সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা কাকাবাবু সিরিজের তৃতীয় বই “ পাহাড় চূড়ায় আতঙ্ক”।
সিরিজের প্রথম বই “ভয়ংকর সুন্দর”।
দ্বিতীয় বই “সবুজ দ্বীপের রাজা”।
এই দুটি বইয়ের কাহিনী সংক্ষেপ আগে লিখেছি তাই এবার লিখছি তৃতীয় বইয়ের কথা।
“ পাহাড় চূড়ায় আতঙ্ক”
এবার সন্তু আর কাকাবাবু এসেছে গোরখেশপ, এটা এভারেস্ট যাত্রীদের একটা বেসক্যাম্প। সামনেই একটা ছোট পাহার নাম তার কালাপাথর, এখান থেকে এভারেস্টে চূড়া স্পষ্ট দেখা যায়। সন্তুদের সাথে দুজন শেরপা আর ৫জন মালবাহক বা কুলী। কিছু দিন আগে কাকাবাবু বিদেশ থেকে ফেরার সময় একটা কাচের বাক্সে করে একটা দাঁত নিয়ে এসেছিলেন, সেই দাঁতটা এখানেও নিয়ে এসেছেন।
যদিও সন্তুদের এভারেস্ট যাওয়ার কথা কিন্তু দেখা গেলো কাকাবাবু গোরখেশপ এসে আর এগুলেন না। এখানে একটা গম্বুজ মত আছে, যার দোতলায় একটা খোলা জানলা আছে। কাকাবাবু রাতে সেখানে দূরবীন নিয়ে বসে থাকেন। তাই সন্তুর ধারনা হল কাকাবাবু ইয়েটি খুঁজতে এসেছেন, কারণ কাকাবাবুর কাছে বড় একটা দাঁত আছে, সেটা নিশ্চয় ইয়েটির দাঁত। কিন্তু কাকাবাবু ইয়েটির কথা শুনে বললেন ইয়েটি বলে কিছু নাই।
এই দাঁতটা বিজ্ঞানী কোয়েনিংসওয়াল্ড বেইজিং এর ফুটপাত থেকে কিনে ছিলেন, সেখান থেকে তিনি ৩টি দাঁত কিনেন। কাকাবাবুর কাছে যে দাঁতটা আছে সেটা স্বাভাবিক মানুষের দাঁতের তুলনায় অনেক বড়। এতো বড় দাঁতের মালিক হতে হলে সেই মানুষকে ২৫ ফুট লম্বা হতে হবে। বিজ্ঞানী এই কাল্পনিক দানবীয় মানুষের নাম দেন জাইগ্যান্টোপিথিকাস।
কিছুদিন আগে শিপটন বলে একজন অভিযাত্রী এখানে এসে কালাপাহাড়ে একটি বিরাট আকারের মানুষ দেখেন বলে তার ডায়রিতে লিখে রেখে গেছেন। বেস ক্যাম্প থেকে একা হাঁটতে বেরিয়ে সে একদিন বেমালুম গায়েব হয়ে যায়।
এদিকে কাকাবাবুর একদিন রাতে কালাপাহাড়ে দুটি আলোর বিন্দু দেখতে পান। পরদিন সকালই তিনি শেরপাদের সর্দারকে ডেকে বলেন এখনই তারা সামনের দিকে এগুবেন, আজকে রাতে কালাপাহাড়ে গিয়ে ক্যাম্প করবেন। সন্তু তার ব্যাগ গোছানোর জন্য গম্বুজে ঢুকে দেখে শেরপাদের একজন নাম তার “নোরবু “, গম্বুজ ঢুকে কাচের বাক্সে রাখা দাঁতটার দিকে তাকিয়ে আছে। সন্তু নিষেধ করা সত্তের নোরবু দাঁত রাখা বাক্সটা নিয়ে বাইরে চলে যেতে চেষ্টা করলো। কিন্তু সন্তু কারাটের প্যাচে তাকে মাটিতে ফেলে দিয়ে বাক্সটি হাতে নিয়ে নিলো। এমন সময় কাকাবাবু গম্বুজে ঢুকে দেখলেন নোরবু মাটিতে পরে আছে আর সন্তু বাক্সটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছা। সন্তু কাকাবাবুকে আসল কথা বলল না, জানাল নোরবু পা পিছলে পরে গেছে।
সকালে সবাই তৈরি হয়ে নিয়ে কালাপাহাড়ের দিকে এগিয়ে চলতে শুরু করল। অনেকটা পথ আসার পরে কাকাবাবুর সন্তুকে ডেকে বলল বাকি দল নিয়ে কালাপাহাড়ে গিয়ে তাঁবু খাটাতে। তিনি এখানে থেকে চারপাশটা খুঁজে দেখবেন, কারণ তার ধারনা গত রাতে এখানেই সেই আলো দুটি দেখেছেন। সন্তু এগিয়ে গেলে পরে কাকাবাবু খুঁজে ছয়টি পায়ের ছাপ দেখতে পেলো। মানুষের পায়ের ছাপের চেয়ে অনেক বড় আর গভীর। কাকাবাবু সেগুলির ছবি তুলে মাপ লিখে রাখলেন। এমন সময় মিংমা আর দলের বাকি সবাই দৌড়ে এসে জানালো নোরবু ইয়েটি দেখতে পেয়েছে, এখনই এখান থেকে পালাতে হবে। কাকাবাবু রাজি না হওয়াতে তাকে কজনে মিলে কাঁধে করে নিয়ে ফেরার পথ ধরলো।
গম্বুজের কাছে এসে কাকাবাবুকে নিচে নামানো হলে তিনি সেখানেই থেকে যেতে চাইলেন। শেষে কাকাবাবু আর সন্তু ছাড়া বাকি সবাই চলে গেলো। রাতটা সন্তুরা গম্বুজে কাটানোর সময় কাকাবাবু জানালেন যে তিনি ওয়ারলেসে আগেই সাহায্য চেয়ে আরো একটি দল পাঠাতে বলেছেন, ওরা দু দিনের মধ্যই চলে আসবে। রাতে হঠাত করেই গম্বুজের লোহার দরজায়া ধুম ধুম করে শব্দ হতে লাগলো। মনে হচ্ছে কেউ দরজা ভাংতে চাইছে, কাকাবাবু বারবার জিজ্ঞাস করতেও বাইরে থেকে কোন জবাব পেলেন না। শেষ পর্যন্ত যখন দরজা পেটার শব্দ থেমে গেল তখন কিছুটা সময় পরে ওরা দরজা খুলতে গিয়ে দেখল তা খোলা যাচ্ছে না। বাইরে থেকে কেউ দরজা তালা মারার হুকের সাথে আটকে দিয়েছে। সন্তুরা ছোট্ট গম্বুজে আটকা পরে গেছে।
কাকাবাবু ওয়ারলেসে হেলিকপ্টার নিয়ে তাদের উদ্ধার করার জন্য বলেছেন, সকালেই একটি হেলিকপ্টার চলে এলো। দুজন সামরিক অফিসার এসে দরজার তালা ভেঙ্গে সন্তুদের উদ্ধার করলেন। গম্বুজ থেকে বেরিয়ে কাকাবাবু দেখলেন সামনেই এক চীনাম্যান মরে পরে আছে। কাকাবাবু দেখলেন এই লোক কম করেও দুদিন আগে মারা গেছে, আর কাকাবাবুর গতকাল যখন এখানে এসেছেন তখন এই মৃতদেহ এখানে ছিল না।
ওরা হেলিকপ্টারে করে মৃত দেহটি কাছের একটি শহরে পাঠিয়ে দিল। হেলিকপ্টার ফিরতে ঘন্টাদুয়েক লাগবে, এই ফাকে কাকাবাবু যেখানে ইয়েটি দেখা গিয়েছিল সেখানে যেতে চাইলেন। ওরা রওনা হবে এমন সময় মিংমা ফিরে এলো। সেও যেতে চায় সন্তুদের সাথে। ওরা সবাই চলল সেই যায়গাতে। যায়গাটার কাছাকাছি যেতে কাকাবাবু অনেকটা পিছিয়ে পরেছিলেন। সমনে থেকে সন্তুরা হঠাত করেই দেখল পেছনে কাকাবাবু নেই। ওরা কাকাবাবুকে খুঁজতে গিয়ে দেখে বরফের উপরে কাকাবাবুর একটা ক্র্যাচ পরে আছে, তার পাশেই কতটুকু রক্ত। কিন্তু কাকাবাবু যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। এদিকে আকাশের অবস্থা খারাপ হতে থাকে তাই সামরিক লোক দুজন হেলিকপ্টার ফিরে এলে বড় সার্চ পাটি নিয়ে আসার জন্য চলে যায়। সন্তু আর মিংমা গম্বুজে থেকে যায়।
পরদিন সকালে সন্তু আর মিংমা যায় কাকাবাবুকে খুঁজতে। ওরা এক যায়গায় নরম বরফর দেখেছিল চোরাবালির মত। সেখানে বরফ খুরে ওরা একটা লোহার দরজা দেখতে পায়। দরজাটি হঠাত খুলে যেতে সন্তু সেখান দিয়ে নিচে পরে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। মিংমা কোন রকমে উপরে উঠে আসে, কিন্তু কোমরে প্রচণ্ড চোট পেয়ে রক্ত ঝরতে থাকে।
কাকাবাবুর জ্ঞান ফেরে একটা গুহার মত যায়গায়। পেছন থেকে কে যেন তার মাথায় বাড়ি দিয়ে তাকে অজ্ঞান করে ফেলেছিল। কিছুক্ষণ পরে সামনে থেকে একটা ইয়েটি কাকাবাবুর দিকে এগিয়ে আসে, কিন্তু কাকাবাবু বুঝতে পারেন যে এটা কোন মানুষ ইয়েটি সেজেছে। কাকাবাবু লোকটিকে কাবু করে ফেললে পরে আরও ৩জন লোক আসে। তারা কাকাবাবুর চোখ বেধে গুহার আরও ভিতরে নিয়ে যায়। সেখানে চোখ খোলার পরে কাকাবাবু দেখেন সন্তু একটা টেবিলের উপর মরার মত পরে আছে। আসলে সন্তুকে অজ্ঞান অবস্থাতেই ঘুমের ইনজেকশন দেয়া হয়েছে।
সেই যে অভিযাত্রী শিপটন এই এলাকায় এসে অদৃশ্য হয়ে গিয়ে ছিল সে আসলে মারা যায়নি। সে একজন গুপ্তচর, এই এলাকাতে সে কিছু অত্যাধুনিক যন্ত্র বসাচ্ছে। আর দুমাস বাদেই তার কাজ সব শেষ হয়ে যাবে এখানকার।
এই লেখায় গল্পের শেষ অংশটুকু লিখলাম না। তাই কোন স্পয়লার সতর্কতা নেই।
পর্যবেক্ষণ – শেষ মূহুর্তে সন্তু কাকাবাবুর জন্য তার ক্র্যাচ দুটি খুঁজে নিয়ে আসে, কিন্তু কাকাবাবু যখন গায়েব হন তখন বরফের উপরে সন্তুরা কাকাবাবুর একটা ক্র্যাচ দেখতে পায়। তাহলে বন্দিশালায় সন্তু দুটি ক্র্যাচ কি করে খুঁজে পেলো?
২০টি মন্তব্য
ভোরের শিশির
এবং বরাবরের মতোই ঝাক্কাস 😀
আপনাকে দিয়ে যে কোন রাইটারের উপন্যাসের প্রচারণা করতে দিলে আপনি নিশ্চিত পুরো পাঠকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারবেন। :p
মরুভূমির জলদস্যু
মনে হয় না। 🙁
আমার লেখা পড়ে অনেকেই হয়তো আর বই কিনতেই চাইবে না।
ভোরের শিশির
আমি কোনদিন বই লিখলে আপনাকে পড়িয়ে রিভিউ নিয়ে তবেই বাজারে ছাড়বো বলে দিলাম 😀
মরুভূমির জলদস্যু
অপেক্ষায় রইলাম আপনার একটি বই পড়ার জন্য। তবে কবিতার বই লিখেন না।
ভোরের শিশির
হিহিহিহাহাহহা… আপনি কবিতা লিখতেই জানি না, আবার কবিতার বই!!! :D)
বই লিখতে যোগ্যতা লাগে ম.জ ভাইয়া, যেদিন হবে সেদিন হয়তো… জানাবো আপনাকে নিশ্চিত 😀
ভোরের শিশির
*আমি কবিতা লিখতেই জানি না* হবে… স্যরি :p
নীলাঞ্জনা নীলা
নীতেশদার সাথে একমত আমিও।
মরুভূমির জলদস্যু
আমার লেখা রিভিউ পড়ার পরে তারা আর বই নাও কিনতে পারে, কারণ আমার রিভিউ গুলি স্পয়লার দোষেদুষ্ট হয়।
অপার্থিব
ভাল লাগলো আপনার রিভিউ।
মরুভূমির জলদস্যু
ধন্যবাদ
স্বপ্ন নীলা
“ পাহাড় চূড়ায় আতঙ্ক” —– দারুন রিভিউ হয়েছে।
মরুভূমির জলদস্যু
ধন্যবাদ মতামতের জন্য।
তানজির খান
দারুণ রিভিউ হয়েছে। আপনার রিভিউ পড়লে ছবি ভেসে উঠে চোখে। চলুক এ পথ, লেখা আসুক নিয়মিত ভিন্ন চোখে নতুন বইয়ের রিভিউয়ে।
শুভ কামনা
মরুভূমির জলদস্যু
আমি কিন্তু পুরনো বইয়ের পাঠক। নতুন বইয়ের প্রতি আকর্ষণ কম। বই মেলা থেকে নতুন বই কিনে এনে পুরনো বই পড়ে পড়ে নতুন গুলি পুরনো হয়ে গেছে আমার।
তানজির খান
হুম, সে আমি আপনাকে বুঝেছি। দারুণ আপনার দৃষ্টি ভঙ্গী। আমাকে এক লেখক তার বই এর রিভিউ লিখতে বলেছিল। আমিও সে প্রস্তাব নিয়েছিলাম। কিন্তু ব্যপারটা সহজ না তা বুঝেছি পরে। বইটা যদিও তাত্বিক ছিল। রিভিউ লেখা সব সময়ই কঠিন। একটা সুন্দর রিভিউ বই এর সেল বাড়িয়ে দেয় বহু গুণ, যদি বানিজ্যিক দৃষ্টি কোণ থেকে বলি। আর সৃজনশীলতা সবার মধ্যে সহজাত না। আপনার সেই গুণ আছে খুব ভাল ভাবেই। আপনার রিভিউ ভাল লাগে।
মরুভূমির জলদস্যু
আপনি যে প্রশংসা করেছে তার যোগ্য আমি নই খান ভাই। -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
যেমন ছবিব্লগ, তেমন বইয়ের রিভিউ। মানুষের এতো গুণ কি করে হয়? আমার কেন নেই? 🙁
মরুভূমির জলদস্যু
এই খানে গুণের কিছু নাই।
ছবিগুলি ক্যামেরার গুণে আর রিভিউ গুলি বইয়ের লেখকের গুণে। :p
নীলাঞ্জনা নীলা
এটাও তো পারিনা। 🙁
মরুভূমির জলদস্যু
-{@