আমরা যখন পাটনায় নামলাম, অবস্থা দেখে রীতিমত ভয় লাগতে লাগল। কাউকেও চিনি না, কোথা থেকে কোথায় যাই! তবে জহির পাটনায় অনেকবার গিয়েছে। আমরা মিস্টার ইউনুস, মন্ত্রী বিহার সরকারের, তাঁর একটা হোটেল আছে—-‘গ্রান্ড হোটেল’, সেই হোটেলে গিয়ে হাজির হলাম। সেখানে মাওলানা রাগীব আহসান সাহেব অফিস খুলেছেন, বেঙ্গল মুসলিম লীগের তরফ থেকে। আবদুর রব নিশতার সাহেব সেদিন পাটনায় আসলেন। আমরা একসাথে কনফারেন্স করলাম, কি করা যায়! তিনদিন পরে নূরুদ্দিন কলকাতায় চলে গেল। জহির পাটনায় রইল। আমরা বললাম, বিহারে আমরা কি সাহায্য করতে পারি? শহীদ সাহেব বলেছেন, ট্রেন ভরে আসানসোলে রিফিউজিদের পৌঁছে দিলে বাংলা সরকার তাদের সকল দায়িত্ব নিতে রাজি আছে। জনাব আকমল (আইসিএস) আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি কেমন করে শহীদ সাহেবের পক্ষ থেকে কথা বলতে পারেন?” আমার অল্প বয়স দেখে তিনি বিশ্বাস করতেই চাইলেন না যে, শহীদ সাহেব আমার সাথে এ ব্যাপারে আলাপ করতে পারেন। আমি তাঁকে বললাম, “আমি শহীদ সাহেবের মতামত জানি এবং তাঁর পক্ষ থেকে কথাও কিছু বলতে পারি।” অনেকে আমার মুখের দিকে চেয়ে রইল। আমি শহীদ সাহেবের ফোন নাম্বার দিয়ে বললাম, “টেলিফোন করে দেখতে পারেন।”
সকালবেলা আবার বসবার কথা। আকমল সাহেব আমাকে বললেন, “আজ থেকেই আমরা আসানসোলে লোক পাঠাব” যে সমস্ত লোক গ্রাম থেকে শহরে আসছে তাদের জায়গা দেওয়া একেবারেই অসম্ভব। আঞ্জুমানে ইসলামিয়া ও আর যে সমস্ত জায়গা করা হয়েছিল সেখানে আর জায়গা নাই। সীমান্ত থেকে পীর মানকী শরীফের দল, আলীগড় থেকে আমাদের বন্ধু মোস্তফা ও সৈয়দ আহমেদ আলীসহ বহু ছাত্র কর্মী এসেছে। কলকাতা থেকে ছাত্র, ডাক্তার, ন্যাশনাল গার্ড মিলে প্রায় হাজার লোক পাটনায় জমা হয়েছে। দূর দূর গ্রাম থেকে দূ্র্গতদের উদ্ধার করে আনা হচ্ছে। আমি হাজার খানেক রিফিউজি নিয়ে রওয়ানা করলাম আসানসোলের দিকে। আসানসোল মুসলিম লীগ নেতা মওলানা ইয়াসীন সাহেবকে টেলিগ্রাম করা হয়েছে। তিনি দুইখানা ট্রাক ও কিছু ভলানটিয়ার নিয়ে স্টেশনে হাজির ছিলেন। লোকগুলিকে প্লাটফর্মেই রাখা হল। অনেক লোক জখম ছিল। নূরুদ্দিন শহীদ সাহেবকে পরিস্থিতি বুঝিয়ে বলেছে। পাটনা থেকেও খবর দেওয়া হয়েছে শহীদ সাহেবকে। তিনি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও এসডিওকে হুকুম দিয়েছেন, এদের জায়গা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করতে।
নূরুদ্দিন কলকাতা থেকে আমাকে সাহায্য করবার জন্য কিছু সেচ্ছাসেবক ও কিছু ডাক্তার পাঠিয়েছে। এসডিও ছিলেন একজন ইউরোপীয়ান। তিনি যুবক ও খুবই ভদ্রলোক। শহীদ সাহেব হুকুম দিয়াছেন, যে সমস্ত ব্যারাক যুদ্ধের সময় করা হয়েছিল সৈন্যদের থাকবার জন্য সেগুলির মধ্যে রিফিউজিদের রাখতে। সরকার থেকে খাবার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। তার বিলি বন্টনের জন্য এসডিও, আসানসোল মুসলিম লীগ নেতারা ও আমি একটা বৈঠক করলাম।
অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান। (পৃষ্ঠা নং-৬৯-৭০)
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী (পর্ব-৫৫)
১২টি মন্তব্য
নীলাঞ্জনা নীলা
রুবা’পু ভাবছি আমি ওই দাঙ্গাটা যদি না হতো, তাহলে কি হতো!
প্রতি শনিবার অপেক্ষায় থাকাটা অভ্যেস হয়ে গেছে। এই অপেক্ষাটুকু মন্দ লাগেনা কিন্তু!।
ভালো থেকো। -{@
মারজানা ফেরদৌস রুবা
অপেক্ষা করে থাকো, এ কথাটাই তো একজন সেরা মানুষের জীবনী টাইপ করে প্রকাশ করার ক্লান্তিকে দূরে সরিয়ে দেয়।
নিজে লিখা আর অন্য লিখা টাইপ করা কিন্তু ভিন্ন। কারণ এ টাইপটা অপরিবর্তনীয়। হুবহু তুলে ধরার প্রয়োজনে অনেক খুটেখুটে দেখতে। এখানে নিজের ইচ্ছার কোন প্রকাশ নেই। শুরু করেছিলাম এক উদ্দেশ্য নিয়ে, এগিয়ে যাচ্ছে বহির্বিশ্বে অবস্থানকারী তোমাদের কারো কারো পড়ার সুযোগ করে দিয়ে।
নীলাঞ্জনা নীলা
রুবা’পু আমি তোমার প্রতিটি পোষ্ট খুব মন দিয়ে পড়ি। তোমার নিজের লেখাও। কারণ সহজ করে বাস্তবতার নিরিখে তুমি লেখো।
ফাল্গুনী শুভেচ্ছা আপু। অনেক ভালো থেকো। -{@
মোঃ মজিবর রহমান
মানুষের তরে মানুষ সেবাই যার ধর্ম।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর
মানুষেরই মাঝে স্বর্গ নরক, মানুষেতেই সুরাসুর।
নিহারীকা জান্নাত
পড়েই যাচ্ছি আর সেই পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে চেষ্টা করছি।
যদিও সেটা সম্ভব নয়।
লিখতে থাকুন।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ধন্যবাদ আপু।
ইঞ্জা
ভয়ংকর সেইসব দিনের কথা পড়েই শিউরে উঠছি।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
অনেক কৃতজ্ঞতা ইঞ্জাভাই।
ইঞ্জা
কৃতজ্ঞতা আমাকে নয়, আপনার প্রতি।
লীলাবতী
মহান নেতার আত্মজীবনী ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করে যাচ্ছেন ক্লান্তিহীন ভাবে।ধন্যবাদ প্রিয় আ[পু।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ধন্যবাদ লীলাবতী।