
#পর্ব_৫৯
অপেক্ষায় প্রতীক্ষারত।
অবশেষে প্রভাতের শুভক্ষণে,সূর্যের ঝলমলে আলোয় ভরে উঠেছে প্রকৃতির কোল। আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে,পাখির কূঞ্জন। রংবেরঙের সুগন্ধি ফুলের শোভার মাঝে প্রজাপতির আনাগোনা। মৌমাছি আর ভ্রমরের দলবেঁধে উড়ছে ডানা,ছুটছে সবাই মধুর অন্বেষণে।
রোজকার দিনের মতো করে আমার সকালবেলা এমন ফুল,প্রকৃতি আর প্রজাপতির বন্ধনে বেলা অবসান হয়।
স্নান করে আমি আর বিনোদ বইপত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য। সময় হাতে নেই প্রায় একঘণ্টা। ট্রেন করে যেতে হবে। বলরাম আমায় বললো দাদা আজ টিকেট করবো না। আমি বলে উঠলাম সেকী! বিনা টিকেটে কেমন করে কী?
বিনোদ বলে উঠলো আরে দাদা,ভয় পাবেন না।
যাই হউক বিনোদের কথাশুনে ট্রেনে উঠে পড়লাম।
মনের মধ্যে ভয় জাগছে বিষণ। টিটিকে টিকেট না দেখালে হয়তো কত টাকা জরিমানা করে বসবে।
সে ভয়ে দু পা কাপছে বিষণ তরতরে। যদিও বিনা টিকেটে ট্রেনে উঠার অভ্যাস কখনো আমার ছিলোনা।
জীবনের আজ প্রথম। তবে ভয় নেই ভার্সিটি ছাত্র হিসেবে হয়তো ছাড় দিয়ে দিতে পারে।
টিটি একে একে প্রতিটি কামরার টিকেট দেখতে আসছে। তারপূর্বে বিনোদ আমায় বলে দিলো দাদা টিটি দেখার সাথে সাথে বাথরুমে ডুকে পড়ো। বাকিটা আমি দেখে নিব। আমিও তাই করলাম। ট্রেনে উঠার পূর্বে বিনোদ পুরনো টিকেট পড়ে থাকা মাটিতে সেটা সংগ্রহ করে নিজের পকেটে রেখে দিলো। আমি বাথরুমের দরজার সামনে থেকে আড়চোখে সবকিছু দেখছি।
যাই হউক বিনোদ বুদ্ধির জোরে বেঁচে গিয়েছে।
বেঁচে গিয়েছি সাথে আমি না হলে কত টাকা মাইনে করে বসতো।
তারপর স্টেশন থেকে নেমে সোজা পায়ে হেঁটে ভার্সিটিতে চলে এলাম। অনেকজনের সাথে সেখানে আমাদের পরিচয় হলো। বাংলাসাহিত্য বিভাগের স্যার একে একে আমার আর বিনোদের পরিচয় নিলেন।
অবশেষে স্যার জানতে পারলেন যে আমরা বাংলাদেশ থেকে এসেছি সেখানে পড়াশোনা করতে।
ক্লাস শেষ করে আমরা কয়েকজন মিলে ক্যাম্পাসের আমগাছের নিচে বসে আছি। গাছে আম নেই যেহেতু হেমন্তকাল। তবে ক্যাম্পাসের আশপাশ ঘিরে অনেক ধরণের ফুল,ফলের গাছ রয়েছে। শান্ত পরিবেশ শীতের স্নিগ্ধ হিমেল হাওয়া বহমান সত্যিই বেশ ভালো লাগছে।
আমরা কয়েকজন থাকলেও অনুভবটা আমার একা। এমন শান্ত পরিবেশ আর স্নিগ্ধ হিমেল হাওয়াতে কেউ একটা তো চাই। আর ভাবছি ইসঃ পার্বতী যদি আমাদের সাথে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতো তাহলে বেশ হতো। একান্ত ভাবনাপটে নিজে নিজেকে হারিয়ে নিলাম এমন ভাবনার জগতে।
#পর্ব_৬০
অর্গলিত দূর্বা সন্ধিতে কুয়াশা ডাকা পুরো যাদবপুর শহর। ঐ দূরে পাহাড় বেয়ে নামছে ঝর্ণাধারার বিন্দুপুঞ্জ। রোদের আমেজতা বেশ ফুরফুরে।
ধীরে ধীরে ক্যাম্পাস থেকে কলকাতার পথে প্রস্থান করছি। টিকেট সংগ্রহ করে ট্রেনে উঠে পড়লাম।
এবার বিনাটিকেটে ফাকি দেওয়া যাবেনা। ট্রেনের কামরায় উঠতে না উঠতে হিজরার দল হাজির। এদের আমি খুবি ভয় পেয়ে থাকি চুপচাপ করে সিটের একপাশে বসে আছি। একে একে দলেবেঁধে গান গেয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করে আমার পাশে এসে বললো এই বাবু এতক্ষণ গান শুনলেন টাকা দেন টাকা।
আমি হতবাক হয়ে পড়লাম!
আমি তাদের সাথে কোন কথা বলি নি। কেন হঠাৎ করে আমাকে এসে বলছে টাকা দেন টাকা।
আমি তর্কে না জড়িয়ে দশটাকা দিয়ে দিলাম।
বাবু এ দশটাকায় হবে না। বাড়িয়ে দেন। আমি বললাম আমার কাছে আর মাত্র পঞ্চাশ টাকা আছে। এ টাকা দিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে।
তাদের মধ্যে একজন বলে উঠলো আরও বিশ টাকা না দিলে যাবো না। মনে মনে ভাবছি আজ কি জানি একটা বিপদে পড়লাম। আর ভাবছি যাবার বেলা বিনাটিকেটে ভার্সিটি গিয়েছি। সে টাকা হিজরার দল আদায় করে নিবে মনে হচ্ছে।
আমাদের সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় একটা প্রবাদবাক্য আছে ” যারে মারি না হাতে,তারে মারি ভাতে” হয়তো টিটির পরিবর্তে হিজরার দল এই কাজ করছে। বাধ্য হয়ে বিশ টাকা দিয়ে দিতে হলো। এ নিয়ে মোট ত্রিশ টাকা আমার কাছ হতে আদায় করে নিয়ে গিয়েছে। পকেটে মাত্র সত্তর টাকা আছে। আর এসব দেখে বিনোদ মুচকি হাসি হাসছে। যাই হউক অবশেষে বাড়ি ফিরলাম। প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে।
বাড়ির সবাই সন্ধ্যা আরতিতে ব্যস্ত।
আজ রাসপূর্ণিমা। আকাশের গায়ে তারারাজীর আলোকবন্ধন। জ্যোৎস্নাঘেঁষা মাঠে শুয়ে আছে অপেক্ষার প্রহর। রবীন্দ্রসংগীত,শ্রীকান্তচার্যের গানে ভাসছে সন্ধ্যা। পার্বতী একের পর এক গান গেয়ে যাচ্ছে। আমি তাহার গান শুনে সুরের সুরায় মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি।
এই অর্গলিত কুয়াশা সন্ধ্যায় রবীন্দ্রসংগীত আর শ্রীকান্তচার্যের গান। আহ্ কী সুমুধুর গান।
কী সুমুধুর সুললিত কন্ঠ পার্বতীর। আমি মগ্নপ্রায়।
একদিকে আজ আলোকিত পূর্ণিমা রাত্রি অন্যদিকে
শিউলি ফুলের মোহনীয় গন্ধ। ফুলে ফুলে সুশোভিত হেমন্তের কানন।
মুগ্ধতার স্পর্শে আলোকিত পূর্ণিমা রাত্রিতে নিয়ে লেখা কবিতা প্রিয় পার্বতীর জন্য…
প্রিয়”
এসো মন মন্দিরের দেবালয়ে,
এই আলোকিত পূর্ণিমা রাত্রিতে।
এসো অভিমান ভুলে,
ষোড়শী রূপে।
এসো অন্তর্যামী বেশে,
অমানিশা শেষে।
এসো ক্ষণিকের তরে,
কাক ডাকা ভোরে।
এসো নিভৃত কাননে,
পূজিব তোমায় আমি সুধাহীন প্রেমে।
এসো এসো হে প্রিয়,
এসো মোর হৃদয় আঙ্গিনায়।
কতো দিবস রজনী পেরিয়ে তোমায় পেলাম
তোমাতে জড়িয়ে আছে কত অজস্র স্মৃতি,
ঈশ্বর প্রদত্ত আশীর্বাদে
এটাই ছিলো আমাদের নিয়তি।
.
ক্রমশ…
১৪টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি
পর্বগুলো চিত্রনাট্যে সাজাঁলে এ পর্বটি হবে সেরা রোমান্টিক পর্ব। দারুণ! অনেকে পার পেয়ে যায় বড় অপরাধ করেও অনেকের সামান্য অপরাধও সয় না। হিজড়ারা তার প্রমান। পর্বতী এ পর্বে গানের আবহয়ে এবং শেষে কবিতাটি উপন্যাসটিকে অনেক উচু মাত্রায় তুলে ধরল। বেশ ভালই লাগছে।
কী সুমুধুর সুললিত কন্ঠ পার্বতীর। আমি মগ্নপ্রায়।
একদিকে আজ আলোকিত পূর্ণিমা রাত্রি অন্যদিকে
শিউলি ফুলের মোহনীয় গন্ধ। ফুলে ফুলে সুশোভিত হেমন্তের কানন।
মুগ্ধতার স্পর্শে আলোকিত পূর্ণিমা রাত্রিতে নিয়ে লেখা কবিতা প্রিয় পার্বতীর জন্য…
লেখায় আমরাও মুগ্ধ।
প্রদীপ চক্রবর্তী
মুগ্ধতা দাদা।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
মনে হচ্ছে আপনার উপন্যাসটি জোস হবে। সমস্যা হচ্ছে শুরু থেকে না পড়লে মনে টানে না।
প্রদীপ চক্রবর্তী
মুগ্ধতা দাদা।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো।
আরজু মুক্তা
শেষের কাব্যটা ভালো লাগলো। চমৎকার লিখা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
মুগ্ধতা দিদি।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো।
নিতাই বাবু
আপনার লেখা প্রতিটি পর্বই মনে হয় পড়া হয়েছে। এই পর্বটাও আমার ভীষণ ভালো লেগেছে, দাদা। তবে এটা কি “পর্বতকন্যের ইতিকথা” শেষ পর্ব?
প্রদীপ চক্রবর্তী
মুগ্ধতা দাদা।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো।
সমাপ্ত নয় দাদা।
তৌহিদ
আমি একবার বিনা টিকেটে রেলে উঠেছিলাম, টিকিট পাইনি তাই। পরে অবশ্য টিটিকে টাকা দিতে হয়েছিলো। গল্পের চিত্রনাট্য সিনেমার মতন পড়ে খুব আনন্দ পেলাম দাদা।
হিজরাদের অত্যাচারে হঠাৎ কোথাও কোথাও বিব্রত হতে হয় আমাদের। আমি এড়িয়ে চলি।
লেখা ভালো হয়েছে দাদা। শুভকামনা রইলো।
প্রদীপ চক্রবর্তী
মুগ্ধতা দাদা।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো।
সাবিনা ইয়াসমিন
অনেকের মাঝে থাকলেও অনুভবটা একান্ত নিজের হয়। সবার সাথে থাকলেও আপন মানুষটার অনুপস্থিতিতে খুব একা আর নিঃসঙ্গ লাগে নিজেকে।
কবিতায় ভালোলাগা রইলো প্রদীপ।
সুধাহীন প্রেম রেখেছো পার্বতীর জন্যে!!
প্রদীপ চক্রবর্তী
মুগ্ধতা দিদি।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো।
নিতাই বাবু
আপনার ‘পর্বতকন্যের ইতিকথা’র ছবিটি খুবই সুন্দর দাদা। তাই আবার আপনার পোস্টের মন্তব্যের বক্সে ছবিটা দিলাম।
প্রদীপ চক্রবর্তী
ধন্যবাদ দাদা।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো।