আমার গাইটের কাপড় কেনার একটা নেশা আছে। এক অদ্ভুত নেশা বলা যায়। গাইটের কাপড় বলতে বোঝায়, ঝুট কাপড়।
কম দামে ভালো ভালো কিছু জিনিস আমি খুঁজে বের করি। বাসায় এটা নিয়ে আমাকে কথা যে কম বেশি শুনতে হয় না তা নয়, শুনতে হয়। এখন ওরাও অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
কিছুদিন আগে একটা সাদা কাপড় কিনেছি তা প্রায় পনেরো বিশ গজ। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জিনিস বানাতে পারব ভেবে, বেশি করে কিনে রেখেছি। আমার সাদা কাপড়ের উপর সব সময়ই একটা দুর্বলতা কাজ করে।
কাপড়টা তিন হাত বহর খুব আরাম দায়ক তার উপর খুবই সস্তা। বিশ টাকা গজ কিনেছি।
কাপড়টা কিনে বাসায় আমার আলমারিতেই রেখেছি। কাপড়টায় হাত দিলে কেমন যেনো একটা ঠান্ডা ভাব। যতোবার আমি কাপড়টায় হাত দেই, ততোবার এই ঠান্ডা ভাবটা আমি টের পাই। ফ্রিজে রাখলে যে রকম ঠান্ডা হবার কথা ঠিক সে রকম।
তবে ধোয়ার পরে রোদে দিয়ে রাখলে আর সেই ঠান্ডা ভাবটা থাকে না।
আমি এটা পরীক্ষা করার জন্য সেদিন ধোয়া কাপড় ও না ধোয়া কাপড় অর্থাৎ যেটা দিয়ে এখনো কিছু তৈরি করা হয়নি এমন কাপড় রোদে দিয়ে এনে রাখলাম। আজকে সকালে আলমারির কাপড় গোছানোর সময় কাপড়টা ইচ্ছা করে হাত দিলাম। আমার গায়ের লোম কাঁটা দিয়ে উঠলো।
স্বপনের মা আমার সহকারী। কাপড় গোছানোর সময় বললাম,’হাত দিয়ে ধরে দেখো কেমন ঠান্ডা!’ সেও চমকে গেলো। অর্থাৎ না ধুুুুয়ে রোদে দিলে ঠান্ডা ভাবটা থেকেই যাচ্ছে।
লৌকিক না অলৌকিক এ নিয়ে তর্কে আমি যাব না। কারণ, সভ্যতার ভিড়ে এমন সব অনুভূতি হাস্যকরই বটে। পৃথিবীতে প্রচলিত এমন সব নানা ঘটনা মানুষের মনকে জাগতিক চিন্তা থেকে ঘুম পাড়িয়ে রাখে। এমন সব বোধে এর আসলে কোনো ব্যাখ্যা নেই। এটা আমি স্পর্শ করে পার্থক্য করেছি বলেই লিখলাম। মাঝে মাঝে আমি ভাবি, দেখা যাবে আমি মারা গেছি আর এ কাপড় দিয়েই আমার কাফন হয়েছে।
ইদানিং শরীরটা বেশ খারাপ। বলা চলে গত রোজা থেকে যুদ্ধ করছি একপ্রকার। গত রোজায় ভুল ট্রিটমেন্টটা আমার শুরু হইছিলো। টাইফয়েড ও এ্যালার্জির ইনজেকশন দিয়ে।এরপর আবার নিউরোর ভুুল ওষুধ।
এই যে এখন এই মুহূর্তে বাসায় পুরো একা আমি। অদ্ভুত এক মায়া, নিরব চারদিকে। ঘুম আসে না। ধুন ধরে শুয়ে থাকি। টিভি দেখি অথবা বই পড়ি।
দুপুরে এ ঘরটায় অদ্ভুত সুন্দর এক ঘ্রাণ আসে। আমি জানি সুপারি ফুল এবং নাম না জানা আরও দুই একটা ফুলের সংমিশ্রণে এই ঘ্রাণটা আসে। তবু কেমন যেনো এক অদ্ভুত রকম অন্য এক ভাবনায় আমাকে নিয়ে যায় এই পরিবেশটা। জন্মমান্তর, আত্মা, পরলোক,উদ্ভভট সব ভাবনা ঘিরে ধরে।ঘুমপরীটা চলে যাবার পর থেকে আমার পাশের ফ্লাটটা খালি আজ প্রায় ছয় মাস হলো। বড় বেশি নিরব থাকে তাই আরো।
,,,রিতু,,,
৯টি মন্তব্য
শাহরিন
আপু আসেন কিছু বানানোর আইডিয়া বের করি, তারপর কাপড় ও শেষ এলোমেলো ভাবনা ও শেষ। দ্রুত সুস্থবোধ করুন এই দোয়া করি।
রিতু জাহান
বানিয়েছি। কিন্তু পরতে কেমন যেনো এক অস্বস্তি হচ্ছে।
এখন বেশ ভালো বোধ করছি। আল্লাহ্ সহায়।
সাবিনা ইয়াসমিন
লৌকিক–অলৌকিক ভাবনা যদিও যান্ত্রিক জগতে বেমানান। তাই বলে কি আমরা অলৌকিক ভাবনা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারবো? ভালো লাগবে?
এইযে বেঁচে থাকা, এটাইতো অলৌকিক মনে হয়। সাদা রঙ তোমারও প্রিয় !! শুনে খুব ভালো লাগলো।
নীলকুরীঞ্জি, এমন মন খারাপ লেখা আর লিখবেনা। তুমি অগ্নিকন্যা। তোমাকে জেগে থাকতে হবে। তাড়াতাড়ি নিজের মাঝে ফিরে এসো। আর ঐ ডাক্তারকে দিয়েই শুরু করো, যার ভুল চিকিৎসা তোমাকে এতো ভোগাচ্ছে।
ভালোবাসা কম হয়ে গেলে বলবে, আরও দিবো। কিন্তু ভালো থাকবে সব সময়। ❤❤
রিতু জাহান
তোমার এ মন্তব্যে আমি কেঁদে ফেলেছি সুখে। এতো ভালবেসো না। আমার খুব বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে। তোমার নীলকুরিঞ্জী নামটা দিব ব্লগে।
সেই নীলপাহাড়ে তাকে নিয়ে একটি দিন রাত কাটাতে ইচ্ছে করে চাঁদ থাকুক বা না থাকুক সে রাতে।
হবে কিনা জানি না। তাকে বলে দেখব আজ।
ফজলে রাব্বী সোয়েব
খারাপ লাগাটাও এত সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন! একা থাকলে বেশি বেশি পজিটিভ লেখার চেষ্টা করবেন, গান শুনবেন। এটা উপদেশ নয়, অনুরোধ।
রাফি আরাফাত
কিছু জিনিস সবাই চাইলেও পারে না। যেমন আপনার খারাপ লাগার অনুভূতির প্রকাশ।
জিসান শা ইকরাম
কাপড়ে এমন অনুভুতি!
ভালো লেগেছে জীবন বোধ নিয়ে লেখাটি।
শুভ কামনা।
রাফি আরাফাত
মনে ধরেছে লেখা
সুরাইয়া পারভিন
দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। মানুষ যখন অসুস্থ থাকে তখন এমন সব ভাবনারা ঘিরে থাকে।জন্মান্তর, ইহকাল পরকাল সম্পর্কে অদ্ভুত চিন্তা মাথায় আসে