অনেক সময় দেখা গেছে, একজন অশিক্ষিত লোক লম্বা কাপড়, সুন্দর চেহারা, ভাল দাড়ি, সামান্য আরবি ফার্সি বলতে পারে, বাংলাদেশে এসে পীর হয়ে গেছে। বাঙালি হাজার হাজার টাকা তাকে দিয়েছে একটু দোয়া পাওয়ার লোভে। ভাল করে খবর নিয়ে দেখলে দেখা যাবে এ লোকটা কলকাতার কোন ফলের দোকানের কর্মচারী অথবা ডাকাতি বা খুনের মামলার আসামি। অন্ধ কুসংস্কার ও অলৌকিক বিশ্বাসও বাঙালির দুঃখের আর একটা কারণ।
বাঙালিরা শহীদ সাহেবকে প্রথমে চিনতে পারে নাই। যখন চিনতে পারল, তখন আর সময় ছিল না। নির্বাচনের সব খরচ, প্রচার, সংগঠন তাঁকেই এককভাবে করতে হয়। টাকা বোধহয় সামান্য কিছু কেন্দ্রীয় লীগ দিয়েছিল, বাকি শহীদ সাহেবকেই জোগাড় করতে হয়েছিল। শত শত সাইকেল তাঁকেই কিনতে হয়েছিল। আমার জানামতে পাকিস্তান হয়ে যাবার পরেও তাঁকে কলকাতায় বসে দেনা শোধ করতে হয়। আমি পূর্বেই বলেছি, শহীদ সাহেব সরল লোক ছিলেন। তিনি ধোঁকায় পড়ে গেলেন। পার্লামেন্টারি বোর্ডে তাঁর দল সংখ্যাগুরু থাকা সত্ত্বেও নিজের লোককে তিনি নমিনেশন দিতে পারলেন না। নাজিমুদ্দীন সাহেবের দল পরাজিত হওয়ার পরে তারা অন্য পন্থা অবলম্বন করলেন। ঘোষণা করলেন, তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না অর্থাৎ শহীদ সাহেবই দলের নেতা হবেন। তিনি শহীদ সাহেবকে অনুরোধ করলেন যারা পূর্ব থেকে মুসলিম লীগে আছে তাদের নমিনেশন দেওয়া হোক, কারণ, এরা সকলেই শহীদ সাহেবকে সমর্থন করবেন। খাজা সাহেব যখন নির্বাচন করবেন না তখন আর ভয় কি? শহীদ সাহেব এই কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে পুরানা এমএলএ প্রায় সকলকেই নমিনেশন দিয়ে দেন। বোধহয় তখন বাংলাদেশে একশত উনিশটা সিট মুসলমানদের ছিল। এই চাতুর্য প্রায় পঞ্চাশজন খাজা সাহেবের দলের লোক নমিনেশন পেয়ে গেল। আবার কেন্দ্রীয় লীগে খাজা সাহেবের সমর্থক বেশি ছিলেন। লিয়াকত আলী খান, খালিকুজ্জামান, হোসেন ইমাম, চুন্দ্রিগড় সাহেব সকলেই শহীদ সাহেবকে মনে মনে ভয় করতেন। কারণ সকল বিষয়েই শহীদ সাহেব এদের থেকে উপযুক্ত ছিলেন। কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টারি বোর্ডও প্রায় ত্রিশজনের নমিনেশন পাল্টিয়ে দিলেন। এঁদের মধ্যে দুই একজন শহীদ সাহেবেরও সমর্থক ছিলেন, একথা অস্বীকার করা যায় না।
নির্বাচনের পরে দেখা গেল একশত উনিশটার মধ্যে বোধহয় একশত ষোলটা সিট লীগ দখল করল। সংখ্যা দু’একটা ভুল হতে পারে, আমার ঠিক মনে নাই। এই একশত ষোলজনের মধ্যে নাজিমুদ্দীন সাহেবের দলই বেশির ভাগ, যদিও তারা শহীদ সাহেবকে লিডার বানাতে বাধ্য হল, কিন্তু তলে তলে তাদের গ্রুপিং চলল। শহীদ সাহেব গ্রুপ করতেন না, তিনি উপযুক্ত দেখেই মন্ত্রী করলেন। নাজিমুদ্দীন সাহেবের দলের অনেককে পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি ও হুইপ করলেন। জনাব ফজলুর রহমানকেও মন্ত্রী করলেন।
অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান। (পৃষ্ঠা নং- ৪৮ হতে ৪৯)
৬টি মন্তব্য
নীলাঞ্জনা নীলা
“অন্ধ কুসংস্কার ও অলৌকিক বিশ্বাসও বাঙালির দুঃখের আর একটা কারণ”…কথাটা ১০০ ভাগ সত্যি। আমাদের ডিজিটাল দেশের সমাজ এখনও ওসব কুসংস্কারেই বন্দী। আর তাইতো জামায়াতের এতো শক্তি।
চলুক রুবা’পু।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
একদম ঠিক কথা।
চলবে দিদি।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
এ কোন শহীদ?শহীদ সোহারোদ্দি মনে হয়।সরল মানুষ ধরা খায় সব সময়ই -{@
মারজানা ফেরদৌস রুবা
হ্যাঁ। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।
মৌনতা রিতু
আপু লিখে যাও। -{@
মারজানা ফেরদৌস রুবা
(y)