
আজ এককাপ চা হাতে বসেছিলাম। গরম ধোঁয়া উড়ানো দুধ চিনি সংযোজিত চা। তারপর ধুম করে তোমার কথা মনে পড়ে গেলো! তোমার পছন্দ কড়া লিকারে দুধ-চিনি মেশানো এককাপ চা। চা’য়ে চুমুক দিতে দিতে কিছুক্ষণের জন্য বর্তমান সব ভাবনা থেকে কিছুক্ষণ নিজেকে আলাদা করে নেয়া। চা’য়ে চুমুক দেয়ার পরক্ষণেই তোমার মনে হাজারো ভাবনা জরো হয়ে যায়। যেমন?
– আজকের খবরের হেডলাইন গুলো কি কি ছিলো,
– পরীমনির জামিন পেতে কতদিন লাগতে পারে? তার জন্য দু’কলম লিখলে আবার নিজের ইমেজ খারাপ হবে নাতো!
– হেলেনা জাহাঙ্গীরের বেশিরভাগ গান গুলো বিদেশের মাটিতে চিত্রায়িত, যার এত শখ/সাধ্য আছে সে নিজের গলায় নিজের গান না বানিয়ে অন্যের গাওয়া গান গুলোর বারোটা কেন বাজালো!
– এটিএন বাংলার মাহফুজুর রহমান নাকি এখন গানের সাথে রান্নাবান্নার অনুষ্ঠান শুরু করবেন! হায়রে, পয়সা থাকলে প্রতিভা দেখানো কঠিন কিছু না। কি করলাম জীবনে!
– পদ্মাসেতুতে এখনই কেন বারবার ধাক্কা লাগে! কই আরো তো কত সেতু আছে, অনেক সেতুর পিলার বলতে গেল নদীর উপ্রে উঠে গেছে। এত্ত আগের বানানো নদীর ঐ সেতু গুলো এখনো ঢেউয়ের ধাক্কায় খুলে পড়ে যাচ্ছে না কেন!
– লকডাউন আসলে কি? এগুলো কারা দেয়! কারা মানে! লকডাউন উঠিয়ে দিলেই যখন করোনা চলে যায়, তখন কেন বারবার এই লকডাউন! যত্তসব।
– ভ্যাক্সিনের বিরুদ্ধে এত এত অপ্রচার চালানোর পরেও সাধারণ মানুষ এখন ভ্যাক্সিন নিতে প্রতিটি কেন্দ্রে গিয়ে হুমড়ি খাচ্ছে, অথচ এখন নাকি ভ্যাক্সিন-ই পর্যাপ্ত নেই!
তাহলে কেন শুধু শুধু দেশের সাধারণ মানুষের নামে বদনাম দেয়া? কারা পাচ্ছে এই অমূল্য ভ্যাক্সিন!
ইভ্যালির পর এখন ই-অরেঞ্জ এর নাম যোগ হয়েছে জোচ্চুরির তালিকায়। তুমি গরম চা’য়ে ফুঁ দিতে দিতে শুনলে কিচ্ছুক্ষণ,, তারপর বেশ আয়েশ করেই বলে দিলে < এটা তো ঠিকই আছে। অতি লোভের শাস্তি পাচ্ছে ভুক্তভোগীরা।> যেহেতু তুমি সেখানে কিছুই ইনভেস্ট করোনি, তাই তোমার কোন দরকারই নেই এসব নিয়ে ভাব্বার।
শুধু কি তাই! তুমি প্রতিবেশী দেশের খোঁজ-ও নিয়ে নিচ্ছ দ্বিতীয় চুমুকের ফাঁকে, আফগানরা পালাচ্ছে তালেবানদের ভয়ে, প্লেনের চাকায় বসে। প্লেন ফ্লাই করতেই কিছু মানুষ টুপটাপ ঝরে পড়েছে পাকা তালের মতো। তুমি হয়তো খুশি হচ্ছো অথবা মন থেকে পুরো ব্যাপারটাই ঝেড়ে দিচ্ছ এই ভেবে
❝ ধুর ওটা ওদের দেশের ব্যাপার, আমার কি, আমার দেশে তালেবান নাই ❞ একবারও ভেবে দেখলে না আফগানেও ৫০ বছর আগে তালেবান ছিলো না।
কত শত ভাবনা ভেবে ফেলো এককাপ চা’য়ে চুমুক দেয়ার অবসরে। আর আমি তখন তোমাকে নিয়ে ভাবি। ভাবি আর অবাক হই, এককাপ চা কীভাবে তোমায় নিমিষেই বদলে ফেলে। চা’য়ের কাপ তো চা’য়ের কাপ নয় যেন এক টাইম ট্রাভেল মেশিন! মাঝে মাঝে মনে হয় আমিও তোমার মতো দু’চার কাপ চা’য়ে চুমুক দিই, ক্ষনিকের মাঝে নিজেকে হারাই অন্যকোনো ভাবনায়, বাস্তব ছেড়ে ভিন্ন কোথাও।
এই আমাকেই দেখো, আমি চা’য়ে চুমুক দেবার আগেই কতকিছু ভেবে নিলাম তোমার-তোমাকে!
তারপর, কেমন আছো জাদু? এখনো চা খাও? মানে চা পান করো? আমরা সব কিছু খাওয়াতেই অভ্যস্ত হয়ে গেছি। ভাত, ফল, দুধ, পানি, চা, জুস, এমনকি সিগারেট যেটার কথাই জিজ্ঞেস করা হোক আমরা খাই/খেয়েছো ( প্রশ্ন) বলি। হাহাহাহা..
আমি ভালো আছি। নিজেকে প্রায় অনেকখানি গুটিয়ে-গুছিয়ে নিয়েছি। কিন্তু সবটা পারছি না। এতে দোষ অবশ্য আমার একার নয়, নদীর সবকিছু গুছিয়ে রাখার ধৈর্য-সহ্য কোনটাই বিধাতা তাকে দেননি।
ফাগুন,
তোমার কি কখনো মনে হয় না, নদী বিধাতার এক বিস্ময়কর সৃষ্টি? নদী বিহীন প্রকৃতি ধুসর, আবার নদীতে নিমজ্জিত স্থানকে অস্তিত্বহীন মনে হয়। নদীর কাছ থেকে কখনো কিছু নিতে চাইলে দু’হাত ভরে নেয়া যায়, যতখুশি তত!! নদী দিতে জানে। নদী সইতে পারে। আমানতের রক্ষা করতে জানে। গচ্ছিত সব অতীত-ইতিহাস সংরক্ষণে রাখে। নদীর সৃষ্টি বয়ে যাওয়ার তরে। যা কিছু নদীর জন্যে নদী কেবল তাই-ই গ্রহণ/ বহন করে।
তুমি ভালো আছো ফাগুন? রোজকার মতোন? ভোরে ঘুম ভেঙে গেলে এখনো কি চলে আসো নদীর বাধ-ভাঙা তটে? অথবা ঘুমহীন রাতে অবিশ্রান্ত হেটে বেড়াও নদীর নিরালা ঢেউ গুনে! এখনো কি ঘুমানোর আগে একগ্লাস গরম দুধ পান করো?
আজ তোমায় ভীষণ মনে পড়ছে। বলছি না আগে মনে পড়েনি। পড়েতো প্রতিদিন-ই, প্রতিক্ষণে। কিন্তু ঐযে বললাম “ভীষণ”… এর মানে ভীষণ করেই মনে পড়েছে। তুমি আবার মাঝখান থেকে অন্যকিছু ভেবো নিও না।
জাদুউউ, একটা কবিতা শুনবে, উহু ঠিক কবিতা নয়। আমিতো জানি-ই তুমি কবিতা বুঝতে পারো না। তাই আমিও কবিতা লেখায় বৃথা শ্রম দেই না। আমার অ-কবিতা গুলো তোমার শীতল মনে জমাট বেঁধে রাখি।
শ্রাবণের পালা বদল হলে
বিদায় নিলো আষাঢ়ের ঘনঘটা, ঠিক যেমন বিদায় নিয়েছিল কালবৈশাখ,
তছনছ কাদামাটির বিরানভূমিরা এবার-ও সেজে উঠবে গুচ্ছ গুচ্ছ কাঁশফুলে,
তুমি বলো ঐ কাঁশ-গালিচা স্নিগ্ধ-শান্তি-সুষমায় ভরা/
আমি দেখি, কাশফুল বুকে দু’হাত বাড়িয়ে আছো তুমি, নরম-লোমশ বুকখানি জুড়ে এক পৃথিবী ভালোবাসা!
মিস ইউ জাদুজান। আমি চাই তুমিও আমায় মিস করো। যদি মনে পড়ে তবে এসো..চলে এসো এখানে এই নদীর কাছে।
ভালো থেকো ফাগুন। মনে রেখো।
নদী..!
ছবি-আমার।
২৩টি মন্তব্য
রিতু জাহান
আবেগ অসংগতি সবটাই চলে এসেছে,,, এটা দারুন লাগলো।
হামাস বইটা পড়বেন আপু তাইলে আফগানদের সম্পর্কে আরো জানতে পারবেন।
চায়ের কাপে আসলে অনেক ঝড় ওঠে।
নদীতেই সকল সভ্যতার সৃষ্টি।
চমৎকার চিঠি।
গানটা আমার বরের আর আমার খুব পছন্দের।
চিঠি মানেই আবেগের প্রকাশ। পড়তে পড়তে মনে হয় সত্যিই ফাগুন শুনছে সব কথা।
ভালো লাগলো ভীষণ।
অনেক দিন পর একটা পাকা লেখা পড়লাম ব্লগে,,,,
সাবিনা ইয়াসমিন
আমার কাছে মনে হয় চিঠিই একমাত্র লেখা যেখানে কোন নিয়মনীতি/ বিধিনিষেধ মানার দরকার হয় না। একটা চিঠি আসবে, তাতে প্রিয়জন তার প্রয়োজনীয়তা টুকু বুঝবে, চিঠির অক্ষরে/ভাষায় কি বলা হচ্ছে সেটার উপলব্ধি করবে। বানান ভুল হোক, লাইন উল্টাপাল্টা হোক, তবুও যে পড়বে তার সাথে ভাবের বিনিময়ে কোন ভুল থাকবে না।
চেষ্টা করবো বইটা সংগ্রহ করার।
প্রথম আর সুন্দর মতামত দেয়ার জন্য অজস্র ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভ কামনা 🌹🌹
নিতাই বাবু
আপনার লেখা চিঠিতে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ওঠে এসেছে। তো চিঠি পড়ে মনে মনে ভাবছি, পদ্মাসেতু ও লকডাউনের কথা। বিশেষ করে পদ্মাসেতু। কেন যে বারবার এমন হচ্ছে, ভেবে এর কুল-কিনারা পাচ্ছি না।
সাবিনা ইয়াসমিন
পদ্মাসেতু আমাদের গর্ব। পদ্মাসেতু নিয়ে সকল ষড়যন্ত্র/ বিভ্রান্তি দূর হয়ে যাক এটাই কামনা করি।
মন্তব্যর জন্য ধন্যবাদ 🌹🌹
রেজওয়ানা কবির
এক কথায় বলতে গেলে অসাধারণ একটা চিঠি। চায়ে একেরপর এক চুমুক আর দেশ বিদেশ নিয়ে এতো ভাবনা ব্যাপারটা নিজের সাথে মিলে গেল ভেবে খুব বেশি ভালো লাগল। আমার একটা স্বভাব সেটা ভালো কিনা জানি না তবে যখন যে লেখাই পড়ি সেই লেখায় নিজেকে এমনভাবে ভাবি মনে হয় আমি সেই চরিত্র। তুমি ভালো আছো ফাগুন???প্রশ্নটায় অদ্ভুত আবেগ আছে। আর এত সুন্দর চিঠি আর এত সুন্দর গান শুনে ফাগুনকে আসতেই হবে।।।। ফাগুনও একইভাবে মিস করে নদীকে ♥️।অনেক বেশিইই ভালো লাগল আপু। যত পড়ি মনে হয় ততো শিখি।আরও চাই এরকম অনেক অনেক অনেক চিঠি।।।।
সাবিনা ইয়াসমিন
একজন নিবিষ্ট পাঠকের উদাহরণ পেলাম আপনার মন্তব্যে। নিজেকে লেখার চরিত্রের সাথে কল্পনা করে নেয়া,,,ভালো লাগল ব্যপার টা। এটাকে আমি ভালো-ই বলবো, খারাপ স্বভাব ভাবার কোন কারন নেই।
আপনার চিঠি পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা 🌹🌹
রোকসানা খন্দকার রুকু
চিঠিতে ভরপুর তথ্য। ফাগুন ভাবুক বটে। এমন সুন্দর চিঠি অনেকদিন পর পড়লাম।
বর্ষার স্যাঁতসেঁতে কাদাজল ধুয়ে নির্মল শরত এসেছে লেখায় তা স্পষ্ট। এমন চিঠি আরো চাই।
সাবিনা ইয়াসমিন
এমন চিঠি আরো! আচ্ছা হেমন্ত আসুক, তখন আরেকটা দেবো 😉
শুভ কামনা 🌹🌹
ছাইরাছ হেলাল
চিঠিতে বাস্তবতার অনেক কিছুই তুলে এনেছেন, কথা কথার ভঙ্গিতে, সংগতি অসংগতিও।
তবে জাদুউউউউউ(যাদু)ফাদু টেনে এনে লেখাটির মান ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে (ভুল ও হতা পারে বোঝার)।
চোখ বুজে থেকে বাস্তবতাকে অস্বীকার করা যায় না।
সাবিনা ইয়াসমিন
আরে, এটা হলো ইমোশনাল টান ( জাদুউউ)।
চিঠিতে কি শুধু কথা থাকতে পারে! আবেগের ঢেউ না থাকলে এটাতো অফিসিয়াল চিঠি হয়ে যেত!
তৌহিদুল ইসলাম
এরকম বাস্তবতা নিয়ে যে প্রেমিকযুগল চিঠি চালাচালি করে তাদের মনে আরো কতশত কথা লুকিয়ে আছে তাই ভাবছি। সমসাময়িক এসব বিষয় ভাবতে গেলে প্রেম জানালা দিয়ে পালাবে কিন্তুক!!
শুভকামনা আপু।
সাবিনা ইয়াসমিন
ভয় দেখাচ্ছেন নাকি পরামর্শ দিলেন!
বুঝতে পারছি, এখন থেকে জানালা বন্ধ করে চিঠি লেখা লাগবে।
শুভ কামনা আপনাকে 🌹🌹
তৌহিদুল ইসলাম
পরামর্শ দিলাম আপু, আজকাল ভালো কথাও অন্যকে বললে কেমন করে যেন তাঁকায়! কি অদ্ভোদ পিতিবী! ☺
হালিমা আক্তার
চিঠি মানেই আবেগ। আবেগের সাথে বাস্তবতার সুন্দর বিশ্লেষন। কলমের ভাষায় লেখা হয় না বলা কত শত কথা। শুভ কামনা রইলো।
সাবিনা ইয়াসমিন
দৃষ্টির দূরুত্ব যখন বাড়তে থাকে তখন মনের দূরত্ব কমিয়ে রাখতে চিঠির বিকল্প নেই।
চিঠি মানে আবেগ, প্রিয়জনকে কাছে রাখার, তাকে পাশে পাবার দুর্বার প্রচেষ্টা বলা যেতে পারে।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ 🌹🌹
আরজু মুক্তা
এক চিঠিতেই সমকালীন ঘটনা। পেপার আর পড়লাম না।
এক কাপ চায়ে দেখি কবিতা ওড়াতে পারি কিনা।
শুভ কামনা
সাবিনা ইয়াসমিন
আপনি পারবেন 🙂
গল্প/কবিতা / যা খুশি নিয়ে লিখতে পারার সকল গুণ আছে আপনার মাঝে।
শুভ কামনা 🌹🌹
ত্রিস্তান
কিছুই বুঝলাম না না প্রেম না বিদ্রোহ তবে গানটা ভীষণ ভালো লেগেছে ….
সাবিনা ইয়াসমিন
গানটি আমার অনেক পছন্দের।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা 🌹🌹
কামরুল ইসলাম
চমৎকার চিঠি
সাবিনা ইয়াসমিন
ধন্যবাদ 🌹🌹
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে বস্তুনিষ্ঠ লেখার জন্য ধন্যবাদ।
সাবিনা ইয়াসমিন
আপনাকেও ধন্যবাদ।