বিয়ে বাড়িতে গরুর মাংসের বাটিতে হাড়ওয়ালা মাংস খুজে বাঙালী! কিন্তু নিজে যখন বাজার থেকে মাংস কিনে তখন হাড়ছাড়া মাংস দিতে বলে। অর্থাৎ হাড় খুবই সুস্বাদু যখন সেটা ফ্রি পাওয়া যায়। এককালে গরুর চেয়ে মুরগী বেশি এলিট ছিল। ব্রয়লার তখন এতটা প্রসার পায়নি। ফলে মুরগীর দাম ছিল গরু এবং মাছের চেয়ে বেশি। বিয়েতে তখন কেউ কেউ বলতো -“আমি গরু খাই না” অর্থাৎ আমাকে আরেক পিস রোস্ট দেন!!! বিয়ের দাওয়াতে যারা বলে “রান দেন” তাদের আমার কেমন জানি লাগে। আরো ভয়ংকর হল- “ভাই, আমার পোলারে রান দেন”! আরেক গ্রুপ আছে যারা বিয়ের বা এধরণের দাওয়াতে খেতে বসে “সাদা ভাত” চায়। আরে ব্যাটা সবসময়ই তো ভাত খাস তাইলে একবেলা একটু পোলাউ খাইলে মইরা যাবি!!??
গরুর মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন সবাই গরুর মাংস পছন্দ করে। মুরগীর দাম কমে যাওয়ায় বিয়ে শাদিতে মুরগীর আইটেম বেশি থাকে এখন। এসেছে আরেক গ্রুপ “ফারম খাই নাই”! ঢং
এক সময় পুটি, টেংরা, বাইলা, শিং ইত্যাদী ছিল গরিবের মাছ আর রুই কাতলা পাংগাস, কই ইত্যাদী বড়লোকী মাছ। কিন্তু এখন রুই মাছ ১৫০/- কেজি আর পুটি ৪০০/- কেজি হওয়ায় রুই কাতলা পাংগাস হল গরিবের মাছ আর পুটি শিং বড়লোকদের মাছ। তবে ইলিশ সেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই গরিবের ধরা ছোয়ার বাইরে। অবশ্য ইলিশ মাছ খাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পরে না। যার সামর্থ আছে সে ডেইলি খাবে আর যার সামর্থ কম সে মাসে ছয় মাসে একবার খাবে।
অতিথি আপ্যায়নে আমার মনে হয় বাংলাদেশীরা বিশ্বে সেরা। এই বেলা কেউ কার্পণ্য করে না। নিজের সামর্থ্য মত খাবারের আয়োজন করলেও আন্তরিকতা থাকে শতভাগ। তবে কিছু ছোটলোক আছে যারা বিয়ে শাদিতে ইচ্ছে করে এমন করে রান্না করে যাতে অতিথিরা কম খায়। কলকাতার অনেকে অতিথিদের ভরপুর আপ্যায়ন করে। খোজ নিলে দেখা যাবে তারা খাটি কলকাতার না, বাংলাদেশ থেকে মাইগ্রেট করা তারা।
যে সিজনে যেই ফল বা সবজি এভেইলেবল আমরা সেটা খেতে চাই না। অফ সিজনে যখন সেই বস্তু এভেইলেবল না তখন সেটা খাওয়ার জন্য আমাদের মন আকুপাকু করে।
এদেশের অধিকাংশ মানুষ খাওয়ার সময় স্বাদের চেয়ে উদরপূর্তিতে বেশি মনযোগী। ২০০ টাকার বার্গারের চেয়ে ৬০/৮০ টাকা প্লেট তেহারি বেশি আকর্ষনীয়। অতি দরিদ্র বা মজুর শ্রেনীর লোকেরা কলা রুটি খেয়ে ২০ টাকায় লাঞ্চ সেরে ফেলবে। অথবা ৩ টা পাঁচ টাকা দামের চিতই পিঠা পেট ভরার জন্য যথেষ্ট! মধ্যবিত্ত চাকরিজীবীদের চেয়ে মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ীদের ঘরে খাদ্য বৈচিত্র বেশি। মূলত ব্যবসায়ি পরিবারগুলোতেই খাদ্যবিলাস বেশি হয়। ইদানিং রেস্টুরেন্টে খাওয়ার একটা সংস্কৃতি গড়ে উঠতেছে। একসময় “চাইনিজ খাওয়া” ছিল একটা বিশেষ ঘটনা! এখন শুধু চাইনিজ না, ইতালিয়ান, ইন্ডিয়ান, থাই, মেক্সিকান এমনকি জাপানি খাবার খেতে যাওয়াও বিশেষ কোন ব্যাপার না। আগে হয়তো বছরে দুইবার রেস্টুরেন্টে খাওয়া হত (সবাই সাজুগুজু করে যেত) আর এখন সপ্তায় তিনদিন রেস্টুরেন্টে খায়। গ্রামাঞ্চলেও এখন মেহমান এলে রান্নার ঝামেলায় না গিয়ে কাউকে বাজারে পাঠিয়ে “চিকেন ফ্রাই” কিনিয়ে আনে।
কিছু খাবার সাম্যবাদী খাবার। যেমন- মুড়ি, টোস্ট বিস্কুট, চানাচুর! পাউরুটি এখনো গ্রামাঞ্চলের মানুষের প্রাত্যহিক খাদ্যতালিকায় ঢোকেনি। তবে সকালের নাস্তায় রুটি (ঘরে বানানো) খাওয়ার প্রচলন বাড়ছে। আগে গ্রামাঞ্চলে বাড়িতে চা খাওয়ার আয়োজন ছিল হাতে গোনা দুই একটা ঘরে। এখন প্রায় সবার ঘরেই চায়ের আয়োজন থাকে। শহুরে মেয়েদের প্রিয় খাবার আইসক্রিম আর চকলেট। গ্রামের মেয়েদের প্রিয় খাবার “আচার”! তবে মুরুব্বি কিছু মানুষের সফট ড্রিংক্সের প্রতি দূর্বলতা আছে কিন্তু লজ্জায় তারা মুখ ফুটে বলে না। আপনার আম্মু আব্বু দাদা দাদী নানা নানিদের জিজ্ঞেস করবেন তারা কোক সেভেনাপ খাবে কি না!!!
“খাবার” খাওয়ার জন্যই। খান মন প্রান ভরে। তবে খাবার নষ্ট করবেন না। আপনার আশে পাশে কেউ না খেয়ে আছে কি না সেই খোজটাও নিয়েন। আপনার কোন অনুষ্ঠানে (ঢাকায়) খাবার বেচে গেলে আমাদের “প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশন” পরিচালিত “ফুড ব্যাংকিং প্রজেক্ট” এ জানান কষ্ট করে। 01842002023 এই নাম্বারে কল করলে ভলান্টিয়াররা আপনাদের সেই উদ্ধৃত খাবার সংগ্রহ করে পৌছে দিবে ঢাকা শহরের ভাসমান অনাহারী মানুষদের মুখে!!!
২১টি মন্তব্য
নীহারিকা
আমার এক আত্নীয় এবং উনার মেয়ে বিয়ে বাড়ি গেলে ফার্মের মুরগী খান না এবং রান ছাড়া অন্য পিস দিলে চেঞ্জ করে রান আনিয়ে নেন। কিন্ত বাসায় উনারা ফার্মের মুরগী এবং মুরগীর অন্য পিস খান। আজব মানুষ।
শিপু ভাই
আমার এত্ত রাগ লাগে!!!! :@
ইঞ্জা
দাদী আমি আসলেই ফার্মের মুরগী খাইনা, তা ঘরে বাইরে যেখানেই হোক কিন্তু মজার ব্যাপার হলো বিয়ে বাড়ীতে সুবোধ বালকের মতো ফার্মের মুরগীর রোস্ট মজা নিয়েই খায়। :p
নীহারিকা
হাহাহা খাওয়া নিয়ে বাছবিচার থাকতেই পারে কিন্ত কোনো অনুষ্ঠানে গিয়ে যারা নখরা করে তাদের দেখলে লজ্জাই লাগে।
ইঞ্জা
আমার তো ইচ্ছে হয় উঠেই উস্টা মারি। :p
শিপু ভাই
বিয়ে বাড়িতে খাওয়া নিয়ে নখরা করাটা আসলেই লজ্জার
ইঞ্জা
আর বিরক্তিকরও
শুন্য শুন্যালয়
ফুড ব্যাংকিং প্রজেক্ট! বাহ বেশ ভালো লাগলো শুনে।
বাংগালীদের খাবার কড়চা পড়ে হাসতেছিলাম, আসলেই সব সত্যি। মুরগীর রান শুনলেই বিশ্রি লাগে।
হা হা মুরুব্বিরা সফট ড্রিংক্স পছন্দ করে আসলেই। ভাইয়া কি সম্প্রতি বিয়ের দাওয়াত খেয়েছেন? 🙂
শিপু ভাই
ফুড ব্যাংকিং প্রজেক্টটা আমার কাছে দুর্দান্ত লাগে। অবশ্য ভলান্টিয়ারদের অনেক কষ্ট করতে হয় এজন্য।
বিয়ের দাওয়াত কন্টিনিউ খেতে হচ্ছে আপু।
ছাইরাছ হেলাল
হায়রে আমাদের আবাল মানসিকতা,
এ আর পাল্টাবে না।
বাস্তবতা ইহাকেই বলে, মানি বা না-মানি!!
শিপু ভাই
ছোট বেলা আমিও অন্যদের দেখে বলতাম “গরু খাই না”! এতে আরেকটা রোস্ট পাওয়া যেত। 😀
ইঞ্জা
একদম সত্য বলেছেন ভাই, এইটিও সত্যি আমি ফার্মের মুরগী একদম খাইনা, শুধু বিয়ে বাড়ীর রোস্ট হলে খাই। :p
গরুর হাড় বলেন বা মুরগীর হাড়, আমি চিবুতে পছন্দ করিনা।
আপনাদের ফুড ব্যাংকিং প্রজেক্ট আমার পছন্দ হয়েছে, একটু বলবেন কি, কোথায় কোথায় ব্রাঞ্চ আছে?
শিপু ভাই
এয়া এখনো ঢাকা কেন্দ্রিক প্রজেক্ট। শুধু ফন কলের মাধ্যমে এটা পরিচালিত হয়। আমাদের নাম্বারে কল দিয়ে জানালে আমাদের নিকটবর্তী ভলান্টিয়াররা খাবার সংগ্রহ করে ছিন্নমূল মানুষদের মাঝে বন্টন করে দেয়।
ইঞ্জা
ভালো উদ্যোগ, ভবিষ্যতে কিছু করার চেষ্টা করবো।
নীলাঞ্জনা নীলা
ফুড ব্যাঙ্কিং প্রজেক্ট! দারুণ তো!!
বিয়েবাড়ী হোক আর যেখানেই হোক মুরগীর রান খাইনা। কিন্তু কপাল আমার রান-ই প্লেটে পড়ে। যদিও এখানে স্ব-পরিবেশন, তাই ওই সমস্যায় পড়তে হয়না। তাছাড়া বিয়েবাড়ীতে আমি খেতে পারিনা সেভাবে। কারণ আমার পছন্দ মুরগীর পাতলা ঝোল, মাছ ভাঁজা, ডাল, আলুভাজি এসব খাবার। অবশ্য মাংস আমার অতোটা পছন্দের নয়। আমি হলাম মাছের ভক্ত। 🙂
শুভ নববর্ষ।
ইঞ্জা
কি বলেন আপু, বিয়ে বাড়ীর খাসির মাংস না খেলেই তো আমার জীবন, জীবন না। 😀
শিপু ভাই
আমার বিয়েতে আপনার জন্য আলাদা আয়োজন করবো। :p
মেহেরী তাজ
অনেক ভেবে দেখলাম আপনার রান-থিউরি সত্যি।
ফুড ব্যাংকিং প্রজেক্ট” এর কথা শুনে ভালো লাগলো।
শিপু ভাই
থ্যাংকু 😀
চাটিগাঁ থেকে বাহার
আপনি প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশনের সাথে আছেন জেনে ভালো লাগলো। প্রচেষ্টার লাস্ট প্রকাশনায় আমার একটি লেখা ছিল।
‘‘ঝরে পড়া মেধার হাতে কলম ধরিয়ে দিন’’ সংক্রান্ত।
আকবর ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ আছে।
শিপু ভাই
অনেক ধন্যবাদ ভাই।
শুভকামনা