স্যার খুব রোমান্টিকভাবে নিশীর দিকে তাকাতেন।আমরা ছোট হলেও এটুকুতো ঠিক বুঝতাম। নিশীও বোধহয় ব্যপারটাতে মজা পেত, এখানে এতগুলো মেয়ের মাঝে স্যার তার দিকে ভিন্নভবে তাকাচ্ছেন,তাই। এরই মাঝে তার বাবা তার হাতে ধরিয়ে দিলেন মোবাইল ফোন। অথচ এ বয়সে আমরা ফোনের কথা ভাবতেও পারিনি। যাই হোক, তার ফোন থাকাতে স্যারের ও সুবিধা হল। স্যার প্রতিদিন তিনশত টাকার কার্ড কিনছেন, আর সারারাত নিশীর সাথে গল্প করছেন। এদিকে স্যার তাঁর ঘরে তাজমহলের ছবিও টানিয়েছেন। আমরা খুব দুষ্ট ছিলাম,তাই এসব দেখে নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করতাম! নিশীও পড়ার ফাঁকে স্যারের চেহাড়া, হাসি,পোশাক ইত্যাদির নানা রকম প্রশংসা করত,যা আমরা কোন স্যারের সাথে করার কথা ভাবতেও পারিনি। কেননা, আমরা তখনো যুগের হাওয়ায় গা ভাসাতে শিখিনি।
কিছুদিনের মধ্যেই আমরা গণিত পড়াও শুরু করলাম অন্য একজন স্যারের কাছে। এবারেও নিশী ছিল আমাদের সাথে। কিন্তু তারই সাথে ছিল আরো কিছু অপরিচিত ছেলে সহপাঠী। ফলে যা হবার তাই হল। অল্প কিছুদিনের মাঝেই আবার নিশীর রোমিও জুটে গেল এখানেও। সে রোমিও এবং তার বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যেত, বাসা থেকে তাদের জন্য কি কি সব রান্না করে আনত,আরো কত কি…..! রোমিওরাও খুব খুশি এমন জুলিয়েট পেয়ে। আমরা শুধু তাকিয়ে সব দেখতাম। কিছু বলতে পারতাম না, পাছে আবার ভেবে নেয়,আমরা তার জনপ্রিয়তা সহ্য করতে পারছি না। এই ভেবে যদি উল্টাপাল্টা কিছু বলে দেয়।
হঠাৎ একদিন নিশীর কালো আঁখি জুড়ে নেমে এল বর্ষণ। রোমিওদেরতো মাথা নষ্ট,তাদের জুলিয়েট কাঁদছে! আহা, এ কি করে হয়! তারা দৌঁড়ে এল:
: কি হয়েছে নিশী, বলো আমাদের!
: তোমরা শুনে কিছুই করতে পারবা না, তোমরা যাও এখান থেকে।
: একবার বলেই দেখ কি করি!
: আমি বদরুল স্যারের কাছে ইংরেজি পড়তাম। সেই স্যার আমাকে পছন্দ করতেন। তাই আমি স্যারের কাছ থেকে পড়া ছেড়ে চলে এসেছি। কিন্তু এই লোকটার সম্মানের কথা ভেবে আমি চুপ ছিলাম। এখন তার কাছে না পড়ার কারণে তিনি রোজ আমার পথ আগলে দাঁড়িয়ে থাকেন। আমাকে নানান হুমকি দেন। আমার রিকশা আটকান, এখন আমি কি করব?
: তুমি কোন চিন্তা করো না, আমরা ব্যপারটা দেখছি।
এরপর শুরু হল তান্ডব। আমরা পড়তে যাই, তখন ঐসব ছেলেরা এসে স্যারের বাসায় তান্ডব চালায়। স্যারকে থ্রেট করে। একটা কলেজের অধ্যাপক আজ বনে গেলেন একজন জোকার। তিনি বাচ্চা একটা মেয়ের জন্য পথ আগলে দাঁড়িয়ে থাকেন! কী অবাক কান্ড। স্যার কতই না ভালবাসেন নিশীকে! ঐ বয়সে আমরা এতটুকুই বুঝেছিলাম।
আরেকদিন যা হল, স্যার নিশীকে বললেন, ” তোমার যা বলার তুমি সোজাসুজি আমাকে এসে বলে যাও। কথা শেষ করে যাও,তবে আমি তোমাকে আর বিরক্ত করব না।” এতে মেয়েটা সমাধানের পথ দেখতে পেয়ে স্যারের বাসায় এল। স্যারের বাসায় আরো থাকতেন তার বাবা মা,ভাই বোন। স্যার নিচতলার একটি খালি রুমে আমাদের পড়াতেন। সেখানে চেয়ার,টেবিল ছাড়াও ছিল একটি বিছানা ও বুকশেলফ। তো, স্যারের ডাকে নিশী এল, তখন স্যার আমাদের বললেন,
“ওর সাথে আমার কিছু পার্সোনাল কথা আছে,তোমরা আজ চলে যাও।”
আমরাও বাহিরে চলে এলাম, কিন্তু অতিদুষ্ট হবার কারণে ঘরের পাশেই অবস্হান করলাম, দেখি কি কান্ড ঘটে! স্যার কি তবে হাঁটু গেড়ে বসে হাতে ফুল নিয়ে নিশীকে প্রপোজ করবেন! এসব মজা করতে করতেই হঠাৎ দেখি, স্যারের ঘরের জানালাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক। এরপর দরজাও বন্ধ হতে যাবে,এমন সময় নিশী দৌড়ে বেরিয়ে এল আর আমাদের হাত ধরে টেনে বলল, “তোমরা যেওনা,তোমরা থাক প্লিজ”
স্যারও বাইরে এলেন, এসে আমাদের বললেন, আমাদের থাকার দরকার নেই। আমরা যেন চলে যাই। স্যারের মুখভঙ্গি খুব অদ্ভূত লাগছিল। এমন চেহাড়া আমরা কখনো দেখিনি, যেন প্রতিটি মেয়েকে ইঞ্চি ইঞ্চি করে মেপে মেপে দেখছেন!তার চোখ ভরা যেন নেশা, কোন মেয়েকে যেন আস্ত গিলে ফেলবেন, যেভাবে ক্যপাসুল মুখে দিয়ে পানি দিয়ে গিলে খায়,তেমন। তখনি ভয় পেয়ে ঠিক করে নিলাম, এখানে আর পড়ব না। কিন্তু এখন নিশীকে ফেলে যাই কিকরে? তাকে বা নিয়েই যাই কিকরে? একটা অস্বস্তিতে পরলাম। এরই মাঝে নিশী এমন জোরে হাউমাউ কান্না জুড়ে দিল, যে চারপাশের মানুষ চলে আসতে থাকল। এবার স্যারের মান বাঁচানো দায় হয়ে পরেছে! তাই স্যার নিশীকে ছেড়ে দিয়ে ওপরে চলে গেলেন। যাই হোক, স্যার তবু হাল ছাড়েনি। একটা দিনের জন্য হলেও নিশীকে চাই। তাই তার বাবার কাছে দিলেন বিয়ের প্রস্তাব। তার বাবা কৌশলে পরে ব্যপারটা মিটিয়ে নিলেন। সেও রক্ষা পেল স্যারের হাত থেকে।
তারপর কিছুদিন ভালই চলছিল। কিন্তু কিছুদিন পরেই খোঁজ হল এক খালার, যে খালাকে সে আগে কোনদিনও দেখেনি। খালা তার পুরো পরিবার নিয়ে চলে এলেন নিশিদেরে বাসায় থাকবেন বলে,কারণ তিনি অসহায়। নিশীর বাবার অঢেল পয়সা, বিশাল বড় বাড়ি,তাই কেউ অমত করল না। খালার সাথে এসেছিল এস এস সি ফেইল করা গন্ডমূর্খ এক খালাত ভাই….
চলবে……
১৪টি মন্তব্য
নীহারিকা
বিরাট সিরিয়াল। একের পর এক। কি আজব!
নীরা সাদীয়া
এ। বয়সটাই এমন দিদি। শুভ সকাল।
মৌনতা রিতু
এমন টিচারও দেখেছি।
দেখা যাক খালার ঘটনা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়!
চলুক।
নীরা সাদীয়া
পরের পর্ব আসতে একটু দেরি হবে। ভাল থাকুন। শুভকামনা রইল।
মেহেরী তাজ
ফেসবুকে পড়েছি……
আর একবার পড়লাম।
নীরা সাদীয়া
অনেক ধন্যবাদ। শুভসকাল।
নীলাঞ্জনা নীলা
শিক্ষকেরা পথভ্রষ্ট শিক্ষার্থীদেরকে পথ দেখান। আর কি শিক্ষক, ছাত্রীর সাথে, ছিঃ! মেয়েটার দোষ আমি কখনোই দেবোনা। নিশীর প্রথম শত্রু ওর বাবা, এখন শিক্ষকও।
চলুক, দেখি কি হয় সামনে!
নীরা সাদীয়া
দেখা যাক কি হয়। পরের পর্ব আসতে একটু সময় নেবে। শুভ সকাল। সুস্থ ও সুন্দর থাকুন।
ইঞ্জা
ফেইসবুকে পড়েছি আপু, আপনি লিখে যান পাশে আছি।
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ ভাইয়া। আশা করি পাশেই থাকবেন।
ইঞ্জা
কি যে বলেন আপু, ভাই কি বোনের পাশে না থেকে পারে। 🙂
নীরা সাদীয়া
সে আমি জানি ভাইয়া। 🙂
বাবু
লেখার শেষাংশ না-পড়ে মন্তব্য করা যাবেনা। পুড়োটা পড়তে চাই। প্রথমাংশ ভালো লেগেছে, দেখি পরে কী হয়?
নীরা সাদীয়া
পরের পর্ব আসতে একটু সময় নেবে। সে পর্যন্ত ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভসকাল।