
জাফর ইকবাল ছিলেন আমাদের সবচেয়ে সুন্দর নায়ক। কিন্তু মিউজিকের প্রতিও যথেষ্ট আগ্রহ ছিলো তাঁর, আনোয়ার পারভেজ আর শাহনাজ রহমতুল্লাহর ভাইয়ের জন্য সেটা অস্বাভাবিকও না। যেমন অস্বাভাবিক না, বিশশতকের ষাটের দশকের কোনো কিশোরের জন্য, এলভিস প্রিসলির ফ্যান হওয়াটা। ক্লাস সেভেনে থাকতেই শিখে ফেলেছিলেন গিটার বাজানো। বন্ধুদের নিয়ে নিজের একটা ব্যান্ডও ফর্ম করেছিলেন। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সেই ব্যান্ড নিয়মিত পারফর্ম করতো। সিনেমা জগতে আসাটা নেহাতই কাকতালীয় ঘটনা ছিলো।
সীজারের মতো এলেন, দেখলেন, ও জয় করলেন। এর পরের গল্পটা কমবেশি সবারই জানা আছে। একটা আস্ত প্রজন্মের ফ্যাশন আইকন হয়ে ওঠা, একটার পর একটা ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দেয়া, অসামান্য এক ক্যারিয়ার।
এহেন নায়ক মারা গেছেন মদ খেতে খেতে। ঠিক কী হয়েছিলো কেউই নিশ্চিতভাবে জানে না, তবে এরকম অনুমান চালু আছে যে, বিষাদটা জন্মেছিলো প্রেমের কারণে। বিবাহিত ছিলেন, তবু ভালোবেসে ফেলেছিলেন অন্য নারীকে। বিয়ে তো একটা সামাজিক প্রতিষ্ঠান মাত্র, আর প্রাতিষ্ঠানিকতা দিয়ে হৃদয়কে বেঁধে রাখা যায় না, পারেন নি তিনিও। কিন্তু তিনি এইসব নিয়ে সরব হন নি। আবেগটা কার প্রতি ছিলো সেটাও বলেন নি, তবে এখন মনে হয় সবাই জানে। যাক সে কথা।
আজিমপুর কবরস্থানে কবর দেয়া হয় জাফর ইকবালকে। তাঁর শেষ সিনেমা মুক্তি পায় মৃত্যুর পরে। গ্রাম থেকে আসা যুবকের চরিত্রে অভিনয় করেন। একটা সংলাপ ছিলো, “ভাই, আজিমপুর যাব কীভাবে?” আজিমপুরেই গেলেন, চিরতরে। সংলাপটা শুনে প্রেক্ষাগৃহভর্তি দর্শক ডুকরে কেঁদে উঠেছিলো। ডাইল্যান টমাসকে মনে পড়ে, ভালোবাসার মানুষেরা চলে গেলেও ভালোবাসাটা রয়ে যায়, আর মৃত্যুর কোনো অধিকার থাকবে না।
জাফর ইকবালের প্লেব্যাক সিঙ্গার ছিলেন অ্যাণ্ড্রু কিশোর। আমার বুকের মধ্যিখানে শুনছিলাম, আর দেখছিলাম ইউটিউবে, কিশোরের গান আর জাফর-সুবর্ণার পারফরম্যান্স অদ্ভূত এক আবেশ তৈরি করছিলো! শুনতে শুনতে দেখতে দেখতে ভাবছিলাম, মিডনাইট ইন প্যারিস আমাদের কখনো ছিলো না, কিন্তু যা ছিলো তার ঐতিহ্যটুকুও কি ধরে রাখা গেলো?
কিশোর আড়ালের মানুষ ছিলেন, আড়ালেই চলে গেলেন। সবাই চলে যাচ্ছে। আমরাও যাবো, কেউ আগে, আর কেউ পরে।
নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়…।শ্রদ্ধা। ভালোবাসা।
১২টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অসাধারণ লেখনী। জাফর ইকবাল আর এন্ড্রু কিশোর – একসাথেই সৃষ্টি হয়েছে কালজয়ী গান। সেই নয়নের আলো সিনেমা দুজনকেই করেছে কালজয়ী, সমৃদ্ধ। এরপর আরো অনেক কালজয়ী গান তারা দুজনে উপহার দিয়েছে আমাদের কে। ওপারে ভালো থাকুন তারা দুজন । যতদিন বাংলাদেশ, বাঙালি থাকবে তারা অম্লান হয়ে রবে আমাদের হৃদয়ে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে
রায়হান সিদ্দীক
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
সুপায়ন বড়ুয়া
কিশোর আড়ালের মানুষ ছিলেন,
আড়ালেই চলে গেলেন।
গানের মাঝে বেঁচে থাকুক
হৃদয় আসন পেলেন।
আপনার লেখনীতে কিশোর
উজ্জ্বল হয়ে উঠলেন।
শুভ কামনা।
রায়হান সিদ্দীক
আপনার জন্যেও শুভকামনা
তৌহিদ
এন্ড্রু কিশোর একজন গুনি মানুষ ছিলেন। অমায়িক ভদ্রলোক তিনি। এমন গুনী মানুষের মৃত্যুতে দেশের সংগীত জগতে এক শুন্যতা নেমে আসবে।
তাঁকে নিয়ে চমৎকার এই লেখাটির জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ভাই।
রায়হান সিদ্দীক
পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।আপনার জন্যে শুভকামনা।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপনার সুন্দর মন্তব্যটাই সঠিক — “সীজারের মতো এলেন, দেখলেন, ও জয় করলেন। এর পরের গল্পটা কমবেশি সবারই জানা আছে। একটা আস্ত প্রজন্মের ফ্যাশন আইকন হয়ে ওঠা, একটার পর একটা ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দেয়া, অসামান্য এক ক্যারিয়ার”।
ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।
রায়হান সিদ্দীক
আপনিও ভালো থাকবে।
জিসান শা ইকরাম
শিল্পী এন্ড্রু কিশোর এর অভাব পুরন হবার নয়। তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
আরজু মুক্তা
ভালো থাকুন ওপারে।
বিনম্র শ্রদ্ধা
নিতাই বাবু
খুবই দুঃখজনক। স্বনামধন্য কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের মৃত্যুতে আমি ব্যক্তিগতভাবে শোকাহত। তিনি ছিলেন ভারত-সহ বাংলাদেশের সংগীত জগতের এই অমূল্যধন। আমি মনে করি তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশের গানের জগতের এক অমূল্য রন্ত হারালো। আমি তাঁর বিদেহি আত্মার শান্তি কামনা-সহ তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
ফয়জুল মহী
শোকার্ত আমরা