নন্দিনীর বিদেশ যাত্রা বাতিল করে সোজা চলে এলেন সূর্য্যের মা রোজীর নিকট।নন্দিনীকে দেখে আবেগে তাকে বুকে জড়িয়ে নিলেন মা।দুজনের চোখের কোণে জমাবদ্ধ ভাবাসার জল একে অপরকে মুছে দিলেন।
-আমি খুব খুশি হয়েছি তুমি ফিরে এসেছো।
-আমিও ভাগ্যবতী আপনার মতো মা পেয়ে।
নন্দিনী মার সাথে কথা বলার ফাকে এ দিক সে দিক তাকিয়ে সূর্য্যকে খোজঁ করছেন।মা টের পেয়ে তার সাথে কথা বলেন।
-সূর্য্য সেই কখন সমরদের বাসায় গেছে আসবার নাম নেই।
-কেনো?
-সমরদের দেশের বাড়ী থেকে আত্বীয় স্বজন এসেছেন…ওদের বাড়ী নাকি একদল নাম ধারী মুসলমানরা আগুন জ্বালিয়ে উপসনালয় ভাংচুর করেছে।
-কি বলেন মা এতো সাম্প্রদায়িক হামলা।
-হ্যা নাসির নগরে সাম্প্রোদায়িক যে হামলা হলো তাতে তো খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম ঠিক এভাবেই ১৯৭১ এ মুক্তি যুদ্ধের সময় অঞ্চল বেধে হামলা করত নাপাকিদের দোসর রাজাকার আল বদররা।মনে হচ্ছে সেই একই কায়দার হামলার স্বীকার হলেন সমরদের আত্বীয় চাচা-চাচাতো ভাইদের ঘর বাড়ী।সেখানে শুনেছি,পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে সমাবেশ করেন এক দল স্থানীয় মুসুল্লিরা আর তাদের সামনেই এক দল মুসুল্লি হিন্দুদের উপর হামলা চালায়।বড়ই আফসোস এই দেশটি স্বাধীন করতে তাদের অবদান ত্যাগ লক্ষণীয় ছিল অথচ তাদের উপর হামলায় সরকারের নীরব ভুমিকা আমাকে ভাবিয়ে তুলে,এই কি সেই অসাম্প্রদায়িক বঙ্গ বন্ধুর আওয়ামিলীগ?আরো লক্ষণীয় যে সেখানকার সাংসদের সাফাই বক্তব্য সে নিশ্চিত হামলাটি নাকি হুজুররা করেননি।এমন স্পর্শকাতর ঘটনার মন্তব্য যদি এমন হয় তবে সে বলে দিলেই পারতেন ঘটনাটি কারা ঘটিয়ে ছিল।
যাক সে কথা তোমার মামী সাথে আসেনি?
-না,মামীর সাথে ফোনে কথা হয়েছে…আজকে আপনার কাছেই থাকবো।আমি বরং সমরদের বাড়ীতে গিয়ে দেখি কি অবস্থা সেখানে।
-না না তোমাকে যেতে হবে না,তা ছাড়া সূর্য্যের কথা মতো তারা একটি প্রতিবাদ সভা করবে টি এস সিতে..কেননা নাসির নগরের হামলা এখনো থামেনি অঞ্জন দেবের বাড়ীতে আবারও হামলা হয়েছে।ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের বক্তব্যে দায় সারা ভাব দেখলাম তাতে আমার দৃষ্টিতে সূর্য্যকে এমন সব প্রতিবাদী কাজ থেকে বারণ তোমাকেই করতে হবে।একটু সময় লাগবে ওর শরিরে মুক্তিযোদ্ধার রক্ত।
-মা যে কি বলেন,আমরা যদি এ ভাবে গুটিয়ে আসি তবে দেশের অবস্থা কি হবে।আমরা নতুন প্রজন্মরা যে আমাদের পূর্ব পুরুষদের কাছে অনেক ঋণী।
-দেশের কথা বলছো তা তো বঙ্গ বন্ধুর মৃত্যুর পরইতো জাহান্নামে চলে গেছে।এখন যা একটু আশা জেগেছিলো এ সরকারের উপর তাও দেখছি আশার গুড়েবালি তা না হলে কি মুক্তি যুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকতে মুক্তিযোদ্ধারা পদে পদে মাইর খায় কাউকে বা জানে শেষ করে দেয়।এ অবস্থা হয়তো আরো ভয়ংকর হবে যদি এ সরকার কখনো ফল্ট করেন।
-চেষ্টা করব…..আর আপনি এখন কোন দুশ্চিন্তা করবেন না।
-চিন্তা কি এমনি আসে….তুমি যখন মা হবে তখন বুঝবে চিন্তা কেনো হয়।আমার কিছু ঔষধ খেতে হবে তুমি পানির ঐ জগটা একটু হাত বাড়ীয়ে দিবে?
নন্দিনী মায়ের সেবায় ব্রত হলেন নন্দিনীর মায়ারী হাত মায়ের কপালে স্পর্শে ধীরে ধীরে তার চোখে তন্দ্রা নেমে আসে।নন্দিনী মোবাইল বের করে সূর্য্যকে ফোন দেবার চেষ্টা করছেন বার বার কোন রিসিভ সংকেত না পাওয়াতে মনে অভিমান জাগে।
মোটা মোটি সকল প্রস্তুতি শেষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে নাছির নগরে সূর্য্যের অরাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন সূর্য্য সেনা ক্লাবের গমণে।কিছুটা তর্ক উঠে পর পর দুটো ঘটনার অঘটনের জন্য।দুটোই সনাতন ধর্মাবলী দেশের ঐতিহ্যে আঘাত।এক ব্রাহ্মণ বাড়ীয়ায় নাসির নগর হিন্দু পরিবারের উপর হামলা আরেকটি হলো যুগ যুগের ঐতিহ্য নৃ গোষ্টি সাঁওতাল।গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের উপর হামলা আগুন ভাংচুর করেন স্থানীয় সংখ্যাগরুরা।এ লজ্জা আমাদের,এ লজ্জা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাত করা।আমাদের এখন সময় এসেছে “যেখানেই অন্যায় সেখানেই প্রতিবাদ প্রতিরোধ” শ্লোগানে এগিয়ে যাওয়া।
বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে শ্লোগানে উত্তাল আবারো শাহবাগ টি এস সি মোড়।জনতা সজাগ সরকার বেকার এমন একটি পরিস্থিতির উপরে চলছি আমরা।সেখানে সূর্য্যের এমন জোড়ালো বক্তিতায় শ্লোগানে মুখোরিত হয় সভাস্থলটি।প্রায় সবার কপালে কালো ফিতে আবদ্ধ।বেনার ফেষ্টুনে লেখা প্রতিবাদের ভাষার চলছে কারুকার্য।সূর্য্য বক্তিতা শেষে অন্যকে কথা বলার সুযোগ দিয়ে তার পেন্টের পকেটে রাখা মোবাইলটি চেক করলেন….নন্দিনীর ফোন নম্বর তাও কয়েক বার সে ফোন ব্যাক করলেন।অপর প্রান্ত হতে রিসিভ করলেন নন্দিনী।
-হ্যালো কে? নন্দিনী!তুমি যাওনি।
-না,
-কেনো?
-চলে গেলে কি খুশি হতে?
-না তা নয়….মানে,,,,
-মানে আবার কি তুমি ভেবো না যে আমি তোমার জন্য ফিরে এসেছি….ফিরে এসেছি তোমার মায়ের জন্য।মায়ের শরিরের অবস্থা তেমন ভালো না তা তুমি দেখেও দেখো না শুধু শুধু বেকার কাজ কর্ম করে বেড়াও।
-হয়েছে হয়েছে আর জ্ঞান দিতে হবে না,তুমি এখন কোথায়?
-তোমাদের বাসায় মায়ের কাছে।
-ঠিক আছে তুমি থাকো আমি একটু পরেই চলে আসছি।
ফোনের কথা শেষ করে সে আবারো সভায় যোগ দিলেন।তার বক্তিতার পর যিনি বক্তিতা দিচ্ছেন তার কিছু কথার কোন উত্তর খোজেঁ পেলেন না কেউ।তার কথা হলো যাকে কেন্দ্র করে নাসির নগরে যে সংখ্যা লঘুদের উপর হামলা হলো যে কারনে হলো সে একজন নিরীহ অশিক্ষিত জেলের ছেলে জেলে।যিনি লেখা পড়া কিছুই জানেন না সে কি ভাবে এতো বিতর্কিত ছবি সদ্য তৈরী তার এ্যাকাউন্টে পোষ্ট করবেন।জানা মতে সে সদ্য এনড্রয়েড মোবাইল পাওয়াতে সে অন্যজনকে দিয়ে একটি ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট খোলে এবং ঘটনাটি যখন ঘটতে থাকে তখন সে ছিলো মাছ ধরার কাজে আর মোবাইলটি ছিলো বাসায়।এই হলো তার বিস্তারিত অবশ্য যে ছবিটি পোষ্ট হয়েছিল তা ছিলো খুবই স্পর্শকাতর যা যে কোন মুসলমানের রাগ আসা স্বাভাবিক তাই বলে উত্তেজিত হয়ে এমন নেক্কারজনক ঘটনা ঘটানোর পক্ষেও আমি নই।আমি কেনো এমন জগন্য ঘটায় সহি ইসলাম ধর্মের মানুষেরাও সায় দিবেন না কারন ইসলামে স্পষ্ট ভাবে নির্দেশ আছে অন্য ধর্মের প্রতি কোন কটুক্তিও চলবে না।এটা নিশ্চিত পরিকল্পিত ছিলো এবং স্থানীয় প্রশাসন এবং প্রভাবশালী ক্ষমতাসীন নেতা খেতারা জড়িত।নতুবা পর পর দফায় দফায় হামলা হতো না।সরকার বলছেন তদন্ত হয়ে এর বিচার নিশ্চিত করবেন।তার ধারণা এমন তদন্ত ফদন্তে বহু ঘটনার মামলাই ঝুলে আছে এটাও তদন্তের নামে ঝুলে থাকবে এক দিন আরেকটি ঘটনার চাপে মাটি চাপা পড়বে।
সবার বক্তিতা শেষে সভাপতির সমাপ্তি বক্তিতা দিয়ে দল বদ্ধ ভাবে ওরা চলে গেলেন সমরদের বাসায় যেখানে সদ্য নাসির নগরের হামলায় সর্বোস্ব হারিয়ে নিরাপত্তাহীনতা মনে করে ঢাকায় সমরদের বাড়ীতে চলে আসা তার চাচার পুরো এক পরিবার।ঢাকা শহরের বাড়ী ঘর গ্রামের মতো বিস্তর উঠোন নেই যে যেখানে দলবদ্ধ ভাবে কথা বলবেন কিংবা লোকের অতিরিক্ত জায়গা দেয়ার মতো স্থান তাছাড়া তারা সেখানে একটি দল গঠন করবেন।কবে কখন কারা কারা সেখানে যাবেন কিছু ঔষধ পানীয় নিয়ে তাছাড়া সেখানে যেতে প্রস্তুতি তাও আলোচনায় আসবে।তাই তারা ঠিক করলেন সমরদের বাড়ীর ছাদে জড়ো হবেন।
চলবে
ছবি ও লিংক অনলাইন
২১টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
মুসলিম ধর্মের ইগোতে আঘাত লাগা এত্তো সস্তা যে ভাষায় প্রকাশ করা যায়না, ছুতো পেলেই হলো। নিজেদের স্বৈরাচারীতা জায়েজ করতে এরা পারেনা এমন কিছুই নেই। খুবই জঘন্য ঘটনা, সুচারু রূপে গল্পের মধ্যে জুড়ে দিতে আপনার জুড়ি নেই মনির ভাইয়া। বেশ ভালো লেগেছে পর্বটা।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ধন্যবাদ আপু…।অনেক মিস করেছি আপনাকে -{@ ফের অভিনন্দন।
মোঃ মজিবর রহমান
কে হামলা করেছে তা প্রশাসন ভালই জানে আর যদি না জানে তাদের বেতনে না পুষে খোঁয়াড়ে রাখায় উত্তম। আর কে পিএম, জয়ের বিরুধ্বে ফেবুতে কটাক্ষ করল তাঁর জন্য গ্রেপ্তার যদি সহজ হয় তবে এটা কেন নয়? জনসম্মুখে ঘটছে। বদি জামিন পায় আর নিরাপদ সাধারন মানুষ কারাগারে বছরের প বছর আটকা থাকে এই বিচার ব্যাবস্থা।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
আমরা জানি মানি সব করি তবে ঐ যে স্থির ঠায় দাড়িয়ে তাল গাছটি আমারি -{@ ধন্যবাদ।
মোঃ মজিবর রহমান
-{@
ব্লগার সজীব
ইসলামি জোস খুব বড় জোস। বললেই হয় ইসলামের অবমাননা করেছে, অমনি উন্মাদের মত কোন বিচার বিবেচনা না করেই আরম্ভ করে দেয় ভাংচুর। এমন বাংলাদেশ আমরা চাইনি।
সুন্দর উপস্থাপন।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
অথচ এই ইসলামের অনুসারিরা আমাদের সেই ইসলামের অনুসারি নয় -{@
ব্লগার সজীব
এদের জন্যই ইসলামের এই অবস্থা বর্তমানে।
আবু খায়ের আনিছ
বিধি কত কি দেখাইলা, মানুষ মেরে পশুর জন্য ধর্ম বানাইবা?
ইদানীং তৃতীয় বিরোধী দল ফেইজবুকে শুরু হয়েছে আরেক টপিক, রহিঙ্গা।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মনে হয় আমরা কোন এক বড় ঝামেলায় পড়ব।একটার পর একটা ইস্যুর সৃষ্টি পূর্বেটাকে ভুলিয়ে দেয়।ধন্যবাদ। -{@
আবু খায়ের আনিছ
রোহিঙ্গা গ্রহণ বা বর্জন নিয়ে যতটা সমস্যা না হবে বাঙালীর মুসলিম প্রীতি তারচেয়ে বেশি সমস্যা করবে, হয়ত এর প্রভাব শহরের দিকে কম হবে কিন্তু সীমান্ত এলাকাগুলো অরক্ষিত হয়ে পড়বে ।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ঠিক বলেছেন।সহমত -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
“কান নিয়েছে চিলে”—-আর এটাই চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। কে দোষ করে, আর কে যে সাজা পায়! ধর্ম নিয়ে রাজনীতি শুরু করিয়ে দিয়েছিলো ব্রিটিশ। কিন্তু আমি ব্রিটিশদের দোষ দেখিনা। আমাদের নিজেদের মধ্যেই ফাঁক ছিলো।
গল্পে গল্পে বাস্তবকে নিয়ে ভালো লিখেছেন মনির ভাই।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ঠিক বলেছেন আমাদের কিছু অংশই এর কারন তাছাড়া নোংরা রাজনিতীও একটি ফেক্টর।ধন্যবাদ -{@
ছাইরাছ হেলাল
জুজু দেখিয়ে আমারা মগের মুল্লুক কায়েম করতে পারছি।
ইঞ্জা
আমাদের ধর্ম ইসলাম হলো ধৈর্যের ধর্ম, অসাম্প্রদায়িক ধর্ম, কিন্তু আজ এই ধর্ম গিয়ে পড়েছে ধর্ম বিক্রেতাদের হাতে, ইসলাম নিয়ে যা হচ্ছে তা ইসলাম ধর্ম বিরুদ্ধ কিন্তু সরকার, বিরোধী দল সবাই এইটাকে নিয়ে ব্যবসা ফেঁদে বসে আছে। 🙁
মিষ্টি জিন
ধর্মের বেশে মোহ যারে এসে ধরে,
অন্ধ সে-জন মারে আর শুধু মরে।
রবীন্দ্রনাথের এই কঁথা গুলো এখন প্রমানিত ।
অনেক ভাল লেখা।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
গুরু জনদের কথা বাসী হলেও ফলে -{@
অরুনি মায়া অনু
যারা এ কাজ করে তারা আদৌ ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কিছুই জানেনা। একটি শান্তির ধর্মকে জ্বালাও পোড়াও মানুষ হত্যা করে কলংকিত করা বই আর কিছুই করছেনা।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ইসলামকে কলংকিত করার শুরু করেছিল ইহুদি জাতি ওরা বরাবর ইসলামের শত্রু।ওরা প্রথমত ইসলামী শক্তিপ্রধান দেশগুলোতে গন্ডগোল শুরু করে বিভিন্ন ইসলামী রাষ্ট্র প্রধানদের হত্যা বা ফাসি দিলেন।ইসলামকে কলংকিত করতে লাদেনকে সৃষ্টি সৃষ্টি করলেন মালালাকেও তাদের সাথে কিছু ইসলামী নেতা যোগ দিলেন এরাই ইসলামের শত্রু
হিন্দু সাওতালরা কখনিই শত্রু ছিলেন না আমরা যদি আমাদের অতীতকেই দেখি কিংবা এখনো সীমান্ত এলাকায় ভারত বংলাদেশ হিন্দু মুসলিম খুবই ক্লোজ থেকে বসবাস করছেন।
ধন্যবাদ।
জিসান শা ইকরাম
এমন দেশ আমরা চাইনি, এ কোন দেশে বসবাস করছি আমরা?