
“বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন সুমাইয়ার পড়ালেখা ও পরে চাকরি করার ইচ্ছা মেনে নিতে পারছিল না। এ কারণেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। প্রায় ছয় মাস আগেও তাঁকে ঘরে আটকে রেখে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল।” এটি সুমাইয়ার মায়ের বক্তব্য।
খেয়াল করুন, মেয়েকে ঘরে আটকে রেখে মেরে ফেলার চেষ্টার পরও সেই মেয়েকে মা স্বামীর সাথে বসবাস করতে পাঠিয়েছে বা বলা যায় যেতে বাধ্য করেছে। জানা যায়, মেয়েটির বাবা কিছুদিন আগে মারা গিয়েছেন। এখানে মা এবং মেয়ে দুজনেই পরিস্থিতির শিকার। তবু্ও হয়তো একটু চেষ্টা করলে মেয়েটিই শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে পারতো। ভিজাবিড়াল টাইপ শিরদাঁড়াহীন সঙ্গী জুটলে নিজেরই শিরদাঁড়াটা সোজা করতে হয়। না করতে পারলে হয় কর, নয় মর পরিস্থিতির মুখোমুখি। সমজোতা ততক্ষণ পর্যন্ত করা যায়, যতক্ষন তা সীমার ভেতরে থাকে। সীমালঙ্ঘন করলে ঘুরে দাঁড়ানোটাই নিজ আত্মার প্রতি কর্তব্য। সেক্ষেত্রে মেয়েটিকে খুব স্বাভাবিকভাবেই সমাজের রক্তচক্ষুকে মোকাবেলা করতে হতো। নারীর বৈবাহিক জীবন এমনি এক শাখের কড়াত।
তবুও মুখোশধারী ভদ্রলোকেরা বলবেন আমি নারীদের পীঠ সোজা করে দাঁড়াতে বলি মানে আমি পুরুষ বিদ্বেষী মনোভাব প্রকাশ করছি। সে সুবিধাবাদী ভাবনা তারা ভাবতেই পারেন। আমি বলবো, এরকম কেলেংকারি হওয়ার পরেও যারা মেয়েকে বিয়ে টিকিয়ে রাখতে বাধ্য করেন, প্রথম অপরাধী তারা।
তারপর আসি মেয়ের কথায়। শিক্ষিত হলেই যেমন সকলে সুশিক্ষিত হয়না, তেমনি নিজের পায়ের উপর দাঁড়ানোর ক্ষমতা হলে বা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জিত হলেই নারী স্বনির্ভরশীল হয়ে ওঠতে পারেনা, যদি না সে মনস্তাত্ত্বিক শক্তি অর্জন করতে না পারে। নারী যদি মনস্তাত্ত্বিক শক্তি ধারণ না করতে পারে তবে লাখ টাকা কামাই করেও সে পরনির্ভরশীলই থাকে। এমন উদাহরণ প্রচুর আছে। আর এই মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে না পারা পরনির্ভরশীল নারীরাই হয়ে ওঠেন পুরুষতন্ত্রের শিকার। তার দৌঁড়ের মাত্রার উপরই নির্ভর করে তার অবস্থান। এক্ষেত্রে আমার বক্তব্য হচ্ছে, যে যেমন, তার সাথে অমন হও। অর্থাৎ নরমে নরম, গরমে চরম। পৃথিবীতে চলতে হলে প্রতিটা নারীকে এই চরিত্রে নিজেকে দাঁড় করাতে হবে। কেবল নারীই না মূলত প্রতিটা মানুষকেই।
তা বলি, শ্বশুরবাড়ি বা স্বামী যারা তাকে পড়তে দিতে বিরোধিতা করেছিল, তারা ঘরের বউ মনে করে মেয়েটির পড়াশোনার ব্যাপারে আপত্তি করবার আগে তাদের কী একবার ভাবা উচিত ছিল না যে মেয়েটি সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের ছাত্রী। যে বিদ্যাপীঠে ভর্তি হওয়াটাই একটা যুদ্ধ। তেমন শিক্ষানুরাগী মেধাবীরাই এ ভর্তিযুদ্ধে লিপ্ত হয়। না, তারা তা ভাববেন কেন? সামাজিক ভাব ফুটানোর জন্য তারা চোখ রাখবেন আকাশে, এরপর কবুল বলিয়ে এনে মাটিতে বসানোর জন্য কোমরবেঁধে লেগে যাবেন। বসাতে না পারলে চুলের মুঠি ধরবেন। তাতেও দমাতে না পারলে জিদ্দে মেরেই ফেলবেন। কারণ, তারা কবুল বলিয়ে সম্পত্তি ক্রয় করে এনেছেন যে! এখন যেমন ইচ্ছা পুতুল নাচাবেন আরকি!
ঘরকন্না টাইপ বউ টার্গেটে থাকলে সমাজে বহু মেয়েই আছে যারা ষোলয়ানা মনযোগ দিয়ে ঘর সংসারই করবে এমন মানসিকতা ধারণ করে। আরোও অনুগত ‘সাত কথায় রা নাই’ টাইপ চাইলে ব কলম কোনো নারীকেই তো বিয়ে করাতে পারতো। চোখ আকাশে ওঠে কেনো?
একটা শিক্ষিত মেয়েকে সংসার করানোর নাম করে শিকলবন্দী করা কতোটুকু ন্যায়সঙ্গত এ সমাজের? ছলেবলে কলেকৌশলে বেশিরভাগই এ পথে হাঁটেন। হ্যাঁ, অনেক শিক্ষিত নারীরও বাসনা থাকে কেবল ঘর সংসার করা। সেক্ষেত্রে আগের থেকে কথা বলে নিলেই হয়। জবরদস্তি কেন? জবরদস্তি করে করে একসময় মেরেই ফেলে।
আহারে নারী জীবন!!!
৫টি মন্তব্য
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
নারী নির্যাতন এদেশে নতুন কোনো ঘটনা নয়। অনেক প্রতিবাদ শুধুমাত্র প্রতিবাদেই থেকে যায়। নারী তার ন্যায্য অধিকার আদায়ে প্রতিবাদী হওয়ার পাশাপাশি সমাজকেও নারীর অধিকার, স্বাধীনতার রক্ষার প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। যুক্তিপূর্ণ লেখার জন্য ধন্যবাদ।
এস.জেড বাবু
দুঃখজনক
কিছু মৌলিক নোংড়া মানষিকতার মানুষ আজও আছে। ওরা থাকবে, দুনিয়াতে বর্ণ বিরোধ যেমন শেষ হয়নি- তেমনটা এক্ষেত্রেও বহাল থাকবে সেকেলেদের মানষিকতায়।
ভালো লিখেছেন
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপনার সাথে পুরোপুরি একমত পোষণ করছি। তাই বেশি কিছু বললাম না। শিক্ষিত মেয়েকে বৌ বানিয়ে সমাজে ফুটানি দেখায় আর তাকে সংসারে চাকরানীর মতো ব্যবহার করে। ধন্যবাদ আপনাকে ভালো থাকবেন
সুরাইয়া নার্গিস
দুঃখজনক।
হালিম নজরুল
করাত