
সারা পৃথিবীতে ফ্রেশওয়াটার সোয়াম্প ফরেস্ট বা স্বাদুপানির জলাবন আছে মাত্র ২২টি। ভারতীয় উপমহাদেশ আছে এর দুইটি…… একটা শ্রীলংকায় আর আরেকটা আমাদের সিলেটের গোয়াইনঘাটে। এই বনের আয়তন ৩,৩২৫.৬১ একর, আর এর মধ্যে ৫০৪ একর বনকে ১৯৭৩ সালে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। অনেক এই বনকে বাংলার আমাজানও বলে থাকেন।
নানা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত এই মিঠাপানির জলাবনটিতে উদ্ভিদের দু’টো স্তর পরিলক্ষিত হয়। উপরের স্তরটি মূলত বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদ নিয়ে গঠিত যেখানে নিচের স্তরটিতে ঘন পাটিপাতার (মুর্তা) আধিক্য বিদ্যমান । বনের উদ্ভিদের চাঁদোয়া সর্বোচ্চ ১৫ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত । এছাড়াও অরণ্যের ৮০ শতাংশ এলাকাই উদ্ভিদের আচ্ছাদনে আবৃত । এখন পর্যন্ত এখানে সর্বমোট ৭৩ প্রজাতির উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গেছে ।
এই বন মূলত প্রাকৃতিক বন হলেও পরবর্তিতে বাংলাদেশ বন বিভাগ, বেত, কদম, হিজল, মুর্তাসহ নানা জাতের জলসহিষ্ণু গাছ লাগিয়েছে। এছাড়া জলমগ্ন এই বনে রয়েছে হিজল, করচ আর বরুন গাছ আছে পিঠালি, অর্জুন, ছাতিয়ান, গুটিজাম, বটগাছও। আছে বট গাছ।
জলমগ্ন বলে এই বনে সাঁপের আবাস বেশি, আছে জোঁকও; শুকনো মৌসুমে বেজিও দেখা যায়। এছাড়া রয়েছে বানর, গুইসাপ; পাখির মধ্যে আছে সাদা বক, কানা বক, মাছরাঙ্গা, টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ি, ঢুপি, ঘুঘু, চিল এবং বাজপাখি। শীতকালে রাতারগুলে আসে বালিহাঁসসহ প্রচুর পরিযায়ী পাখি, আসে বিশালাকায় শকুনও। মাছের মধ্যে আছে টেংরা, খলিশা, রিঠা, পাবদা, মায়া, আইড়, কালবাউশ, রুইসহ বিভিন্ন জাত।
আসুন, আমার ক্যামেরায় দেখি রাতারগুল বন কে……..
তথ্যসূত্রঃউইকিপিডিয়া
(২/৩) সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সিএনজি নিয়ে মটরঘাটে পৌছতে অল্প কিছু মেটো পথে হাটতে হবে, বৃষ্টির কারণে রাস্তা খানাখন্দকে পরিপূর্ণ, তাই এটুকু হাটা ছাড়া উপায় নাই। তবে হাটার এই সময়টা আশেপাশের এমন চমৎকার বাড়িঘর বা মাছ ধরার দৃশ্যগুলো মনটাকে ভরিয়ে দেবে।
(৪) এই মেঠো পথের শেষ প্রান্তেই মোটর ঘাট, যেখান থেকে রাতারগুল বনে যাওয়ার নৌকা পাওয়া যাবে।
(৫) পাশের জলাভুমিতে হয়তো দেখতে পাবেন এমন ক্ষুদে মাঝিদেরও।
(৬) এক সময় আপনি পৌছে যাবেন নৌকা ঘাটে, পুরো বন ঘুরিয়ে আনতে একটা ডিঙি নাও আপনার কাছ থেকে ভাড়া নিবে ৩৫০/৪০০ টাকা।
(৭) ডিঙি নাও চেঙ্গীর খাল পার হয়ে এক সময় আপনাকে নিয়ে পৌছে যাবে মুল বনের দিকে।
(৮/৯) প্রথম দিকের জলাভুমিতে বেশীর ভাগ এমন মুর্তার বন জলাভুমির উপর মাথা তুলে দাঁড়িয়ে।
(১০/১১) এক সময় পৌছে গেলাম মূল বনে, সত্যিই চোখ ধাঁধাঁনো সৌন্দর্য্য।
(১২/১৩) তবে এমন চমৎকার গাছগুলোর ফাকে ফাকে কিন্তু আপনার জনয় বিপদ ও লুকিয়ে থাকতে পারে, তাই গাছ কিংবা পানিতে হাত না দেওয়াই ভালো।
(১৪) গাছের কোটরে লুকিয়ে থাকতে পারে এমন বিপদ জনক সুন্দর সাপ।
(১৫) কিংবা এমন বিছে, আর জলেও নাকি জোঁকের আধপত্য আছে, যদিও আমরা ওদের দেখতে পাইনি। বলতে পারেন তাহলে তো বিপদ। হ্যাঁ যত ভয় তত এ্যডভেঞ্চার, সুতরাং…..
(১৬/১৭) কখনো মনে হবে বনটা অসম্ভব রকম শুনশান, আবার কখনো গাছের ফাঁকে ফাঁকে দেখবেন নিঃশব্দে ভেসে চলছে পর্যটকদের ডিঙি নাওগুলো।
(১৮) বনের মাঝখানে বিশাল একটা ফাঁকা জায়গা, সেদিক থেকে ভেসে আসছে সিলেটের আঞ্চলিক সুরে গাওয়া গান, পানিতে অর্ধ ডুবে থাকা গাছগুলোতে যেন সেই সুর লহরী নেচে বেড়াচ্ছে, স্বর্গীয় এক অনুভুতি।
(১৯) ডিঙি নিয়ে এগিয়ে গেলাম গানের সূর লক্ষ করে, মাচার উপর বসে দুজন লোক দেশীয় বাদ্য বাজনা বাজিয়ে গান গাচ্ছে। উদ্দেশ্য পর্যটকদের আনন্দ দেওয়া আর সংসারের রুটি রুজীর ব্যবস্থা।
(২০) ডিঙি ভিড়িয়ে উঠে পড়লাম মাচাতে, গাইলাম ওদের সাথে কিছুক্ষণ গান, হোক না বেসুরো গলা, তাতে আনন্দের কোন কমতি হলো না মোটেই। এক সময় আমরা ফিরতি পথ ধরলাম, কিন্তু এমন সৌন্দর্য্য দেখতে ফিরে আসবো বারে বার এই প্রতিজ্ঞাটা শুধু মনেই রেখে দিলাম।
২৯টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
রাতারগুল যাওয়ার খুব ইচ্ছে কিন্তু ঐযে সাপ আর জোঁক। শুনেছি সাপ গাছে গাছে ঝুলে থাকে। সৌন্দর্য দেখতে গিয়ে আতঙ্কিত হতে হবে। তবুও সুযোগ আসলে যেতে পারি। যেমন বর্ণনা তেমন ছবি । অসাধারণ লেগেছে। শুভ সকাল
কামাল উদ্দিন
গাছে গাছে সাপ ঝুলে থাকে এমনটা শুনিনি বা দেখিওনি, তবে সাপ যেহেতু আছে, ঝুলতে পারে, এটা খুব একটা অস্বাভাবিক কিছু না আপু।
তৌহিদ
সৌন্দর্যের মাঝে লুকিয়ে থাকে অজানা অনেক বিপদের আশংকা। প্রকৃতি হয়তো ইকোসিস্টেম এভাবেই সাজিয়েছে। তারপরেও আমরা প্রকৃতি দেখতে যাই। আর আপনি গিয়েছেন বলেই আজ এত সুন্দর সব ছবি দেখলাম, রাতারগুল সম্পর্কে জানলাম।
ভালো থাকুন ভাই।
কামাল উদ্দিন
প্রকৃতির এমন নিরাপত্তাটা থাকা দরকার, নইলে আমরা এসব ধ্বংস করতে সময় নেই না………ভালো থাকবেন ভাই।
সুপায়ন বড়ুয়া
একবার যেতে গিয়েও যাওয়া হয়নি ভয়ে
আর আপনি গিয়েছেন বলেই আজ এত সুন্দর সব ছবি দেখলাম, রাতারগুল সম্পর্কে জানলাম।
ভালো থাকবেন। শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
বলেন কি এতো ভয় পাওয়ার কি আছে দাদা? ওখানে তো বাঘ ভাল্লুক নাই……..শুভ কামনা জানবেন।
জিসান শা ইকরাম
রাতারগুল যেতে পারিনি এখনো। এত সুন্দর জায়গাটি দেখা হয়নি দেখে খারাপ লাগছে। অনেক বার সিলেট গিয়েও কেন জানি যাওয়া হয়নি।
আপনার পোষ্ট পড়ে যাওয়ার ইচ্ছেটা আবার জাগলো মনে।
সুন্দর পোষ্ট।
শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
সামনের কোন এক শোকনো মৌসুমে আবার ওখানে যাওয়ার ইচ্ছে আছে আমার, শুভ কামনা জানবেন ভাই।
প্রদীপ চক্রবর্তী
রাতারগুল গিয়েছি আমি যেহেতু সেটা আমাদের সিলেটের।
চমৎকার বর্ণনা দিলেন দাদা।
ভালো লাগলো।
পরবর্তী সময়ে ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর আসবেন। খুবি সুন্দর জায়গা, ভালো লাগবে।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ দাদা, ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর দেখাটা আমার এখনো বাকী আছে
ফয়জুল মহী
আপনার কারণে নতুন নতুন জায়গার নাম জানা ও ছবি দেখা হয়
কামাল উদ্দিন
ভ্রমণ নেশায় আশক্ত আমি, তাই ছুটে বেড়াই সুযোগ পেলেই।
পার্থ সারথি পোদ্দার
আপনার সচিত্র বর্ননা শৈলী খুবই সুন্দর।মনে হচ্ছিল কিছুক্ষনের জন্য রাতারগুলের সৌন্দর্যে হারিয়ে গিয়েছিলাম।ধন্যবাদ ভাই।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ দাদা, ভালো থাকবেন সব সময়।
শামীম চৌধুরী
আপনার বর্ননা পড়ছি আর জায়গাগুলিকে স্মরন করছি। রাতারগুল আমার খুব পছন্দের একটি স্থান। খুব ভাল লাগলো ভাই।
কামাল উদ্দিন
আমারও পছন্দের যায়গা, তবে ওখানে মাত্র একবারই যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে আমার, শুভ কামনা জানবেন ভাইজান,
সঞ্জয় মালাকার
আমিও সিলেটে, কিন্তু রাতারগুল যাওয়ার সুভাগ্য হয়নি,
চমৎকার বর্ণনা দিলেন দাদা।
তবে আপনার ক্যামেরায় ছবি গুলো দেখে, দেখতে যাওয়ার ইচ্ছে বেড়ে গেলো।
ভালো থাকবেন সবসময় শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
সিলেটের মানুষদের আমি বলি ভাগ্যবান, আপনারা অত্যন্ত চমৎকার একটা এলাকায় বসবাস করছেন……ভালো থাকবেন দাদা।
সঞ্জয় মালাকার
আপনিও ভালো থাকবেনা দাদ।
কামাল উদ্দিন
ভালো থাকার ভালো রাখার চেষ্টাটা সব সময়ই করে যাচ্ছি দাদা।
ছাইরাছ হেলাল
যদিও যাইনি, তবে অনেক অনেক ছবি ও তথ্য দেখেছি/পড়েছি।
আমরা জলার মানুষ, তাই আকর্ষণ-বিকর্ষণ ভিন্ন রকম।
তবে বিরল বনে গানের আয়োজনটি সত্যি মুগ্ধকর।
কামাল উদ্দিন
সত্যি বলতে কি, এই ভ্রমণে গানের বিষয়টাই আমার কাছে ছিলো সব সথেকে উপভোগ্য বড় ভাই……শুভ রাত্রি
হালিম নজরুল
অসাধারণ সব জায়গা। তবে সাপ দেখে ভয় পাইছি ভাই।
কামাল উদ্দিন
সাপকে আমরা সবাই ভয় পাই নজরুল ভাই, তবু সৌন্দর্য্য দেখতে মানুষ পিছপা হয় না, ধন্যবাদ।
ইসিয়াক
১৪ নম্বর ছবিটা কি সাপ? বিস্তারিত বলেন কামাল ভাই।
আপনার কন্ঠের গান শুনতে পারলে হতো………হা হা হা।
কামাল উদ্দিন
সাপের নামটা তো জানা নাই ভাইজান, গান কিন্তু আমি খারাপ গাইছিলাম না ঐদিন
ইসিয়াক
ধন্যবাদ
আরজু মুক্তা
এখানে গিয়েছি। আবারও আপনার সাথে ঘুরলাম
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ আপু, আপনিও ভালো থাকুন সব সময়।