অশোক একজন কলেজের ছাত্র। ছাত্র বলতে সে এমনি যে কলেজ যাওয়া আসার ছাত্র ছিল তা নয় । সে খুব মেধাবী ছাত্র ছিল । এক নামে কলেজের সবাই তাঁকে সম্মান করত । জুনিয়ার রা দাদা বলে জড়িয়ে ধরত । সিনিয়ার ছেলে রাও খুব ভালোবাসত । কলেজের প্রফেসর রাও তাঁকে ভালোবেসে অফিসে ডেকে নিয়ে গল্প করতেন ।
সবার ভালোবাসা আদর সম্মান পেয়েও অশোকের মনটা দুপুরের খোলা রাস্তার দিকে মনটা হু হু করে উঠত । সে বুঝতে পারতনা তাঁর যন্ত্রণাটা ঠিক কোথায়?
রুবি অশোকের খুব ভালো বন্ধু। সে অশোককে পছন্দ করতো ভালো পড়াশোনা করে চুপচাপ থাকে ভালো ছেলে তাই!
একদিন রুবি বলল আচ্ছা অশোকদা তোমার ফোন নম্বরটা দেবে?
অশোক আমতা আমতা করে বলল না মানে আমার মা ওইসব পছন্দ করে না।
রুবি শুনে হো হো করে একগাল হেসে নিল ।
তারপর আর কোনদিন রুবির সংগে অশোকের কথা হয়নি। রুবি খুব ই আকর্ষিত ও সুন্দরী মেয়ে । তাই তাঁকে তেল মাখানোর প্রয়োজন হয় নি । কিছুদিনের মধ্যেই এক প্রফেসর জুটিয়ে প্রেম করা শুরু করে দিয়েছিল।
আসলে প্রকৃতির নিয়ম সবার কাছে সমান নয় । যে সহ্য করে তাঁকে আরও সহ্য করতে হয়। আর যে রুখে দাঁড়ায় তাঁকে বাঘ ও ভয় করে । সংসারের নিয়ম ওইটাই দুর্বলের আজীবন কারাবাস একাকীত্বের নিদারুণ কষ্ট?
যাই হোক অশোক কিন্তু মনে মনে রুবিকে ভালোবেসে ফেলে । রুবির প্রতিদিনের ক্যান্টিনে যাওয়া টিফিন করা না দেখলে অশোকের দিন কাটত না । রুবির হাসি টানাটানা চোখের ইশারার চাউনি অশোককে পাগল করে দিত !
এইভাবে বেশ কিছুদিন চলার পর অশোক মনস্থির করেই ফেলল এবারের কলেজ ফাইনালের দিন রুবিকে তাঁর মনের ফিলিংস বুঝিয়ে নিজেকে!
যাই হোক অশোক কলেজে গিয়েই প্রথমে রুবিকে খুঁজতে শুরু করল । রুবি সেদিন দেরীতে কলেজে আসলে পর অশোক সামনে এসে দাঁড়ালো । ইতস্তত ভেবেই মাথা চুলকে বলল এই রুবি একটু বাইরে দেখা করবি তোর সংগে দুটো কথা ছিল । রুবি বলল ও তাই কি কথা বল আমার বেশী সময় নেই স্যার দেখা করতে বলেছে । অশোক হঠাৎ কোন মেয়ের প্রত্যাখ্যান সহ্য করতে পারল না কিছু বলতে যাবে যে সেই অবস্থায় সে ছিল না । উত্তেজনায় মুখ লাল হয়ে গেছিল শরীর বেয়ে থপথপ করে ঘাম বেয়ে পড়ছিল ।
আসলে জীবনের প্রথম প্রেম প্রকাশ তাও আবার প্রথম প্রেমিকা সামনে দাঁড়ানো সেই মেয়েটি যাকে জীবনে প্রথম ভালো লাগল।
যাই হোক রুবি রাজী হল বাইরে দেখা করতে । বাইরে একটা রেষ্টুরেন্টে বসে রুবি অশোক কফি খাচ্ছিল । এমন সময় প্রকৃতির মনোরম পরিবেশ তাঁদের কাছাকাছি আসতে সুযোগ করে দিল । বাইরে বৃষ্টি পড়ছে । রুবির স্লিম পোশাকে বৃষ্টির ঝিরিঝিরি ধারা মিলে মিশে একাকার
অশোকের পাঞ্জাবী থেকে যেন রূপ উপছে পড়ছে । রুবি কফি খেতে খেতে বলল কি যেন বলবে বলছিলে ? অশোক বলল অাচ্ছা রুবি তোমার পরীক্ষার নোটগুলো পেয়েছ
হা পেয়েছি
তোমার কোন অসুবিধে হলে বা আটকালে আমাকে বল
অবশ্যই থ্যাঙ্ক ইউ
আরে কি বলবে বলছিলে ?
আচ্ছা রুবি তোমার বৃষ্টি কেমন লাগে ?
ভালো লাগে । সবার ভালো লাগে তো আমার ভালো লাগে । আর আমি অত কবি নই যে বৃষ্টি দেখে দেখে সারাদিন কাটাবো
যা বলবার তাড়াতাড়ি বল আমার কাজ আছে
আচ্ছা রুবি তোমার কোন রং পছন্দ?
আমার কালো তোমার
আমার সাদা
কিছু বলবে বলছিলে যে?
ওই তো তোকে আমার খুব পছন্দ । তাই।
ও এই কথা
তা আমার ও তোকে পছন্দ কিন্তু তুই কেমন ম্যড়মেড়ে । প্রফেসর সূর্য বাবু আমাকে খুব ভালোবাসেন।
মুখের উপর হঠাৎ করে এই কথাটি অশোকের বুকে কাঁটার মত বিঁধল। সে রুবিকে প্রেম নিবেদন করতে চাইল না কারণ সরাসরি অবহেলা র যন্ত্রণা অসহ্য চাবুক হয়ে উঠত?
রুবি চোখের দিকে তাকিয়ে । বুঝতে পারছিল সবই কিন্তু অশোকের মুখ থেকে শুনতে চাইল। অশোক ভণিতা করে এবার বলল সূর্য বাবু কি তোকে বিয়ে করবে?
বলেছে তো তাই
তুই জানিস সূর্য বাবুর উইক পয়েন্ট
না তো
আমার এক বন্ধু বলেছে সূর্য বাবুর বাচ্চা মেয়েদের প্রতি বাজে নজর আছে!
সে তো সব পুরুষের থাকে ।
তুই এতো বয়সের মধ্য বয়সী লোককে বিয়ে করবি
আরে বিয়ে তো অনেক পরে এখন ক্যারিয়ার গড়ে নি।
হঠাৎ করে রুবি অশোকের হাত ধরে বলেই ফেলল কেন তুই কি আমাকে বিয়ে করবি নাকি?
অশোক থতমত খেয়ে কয়েক সেকেন্ড পরে ভেবে বলল তুই যদি রাজি থাকিস নিশ্চয়ই !
রুবি হাতে চাপ দিয়ে চিৎকার করল আর বলল কি বলছিস রে
এতো ভূতের মুখে রামনাম
তুই কি আজকাল ইমরান হাসমির সিনেমা দেখছিস নাকিরে
এতো সাহস তোর ভাঙা গাড়িতে কবে থেকে হল
অশোক – একদম বাজে কথা বলবি না বলে দিচ্ছি । তোকে অনেকদিন থেকেই ভালো লাগে বলতে পারিনি তা বলে তুই এরকমভাবে অপমান করবি !
রুবি-সরি রে ! তোকেও ভালো লাগে বাট কেমন জলসা জলসা পুরুষ পুরুষ ভাব লাগে না । তুই শুধু হাত ধরতেই দু বছর লাগালি আর সূর্য বাবুকে দেখ ছয়মাস হল মাত্র উপহার দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছে । মাঝেমধ্যে সিনেমাতে নিয়ে গিয়ে কিস ও করে!
অশোক-সেকি!
এরপর অশোক আর একমূহূর্ত ও দাঁড়ালো না। নিজের উপর কেমন রাগ অথবা ঘৃণা করতে শুরু করে দিল । মাটির গন্ধ প্রকৃতির সবুজতা মেয়েদের দেখলেই তাঁর কেমন বিষের মত মনে হত !
কলেজ প্রায় শেষ । অশোকের ফাইনাল রেজাল্ট বেরিয়ে গেছে । নিউট্রেশান অনার্সে খুব ভালো রেজাল্ট হয়েছে কিন্তু তবুও অশোকের মনের ভিতর শান্তি ছিল না । রুবি আর সূর্য বাবুর গলা জড়ানো ন্যাকামো দেখলেই শরীরের মধ্যে রক্ত টগবগ করে ফুটত আর অন্ধকারে বসে বসে লুকিয়ে কাঁদত !
চলমান__________
/অরুণিমা মন্ডল দাস
কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ
৩ জুলাই, ২০১৬
৭টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
চলুক, ভাল করেই চলুক,
জিসান শা ইকরাম
গল্প আপনি খুব কম লেখেন
ভালোই লেগেছে গল্প।
পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
আবু খায়ের আনিছ
অনেক কিছুই ত বলে দিলেন এক পর্বেই। অপেক্ষা পরের পর্বের।
নীলাঞ্জনা নীলা
এই প্রথম আপনার লেখা গল্প পড়লাম। দিদি চলমানতার সাথে আছি কিন্তু।
মেহেরী তাজ
চলুক আপু। পড়বো…..
লীলাবতী
অরুদি পরের পর্ব দিন দ্রুত।
ঘুমের ঘোরে কেটে যাওয়া অনন্ত পথ
ভাল লেগেছে
চলুক গল্প