলায় আমার বাবা আদর করে আমার গালে চুমু দিতে আসলে আমি খুবই বিরক্ত হতাম। চুমু দেয়ার কোন সুযোগই দিতাম না তাকে। কখনো জোর টোর করে বাবা চুমু দিয়ে দিয়ে ফেললে সেটা নিয়ে বিরাট কান্ড-কারখানা ঘটিয়ে ফেলতাম বাড়িতে। তো একদিন সকালে যখন আমি গাছপালার বাবা-মায়েদের নিয়ে ভাবছিলাম ঠিক তখনই বাবা এসে হঠাৎ আমার গালে একটা চুমু দিয়ে দিলেন। আমার গবেষণায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করার জন্য বাবার উপর বিরক্ত হয়ে প্রতিবারের মত ঐবারও আমি গাল থেকে চুমুর স্পর্শ মুছার আপ্রাণ চেষ্টা করলাম।
ঐবার এতো বেশি মুছার চেষ্টা করেছি যে মুছতে মুছতে আমার গাল লাল হয়ে গেছিল ভীষণ। যা দেখে আমার মা-বাবা ভীষণ ভয় পেয়ে গেছিলেন ঐদিন। এখন বড়বেলায় খাবার টেবিলে বসলে আমার বাবা ঐ দিনের কাহিনীটা আমার ভাই-বোনদের হেসে হেসে শোনায়। আমি তখন ভীষণ লজ্বা পাই।
কিন্তু বড়বেলায় এসে এখন বুঝতে পারি একজন সন্তানের জীবনে তার বাবাই সবচেয়ে আপনজন।সবচেয়ে বেশি ভালোবাসার মানুষ। আমার বাবা যেমনই হোক রাগী অথবা ভালো। আমার বাবা আমার ভালোবাসার মানুষ। আমার সবচেয়ে আপনজন।
ভালো থাক আমার বাবা এবং পৃথিবীর সব বাবারা। শুভ হোক বাবা দিবস।
১৪টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
একরাশ ভালোবাসা । মনোরম লেখনী
তৌহিদ
বাবা হচ্ছেন বটবৃক্ষের মতন। সকল বাবারা ভালো থাকুক এটাই প্রার্থনা।
আপনার বাবার জন্যে দোয়া রইলো। ভালো থাকুন। সুন্দর পোস্ট লিখেছেন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
বাবারা সবসময় ভালো থাকুক।
ভালো উপস্থাপন।
ভালো থাকুন, দিদি
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপু অনেক ভালো লাগলো। আদম ফর্সা না কালো! হা হা হা। বাবা মায়েদের নিয়ে এমন ভাবনা আমার ও ছিল এখনো বহাল তবিয়তে আছে। কারণ আমিও নিজে নিজে অনেক কিছু ভাবতাম। বাবার দাদার দাদা কেমন ছিলো , তারা কি করতো, তারা ছিল বলেই আমরা আছি, তারা কি আমাদের দেখতে পায়, চিনতে পারে তাদের বংশধরদের? এসব ভাবলেই শিহরিত হই আর মৃত্যুর জন্য ভয় লাগে তখনই। সব বাবারা ভালো থাকুক কারণ তারা বটবৃক্ষের মতো আগলে রাখে পুরো সংসারকে। শুভ কামনা রইলো
শায়লা ইলিয়াস
ভাল লাগলো
সঞ্জয় মালাকার
বাবারা সবসময় ভালো থাকুক।
বাবার জন্য অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
সুন্দর লেখা । শুভ কামনা ।
কামাল উদ্দিন
বাবাদের ভালোবাসা সত্যিই অনন্য হয়। হয়তো সব বাবাদের ভালোবাসাটা সব সময় প্রকাশিত নাও হতে পারে। একটা কথা আছে না, পৃথিবীতে অনেক খারাপ মানুষ আছে, কিন্তু খারাপ বাবা একটাও নাই……শুভ কামনা জানিয়ে গেলাম আপু।
এস.জেড বাবু
মেয়েরা বাবা ভক্ত হয়। আপনি তার চেয়েও বেশি।
শ্রদ্ধা আপনার বাবার প্রতি।
শুভকামনা রইলো
জিসান শা ইকরাম
বিশাল গবেষক ছিলে দেখি ছোট বেলায়।
গাছদের পিতা মাতা নিয়ে গবেষনা করার সময় বাবার চুমু। এটা মেনে নেয়া যায় না। গবেষনা বন্ধ করে দেয়ার এই চক্রান্তের তিব্র নিন্দা জানাই 🙂
বাবার সাথে স্মৃতিময় লেখাটি অত্যন্ত ভালো লেগেছে।
সব বাবাদের শুভেচ্ছা।
শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
সব বাবা ভালো থাক
আলমগীর সরকার লিটন
বাবার প্রতি অনেক শ্রদ্ধা জানাই
সব বারাই ভাল থাক——-
সুরাইয়া নার্গিস
ভালো লেগেছে, শ্রদ্ধা রইল বাবার জন্য।
হালিম নজরুল
খুব ভাল লেখা। ভাল থাকুক পৃথিবীর সব বাবা-মা।