আমার সাঁতার শেখা লেক। বাবার হাতে আমার ছোট দুটি হাত শক্ত করে ধরা। হাত-পা ছুঁড়ছি, ভেসে থাকার প্রাণপণ চেষ্টায়। একদিন, দু’দিন। অতঃপর একদিন হাত দু’টি ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকেন বাবা। আমি হাবুডুবু খেতে খেতে, তলিয়ে যেতে যেতে ভেসে উঠি। প্রাণপণ চেষ্টায় বাবার হাত দু’টি ধরে ফেলি। বাবা হাসেন বিজয়ীর হাসি। আমি অঝোরে কাঁদি। বাড়ি ফিরে মা’কে অনুযোগ করি__ ডুবে যাচ্ছিলাম, মারা যাচ্ছিলাম, তবুও বাবা হাত বাড়িয়ে টেনে তোলেনি, বাঁচায়নি…
বাবা’রা পরম মমতায়, যত্নে, আদরে আগলে রাখা কন্যাদের হাত জীবনে একবারই ছেড়ে দেন। সানাইয়ের করুণ সুরের সাথে সাথে, হাত দু’খানি ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে অসহায় চাহনিতে বাঁধভাঙা জল ঝরান সকলের অগোচরে…
জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতে ডুবে যাওয়া থেকে একা একা বেঁচে উঠা শিখিয়ে,
অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা নির্ভরতার হাত দু’খানি, প্রিয় মুখখানি কেমন দ্রুততার সাথে হারায়, হায় !
২০টি মন্তব্য
খেয়ালী মেয়ে
সানাইয়ের করুণ সুরের সাথে সাথে, হাত দু’খানি ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে অসহায় চাহনিতে বাঁধভাঙা জল ঝরান সকলের অগোচরে————–এমনটা ভাবতেই জানি কেমন লাগছে 🙁
রিমি রুম্মান
তবুও এটিই বাস্তবতা। ভাল থাকুন সবসময়।
জিসান শা ইকরাম
বাবার হাত আসলেই কি হারায়?
হারায় না কখনো
বাবারা এমনই
শিখিয়ে দেন সব কিছু
ছেরে দেন ঠিকই,যখনই বুঝতে পারেন কন্যা এখন একা চলতে পারবে।
রিমি রুম্মান
ঠিক বলেছেন। শুভকামনা রইলো।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
আপনার স্মৃতিময় জীবনের কথা গুলো এমন ভাবে লিখেন যে পড়তে গেলে নিজেকে সামলে নিতে পারি না হঠাৎ গা শির শির করে উঠে।সত্যি পিতার নীরব দরদের কোন তুলনা নেই।প্রকাশে কাদলে মন হালকা হয় যা সাধারনতঃ নারীরা করেন পুরুষের কষ্টগুলো নীরব কষ্টের মাঝেই মরে।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর লেখার জন্য।
রিমি রুম্মান
বাবাদের সবার সামনে কাঁদতে নেই। বাবাদের হতে হয় পাহাড়ের মত অবিচল। ভেতরে ভেঙে খান্ খান্ হবে, তবুও কাউকে বুঝতে দিতে নেই।
ইমন
কেনো জানি খুব কান্না পাচ্ছে…..
রিমি রুম্মান
কন্যা সন্তানের বাবা’রা বড় বেশি অসহায়। আদরের কন্যাটিকে একজন পাত্রের হাতে তুলে দিয়ে বলেন, “বাবা আমার মেয়েটি অনেক আদরে মানুষ করেছি, তুমি তাঁকে কষ্ট দিও না।” কিন্তু একথা ক’জন মনে রাখেন ?
কৃন্তনিকা
হুম…
বাবা… আবেগের সবচেয়ে বড় একটা জায়গা জুড়ে…
ভালো লাগলো… ছোট্ট লেখা কিন্তু আবেগ অসীম…
রিমি রুম্মান
ভাল থাকুন। অনেক অনেক শুভকামনা জানবেন।
সঞ্জয় কুমার
স্মৃতিময় ছেলেবেলা । পড়তে পড়তে অশ্রুস্নাত হলাম । ।
রিমি রুম্মান
বলা যায়, এটি প্রায় সব পিতা-কন্যা’র গল্প।
স্বপ্ন নীলা
বাবাকে সালাম
বাবারা এমনই হয় — মেয়ে যে পারবে কিছু করতে সেই বিশ্বাস তার ছিল বিধায় হাত ছেড়ে দিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে মনিটরিং করেছেন
শুভকামনা রইল
রিমি রুম্মান
বাবারা নিরুপায়। ছেড়ে না দিয়ে উপায় আছে ?
ব্লগার সজীব
কত মায়া দিয়ে লেখেন আপনি,আপনার সাতার শেখা যেন দেখলাম আমি।
রিমি রুম্মান
ছবির লেকটিতে সাঁতার শিখেছি আমি। চিরচেনা লেক। আমার শহরে, আমার বাড়ির পাশে।
লীলাবতী
আপু আপনি সাতার জানেন?আমি জানিনা 🙁 আব্বু আমার হাত এখনো ধরে রেখেছেন,কবে যে ছাড়বেন?আপনার লেখায় খুব মায়া আপু।
রিমি রুম্মান
সেই যে ছোটবেলায় বাবা শিখিয়েছেন, আজো ভুলিনি। এখানেও লেকে সামারে সাঁতার কাটি ।
শুন্য শুন্যালয়
অনেক টাচি লেখা। বাবা অগোচরে কাঁদতে পারেনি সেদিন। সেই ছিল প্রথমবারের মতো তাকে এভাবে কাঁদতে দেখা।
রিমি রুম্মান
বাবা’রা ভালোবাসা দেখাতে পারে না। কিছু হৃদয় চিরে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন অদুরেই। অনেক বাবা আবার নিজেকে , আবেগকে সামলাতে পারেন না, তাই সবার সামনেই জল ঝরান।