
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে বাঘ মহিষের বাচ্চা হবার অপেক্ষায় দুরে বসে আছে। মহিষ প্রসব বেদনায় ছটফট করতে করতে ফুটফুটে এক শাবকের জন্ম দিলো। সাথে সাথেই বাঘ মামা লাফিয়ে মেষ শাবককে আক্রমণ করে ফেললো। মা মহিষের তখনো ফুল পরেনি, পেটে ব্যাথা তো আছেই! কিন্তু সন্তান তো বাঁচাতে হবে। পেছনে ঝুলন্ত ফুল নিয়ে সন্তান বাঁচাতে সে মা কালীর রুপ ধারন করলো। এবং শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে অন্ধ ছুঁড়া-ছুঁড়ির কোন এক লাথিতে বাঘ মামা একেবারেই কুপোকাত।
আমার গলা শুকিয়ে গিয়েছিলো, ঢকঢক করে একমগ পানি খেয়ে নিলাম। এসময় রাস্তায় হট্টোগোল, পুলিশের সাইরেন কি হলো, কি হলো? এ ঘটনায় আরও এক জগ পানি খেয়ে স্যালুট মারলাম।সে ঘটনা শেষে বলি!
যে কোন চরিত্র তৈরিতে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয়। ইচ্ছে করলেই যে কোন সময়, যে কোন বয়সে এটা করা যায় না। অনেক শ্রম, মেধা বিনিয়োগ করেই আমরা কেবল সেখানে পৌঁছাতে পারি। আপনি যতক্ষন তৈরি হননি ততক্ষন পর্যন্ত আপনাকে কেউ চিনে না, জানে না এমনকি মূল্যায়নও করবে না। তৈরি হবার আগ পর্যন্ত আপনি কারও কাছে সাহায্য চেয়েও পাবেন না।
অথচ আপনি যখনই একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে নিজেকে রুপদান করে ফেলেছেন। ঠিক তখুনি আপনার পাশে সুযোগ সন্ধানী বাঘ মামারা মৌমাছি হয়ে মৌ মৌ করতে করতে হাজির হবে। আপনিও আবেগে, অতি চাহিদায়, লোভে তাদের মৌ মৌ এ যোগ দিয়ে ফেললেন। আজকাল অনায়াসেই আমরা অনেক কষ্টে তৈরি চরিত্রটিকে একেবারে সস্তায় বিক্রি করে দিচ্ছি।কিন্তু কেন?
একজন দিনমজুর বা রিক্সা চালকও তাকে তৈরি করতে সময় নেয় অথচ কি নির্দ্বিধায় ১০০/২০০ টাকার বিনিময়ে তার ভোট বিক্রি করে। অথচ সে জানে যার কাছে তার চরিত্র বিক্রি হলো সে তার পছন্দের নয়।
একজন ভালো অভিনয় জানে বলেই সে অভিনেত্রী হতে পারে( আমাদের পরীমনি)। আমার রক্তে, যোগ্যতায় সেটা নেই বলেই আমি অন্য পেশায়। আজকে কারও লোভনীয় অফারে অভিনেত্রী যদি অন্য খেলায় মত্ত হয়। সে সৃজনশীলতার অবসান ঘটিয়ে, পেশাদারিত্ব ভুলে অন্যের ইশারায় বিপথগামী হয়ে অভিনেত্রী নয় নায়িকা হয়। তাহলে সে রঙ্গীন জীবন পাবে কিন্তু তা একেবারেই ক্ষনস্থায়ী। একসময় তাকে ব্যবহারকারী লুটেরাই তাকে ফাঁসিয়ে পলায়ন করবে। তখন সে একা হবে; তারপর বাকি পথের সমস্ত গ্লানি, কষ্ট, যন্ত্রনা শুধু একার।
আজকাল উচ্চপর্যায়ের সরকারী লোকজন কিংবা উচ্চ পদস্থরাও অনায়াসেই নিজেদের চরিত্র বিক্রির পাল্লায় নেমেছেন। কেউ তাদের যেভাবে চালাচ্ছে সেভাবে চলছেন। একবারও ভাবছেন না চরিত্রের প্রয়োজনে দল মত সব কিছুর বাইরে তিনি। তাঁর ব্যক্তিগত ক্ষোভ- আক্রোশ এসব থাকা উচিত নয়। আর এর ব্যবহারও তেমন সুফল বয়ে আনে না।
মনে রাখা উচিত; কেউ কিন্তু আপনাকে তৈরি করেনি। আপনি নিজে নিজে তৈরি হয়েছেন অনেক শ্রমে, মেধায়, যোগ্যতায়। আপনাকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করবার জন্য সুযোগ সন্ধানীরা উঠে পরে লাগবে।আপনাকে বুঝতে হবে এটা ভালো না মন্দ। চোখ- কান খোলা রাখতে হবে এবং বুঝতে চেষ্টা করুন, সময় নিন। সর্বোপরী নিজের এবং দেশের ভালোমন্দ নিয়ে ভাবুন। অতি লোভী হয়ে আপনি মন্দটা গ্রহন করবেন; বিপথগামী হবেন। মৌমাছিদের নিয়ে কিছু সময় হই হল্লা হবে। চারিদিকে সুনাম হবে, অর্থ যোগ হবে। বিলাসী জীবন- যাপন করতে শুরু করবেন। মন্দকে মন্দ ভাবতে ভুলে যাবেন।
অথচ কিছু সময়ের জন্য আপনি যে রোল প্লে করছেন বা কষ্টে তৈরি চরিত্রটি পেয়েছেন তা একেবারেই ক্ষনস্থায়ী। আজ আপনার দ্বারা যে অন্যায় হবে, ক্ষতি হবে এবং তার জন্য কিছু শত্রু তৈরি হবে সেগুলোর দায়ভার আপনার একার।
সে সময় আপনার আর এখনকার চরিত্রের শক্তি নেই। যারা এতোদিন পাশে ছিলো তারা আজ নেই। কারন ক্ষমতাহীনের পাশে কেউ থাকে না। তখন অতি মূল্যবান মানুষটাও জনগনের ঘৃনার, অবজ্ঞার, অবহেলার।
তাই আমরা কষ্টে অর্জিত চরিত্র কখনোই বিক্রি করবো না।
আজকের দিত্বীয় ঘটনা অনেকদিন আগের। যার রেশ হিসেবে সব লুইচ্চা ব্যাটাদের কোমরে দড়ি বেঁধে পুলিশ নিয়ে গেলো। লকডাউনের সময় আমাদের থানার এসিল্যান্ড পাশের বাজারে ঢুকেছেন। লকডাউন অথচ দোকান- পাট সব খোলা। জানতে চাইলে বলা হলো স্থানীয় নেতা অনুমতি দিয়েছেন। ছবি তুলতে গেলে বলা হলো, নেতা ছবি তুলতে মানা করছেন। তারপরও ছবি তুলতে থাকলে নেতা হাজির। এসিল্যান্ডের হাত থেকে মোবাইল নিয়ে নেতা ভেঙ্গে গুডিয়ে দিলেন আর সহযোগীরা নিরাপত্তায় থাকা পুলিশকে বেদম মারধোর করলো।
এ ঘটানার বাজারের লোকজন ভীষন খুশি। এ নিয়ে বেশ কবার এসিল্যান্ড কে অপমান করেছে এ নিয়েও গর্বের শেষ নেই। আরও অন্যতম কারন এই নতুন এসিল্যান্ড একজন নারী এবং কমবয়সী। জনগন তাকে আড়ালে তুই- তোকারী করে এবং স্যার ডাকতেও নারাজ। ভাব এমন মাইয়া মাইনসের আর ক্ষমতা কতোদুর।
এসিল্যান্ডের অনেক দূর্নাম। ঘুস নেন না, দু- নম্বর করে জমি খারিজ করেন না, সরকারী জমি যেগুলো বিগত সময়ে জনগনের কাছে ঘুস নিয়ে চালিয়ে দেয়া হয়েছিলো তা তিনি দুমদাম ভেঙ্গেচুরে ফকফকা করে ফেলেছেন। বাজারে ঢুকলেই ভেজাল চালের বস্তা ফেলে দিচ্ছেন। এক কথায় যেটা তার দায়িত্ব সেটি তিনি সঠিক ও যথাযথ ভাবে পালন করছেন।
তাই একশ্রেনী ভীষন বেজার আগে তো এমন ছিলাম না। কতো শান্তি ছিলো। এই উটকো ঝামেলা ভাগাও। অনেক দেন দরবার করে লাভের লাভ হলো আজ তারা জেলে। আর মহান মহিয়সী বীরদর্পে দুটো থানার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
আর আমার মতো অনেকেই তাকে স্যালুট জানাচ্ছে। কারন তিনি চরিত্রের সঠিক ব্যবহার জানেন এবং মানেন। হয়তো পয়সা নেই, লোকে নাম ধরে গালি দিচ্ছে দিনশেষে স্যালুট তাঁরই প্রাপ্তি। মৃত্যুর পর লোকে বলবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সৎ, নির্ভীক, সাহসী একজন মানুষ।
একসাথে একই ক্ষেতে লাউ আর কুমড়া লাগালে ফুল হয় কিন্তু ফল হয় না। কারন বাতাসে যে মিশ্র পরাগণ হয় তাতে লাউ কুমড়া কোনটাই হয় না। সুতরাং মিশ্র চরিত্রে চলা বন্ধ করুন। শুধুমাত্র নিজের কষ্টে তৈরি চরিত্রের সঠিক ব্যবহার করুন। তাহলে দেখবেন আপনার বিপদ একেবারেই নেই। সবাইকে শুভরাত্রি!!!!!
ছবি- নেট থেকে।
১৭টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
মিশ্র চরিত্রে অভিনয় করে যাওয়াও এক বিশাল অর্জন (ক্ষেত্র বিশেষে)। সবাই চায় নিজনামে সুপ্রাপ্তি ঘটুক, যাপিত জীবন যেমনই হোক!
শুভ রাত্রি 🌹🌹
রোকসানা খন্দকার রুকু
সেটাই সবাই চায় সুপ্রাপ্তি ঘটুক।।
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা অশেষ।।
ত্রিস্তান
এ দেশের জনগন যে কবে নাগাদ নিজেদের মূল্যায়ন করতে শিখবে কে জানে। আর নেতাদের কথা নাই বললাম। হাতে গোনা কয়েকজন ব্যতীত বাদবাকি সমস্ত হলো টাউট বাটপার। এসি ল্যান্ড তো অনেক পরের কথা সামান্য একজন কেরাণীকেও তার সম্মান দিয়ে কথা বলা উচিত। মুখে দেশপ্রেমের বুলি আওড়ানো নেতারাই দেশকে চুষে খাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
রোকসানা খন্দকার রুকু
দেশ শেষে খাচ্ছে এক শ্রেনী তাদের কোন বিচার নাই।
মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা অশেষ।
উর্বশী
কুইনাইন রোগ সারাবে বটে, কিন্তু কুইনাইন কে সারাবে কে???
কতক্ষণ নিজেরা ভাল থাকবো? যে অবস্থান টার চারিপাশেই যদি অন্যায়, অবিচার,দাবিয়ে রাখা হয়,সেখানে তো আপনা থেকেই চুপ হয়ে যেতে হয়।তার মানে দুইভাবে চুপ হওয়া,এক হলো এসব কিছুর সাথে গা ভাসিয়ে চলার শেষে ফলাফল।
দুই হলো এসব কিছু থেকে দূরে থাকা।তবুও এ-রই মাঝে আমাদের পথ চলতে হয় চোখ কান খোলা রেখে।
মন খুলে অকপটে সব সত্য কথাও আমার লেখা নিষেধ বর্তমানের ঘটনাবলী নিয়ে।
লেখা পড়ে ভাল লাগলো,ভালোবাসা অবিরাম।
রোকসানা খন্দকার রুকু
এখন নিজেকে ভালো রাখাও দুস্কর। এটা ঠিক বলেছেন।
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা অশেষ।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
সত্যিকারের মানুষের বিবেক বিচার বুদ্ধি বিবেচনা মানবতা নৈতিকতা বিক্রি করতে পারেন না। এমন মানুষরা কষ্ট পেলেও জয়মালা তাঁদেরই জুটে — “তাই একশ্রেনী ভীষন বেজার আগে তো এমন ছিলাম না। কতো শান্তি ছিলো। এই উটকো ঝামেলা ভাগাও। অনেক দেন দরবার করে লাভের লাভ হলো আজ তারা জেলে। আর মহান মহিয়সী বীরদর্পে দুটো থানার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন”।
রোকসানা খন্দকার রুকু
সততা বিকিয়ে দেয়া যাবেনা। হয়তো কষ্ট হবে তবুও জয় নিশ্চিত।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
হ্যাঁ আপু, “সততা বিকিয়ে দেয়া যাবেনা। হয়তো কষ্ট হবে তবুও জয় নিশ্চিত”।
শুভ কামনা রইলো।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
দুমুখো সাপ খুব বিপজ্জনক কথায় আছে। একবার যদি লোভের নেশায় পেয়ে বসে সেখান থেকে বের হওয়া কঠিন। এখন যে সময় যাচ্ছে সৎ থাকতে চাইলেও টিকে থাকতে পারবেননা এই সমাজে। সমাজের লোকজন ই আপনাকে সহায়তা করবে না, পাশে দাঁড়াবে না। তবুও কেউ কেউ এই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, ঈশ্বর তাদের সহায় হোন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
লোভ একবার চেপে ধরলে শেষ। সো যেন না হয়। ধন্যবাদ দিভাই।
হালিমা আক্তার
সৎ এবং সততা নিয়ে টিকে থাকা কষ্টকর। চারপাশে যখন আগুন লাগে, সে আগুনের আঁচ নিজ গায়েও লাগে। তবু নিজেকে বিকিয়ে দেয়া কাম্য নয়। যতক্ষণ দেহে প্রাণ আছে ততক্ষণ সত্যের জন্য লড়াই করে যাওয়া উচিত।
শুভ কামনা রইলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
নিজেকে আমরা কখনোই বিকিয়ে দিবো না। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা অশেষ।
রেজওয়ানা কবির
দুমুখো সাপের চেয়ে একা বাঁচা অনেক ভালো। কথায় বলে ঘরপোড়া গরু মেঘ দেখলে চমকায় তাই মাফ চাই, চাই না এমন সবদিকে তাল দেয়া মানুষ। আমি সবার কাছে ভালো কখনোই হতে পারব না তাই এই চেষ্টা করাও বৃথা এতে শুধু সাময়িক অনেকের কাছে ভালো হওয়া যায় কিন্তু দিনশেষে আমার বিবেক আছেই।।।এই বিবেক পোকাকে ঝালাই করলেই বোঝা যায় কি করছি আমি????
তুমি সমসাময়িক খুব সুন্দর গুছিয়ে লেখো। এগিয়ে যাও এভাবেই। শুভকামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
কারও ভালো লাগলেই লেখা স্বার্থক। শুভ কামনা ও কৃতজ্ঞতা সবসময়।।।
আরজু মুক্তা
কালকের ঘটনা বলি। যখন টেস্ট দিয়ে অপেক্ষা করছি। দেখি, রোগি একপাশে বসে রেখে তার সঙ্গী মোবাইলে স্পীকার দিয়ে কথা বলছে। আর একজন ফেসবুকে ভিডিও দেখছে লাউডে। কেউ বলছে না। শেষ পর্যন্ত যার রিপোর্ট প্রাওরিটি দিয়ে আগে আগে করা হচ্ছে সেই মুক্তা দাঁড়িয়ে লেকচার দিয়ে থামালো। এরকম কে কী বললো, তা তে কী এসে যায়।
রোকসানা খন্দকার রুকু
একদম ঠিক, প্রতিবাদী হতে হবে। এবং সর্বদা সৎ থাকার চেষ্টা করতে হবে। শুভ কামনা ও অনেক অনেক দোয়া রইলো আপনি তারাতারী সেরে উঠুন!!!