
আগুনের কমলা-হলুদ রঙ নিয়ে ফাগুন এসেছে আজ। মনের ফুলঝুরিতে বিগত পাঁচ বছরের আজকের দিনের স্মৃতিগুলো চমকে আসছে আর ভেসে যাচ্ছে সকাল থেকে। সেই ভোর ৫ টায় ঘুম থেকে উঠেই শুরু হয়েছে আমাদের যাপিত জীবনের নিত্য কর্মকাণ্ড। শত ব্যস্ততায় আমরা দু’জনেই ভুলে গিয়েছিলাম আজ পহেলা ফাল্গুন, সেই সাথে ভ্যালেন্টাইন ডে!
বিয়ের পর প্রায় প্রতিটি বসন্তের প্রথম সকাল কিংবা ভ্যালেন্টাইন ডে’র প্রান্তিক মধ্যরাতে আমরা একে অন্যকে উইশ করি, শুভেচ্ছা জানাই। এবারেই তার ব্যতিক্রম হয়েছে। আমি ফুল আনতে ভুলে গিয়েছি। ফাগুনের বাসন্তী উপহার আনতে ভুলে গিয়েছি। ব্যস্ততা আমাকে/আমাদের দেয়না অবসর।
মাঝেমধ্যে তীব্র মানসিক এবং কাজের চাপ থেকে মুক্তি পেতে কিচ্ছুক্ষণ পরপর ফেসবুকে আসছি গত ক’দিন থেকে। আদতে আমি এতটা সময় ফেসবুকে থাকিনা। ব্লগে আসছি, সবার পোস্ট দেখছি কিন্তু মন্তব্য করার সময় পাচ্ছিনা। নিজের পোস্টে ব্লগারদের করা মন্তব্যের জবাবও দিতে পারিনি গত কয়দিন। হয়তো ভুল বুঝে আছেন অনেকেই। কিন্তু কি করে বোঝাই কতটা ব্যস্ত সময় যাচ্ছে!
আজ ফাল্গুন আর ভ্যালেন্টাইন ডে’র কথা মনে হয়েছে বাসা থেকে বের হয়ে আসার পরে। ফেসবুকে যখন আসি তখন মনে হয়েছে আজ পহেলা ফাল্গুন। এর মধ্যে গত ক’দিনে পেরিয়ে গিয়েছে রোজ ডে, চকলেট ডে থেকে হাগ ডে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এসব দিন পালন করিনা। আশেপাশের কেউ করলেও বিরক্ত লাগে তবে প্রকাশ করিনা কারন ব্যক্তিগত অভিরুচি সকলেরই আছে। আমি কারও জীবনের নিয়ন্ত্রক তো নই!
এই যে এখন বাসে বসে আছি আর একমনে চেয়ে দেখছি দিগন্তবিস্তৃত হলুদ সর্ষেক্ষেতের মাঠের দিকে। কিষাণ কিষাণি ব্যস্ত সময় পার করছে ক্ষেত পরিচর্যায়। অতিযত্নে চাষকরা এই ফসল একসময় আমাদের ঘরে পৌঁছে দেবে বলেই তারা নিজেদের আবেগ-আদর ঢেলে দিচ্ছে হলুদ ক্ষেতে। আচ্ছা আজ ভ্যালেন্টাইন ডে এটা কি তারা জানে? হাগ ডে, রোজ ডে, কিস ডে, টেডি ডে, চকলেট ডে’র গিফট অথবা শুভেচ্ছা কোনটাই কি সেই কিষাণির কপালে জুটেছে বিগত ক’দিনে?
ঐ যে দূরে মাথায় পাঁচির ভারে যে কিশোরী কোমর বাঁকিয়ে খালি পায়ে হেঁটে চলেছে পাশের গাঁয়ের দিকে সে কি জানে আজ বসন্তের প্রথম দিন? তাঁকে কি কেউ বাসন্তি শুভেচ্ছা জানিয়েছে। এইমুহুর্তে খুব জানতে ইচ্ছে করছে, খুব! খুব!
আচ্ছা! একটা কাজ করলে হয়না- ড্রাইভারকে বলি গাড়িটা একটু সাইড করে মিনিট দু’য়েকের জন্য দাঁড়াতে। চট করে তাদের ফাল্গুনী শুভেচ্ছা জানিয়ে আসি। আমি দেখতে চাই তাদের মুখের অভিব্যক্তি, প্রাণখোলা হাসি। তারাওতো এই দেশে, এই সমাজেই বাস করে। একজন সামাজিক বাঙ্গালি হয়ে এটি আমার কর্তব্য নয় কি? কিন্তু তা আর করা হলোনা। আমাদের গন্তব্যের দিকে শাঁ শাঁ করে গাড়ি ছুটে চলেছে।
আমরা যে সংস্কৃতিকে মনে লালন করছি সেটা সমাজের ঠিক কতভাগ মানুষ নিজেদের মত করে পালন করছেন এই সংখ্যাটা বের করাটা জরুরী। একই দেশে কিছু মানুষ আচার অনুষ্ঠানে জাঁকজমক করে হৈ-হুল্লা করে খাবার নস্ট করছি আবার তার ঠিক পাশেই নিজেদের ব্যক্তিগত মৌলিক চাহিদার ন্যূনতম ভাগটিও যাদের পূরণ হচ্ছেনা তারা পেট ভরাতে খাচ্ছে সেই উচ্ছিষ্ট খাবার। তাদের কাছে পহেলা ফাল্গুন, ভ্যালেন্টাইন ডে মানেই হচ্ছে আজ মুখরোচক অন্যের উচ্ছিষ্ট কিছু খাবার পেটে যাবে। তাহলে এই উৎসব কি শুধু তাদের যাদের আয়রোজগার সামান্য হলেও আছে? তবে বাকীরা এর বাইরে? কে কতজন নিজের বাসার কাজের বুয়াকে আজ বাসন্তী শুভেচ্ছা জানিয়েছি?
আমিতো শবনমকেই শুভেচ্ছা জানাতে ভুলে গিয়েছি। বাসায় ছোট বোন এসেছে, মা আছেন তারাতো আমারই স্নেহাস্পদ। তাদেরতো নিশ্চই অভিমান হয় আমার এমন হেঁয়ালীতে। সুখে আছি কি নেই সেটা বড় কথা নয়, কিংবা কাজের ব্যস্ততার ভীড়েও নয়। আমি আসলে দিনাতিপাত করছি নানাবিধ সংশয়ে, চিন্তায়, অনাগত দিনগুলির সৌষ্ঠব প্রস্ফুটনের আশায় নিত্ত নৈমিত্তিক। কাকে বলবো এসব? কে বুঝবে?
এই যে এইমুহূর্তে নোটপ্যাডে লিখছি আর ভাবছি সবার কথা- কে কেমন আছেন, ভালো আছেন, সুস্থ্য আছেনতো? বুকের ভিতরটায় রোজনামচার গ্যাঁড়াকলে একটা চিনচিনে ব্যাথায় মুঁচড়ে উঠছে। মোবাইলে বারবার কল আসছে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে, আমার ধরতে ইচ্ছে করছেনা। হয়তো কেউ ফাগুনের শুভেচ্ছা জানাতেই কল দিচ্ছেন। অপরপ্রান্তে যিনি আছেন তিনি কাজের জন্যেও ফোন দিতে পারেন। নাহ্ বাজুক ওভাবেই। কারও ফোন রিসিভ করবোনা এখন।
অন্য ফোন থেকে শবনমকে ফোন দিচ্ছি কিন্তু সে রেসপন্স করছেনা। তবে কি দীর্ঘ রজনীর বিরহিণী আজ স্পর্শকাতর হয়ে মুশড়ে পড়েছে? নির্দিষ্ট সময় পরপর তার ফোন থেকে টুঁট টুঁট আওয়াজ আসছে আর আমি রিংব্যাক করেই যাচ্ছি। গাড়ির তীব্র গতিতে কানের কাছ দিয়ে শাঁ শাঁ করে ঠান্ডা বাতাস কেটে যাচ্ছে। বড্ড অস্থির লাগছে আমার।
শবনম! বসন্তের প্রথম প্রহরের এই লেখায় তোমাকে বাসন্তি জারবেরার ফাল্গুনী শুভেচ্ছা দিলাম। হ্যাপি ভ্যালেন্টাইনস ডে 🌹
২৫টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
হুম ঠিক বলেছেন। বসন্ত শুধু শহুরে জীবনে লেগেছে। গ্রামে এসবের কোনো বালাই নেই । এরা জানেও না এসবের সংস্কৃতি, নাম । আপনার একান্ত অনুভূতি অসাধারণ হয়েছে। শুভ বসন্তের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা
তৌহিদ
আপনাকেও শুভেচ্ছা আপু।ভালো থাকবেন।
সৈকত দে
সত্য চিন্তাধারার চমৎকার উপস্থাপন।
তৌহিদ
ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকবেন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
আগমনী বসন্তে দারুণ ভাবনা দাদা।
শহরের হলুদপাড়ে শুধু বসন্ত লেগেছে
গ্রামীণ জীবনে নয়।
.
শুভ বসন্ত বরণের শুভেচ্ছা।
তৌহিদ
সুন্দর বললেন দাদা, আপনাকেও অনেক শুভেচ্ছা রইলো।
ছাইরাছ হেলাল
বুঝতে পারছি, নিজে জুত মত কিছুই করতে পারেন নি বলে দুনিয়ায় কোন দিবস/রজনী থাকবে না/ছিল না
এ সব বলে-টলে খুব সুবিধে করতে পারবেন বলে মনে হয় না। বসন্ত আছে থাকবেও। ব্যস্ততা তাই আছে/থাকবে।
আপনাদের বাসন্তি শুভেচ্ছা।
তৌহিদ
একদফা একদাবী আমি পাইনি কাউরে দিমুনা দিবস পালন কত্তে। বসন্ত থাকুক সবার মাঝে।
আপনিও ভালো থাকবেন ভাই।
ইসিয়াক
বসন্তের শুভেচ্ছা রইলো ভায়া।
তৌহিদ
আপনাকেও শুভেচ্ছা দাদা।
নিতাই বাবু
ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা রইল। সাথে শুভ ফাল্গুনের শুভেচ্ছাও!
তৌহিদ
আপনাকেও শুভেচ্ছা দাদা। ভালো থাকবেন সবসময়।
ফয়জুল মহী
ফাগুনের শুভেচ্ছা
তৌহিদ
আপনাকেও শুভেচ্ছা দাদা।
সুরাইয়া পারভীন
আপনাদের দুজনের জন্যই রইলো পহেলা ফাল্গুনের শুভেচ্ছা
তৌহিদ
আপনাকেও শুভেচ্ছা আপু।
সঞ্জয় মালাকার
দাদা ফাগুন শুভেচ্ছা রইলো।
তৌহিদ
আপনাকেও শুভেচ্ছা দাদা।
কামাল উদ্দিন
হাগ ডে, রোজ ডে, কিস ডে, টেডি ডে, চকলেট ডে’র কিছুই আমি জানতাম না এতোটা বছর। শুধু ভ্যালেন্টাইনেই সীমাবদ্ধ ছিল আমার আনাগোনা। আর কাজের চাপে সেটার প্রকাশ করা হয়ে উঠেনা। ঠিক যেমনটি হয়েছে এবারও……..শুভ সকাল।
তৌহিদ
আরও কত কিছু দেখবেন ভাই। এইসব দিনের ঠেলায় পাগল হয়ে যাব!!
শুভেচ্ছা রইলো।
কামাল উদ্দিন
তখন হয়তো সবই করা হবে, কারণ পাগলে কি না করে?
হালিম নজরুল
শুভেচ্ছা,
লেখা বরাবরের মতই ভাল।
তৌহিদ
ধন্যবাদ ভাই। আপনাকেও শুভেচ্ছা রইলো।
আরজু মুক্তা
ব্যস্ততা দেয়না ছুটি।
তবুও জীবন চলে যায়।
আপনারা ভালো থাকেন সবসময়।
তৌহিদ
আপনিও ভালো থাকবেন আপু।