
তুমিই ছিলে আমার প্রথম সিড়ি, যে সিড়ি বেয়ে আমি রঙীন স্বপ্ন দেখেছিলাম পৃথিবীর। আজও তুমিই হলে আমার পরবর্তী সিড়ি, যে সিড়ি বেয়ে আজ আমি প্রতিষ্ঠিত। আজ কী নেই আমার, অর্থ, যশ, খ্যাতি, সম্পত্তি, গাড়ি বাড়ি; সবই আছে, ক্যানো না আজ আমি প্রতিষ্ঠিত।
কিন্তু ভুলেই গিয়েছিলাম জোয়ার ভাটার কথা, অহংকারের কথা, নিজেকে হারিয়ে ফেলার কথা। অনেকটা বিরতির পর আজ ভাটার সামান্য ঢেউয়ের শব্দ আমাকে বিচলিত করে তুলেছে, বুঝতে পারছিলাম আমার নিন্মমুখী সিড়ির দৃশ্যপট। বাড়িতে ফেরার পর যখন তুমি আমাকে বুঝতে জিজ্ঞেস করতে বিবর্ণ মুখের বর্ণনা, আমি মুখ ফিরিয়ে তোমাকে আড়াল করে দিতাম। একাএকাই যুদ্ধ করে যাচ্ছিলাম।
হঠাৎ করেই আজ আবার তুমি এলে, শর্ত জুড়ে দিলে, শর্ত সাপেক্ষে উর্ধ্বমুখী সিড়ির দৃশ্যপট চোখে ভাসতেছিলো। শর্ত না জেনেই শর্ত মেনে নিলাম, প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার কথা ভেবে। পুনরায় আলোকিত হতে শুরু করলো আমার সবটা স্বপ্ন।
তুমি ডাকলে শর্ত পূরণের দাবিতে, শর্ত শুনে শর্ত আমাকে ভেঙে চুরে চুরমার করে দিলো, বললে ছোট একটি শর্ত যা কিনা কাউকে খুন করতে হবে। শর্ত ভাঙতে পারছি না, আঘাত করছো পিছনের স্মৃতিকে, খুন সেও করতে পারছি না, বারংবার খুন করতে গিয়ে ফিরে আসছি, ভাবনায় প্রতিটি সিড়ির ধাপ মনে করিয়ে দিচ্ছিলো অতীতের ভুল সিদ্ধান্তের কথা। ভেবে ভেবে আজ নিজেকে জ্যান্ত মৃত মনে হচ্ছে।
হঠাৎ খুন না করেও খুনের দায়ে খুনের আসামী হলাম, তোমাকে বিশ্বাস করাতেই পারছিলাম না আমি খুন করিনি, অবশেষে বিশ্বাস করলে আমি খুনী নই। একদিন মুক্তি পেলাম, পুলিশকে জিজ্ঞেস করতেই বলে দিলেন, খুন আপনি করেননি, খুন করেছে আপনার স্ত্রী, একটি অডিও বার্তার স্বীকারোক্তি পেয়েই তাকে গ্রেফতার।
জেল থেকে বেড়িয়ে জানতে চাইলাম, তোমার শর্ত পূর্ণ হয়েছে; কিন্তু ক্যানো তুমি এমন করলে? জানতে পারলাম, আমার স্ত্রীও জিম্মি ছিলো তার কাছে, যার কাছে তাকে তুলে দিয়ে সিড়ির ধাপ খুঁজে পেয়েছিলাম, আজ তুমি বলে দিলে পাপ কখনোই পাপীকে ছাড়ে না। আজ তুমি আছো, কিন্তু তোমার পাশে কেউ নেই, শুধু কান্নাই তোমার সঙ্গী, তোমার স্ত্রীও আমার মতো অন্যের দ্বারা ব্যবহৃত।
৮টি মন্তব্য
রেহানা বীথি
স্বপ্ন খুব বেশি রঙিন হলে চোখে ধাঁধাঁ লেগে যায়। সিঁড়ির শেষ ধাপে হয়তো বিপদ আছে, চোখে পড়ে না তা।
ভালো লিখলেন।
রুদ্র আমিন
ঠিক তাই, আমরা আমাদের শেষ গন্তব্যের কথা ভুলে যাই বলেই আমরা এমনটা করি, যা কাম্য নয়।
মনির হোসেন মমি
জীবনের সব সফল গল্পের পিছনেই কিছু না কারন থাকে তবে গল্পে যে কারনটি ছিলো তা অমানবিক বিবেক বহিঃভুর্ত।এ ভাবে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায় কিন্তু জীবন স্বার্থকের সূখের কোন অধ্যায় থাকে না। অল্প কথা চমৎকার গল্প।
তৌহিদ
হঠাৎ করে জীবনে কেউ এলে বুঝি এরকমই হয়!! শর্ত দিয়ে সম্পর্ক হয়না, এটাই সত্য। তাও আবার এমন শর্ত!!
অল্প কথায় যেন অনেক কিছু লিখে ফেললেন ভাই। ধন্যবাদ আপনার প্রাপ্য।
সাবিনা ইয়াসমিন
সব পাপের জন্যেই একদিন সাজা পেতে হয়। প্রকৃতির বিচার থেকে কারোরই রেহাই নেই। তবুও মানুষ সব ভুলে যায়, নিজেকে জড়িয়ে রাখে নিত্ত-নূতন পাপের আস্তরণে।
নিতাই বাবু
কথায় আছে, পাপে বাপকেও ছাড়ে না। আর হ্যাঁ, আমি শুনেছি, সব পাপের বিচার এই জীবদ্দশায়ই হবে। মৃত্যুর পরে কী হবে বা হচ্ছে তার কোনও প্রমাণ নেই। আছে শুধু ধর্মগ্রন্থের কাল্পনিক ব্যাখ্যা।
মোঃ মজিবর রহমান
পাপে সাজা, লোভে অপরাধি। সেই সব অপরাধের শাস্তি পেতেই হই।
আরজু মুক্তা
প্রকৃতি কাউকে ছেড়ে দেয়না!