
যেখানে আমাদের ছোট্টবেলা” খেলা করে আনমনে
প্রকৃতির পাতা, ফুল ছিঁড়ে চটের বস্তায় বসে বসে খুনসুটির স্বর্গ”পাই
খোলা মাঠে গিয়ে ঘুড়ি” ওড়াই টিফিনে
ধানের শিস চুপিচুপি ঝরিয়ে সোনার ফসলে হাত লাগাই
প্রথম যেদিন বড়রাস্তায় উঠি দিদির সংগে
সেদিন ও গায়ে “প্রাইমারী”পোশাক ছিল
গায়ে মনে অআকখ” যুক্তাক্ষরে” এ বি সি ডি” নানান কৌতূহল ছিল!
আচ্ছা সিমেন্টের ঢালাই রাস্তা আমাদের গ্রামে কেন নেই”?
আচ্ছা দিদি তুমি এতো সাজ কেন?
তুমি কেন সারাজীবন থাকতে পারবেনা আমার সংগে?
তোমার হলুদ হাসি মেখে ওড়না বারবার গায়ে দিয়ে দেব !
তোমার পাটি গণিত বীজগণিত কেমিষ্ট্রিগুলো আমাতে কেন কষ না
মেয়েরা বড় হয়ে গেলে কি মেয়েদের ভালোবাসতে নেই?
মেয়েরা কেন মেয়েদের বিয়ে করতে পারে না?
আজ ও দূরগামী ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকে তোমার অপেক্ষায় !
তোমার মনে আছে প্রথম যেদিন আমরা ট্রেনে চেপে পিসিবাড়ি যাই!
মনে হত আকাশে ভাসতে থাকা বাড়িটা ছুটে যাচ্ছে
গাছপালা প্ল্যাটফর্ম আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করছে
আর ও একদিন মনে আছে প্রাইমারী স্কুলে তোমার হাত ধরে যেতাম
আমাকে কেউ মারলে তুমি তাঁর কান মলে দিতে
খেলার মাঠের কথা মনে আছে দৌড়ে তুমি ফার্ষ্ট হতে
আমি তোমার ব্যাগ ধরে নিয়ে বসে বসে শুধু দেখতাম
ভাবতাম সারাজীবন এইভাবে একসংগে কাটাতে পারি
তুমি না খেলে সারাদিন না খেয়ে থাকতাম
গরমের দিনে পুকুরের ধারে আমগাছে লুকিয়ে উঠতে
কাঁচা আমের চাট খেতে বেশ ভালোই লাগত
বাড়ির কাছের সেই প্রাইমারী স্কুল
স্কুলের সামনে বড় পুকুর
পুকুরের দুদিকে রাশি রাশি ফলের গাছ
তাঁর সাইডে বড় খেলার মাঠ
সেখানে কতকিছু খেলার বণ্যা বয়ে যেত
দিদি র আজ বিয়ে
মন খারাপের সেই মধ্যরাত
আচ্ছা বরেরা কেন বিয়ে করতে আসে?
কনেরা কেন যায় না?
দুটো শাঁখা আর এক চিলতে সিঁদুর কপালে উঠল
চারিদিকে হাসির উল্লাশ
নাচানাচি হইহুল্লোড়
সিঁথিতে রাঙানো লালে লাল
লাল” দেখেই আমি কেঁপে উঠলাম
দিদি” আর আমার নেই
অনেকদূরে চলে যাবে
শরীরের মাঝখান দিয়ে করাত দিয়ে কেউ যেন কেটে নিয়ে যাচ্ছে
চোখের চারিদিকটা অন্ধকার হয়ে গেল
চোখ থেকে জল বেরোনোর জল টুকু শুকিয়ে গেছে
কিছুক্ষণ পুরো নিস্তব্ধ জ্ঞানহীন মনে হল
মানুষগুলোকে ছায়া র মতো দেখলাম
পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছিল
নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল
আমাকে একপাশে ফেলে রেখে পুরো পৃথিবীটা যেন আনন্দে মগ্ন
বিশ্বাস করতে কষ্ট হল সিঁদুরে রাঙালেই সে অন্য কারোর হয়ে যায়!
লাল” দেখলেই কেমন রাগ হতো
মনে হতো সব নিয়ম সমাজ আইন কানুন ভেঙে দিদিকে আমার কাছে রাখি
প্রাইমারী স্কুল টা আজ নির্জন
অসহায় প্রৌঢ় বৃদ্ধ
অব্যক্ত যন্ত্রনা বুকে বয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পুরোনো কোন বটগাছ
সেই এক পরিচিত প্রাইমারী স্কুল ?
——— অরুণিমা মন্ডল দাস
কলকাতা, ভারত।
১৮টি মন্তব্য
সঞ্জয় মালাকার
সত্যি আজ প্রাইমারী স্কুল আজ নির্জন
অসহায় পৌঢ় বৃদ্ধ ।
চমৎকার লিখেছে অনেক অনেক শুভকামনা দিদ ভাই।
অরুণিমা মন্ডল দাস
আপনাকেও ধন্যবাদ জানাই। আমার লেখা ভালো লাগল জেনে খুশি হলাম। ভালো থাকবেন। সবার এতো ভালোবাসা পেয়ে মন ভরে গেল।
সাবিনা ইয়াসমিন
সিঁথিতে রাঙানো লাল সিঁদুরটাই বদলে দেয় একটি মেয়ের জীবন। অথবা মুখে উচ্চারিত তিনবার কবুল বলার পর আমার আমিকে বদলে যেতে দেখি এক নিমিষেই। অনুভব থেকে জন্ম নেয়া অনুভূতি গুলো অবিরাম ছড়িয়ে যায় জীবন বইয়ের প্রতি পাতায়।
আচ্ছা, বরেরাই কেন বিয়ে করতে আসে? কনেদেরই কেন সব ছেড়ে, সবাইকে ছেড়ে যেতে হয় ! এর উত্তর থাকেনা আমাদের কাছে। সমাজ এবং ধর্ম আমাদের প্রশ্ন করার অনুমতি দেয়নি, কেড়ে নিয়েছে উত্তর দেওয়ার স্বাধীনতা।
ভালো থাকবেন। ব্লগে নিয়মিত দেখে ভালো লাগছে। শুভ কামনা রইলো 🌹🌹
অরুণিমা মন্ডল দাস
আপনাকেও ধন্যবাদ জানাই। আমার লেখা ভালো লাগল জেনে খুশি হলাম। ভালো লাগল সবাইকে ভালোবাসা। ভালো থাকবেন। সবার এতো ভালোবাসা পেয়ে মন ভরে গেল।
মনির হোসেন মমি
প্রাইমারী স্কুল টা আজ নির্জন
অসহায় প্রৌঢ় বৃদ্ধ
অব্যক্ত যন্ত্রনা বুকে বয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পুরোনো কোন বটগাছ
সেই এক পরিচিত প্রাইমারী স্কুল ?
দিদিকে নিয়ে নির্বিগ্নে লিখেন আপনার কাব্য কবিতা।স্মৃতির পটে আকাঁ দিদিরা এক সময় যেতে হয় পরের ঘরে এটা হয়তো এ জীবনের নিয়ম।খুব ভাল হয়েছে।
অরুণিমা মন্ডল দাস
আপনাকেও ধন্যবাদ জানাই। আমার লেখা ভালো লাগল জেনে খুশি হলাম। ভালো লাগল সবাইকে ভালোবাসা। ভালো থাকবেন। সবার এতো ভালোবাসা পেয়ে মন ভরে গেল।
তৌহিদ
আপনার লেখাগুলি অনেক সুন্দর যা পাঠকদের আকৃষ্ট করে। শব্দচয়ন বেশ ধারালো। লিখুন আপু।
শুভকামনা জানবেন।
অরুণিমা মন্ডল দাস
আপনাকেও ধন্যবাদ জানাই। আমার লেখা ভালো লাগল জেনে খুশি হলাম। সোনেলায় আসতে পেরে ভালো লাগল সবাইকে ভালোবাসা। ভালো থাকবেন। খুব কম আসি সবার এতো ভালোবাসা পেয়ে মন ভরে গেল।
তৌহিদ
শুভকামনা জানবেন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
নিপুণভাবে লেখনী।
পড়ে বেশ ভালো লাগলো।
শুভকামনা অহর্নিশ।
অরুণিমা মন্ডল দাস
আপনাকেও ধন্যবাদ জানাই। আমার লেখা ভালো লাগল জেনে খুশি হলাম। সোনেলায় আসতে পেরে ভালো লাগল সবাইকে ভালোবাসা।
শামীম চৌধুরী
দারুন কবিতা। কবিতার মাধ্যমে প্রাইমারী স্কুলকে আবার পরিচিত করে দিলেন। ধন্যবাদ আপু।
অরুণিমা মন্ডল দাস
আপনাকেও ধন্যবাদ জানাই। আমার লেখা ভালো লাগল জেনে খুশি হলাম। সোনেলায় আসতে পেরে ভালো লাগল সবাইকে ভালোবাসা। ভালো থাকবেন। খুব কম আসি সবার এতো ভালোবাসা পেয়ে মন ভরে
জিসান শা ইকরাম
অনেক দিন পরে তোমার অসাধারন একটি কবিতা পড়লাম।
তোমার অন্যান্য লেখা থেকে এটি অনেক অনেক ভাল হয়েছে।
ম্যাগাজিনের অন্যতম সেরা একটি কবিতা হবে এটি।
শুভ কামনা।
অরুণিমা মন্ডল দাস
আপনাকেও ধন্যবাদ জানাই। আমার লেখা ভালো লাগল জেনে খুশি হলাম। সোনেলায় আসতে পেরে ভালো লাগল সবাইকে ভালোবাসা। ভালো থাকবেন। খুব কম আসি সবার এতো ভালোবাসা পেয়ে মন ভরে গেল। জিসানদা ম্যাগাজনের জন্য কবিতাটি নিয়েছেন আমি খুব খুশি।
নিতাই বাবু
মনের টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে উঠলো ছোটবেলার স্কুলজীবনের সেসব স্মৃতি।
ভালো থাকবেন আশা করি। সাথে ঈদুল ফিতরের আগাম শুভেচ্ছাও থাকলো।
অরুণিমা মন্ডল দাস
আপনাকেও ধন্যবাদ জানাই। আমার লেখা ভালো লাগল জেনে খুশি হলাম। সোনেলায় আসতে পেরে ভালো লাগল সবাইকে ভালোবাসা। ভালো থাকবেন। খুব কম আসি সবার এতো ভালোবাসা পেয়ে মন ভরে গেল।
আরজু মুক্তা
আপনার কবিতা পড়লে প্রকৃতি আর স্মৃতি একসাথে জেগে ওঠে।
ভালো থাকবেন