বইমেলা ঘুরে-১

ভোরের শিশির ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, সোমবার, ১১:৫৪:৩৪পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি, সমসাময়িক ১৬ মন্তব্য

অমর একুশে বইমেলা, ২০১৫।
আজ ১লা ফেব্রুয়ারি, বইমেলার প্রথম দিন। ঢুকতেই চমক-
গত বছর হতেই মূল বইমেলা বাংলা একাডেমীর বাইরে অর্থাৎ সোহরায়োর্দী উদ্যানে হচ্ছে। গতবার স্থান সঙ্কুলান নিয়ে অনেক কথার পর চমক এই বছর-বেশ বিস্তৃত হয়েছে। অনেকটুকু জায়গাজুড়েই এবং অনেক খোলামেলা ও সাজানোটাই সুন্দর লেগেছে।
বেশ কিছু বই নেওয়ার ইচ্ছে এবং প্রিয়জনদের নিয়মমাফিক বই প্রকাশ হবে ও নতুন করে প্রকাশ হচ্ছে প্রথম বই। তাই শুরু থেকেই নজর ছিল প্রিয়জনদের বইয়ের দিকে অর্থাৎ প্রথম গ্রাহক-পাঠক যেন আমি হই।
সেই উদ্দেশ্যে প্রথমে পাকড়াও করি কাসাফাদ্দৌজা নোমানকে। বলা যায় প্রায় বগলদাবা করেই তাকে সাথে করেই বইমেলার প্রথম দিনে আমাদের পদার্পণ!
নাটকীয় শোনাচ্ছে? নাটকের শুরু এখান থেকেই-
বর্তমান পরিস্থিতিতে বই প্রথম দিনেই মেলায় আসবে কি না তা নিয়ে অনেক সন্দিহান সবাই’ই। তাই বইমেলায় ঢুকেই প্রিয়জন-লেখকদের খোঁজ নেওয়া শুরু করি তাদের প্রকাশনী খুঁজে পেতে। কাসাফাদ্দৌজা নোমানের প্রথম গল্পগ্রন্থ “অদ্ভুত তুমিহীনতায় ভুগছি” জাগৃতি প্রকাশনীতে খোঁজ নিতেই শুনি এখনো আসেনি! কিন্তু আমরা নাছোড়বান্দার মতো লেগে রইলাম প্রকাশনী এবং লেখকের সাথে যে প্রথম দিনের বইমেলায় প্রথম গল্পগ্রন্থের প্রথম মুদ্রণের প্রথম কপি আমার চাইই চাই। এদিক সেদিক ঘুরে এসে বারেবারে খোঁজ নিচ্ছি এলো কিনা! এদিকে লেখক মহাশয় আমাদের উত্তেজনায় নিজেও উত্তেজিত-হচ্ছে কি এসব!! উত্তেজনা কমাতে বইমেলা পুরোটা একবার নিজেই চক্কর দেবো বলে উবুন্টুম্যানকে সাথে নিলাম। একে একে খোঁজ নিলাম প্রিয় বুনডি একুয়া রেজিয়ার দ্বিতীয় উপন্যাস এই শহরে মেঘেরা একা-Ei Shohore Meghera Eka এসছে কিনা। প্রকাশক-অন্য প্রকাশ জানালো এখনো আসেনি! খোঁজ নিলাম প্রিয় প্রকাশনীতে আমার প্রিয় একজন-নিশি মিয়াঁকে…
নাহ্‌, তিনিও আসেননি। মুঠোফোনে নিশিমিয়ার খোঁজ নিতেই নিশিমিয়ার লেখক Rajib Chowdhury জানালেন উনি নিশিমিয়ার সন্ধান দিতেই স্বয়ং চলে এসেছেন বইমেলা প্রাঙ্গণে। কিন্তু নিশিমিয়ার জন্মদাতার প্রবেশ স্বত্বেও তার লেখনীর নিশিমিয়ার প্রথম মুদ্রণ জন্ম তখনো প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেনি, বোঝ কান্ড! যে হাসপাতালে মানে প্রকাশনীতে ভূমিষ্ট হয়েছে সেখানে যোগাযোগ করতে না করতেই প্রকাশনীর নির্লিপ্ততা শুধু রাজীব চৌধুরীকেই নয় আমাদেরকেও ছুঁয়ে গেলো বিষাদের স্বাদ দিয়ে। কিন্তু আবারো চমক! এইবার একই প্রকাশনী হতে প্রিয় ছোট ভাই জিহান আল হামাদীর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘মেঘ রঙের চন্দ্রবিন্দু’ হাতে পেলাম স্বয়ং লিখিয়েকেই সঙ্গী করে। বিন্দুমাত্র সময় অপচয় না করে হয়ে গেলাম তার প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম গ্রাহক-পাঠক।
এ আর নাটকের কি!-সবাই তাই ভাবছেন সত্যি।
এতো ঘটনার মূলে কিন্তু অন্যজন। লেখিকা না বলে ঔপন্যাসিক বলি তাকে- Bondona Kabir। তাঁর তৃতীয় গল্পগ্রন্থ এবং ১৫তম গ্রন্থের খোঁজে শুরু থেকেই চোখ বুলিয়েছিলাম প্রকাশনীর খোঁজে এবং মাঝামাঝিতেই পেয়ে গেলাম তাঁর গল্পগ্রন্থটি ‘গল্প কিংবা কয়েকটি কাঁচের টুকরো’ আদি প্রকাশনীতে। প্রকাশনীটি মাত্রই বই সাজাচ্ছিলেন। খোঁজ নিতে না নিতেই একই প্রকাশনীতে দেখা পেলাম আরো একজন লেখকের Rashat Rahman Zico ভাই, তার নতুন উপন্যাস ‘রাফ খাতা’ এবং এখানেও আমিই প্রথম গ্রাহক-পাঠক হয়ে গেলাম-মেঘ না চাইতেই জল…মুঠোফোনে লেখিকা বন্দনা কবীরের খোঁজ নিতেই জানতে পেলাম এই বেলা শুধু প্রথম কপিটি অটোগ্রাফ ছাড়াই নিতে হচ্ছে কেননা তিনি বইমেলায় আসতে পারছেন না… এটিও চমক বটে, কারণ তাঁর গ্রন্থের জন্যে টানা দুই বছর খোঁজ নিয়ে এইবার অধীর আগ্রহে ছিলাম প্রথম কপিতে প্রথম অটোগ্রাফ আমারই চাইই চাই কিন্তু হলো না।
এই ফাঁকে একটু বলে নেই- অটোগ্রাফ শিকারী বলা চলে আমাকে। অন্য কিছুর চাইতে শুধু মাত্র গল্প, উপন্যাস, কবিতা লিখিয়েদের অটোগ্রাফ শিকারে বেশ ভালো লাগে।
আদী প্রকাশনীতে এক কদম ফেলতে না ফেলতেই সেই জাগৃতি প্রকাশনী থেকে খবর এলো বই এসেছে। ‘অদ্ভুত তুমিহীনতায় ভুগছি’ আমাদের আর না ভুগিয়েই চলে এসেছে!
দৌঁড়ে চলে এলাম লেখক কাসাফাদ্দৌজ্জা নোমানের প্রথম গ্রল্পগ্রন্থের প্রথম মুদ্রণের প্রথম কপিটি হাতে নিয়ে প্রথম অটোগ্রাফ শিকারীর খাতায় নাম লেখাতে।
কিন্তু জাগৃতি প্রকাশনীতে পৌঁছুতেই দেখি সেখানে এক দল ইতোমধ্যেই হাজিরা দিয়েছে বইটির জন্যে এবং ঘিরে ধরেছে লেখককে। দেরী না করেই লেগে রইলাম প্রকাশনীতে থাকা কর্তব্যরতদের সাথে। পইপই করে খোঁজ নেওয়ার কারণেই হয়তো প্রথম কপিটি আমাকে আমার হাতে দিতে চেঁচামেচি শুরু করলো নুসরাত নীরা যে তাকেই পেতে হবে প্রথম কপিটি! কিছুক্ষণ টানাটানি করে ‘বইটিই না ছিঁড়ে যায় অবস্থায় নীরাকে বললাম-নাহ্‌ থাক, তুমিই নাও যেহেতু তুমিই আগেই ছিলে লাইনে!
কিন্তু কপাল! আর কার? আমার… নীরা প্রথম সংখ্যা হাতে পাওয়ার খুশীতে বইয়ের মূল্য না দিয়েই খুশীতে আত্মহারা আর এই সুযোগে আমি আমার সংগ্রহে থাকা বইটি মূল্য পরিশোধ করে মূল্য প্রদাণের রশিদ হাতে নিয়ে নীরাকে ক্ষ্যাপাতেই সে ছুটলো মূল্য পরিশোধে এবং আবারো আমি এগিয়ে থাকতে লেখকের হাতে বই ধরিয়ে বলি-নোমান, আমিই হতে চাই আপনার প্রথম গল্পগ্রন্থের প্রথম মুদ্রণের প্রথম কপির প্রথম অটোগ্রাফ শিকারী! ব্যস…
খসখস করে লেখক নিজের অটোগ্রাফ দেওয়ার ফাঁকে নীরাকে আবার ডেকে বলি- কি হে! এতো সুযোগ দিলাম কিন্তু পারলে না, দেখো! আমিই কিন্তু প্রথম গল্পগ্রন্থের প্রথম মুদ্রণের প্রথম সংখ্যার প্রথম অটোগ্রাফ শিকারী হয়েই গেলাম।
বেচারী নীরা! ফ্যালফ্যাল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে অনেকটা কান্নাভেজা মুখচ্ছবিতে আমাকে শাপ্সহাপ্নত করতে লাগলো…
এরপর?
এরপর ধুমিয়ে আড্ডা লেখকদের সাথে এবং তাদের অরটোগ্রাফ শিকারীদের পাল্লায় পড়ার ক্ষণগুলো উপভোগ করা।
এরই মাঝে চলে এলো আর কয়েকজন যারা আগামী বইমেলাতেই তাদের উপন্যাস, গল্প নিয়ে হাজির হচ্ছেন- Apel Mahmud শশী হিমু সিডাটিভ হিপনোটিক্স। আর শুরু থেকেই সঙ্গী ছিলেন মেঘ রৌদ্দুর, উবুন্টুম্যান রাশান শাহরিয়ান নিপুণ-যার কথা মনে থাকবে কারণ বিশেষ একটা উপকার করে ফেলেছেন সুযোগ পেয়েই, মোর্শেদ বিন জামাল সহ আরো অনেকেই।
২০১৫ সালের অমর একুশে বইমেলার প্রথম দিনেই একাধিকবার লেখকদের প্রথম গ্রন্থের প্রথম মুদ্রণের প্রথম সংখ্যায় প্রথম অটোগ্রাফ শিকারী হতে পেরে আনন্দের উল্লাস প্রকাশ করে ফেরার পথে পেয়ে গেলাম রাতের আহারের দাওয়াত তাও আবার কাসাফাদ্দৌজ্জা নোমানের স্মরণে! আর কি লাগে প্রথম হতে?

৬০৩জন ৬০৩জন
0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ